সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হেস্টিংসের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা | Five Years &One Year Settlement

হেস্টিংসের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা

১৭৬৫ সালে ইংরেজি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভের পর সেখান থেকে কিভাবে রাজস্ব আদায় করা হবে সেই ছিল একটা বড় প্রশ্ন। প্রথমে নায়েব নাজিম মোহাম্মদ রেজা খাঁকে নায়েব দেবান পদে নিযুক্ত করে তার ওপর ভূমি রাজস্ব আদায়ের সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। রেজা খাঁ ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য আমিলদের নিযুক্ত করেন এবং যারা সবথেকে বেশি রাজস্ব দেবার প্রতিশ্রুতি দিত তারাই আমিল হিসেবে বহাল থাকার ব্যাপারে অগ্রাধিকার পেত। কোম্পানির নতুন গভর্নর ভারেলেস্ট ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য সুপারভাইজার বা কালেক্টর নিয়োগ করেন। এরা রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে জেলার বাণিজ্যের উপরে একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠাতেই বিশেষ মনোযোগী ছিল, যার ফলে কালেক্টর ব্যবস্থাও অকেজো প্রমাণিত হয়। এই সময় ১৭৭২ এর দুর্ভিক্ষ ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এই পরিস্থিতিতে গভর্নর জেনারেল হিসাবে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস বাংলা শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

হেস্টিংস মুর্শিদাবাদের নায়ক দেওয়ান রেজার খাকে এবং পার্টনার দেওয়ান সিতাব রায় কে বিতাড়িত করেন ১৭৭৩ সালের ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি করার জন্য একটি ভ্রাম্যমান কমিটি গড়ে তোলা হয় ১৭৭৩ সালে এপ্রিল মাসে কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস সুপারভাইজার বা কালেক্টর পদগুলি বাতিল করার নির্দেশ দেয় ওয়েস্টটিং নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ নিলাম দাদাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি ইযারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই ব্যবস্থা পাঁচশালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থার ফলে বহু পুরনো জমিদার বাতিল হয়ে যায় পরিবর্তে বহু সবুরে বেনিয়া জমির যারা লাভ করে যার ফলস্বরূপ দেখা যায় অতিরিক্ত মূল্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জমি লাভ করলে তারা প্রথম কিস্তিতে কোম্পানি টাকা দিতে অপারগ হয়। ফলে পাঁচসালা বন্দোবস্ত যে ব্যর্থ হয়েছে তা পরিষ্কার বোঝাই যায়।

পাঠশালা বন্দোবস্তের পরিণতির কথা অনুধাবন করে হেস্টিংস ১৭৭৭ সালে ইজারাদারদের বাতিল করে জমিদারদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন। ১৭৭৬ সালে গঠিত আমিনী কমিশন এর রিপোর্ট অনুযায়ী কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস নির্দেশ পাঠায় যে, ইংরেজ কোম্পানিকে রাজস্ব বিষয়ে জমিদারদের সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস এর নির্দেশ অনুযায়ী গড়ে উঠলো জমিদারদের সাথে একশালা বন্দোবস্ত। তবে ইজরাদারি বন্দোবস্তযে রাজস্ব নির্ধারণের যে ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি ছিল সেই পদ্ধতি এক্ষেত্রেও বহাল থাকলো, যার ফলে রাজস্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভুলভাল হয়ে গেল এবং দরিদ্র রায়তরা আবার অসুবিধায় পড়ল।
হেস্টিংস এর দ্বিতীয় ব্যবস্থাও ব্যর্থ হল। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলেন জমিদারদের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। ইতিমধ্যে কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতবর্ষে এলেন এবং তিনি সেই পথেই হাঁটলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক