সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জার্মানির কৃষক সংগ্রাম | Peasant Revolt in Germany

জার্মানির কৃষক সংগ্রাম

ষোড়শ শতকে মার্টিন লুথারের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব জার্মানির কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এক ব্যাপক আকারে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন টমাস মুনজার। বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল সামন্ততান্ত্রিক শোষণ। কৃষকদের প্রধান অভিযোগ গুলি নথিবদ্ধ হয়েছিল তাদের এক ইস্তাহারে, যা সাধারণভাবে টুয়েলভ আর্টিকেলস নামে পরিচিত। এখানে গত ১০০ বছর ধরে সামন্ত প্রভুদের বিরুদ্ধে কৃষকদের যে অভিযোগগুলি উঠে আসছিল, সেগুলি হল চার্চ কর্তৃক আরোপিত ধর্মকর বা টাইথ, সর্বসাধারণের ব্যবহার্য জমিতে  ভূস্বামীর দখলদারি, এছাড়া জঙ্গল, নদী এবং খোলা মাঠের উপর কৃষকদের যে চিরাচরিত অধিকার তার ক্রম অবসান। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল কৃষকদের কাঁধে আরও বেশি কর চাপানো ও তাদের বেশি করে বেগার শ্রমে নিয়োজিত করা। বাইবেলের নির্দেশকে মেনে চলা এবং পাপীর মুক্তির জন্য যীশুখ্রীষ্টের কাছে আত্মনিবেদনের যে বাণী প্রচারিত হয়েছিল তার সঙ্গে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দাবিগুলোর সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছিল জার্মান কৃষকরা।

জার্মান কৃষক বিদ্রোহ ও লুথারের সম্পর্ক অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। কৃষকরা কেন লুথারের প্রতিবাদী আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল সে প্রসঙ্গে ফেডারিক অ্যাঙ্গেল বলেছেন, মার্টিন লুথারের কৃষক সুলভ সুদৃঢ় মনোভাব প্রথম পর্যায়ে দরিদ্র ও শোষিত জার্মান কৃষকদের প্রবাল ভাবে আকর্ষণ করেছিল। কৃষকদের নেতা টমাস মুনজার লুথারের মতই ক্যাথলিক চার্চকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন। ধর্মের সঙ্গে তিনি খনি শ্রমিক ও কৃষকদের সামনে তাদের দুরবস্থার কারণ গুলিও তুলে ধরেছিলেন। চার্চ ও সামন্তপ্রভু উভয়ের দ্বারাই সমাজের নিম্নবর্গীয় জনসাধারণ নিপীড়িত ও শোষিত-- এটাই ছিল তার বক্তব্য। কিন্তু লুথারের সঙ্গে তার একটি বিষয়ে পার্থক্য ছিল। তিনি বলতেন, প্রতিটি মানুষ সরাসরি ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে এবং তা লাভ করতে পারে; তবে তা শান্তির পথে নয়, অবশ্যই রক্ত ঝরিয়ে তা অর্জন করতে হবে। এর ঠিক বিপক্ষে ছিল লুথারের non resistance theory, যার মূল বক্তব্য ছিল God has forbidden insurruction. তাই লুথার বিদ্রোহীদের বিপক্ষে অবস্থান করেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন জার্মানি কৃষকরা ভয়ংকর পাপ করেছে এবং মৃত্যুদণ্ডই তাদের একমাত্র শাস্তি।

The Peasants’ Revolt in Germany

In the 16th century, the influence of Martin Luther’s Reformation movement extended to the German peasantry, leading to a widespread peasant uprising. The chief leader of this revolt was Thomas Müntzer. The primary cause behind the rebellion was feudal exploitation. The peasants’ main grievances were documented in a manifesto known as the "Twelve Articles". These reflected long-standing complaints against feudal lords over the previous hundred years.

Key complaints included:

  • The tithe (a religious tax) imposed by the Church.

  • The seizure of common lands by feudal lords.

  • The loss of traditional rights over forests, rivers, and open fields.

  • The increasing tax burdens placed on peasants.

  • The expansion of forced labor (corvée or unpaid work) demanded from them.

The message of the Bible—emphasizing obedience to divine law and redemption through personal submission to Christ—seemed to resonate with the peasants, who connected these spiritual promises to their own social and economic demands.

The relationship between the German Peasants’ War and Martin Luther is particularly significant. Regarding why the peasants were inspired by Luther’s protest, Friedrich Engels observed that Luther’s firm, peasant-like demeanor initially attracted the sympathy of the poor and oppressed German peasants. Thomas Müntzer, their leader, also fiercely criticized the Catholic Church, much like Luther. However, Müntzer went further by presenting the economic hardships and social injustices faced by miners and peasants as religious concerns. His message was clear: both the Church and feudal lords were oppressing the lower classes.

However, there was a fundamental difference between Müntzer and Luther. Müntzer believed that every person could directly seek and receive God's grace, but not through peace. He insisted it had to be won through bloodshed. In stark contrast stood Luther’s “non-resistance theory,” based on the idea that "God has forbidden insurrection." Consequently, Luther took a firm stand against the rebels, declaring that the revolting peasants had committed a grave sin and deserved capital punishment.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...