সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কমোডোর পেরীর অভিযানঃ রুদ্ধদ্বার জাপানের উন্মোচন

কমোডোর পেরীর অভিযান কিভাবে জাপানের দ্বার উন্মোচিত করেছিল? ১৬০০ খ্রীঃ থেকে ২৫০ বছর ধরে টোকুগাওয়া সোগুনের শাসনে জাপান ছিল একটি বদ্ধ দেশ। কেবল চীন এবং ইউরোপীয় শক্তি নেদারল্যান্ডস ছাড়া বহির্বিশ্বের সাথে জাপানের কোনো যোগাযোগ ছিল না। উনিশ শতকের সূচনালগ্ন থেকে পশ্চিমী শক্তি গুলি জাপানের দ্বার উন্মোচনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। প্রথমদিকে রাশিয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ১৮৫৪ খ্রীঃ কমোডোর পেরীর নেতৃত্ত্বে আমেরিকান প্রচেষ্টা সফল হয় এবং জাপানের দ্বার উন্মুক্ত হয়।  অনেকেই মনে করেন যে পশ্চিমের সাথে যোগাযোগের পূর্বে জাপানের সমাজ ও রাষ্ট্র ছিল পরিবর্তনহীন। কিন্তু এই ধারনা সঠিক নয়। জাপানের অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে যে একাধিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছিল তাতে মনে হয় পশিমের অভিযান কেবল অনুঘটকের কাজ করেছিল। প্রথমত , মুদ্রা অর্থনীতির সূচনা । টোকুগাওয়া শাসনে জাপানে যে long peace বিরাজ করছিল তাতে ব্যবসা বানিজ্যের অগ্রগতি ঘটেছিল। এর ফলে চিরাচরিত চাল-নির্ভর বিনিময় ব্যবস্থা অকেজ হয়ে আসছিল এবং সুবিধাজনক মাধ্যম হিসাবে মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছিল। দ্বিতীয়ত, উদীয়মান বণিকশ্রেনী । টোকুগাওয়া জাপানে শিল্পায়ন হয়নি। কিন্তু ব্...

সিমোনোসেকির সন্ধি

 সিমোনোসেকির সন্ধি  মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর জাপান যে দ্রুতগতিতে উন্নতি করেছিল, বিশেষ করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তার অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ। প্রথম থেকেই কোরিয়ার ওপর জাপানের নজর ছিল। কোরিয়া ছিল চীনের ট্রিবুটারি দেশ। কোরিয়ার ওপর আধিপত্য স্থাপন কে কেন্দ্র করে চীন ও জাপানের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল 1894 খ্রিস্টাব্দে তা যুদ্ধে পরিণতি লাভ করেছিল। উন্নত জাপানি সামরিক বাহিনী চিনা সেনাদের অনায়াসে পরাস্ত করে এমনকি মাঞ্চুরিয়া আক্রমন করে পিকিং এর অভিমুখে অগ্রসর হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে চীন জাপানের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়। উভয়ের মধ্যে 1895 খ্রিস্টাব্দে 17 ই এপ্রিল শিমনোসেকির সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিমনোসেকির সন্ধি শর্তগুলি হল: 1) চীনের করদ রাজ্যের পরিবর্তে কোরিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়। 2) চীন জাপানকে 200 মিলিয়ন টেইল যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়। 3) চীন-জাপান কে তাইওয়ান, প্রেসকাডোর্স এবং লিয়া ওটাং উপদ্বীপ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। 4) চাং কিং, সু চাও, হ্যাং চাও এবং শা শি-- চীনের এই বন্দর গুলির জাপানি বণিকদের জন্য উন্মু...

ক্রুশ্চেভ জমানায় সোভিয়েত বলয়ে অসন্তোষ: পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি

ক্রুশ্চেভ জমানায় সোভিয়েত বলয়ে অসন্তোষ: পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি 1953 সালের মার্চ মাসে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হন নিকিতা ক্রুশ্চেভ। ক্রুশ্চেভ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে স্ট্যালিনের সংস্কারগুলিকে একের পর এক বাতিল করেন এবং এক আপাত-উদার আদর্শের কথা তুলে ধরেন, যেখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বহুমাত্রিকতার কথা বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন ক্রুশ্চেভের স্তালিনবাদ বিরোধিতার নীতি পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত বলয়ের অন্তর্ভুক্ত কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলিকে রাজনৈতিক পালাবদলের জন্য বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করেছিল। প্রাথমিকভাবে পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরিতে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। পোল্যান্ডে বিদ্রোহ 1956 সালে পোল্যান্ডের বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল রাজধানী পোজেন-এ শ্রমিক অসন্তোষজনিত জনবিক্ষোভ থেকে। শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল কম মজুরি দীর্ঘ কাজের সময় ক্রমাগত কর বৃদ্ধি ও জীবন যাপনের নিম্নমান। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মঘট ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার ফলে পরিস্থিতির বিশেষ অবনতি ঘটে ছিল। বিদ্রোহীদের মূল স্লোগান ছিল 'Bread and Freedom'। শিল্পক্ষেত্রে অস্থিরতার পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী স...

নিস্তালিনিকরণ (Destalinization)

নিস্তালিনিকরণ (Destalinization) 1953 সালে মার্চ মাসে স্তালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। স্তালিনের পরবর্তী সোভিয়েত প্রধান নিকিতা ক্রুশ্চেভ স্ট্যালিনের সংস্কার ও নীতি গুলিকে প্রবল সমালোচনা করে স্ট্যালিনীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটান। এই প্রক্রিয়া নিস্তালিনিকরণ বা Destalinization নামে পরিচিত। তিনি কমিউনিস্ট পার্টিকে বহুমাত্রিক ও সহনশীল করে তুলতে দলীয় নিয়ন্ত্রণবাদের রাশ টেনে ধরেন এবং কট্টর পুঁজিবাদ তথা পশ্চিম বিরোধিতা থেকে সোভিয়েত রাষ্ট্রকে সরিয়ে আনেন, যাকে বার্নস্টাইনের মত অনেক পণ্ডিত 'মার্কসবাদের তরলীকরণ' বলে অভিহিত করেছেন। ক্রুশ্চেভের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি, সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং বহুমাত্রিকতায় আস্থাশীল থেকে সমাজতান্ত্রিক উত্তরণের নীতি স্ট্যালিনপন্থীদের হতাশ করলেও সোভিয়েত বলয়ে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ক্রুশ্চেভ ক্ষমতাশালী স্ট্যালিনপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত বা নিহত করে দলীয় ও প্রশাসনিক পদে নিজের বিশ্বস্ত ও অনুগত সহকর্মীদের নিয়োগ করে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছিলেন। 1955 সালে ক্রুশ্চেভ এর উদ্যোগে পূর্ব ইউরোপের সমাজতা...

চেকোস্লোভাকিয়া প্রাগ-বসন্ত

 চেকোস্লোভাকিয়া প্রাগ-বসন্ত 1964 সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভ সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধানের পর থেকে অপসারিত হন এবং ক্ষমতায় আসেন ব্রেজনেভ। 1964 থেকে 1985 পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়কাল ধরে ব্রেজনেভের শাসনে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্ট্যালিনীয় আদব-কায়দা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। সেই সূত্রেই চেকোস্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট নেতা Antonin Novotni র সময় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌছে গেছিল। এই প্রেক্ষাপটে চেক ও স্লোভাক জনগণ সোভিয়েত কর্তৃত্ব এবং স্ট্যালিনীয় রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির বিরুদ্ধে উদারনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করে। বিশিষ্ট চেক অর্থনীতিবিদ ডঃ ওটোসিক অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে একগুচ্ছ সংস্কারের পরিকল্পনা পেশ করেন। রাজনীতিবিদদের একটা বড় অংশ এবং বুদ্ধিজীবীরাও সংস্কারের দাবিতে মুখর হয়ে ওঠে। যদিও চেক প্রশাসন কড়া হাতে এই বিদ্রোহ দমন করে। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ সমস্যাজনিত কারণে 1968 সালে নভোটনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন আলেকজান্ডার ডুবচেক। সংস্কারবাদী নেতা আলেকজান্ডার ডুবসেক উদারনীতির পথে অর্থনীতির সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। এই উদ্যোগ...

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের উত্থানের প্রতিক্রিয়া

 আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের উত্থানের প্রতিক্রিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এক বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী ঘটনা। একসময়ের 'দূরপ্রাচ্যের রুগ্নব্যক্তি' বিপ্লবের দীর্ঘ রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে অতি দ্রুতই তাঁর বলিষ্ঠ অস্তিত্বের জানান দিতে সক্ষম হয়। প্রায় কুড়ি হাজার কিলোমিটারের বেশি আয়তন এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ছিল চীন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শক্তি ও সামর্থ্যের মূল ভিত্তি ছিল তার অননুকরণীয় এবং অভিনব রাষ্ট্রব্যবস্থা। দ্বিমেরু বিভাজিত বিশ্বে চীনের এই সদর্প আত্মপ্রকাশ ঠান্ডা লড়াই এর রাজনীতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। 1949 সালে সাম্যবাদী চীনের উত্থান সমাজতান্ত্রিক শিবিরকে নতুন করে শক্তিশালী করেছিল। ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের ভারসাম্যে বদল এসেছিল। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সোভিয়েত নেতৃত্ব মাওসেতুংয়ের সংগঠন কে আশানুরূপ সাহায্য করতে পারেনি। তবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন কে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নই এবং তার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিন যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন চীন...

চীন-মার্কিন সম্পর্ক

চীন-মার্কিন সম্পর্ক দূরপ্রাচ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কোন মতেই মেনে নিতে পারেনি। তাই প্রথম থেকেই চীন-মার্কিন সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত খারাপ। যদিও 1960 এর দশক থেকে চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক যখন শীতল হতে থাকে তখন থেকে চীন-মার্কিন সম্পর্কের দূরত্ব ক্রমশ কমতে থাকে। তাই চীন মার্কিন সম্পর্ক আমরা দুটি পর্বে বিভক্ত করে আলোচনা করতে পারি। প্রথম পর্ব (1949-70) 1949 সালে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন আত্মপ্রকাশ করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া তো দূরের কথা বরং তাইওয়ানে দক্ষিণপন্থী চিয়াং প্রশাসনকে সর্বতোভাবে সমর্থন করেছিল এবং তাকে চিন দখলের জন্য উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছিল। এমনকি 1950 সালে ডিসেম্বরে মার্কিন বাহিনী তাইওয়ান থেকে চীনের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল। কোরিয়ার যুদ্ধে মার্কিন বিমানবাহিনীর চীনের আকাশসীমা লংঘন করেছিল। আমেরিকা সরাসরি কমিউনিস্ট চীনকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করেছিল এবং তাকে 'সোভিয়েত মাঞ্চুকুয়ো' বলে বিদ্রুপ করেছিল। প্রত্যুত্তরে চীনের চেয়ারম্যান মাও সেতুং আমেরিকাকে 'পয়লানম্বর শত্রু' বলে ঘোষণা কর...

চীন - সোভিয়েত সম্পর্ক

চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক 1949 সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। রাশিয়ার পর মাও সে তুং এর নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব এর মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট চীনের আবির্ভাব বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন কে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল। তাই চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যালোচনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে একটি আকর্ষণের বিষয হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীন সোভিয়েত সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুটি পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি 1949 থেকে 1956 সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় টি 1956 সাল থেকে 1990 পর্যন্ত। প্রথম পর্ব  চীন সোভিয়েত সম্পর্কের প্রথম পর্বটি ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি আনুগত্য ও দায়বোধ ছাড়াও চীনের পক্ষে সোভিয়েতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার একটা বাধ্যবাধকতা ছিল। কারণ বিশ্ব পুঁজিবাদী দেশগুলি বিশেষ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সাম্যবাদী চীনের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা চীনকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি চীনকে নাস্তানাবুদ করার সমস্ত রকম প্রচেষ্টা পুঁজিবাদী বিশ্ব করে গেছিল। তাছাড়া জাপানি সাম্রাজ্যবাদের পুনরুত্থানের একটা আশঙ্...

পূর্ব ইউরোপে স্ট্যালিনিকরণ

পূর্ব ইউরোপে স্ট্যালিনিকরণ  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুই সুপার পাওয়ার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয়েছিল তার অন্যতম পদক্ষেপই ছিল মিত্ররাষ্ট্র তথা প্রভাবাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রতিদ্বন্দ্বীতা। একদিকে আমেরিকা যেমন পশ্চিম গোলার্ধে তার একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল তেমনি অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিস্তার ঘটানোর এই পদক্ষেপ Stalinization নামে পরিচিত।  পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণের প্রক্রিয়া চলেছিল 1946 থেকে 1952 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত। এই সময়কালে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী, চেকোস্লোভাকিয়া ও যুগোস্লাভিয়ায় সোভিয়েত সহযোগিতায় সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছিল। সোভিয়েতিকরনের পশ্চাতে প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। স্ট্যালিন নিজেই জানিয়েছিলেন যে, যুদ্ধজনিত পরিস্থিতিতে সোভিয়েত রাশিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে...

ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে কোরিয়া সংকট

কোরিয়া সংকট ঠান্ডা যুদ্ধ কেবল ইউরোপীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। যে ঘটনার মধ্য দিয়ে এশিয়া মহাদেশের ঠান্ডা যুদ্ধের প্রসার ঘটেছিল তা হল কোরিয়া যুদ্ধ (1950)। কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপট আলোচনায় দুটি দিক উঠে আসে। প্রথমত চীনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও সাম্যবাদী শক্তির প্রাধান্য স্থাপন। দ্বিতীয়তঃ কোরিয়ার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিভাজন এবং এক আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধের অবতারণা। 1950 খ্রিস্টাব্দের পূর্বে রণকৌশলগত দিক থেকে মার্কিন বিশেষজ্ঞগণ এশিয়ার প্রতি খুব একটা নজর দেয়নি। তাদের প্রধান কামনা ছিল যাতে দ্রুত জাপানের পরাজয় ঘটে এবং চীন মার্কিনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে। কিন্তু কুওমিনতাঙ দলের জনবিরোধী শাসনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চিনে এক বিপ্লব ঘটে যায় এবং 1949 খ্রিস্টাব্দে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে চীনের মূল ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। ফলে পরিস্থিতি মার্কিনের পক্ষে প্রতিকূল হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়তঃ কোরিয়া ছিল বরাবরই বিভিন্ন বৃহৎ শক্তির লড়াইয়ের কেন্দ্রভূমি। 16-17 শতাব্দীতে কোরিয়া প্রতিবেশী জাপান ও মাঞ্চু শাসিত চীনের আগ্রাসনের...

বার্লিন প্রাচীরের ভাঙ্গন: জার্মানির পুন:সংযুক্তিকরণ

বার্লিন প্রাচীরের ভাঙ্গন: জার্মানির পুন:সংযুক্তিকরণ বিশ্ব রাজনীতিতে একদিকে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রমিক অবক্ষয় ও পতন হচ্ছিল সেই সময় এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেল। বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হল এবং জার্মানির পুনঃসংযুক্তিকরণ হল। জার্মানির ইতিহাস সূচনালগ্ন থেকেই নাটকীয় ও ঘটনাবহুল। বহুধাবিভক্ত জার্মান ছোট ছোট রাজ্যগুলি দীর্ঘ লড়াইয়ের পর 19 শতকের শেষভাগে বিসমার্ক এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তারপর প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল এবং বলাবাহুল্য দুই মহাযুদ্ধে জার্মানির একক দায়িত্ব অনেকটাই ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছিল এবং ঠান্ডা লড়াই এর ফলে জার্মানি আবার বিভাজিত হয়ে গেছিল। পূর্ব জার্মানির উপর সোভিয়েত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং পশ্চিম জার্মানির উপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দুই জার্মানির বিভাজন রেখা হিসাবে একশ তিন মাইল বিস্তৃত বার্লিন প্রাচীর তৈরি হয়েছিল। যদিও এই বিভাজনে সাধারণ জার্মান দের কোন সায় ছিল না। 1960 দশকের সময় থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন কিছু নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছিল। ...

ডাইমিও ও সামুরাই করা?

 ডাইমিও প্রাক-আধুনিক সামন্ততান্ত্রিক জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক গোষ্ঠী ছিল ডাইমিও সম্প্রদায়। খ্রিস্টীয় দশক শতক থেকে উনিশ শতকে মেইজি শাসনের প্রারম্ভিক পর্ব পর্যন্ত এরাই ভুস্বামী হিসেবে শাসন চালাত। টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রে জাপানে প্রায় 280 ডাইমিওর অস্তিত্ব ছিল। ডাইমিওরা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল সিম্পান, ফুডাই ও তোজামা। সিম্পান ডাইমিওরা সরাসরি শোগুন পরিবারের সাথে যুক্ত ছিল। ফুডাই ডাইমিওরা বংশানুক্রমিকভাবে শোগুনের অনুগত ছিল। বাকিরা ছিল তোজামা, যদের অধিকাংশই ছিল শোগুনের শোগুন বিরোধী। সেকিগাহারার যুদ্ধের পর তারা শোগুনের আনুগত্য স্বীকার করলেও তাদের আনুগত্য নিয়ে বরাবরই সন্দেহ ছিল।  'ডাই' কথার অর্থ বৃহৎ এবং 'মিও' কথার অর্থ ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অর্থাৎ ডাইমিও কথার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় বৃহৎ জমির মালিক। কিন্তু বাস্তবে সকল ডাইমিও বৃহৎ জমির মালিক ছিলেন না। অর্থাৎ ডাইমিওদের মধ্যেও শ্রেণীবিভাজন ছিল। অনেকেই ছোট জমির মালিক ছিলেন। বৃহৎ ডাইমিওদের হাতে ছিল বড় বড় জোত এবং তারা দুর্গ রক্ষনাবেক্ষন ও সামরিক দায়দায়িত্ত্ব পালন করত। তাদের অধীনে ছিল সামুরাই নামক যোদ্ধা শ্রেনি। নিজের এলাকায় ডাইমিওরা...