নিস্তালিনিকরণ (Destalinization)
1953 সালে মার্চ মাসে স্তালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। স্তালিনের পরবর্তী সোভিয়েত প্রধান নিকিতা ক্রুশ্চেভ স্ট্যালিনের সংস্কার ও নীতি গুলিকে প্রবল সমালোচনা করে স্ট্যালিনীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটান। এই প্রক্রিয়া নিস্তালিনিকরণ বা Destalinization নামে পরিচিত। তিনি কমিউনিস্ট পার্টিকে বহুমাত্রিক ও সহনশীল করে তুলতে দলীয় নিয়ন্ত্রণবাদের রাশ টেনে ধরেন এবং কট্টর পুঁজিবাদ তথা পশ্চিম বিরোধিতা থেকে সোভিয়েত রাষ্ট্রকে সরিয়ে আনেন, যাকে বার্নস্টাইনের মত অনেক পণ্ডিত 'মার্কসবাদের তরলীকরণ' বলে অভিহিত করেছেন। ক্রুশ্চেভের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি, সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং বহুমাত্রিকতায় আস্থাশীল থেকে সমাজতান্ত্রিক উত্তরণের নীতি স্ট্যালিনপন্থীদের হতাশ করলেও সোভিয়েত বলয়ে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ক্রুশ্চেভ ক্ষমতাশালী স্ট্যালিনপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত বা নিহত করে দলীয় ও প্রশাসনিক পদে নিজের বিশ্বস্ত ও অনুগত সহকর্মীদের নিয়োগ করে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছিলেন। 1955 সালে ক্রুশ্চেভ এর উদ্যোগে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে সামরিক শক্তিজোট ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 1956 সালের এপ্রিল মাসে ক্রুশ্চেভ স্ট্যালিনের তৈরি করা 'কমিনফর্ম' সংস্থাটির বিলোপ ঘটান।
স্তালিনবাদ এর বিরোধিতা করার ক্রুশ্চেভ এর এই নীতি সোভিয়েতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করেছিল। যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো, যাকে স্ট্যালিন কমিনফর্ম থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, ক্রুশ্চেভ জামানায় সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছাকাছি এসেছিল। পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গুলির উপর ক্রুশ্চেভ নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরিতে ক্রুশ্চেভের আপাত উদার আদর্শবাদ ও বহুত্ববাদী নীতি প্ররোচনা যুগিয়েছিল। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে রাজনৈতিক পালাবদলের দাবিতে বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে সোভিয়েত এর সম্পর্ক এখন থেকেই খারাপ হতে শুরু হয়েছিল। চিনের চেয়ারম্যান মাও সেতুং ক্রুশ্চেভের নীতিকে 'সংশোধনবাদী নীতি' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ক্রুশ্চেভের সময়ে গড়ে ওঠা ওয়ারশ চুক্তিকে তিনি একটি আদর্শহীন সোভিয়েত স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত সামরিক জোট হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন