আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের উত্থানের প্রতিক্রিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এক বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী ঘটনা। একসময়ের 'দূরপ্রাচ্যের রুগ্নব্যক্তি' বিপ্লবের দীর্ঘ রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে অতি দ্রুতই তাঁর বলিষ্ঠ অস্তিত্বের জানান দিতে সক্ষম হয়। প্রায় কুড়ি হাজার কিলোমিটারের বেশি আয়তন এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ছিল চীন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শক্তি ও সামর্থ্যের মূল ভিত্তি ছিল তার অননুকরণীয় এবং অভিনব রাষ্ট্রব্যবস্থা। দ্বিমেরু বিভাজিত বিশ্বে চীনের এই সদর্প আত্মপ্রকাশ ঠান্ডা লড়াই এর রাজনীতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল।
1949 সালে সাম্যবাদী চীনের উত্থান সমাজতান্ত্রিক শিবিরকে নতুন করে শক্তিশালী করেছিল। ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের ভারসাম্যে বদল এসেছিল। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সোভিয়েত নেতৃত্ব মাওসেতুংয়ের সংগঠন কে আশানুরূপ সাহায্য করতে পারেনি। তবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন কে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নই এবং তার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিন যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন চীন সোভিয়েত সম্পর্ক ছিল অটুট বন্ধনে বাঁধা। সোভিয়েতের পথ অনুসরণ করে পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলিও যেমন রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী, চেকোস্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি প্রভৃতি চীনকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তৃতীয় বিশ্ব এবং জোট-নিরপেক্ষ ভুক্ত দেশগুলো মাও সেতুং এর নেতৃত্বে চিনে সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই ও জয়লাভ কে কুর্নিশ জানিয়েছিল। ভারত পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মত অসংখ্য তৃতীয় বিশ্ব ভুক্ত দেশ কমিউনিস্ট চীনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কেবল সমাজতান্ত্রিক বা জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলি নয়, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড এর মত পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলিও চীনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তবে আমেরিকার মত সুপার পাওয়ার প্রথম থেকেই কমিউনিষ্ট চিনের বিরোধিতা করে এসেছিল। আমেরিকা এশিয়ার মাটিতে সাম্যবাদের প্রসার হোক তা কখনোই চাইনি। কমিউনিস্ট পার্টি বনাম কুওমিনতাঙ লড়াইয়ে আমেরিকা বরাবরই কুওমিনতাঙ সরকারকে সমর্থন করে এসেছিল। এবং আশানুরূপভাবেই কমিউনিস্ট চীনের আত্মপ্রকাশের পর আমেরিকা চীনকে স্বীকৃতি দেয়নি বরং কুওমিনতাঙ শাসিত তাইওয়ানকে আসল চীন হিসেবে আখ্যায়িত তাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এমনকি তাইওয়ান থেকে চীনকে নাস্তানাবুদ করার প্রচেষ্টাও চালিয়েছিল। চীনকে আমেরিকা 'সোভিয়েতের মাঞ্চুকুয়ো' বলে বিদ্রুপ করেছিল এবং চীনকে বেষ্টনীতে আবদ্ধ করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে সাম্যবাদ বিরোধী জোট গঠন করেছিল। এই তাগিদ থেকেই আমেরিকা দূরপ্রাচ্যে SEATO গঠন করেছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন