চেকোস্লোভাকিয়া প্রাগ-বসন্ত
1964 সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভ সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধানের পর থেকে অপসারিত হন এবং ক্ষমতায় আসেন ব্রেজনেভ। 1964 থেকে 1985 পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়কাল ধরে ব্রেজনেভের শাসনে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্ট্যালিনীয় আদব-কায়দা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। সেই সূত্রেই চেকোস্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট নেতা Antonin Novotni র সময় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌছে গেছিল। এই প্রেক্ষাপটে চেক ও স্লোভাক জনগণ সোভিয়েত কর্তৃত্ব এবং স্ট্যালিনীয় রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির বিরুদ্ধে উদারনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করে। বিশিষ্ট চেক অর্থনীতিবিদ ডঃ ওটোসিক অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে একগুচ্ছ সংস্কারের পরিকল্পনা পেশ করেন। রাজনীতিবিদদের একটা বড় অংশ এবং বুদ্ধিজীবীরাও সংস্কারের দাবিতে মুখর হয়ে ওঠে। যদিও চেক প্রশাসন কড়া হাতে এই বিদ্রোহ দমন করে। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ সমস্যাজনিত কারণে 1968 সালে নভোটনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন আলেকজান্ডার ডুবচেক। সংস্কারবাদী নেতা আলেকজান্ডার ডুবসেক উদারনীতির পথে অর্থনীতির সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। এই উদ্যোগ চেক জনগণের কাছে প্রাগ-বসন্ত নামে পরিচিত।
সোভিয়েত কর্তৃত্ব আলেকজান্ডার ডুবসেকের অর্থনৈতিক উদারীকরণ-এ বিশেষ বিব্রত হয় নি। তবে তার রাজনৈতিক উদারীকরণ এর সিদ্ধান্ত সোভিয়েত কর্তৃত্বকে বিচলিত করে, বিশেষ করে সেন্সরপ্রথা শিথিল করা এবং গণতন্ত্রীকরণ এর প্রসার। এই পরিস্থিতিতে সোভিয়েত এবং ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশগুলি চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ করে বসে। চেকোস্লোভাকিয়া যদিও বিশেষ প্রতিরোধের রাস্তায় হাঁটে নি। ডুবসেককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট নেতা গুস্তাভ হুসাক। যদিও এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শান্তি বা সোভিয়েত-মার্কিন দাঁতাত রাজনীতিকে সেভাবে প্রভাবিত করে নি। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে এই ঘটনা ছিল সোভিয়েত আধিপত্যবাদের নগ্ন প্রকাশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন