ডাইমিও
প্রাক-আধুনিক সামন্ততান্ত্রিক জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক গোষ্ঠী ছিল ডাইমিও সম্প্রদায়। খ্রিস্টীয় দশক শতক থেকে উনিশ শতকে মেইজি শাসনের প্রারম্ভিক পর্ব পর্যন্ত এরাই ভুস্বামী হিসেবে শাসন চালাত। টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রে জাপানে প্রায় 280 ডাইমিওর অস্তিত্ব ছিল। ডাইমিওরা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল সিম্পান, ফুডাই ও তোজামা। সিম্পান ডাইমিওরা সরাসরি শোগুন পরিবারের সাথে যুক্ত ছিল। ফুডাই ডাইমিওরা বংশানুক্রমিকভাবে শোগুনের অনুগত ছিল। বাকিরা ছিল তোজামা, যদের অধিকাংশই ছিল শোগুনের শোগুন বিরোধী। সেকিগাহারার যুদ্ধের পর তারা শোগুনের আনুগত্য স্বীকার করলেও তাদের আনুগত্য নিয়ে বরাবরই সন্দেহ ছিল।
'ডাই' কথার অর্থ বৃহৎ এবং 'মিও' কথার অর্থ ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অর্থাৎ ডাইমিও কথার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় বৃহৎ জমির মালিক। কিন্তু বাস্তবে সকল ডাইমিও বৃহৎ জমির মালিক ছিলেন না। অর্থাৎ ডাইমিওদের মধ্যেও শ্রেণীবিভাজন ছিল। অনেকেই ছোট জমির মালিক ছিলেন। বৃহৎ ডাইমিওদের হাতে ছিল বড় বড় জোত এবং তারা দুর্গ রক্ষনাবেক্ষন ও সামরিক দায়দায়িত্ত্ব পালন করত। তাদের অধীনে ছিল সামুরাই নামক যোদ্ধা শ্রেনি। নিজের এলাকায় ডাইমিওরাই শাসন, আইন ও বিচারের দায়িত্ত্ব পালন করত অর্থাৎ সামন্ত প্রভুর মত আচরণ করত। শোগুনকে নিয়মিত কর দিয়ে এবং যুদ্ধের সময় পর্যাপ্ত সামরিক সহযোগীতা প্রদানের অঙ্গীকার করে তারা স্বাধীন ভাবেই নিজের এলাকা চালাতে পারত। ডাইমিওদের অধকারগুলি ছিল বংশানুক্রমিক, কিন্তু যতদিন সে অনুগত থাকত ততদিন।
সোগুনতন্ত্র ডাইমিওদের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন বজায় রাখার ব্যবস্থাও করেছিল। ডাইমিওদের ব্যক্তিগতভাবে শোগুনের দরবারে উপস্থিত হওয়ার নিয়ম ছিল, নচেৎ তাদের পরিবারকে এডোর প্রাসাদে স্থায়ী জামিন হিসাবে রেখে দিতে হত। শোগুনের অনুমতি ছাড়া ডাইমিওরা বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে পারত না এবং নতুন দুর্গ নির্মাণ করতেও পারত না। সোগুনের দরবারে তাঁকে প্রভুর প্রতি আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যগদান এবং খরচাবহুল কর্তব্য পালন করতে হত। ফলে অনেক সময় ডাইমিওদের ঋণের দ্বারস্ত হতে হয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন