সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুন, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভারতের ইতিহাসে যুগ বিভাজন

Please visit our  Homepage and Subscribe us. ভারতের ইতিহাসে যুগবিভাগ একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। প্রাচীন ঐতিহ্য পুরানে চক্রাকার কালচেতনা বিদ্যমান। কিন্তু ইউরোপীয় ধারণায় সময় হল রৈখিক। আধুনিক ইতিহাসচর্চায় অবশ্য এই রৈখিক কালচেতনাকেই গ্রহণ করা হয় এবং সেই ভাবেই ইতিহাসের যুগ বিভাজন করা হয়। ইতিহাস বলতে বোঝায় সেই বিষয়কে যা মানুষের ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে যদি আমরা মানি তাহলে যুগ বিভাজন অযৌক্তিক হয়ে দাড়ায়। কারণ যুগবিভাজন করতে হলে কোন একটি নির্দিষ্ট দিন বা বছর থেকে একটা নতুন যুগের সূচনা এবং আগেরটির সমাপ্তি মেনে নিতে হয়। আর মানব সভ্যতার বিবর্তন  ধীর অথচ চলমান একটি প্রক্রিয়া, যাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বিচার করা যায় না। তবুও আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা সমগ্র ইতিহাস কে বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত করে, ভিন্ন ভিন্ন যুগ হিসেবে চিহ্নিত করে চর্চা করে থাকি। পুরান ঐতিহ্য 'কাল'কে চারটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে: সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি। সত্যযুগ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট যুগ এবং কলিযুগ সবচেয়ে ঘৃণ্যতর। প্রতিটি পরবর্তী যুগ তার পূর্ববর্...

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক অবদান | Political Contributions of Chandragupta II

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক অবদান সমুদ্রগুপ্তের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ৩৭৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। অনেকেই মনে করেন যে, সমুদ্রগুপ্তের ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী ছিলেন রামগুপ্ত। আসলে এই ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে বিশাখদত্তের দেবীচন্দ্রগুপ্তম   নাটক থেকে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে রামগুপ্ত শক  রাজার হাতে পরাজিত ও নিহত হলে তার ভাই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত কৌশলে শক  শিবিরে ঢুকে শক রাজাকে হত্যা করে তাঁর বৌদি ধ্রুব দেবীর  পানি গ্রহণ করেন।  কিন্তু দীনেশচন্দ্র সরকার উপরোক্ত ধারণার অসারতা প্রমাণ করেছেন মথুরা স্তম্ভলেখর আলোকে। তাছাড়া রামগুপ্তের  মুদ্রাগুলি কোনো মতেই ষষ্ঠ শতকের আগের নয়। তাই রামগুপ্ত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সমসাময়িক ছিলেন না এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তই ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের অব্যবহিত উত্তরাধিকারী। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল পশ্চিম ভারতের ক্ষমতাসীন শক ক্ষত্রপদের উৎখাত। শক ক্ষত্রপ চষ্টন  গুজরাট, কাথিয়াবাড় এবং উজ্জয়িনী  এলাকায় রাজত্ব করছিলেন। মুদ্রাগত সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ৪১০-৪১১ ...

স্কন্দগুপ্তের রাজনৈতিক কৃতিত্ব | Skandagupta: The Last Powerful Gupta Ruler

স্কন্দগুপ্তের রাজনৈতিক কৃতিত্ব গুপ্ত রাজবংশের শেষ শক্তিশালী শাসক ছিলেন স্কন্দগুপ্ত , যার সময় গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়তন অন্তত অবিকৃত ছিল।  জুনাগড়, ইন্দোর ও ভিতারি সহ মোট 5টি  লেখ এবং কিছু মুদ্রা স্কন্দগুপ্ত সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। প্রথম কুমার গুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্ত; তবে তাঁর সিংহাসন আরোহন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । জুনাগড় লেখতে গুপ্ত সম্রাট হিসাবে কুমারগুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্তের নাম পাওয়া যায়; অন্যদিকে বিহার লেখতে কুমার গুপ্তের পুত্র ও উত্তরাধিকারী হিসেবে নাম রয়েছে পুরুগুপ্তের। ভিতারি লেখতেও অনুরূপ বিবরণ রয়েছে; কিন্তু সেখানে স্কন্দগুপ্তের নাম নেই। প্রথম কুমারগুপ্তর শাসনের অবসান এবং স্কন্দগুপ্তর শাসনের সূচনা সন তারিখ একই (136 গুপ্তাব্দ )। তাই মনে করা হয় স্কন্দগুপ্তই প্রথম কুমারগুপ্তের পরবর্তী শাসক। বতীন্দ্রনাথ মুখার্জীর মতে,  পুরুগুপ্ত  স্কন্দগুপ্তের পরবর্তী শাসক; কারণ পুরু গুপ্তের মুদ্রা 144 গ্রেন তৈলরীতির, যা স্কন্দগুপ্ত সূচনা করেছিলেন। অন্যদিকে রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, ভাতৃবিরোধে জয়লাভের মাধ্যমে স্কন্দগুপ্ত সিংহাসন দখল করেন। অনুমান করা যায় যে, কুমা...

রাজপুত জাতির উত্থান: একটি ঐতিহাসিক বিতর্ক | Origin of Rajputa: A Historical Debate

রাজপুত জাতির উত্থান: একটি ঐতিহাসিক বিতর্ক সপ্তম থেকে দ্বাদশ  শতক পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজপুতদের  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সমকালীন সাহিত্যে প্রায় 36 টি রাজপুত গোষ্ঠীর কথা জানা যায়। এদের মধ্যে অন্যতম হল- গুর্জর, প্রতিহার, চৌহান, পরমার, শিশোদিয়া, সোলাঙ্কি, চান্দেল্ল, তোমর, কলুচুরি, গহরবল প্রভৃতি। স্বাধীনতাপ্রিয়, দেশপ্রেমিক এবং হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির রক্ষাকর্তা হিসেবে রাজপুতরা সুবিদিত। তবে তাদের প্রধান দুর্বলতা ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং অনৈক্য। রাজপুতদের উত্থান হয়েছে কিভাবে, তারা দেশি না বিদেশি এই নিয়ে বিতর্ক আছে। ঐতিহাসিক গৌরী শংকর হীরাচাঁদ ওঝা, দশরথ শর্মা প্রমুখ মনে করেন, রাজপুতরা এদেশীয়। তাদের আচার আচরণের সঙ্গে বিদেশি শক, হুন ও গুর্জরদের কিছু মিল থাকলেও তারা আসলে আর্য। কারণ তারা অশ্বমেধ যজ্ঞ করে, সতীদাহ প্রথা মেনে চলে এবং সূর্যের পূজা করে। মেবারের শিশোদিয়ারা নিজেদেরকে পরিচয় দেয় রামচন্দ্রের বংশধর বলে। গুর্জর প্রতিহাররা নিজেদের লক্ষণের বংশধর বলে মনে করে। রামায়ণ-মহাভারতের সূর্যবংশীয়- চন্দ্রবংশীয় রাজাদের সাথে রাজপুতদের  যোগাযোগের কথাও বলা হয়ে থাকে।...

গুপ্তযুগে কি স্বর্ণযুগ | Was the Gupta Period a Golden Age?

ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বিতর্ক   পঞ্চদশ শতকীয় ইউরোপে রেনেসাঁর যুগে নবজাগরণের পণ্ডিতগন ইউরোপে স্বর্ণযুগের সন্ধানে রত হয়েছিলেন। মধ্যযুগের উত্তরাধিকারের কথা প্রায় বিস্মৃত হয়ে তারা প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতির মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলেন। মধ্যবর্তী শতকগুলি অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের আখ্যা লাভ করেছিল। জ্ঞান চর্চা ও জীবনচর্চায় ধ্রুপদী সংস্কৃতিকে অনুসরণ করা হয়েছিল। ১৮ শতকে ভারততত্ত্ব আলোচনা করতে গিয়ে প্রথম যুগের প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদগণ প্রাচীন ভারতের এমন এক সংস্কৃতির সন্ধান লাভ করেছিলেন, যার মাহাত্ম্য ইউরোপীয় ধ্রুপদী ঐতিহ্যের সঙ্গে তুলনীয়। এই সংস্কৃতি হল গুপ্ত যুগীয় সংস্কৃতি। গুপ্ত যুগকে ‘স্বর্ণযুগ’ বলে অভিহিত করা হল। 330 খ্রিস্টাব্দ থেকে 550 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় কালে ভারতের বৃহৎ অঞ্চলে গুপ্ত বংশীয় শাসকেরা রাজত্ব করেছিলেন। গুপ্তদের  রাজত্বকালে ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল। এই সমস্ত উৎকর্ষতার দিকে তাকিয়ে পণ্ডিতরা এই যুগকে স্বর্ণযুগের আখ্যা দিয়েছেন। ভিন্সেন্ট স্মিথ, সমুদ্রগুপ্তকে ভারতের নেপোলিয়ন বলেছিলেন,-- গু...

Dirozio | Young Bengal | ডিরোজিও ও নব্যবঙ্গ আন্দোলন

Please visit our  Homepage and Subscribe us. Dirozio | Young Bengal | ডিরোজিও ও নব্যবঙ্গ আন্দোলন অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাঠী তার "ইতালীয় রেনেসাঁ ও  বাঙালির সংস্কৃতি" গ্রন্থে লিখেছেন, যেকোনো উপনিবেশিক দেশের নবজাগরণে দুটি প্রক্রিয়া সচল থাকে-- একটি শক্তি বাইরে থেকে এসে ঐতিহ্যবাহী সমাজের ওপর আঘাত হানে, অপরটি হল ভিতরের শক্তি, যা ভেতর থেকে দরজা খুলে দিয়ে পরিবর্তনকে আহ্বান করে। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ও তার ছাত্রগোষ্ঠী 'নব্যবঙ্গ' ছিল এই ভিতরে শক্তি, যারা উনিশ শতকীয় বাংলায় ভেতর থেকে দরজা খুলে দিয়ে নবজাগরণের পথ প্রশস্ত করেছিল। জন্মসূত্রে ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১) ছিলেন ইউরেশিয়ান, পিতা পর্তুগিজ, মাতা ভারতীয়। পশ্চিমী সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ ও ফরাসি বিপ্লব প্রসূত চিন্তাভাবনার ব্যাপক প্রভাব ছিল তার ওপর। অল্প বয়সেই তিনি একজন আদর্শবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী, আধুনিক মানুষের হয়ে উঠেছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে তিনি অল্পবয়সেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।  ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৮২৬-২৭) মাত্র ১৭ বছর বয়সে হিন্দু কলেজের ইতিহাস ও সাহিত...

গুপ্তযুগে কারিগরি উৎপাদন

Please visit our  Homepage and Subscribe us. অর্থনীতির অন্যতম অঙ্গ কারিগরি উৎপাদন। গুপ্তযুগে কৃষিকাজের পাশাপাশি কারিগরি উৎপাদন অব্যাহত ছিল। সমকালীন সাহিত্য, লেখমলা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান থেকে এবিষয়ে জানা যায়। দিল্লির লৌহস্তম্ভ গুপ্ত যুগে কারিগরি শিল্পের তালিকা পাওয়া যাবে অমরসিংহের অমরকোশে। আলোচ্য পর্বে ধাতুর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছিল এবং এক্ষেত্রে লোহার কারিগর বা কামাররা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। লোহার ব্যবহার ও লৌহ শিল্পের উৎকর্ষতার সবচেয়ে বড় নজির হল দিল্লির কুতুবমিনার এর কাছে অবস্থিত বিখ্যাত লৌহস্তম্ভটি; চতুর্থ-পঞ্চম শতকে তৈরি লৌহস্তম্ভটিতে এখনো পর্যন্ত মরচের চিহ্নমাত্র নেই। বাকাটক  লেখতে 'লোহানগর' নামে একটি জায়গার নাম আছে, যেটি কৃষ্ণমোহন শ্রীমালির মতে, কামারদের গ্রাম। তিনি 'কংসকারক' এবং 'সুবর্ণকারক' নামে দুটি গ্রামের নাম দেখিয়েছেন যেগুলি অবশ্যই কাসারি ও সোনার কারিগরদের গ্রাম। মাটির পাত্র ছিল অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। কুম্ভকারদের অস্তিত্বের প্রমাণ কেবল লেখমালায় নয়, রাজঘাট, অহিছত্র প্রভৃতি প্রত্নক্ষেত্র থেকে মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। আরেকটি অত্যাব...

কৈবর্ত বিদ্রোহ | Kaivarta Rebellion

কৈবর্ত বিদ্রোহ দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্রভূমিতে এক উচ্চপদস্থ কর্মচারী দিব্যর নেতৃত্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয় যাতে দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন এবং  বরেন্দ্রভূমি দিব্যর শাসনে চলে যায়। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় এছাড়া কুমারপালের কমৌলি তাম্রশাসন, মদনপালের মনহলি তাম্রশাসন এবং ভোজবর্মার বেলোয়া তাম্রশাসন উল্লেখযোগ্য। রামচরিত থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় মহীপালের সময় 14 জন সামন্তরাজা মিলিতভাবে বিদ্রোহ করলে যুদ্ধে মহিপাল পরাস্ত ও নিহত হন। যুদ্ধের প্রথমদিকে দিব্য রাজার পক্ষেই ছিলেন। রাজার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী দেখে তিনি বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন। সন্ধ্যাকর নন্দী তাই দিব্যকে দস্যু ও উপাধি ব্রতী বলেছেন এবং তার এই বিস্বাসঘাতকতাকে অপবিত্র ধর্মবিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন। কৈবর্ত বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। অধ্যাপক রামশরণ শর্মা কৈবর্তদের কৃষক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে কৈবর্ত বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের দৃষ্টান্ত। রামচরিতের পান্ডুলিপির আবিষ্কর্তা অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, কৈবর্তরা মহীপালে...

দেবপালের রাজনৈতিক অবদান।

Please visit our  Homepage and Subscribe us. বাংলাকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপনের যে স্বপ্ন শশাঙ্ক দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হয়েছিল পাল রাজাদের শাসন কালে। পালবংশের দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক ধর্মপাল ও দেবপাল। দেবপাল (৮১০-৪৭ খ্রি:) ছিলেন ধর্মপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে বসেন এবং তাঁর রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্যের সীমা বহুদূর প্রসারিত হয়। পরমেশ্বর, পরমভট্টারক ও মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি প্রচলিত সম্রাটসুলভ উপাধি তিনি গ্রহণ করতেন। নারায়ণ পালের বাদাল প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, মন্ত্রী দর্ভপানির কূটনীতির সাহায্যে দেবপাল হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্বত এবং পূর্ব সাগর থেকে পশ্চিম সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডের শাসকদের কর প্রদানে বাধ্য করেছিলেন। আবার মন্ত্রী কেদার মিশ্রের বুদ্ধিবলে হুন, উৎকল, দ্রাবিড়, গুর্জর প্রতিহারদের দর্প ক্ষুন্ন করে সমুদ্র মেখলা রাজ্যটি ভোগ করেছিলেন। তাঁর হস্তিবাহিনী বিন্ধ্যারন্যে গিয়েছিল এবং অশ্বারোহী বাহিনী কম্বোজ। পর্যন্ত গিয়েছিল। মুঙ্গের লেখ থেকে জানা যায়, দেবপাল এক 'দ্রাবিড়নাথ'কে পরাজিত করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন এই দ্রাবিড়নাথ...

গুপ্তযুগের অর্থনীতি | Gupta Economy

গুপ্ত অর্থনীতি গুপ্ত রাজাদের শাসনকাল ৩১৯-৩২০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ৫৫০ বা ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। গুপ্তদের সময়ে দক্ষিণ ভারতে বাকাটক ও কদম্ব রাজারা রাজত্ব করত। তাই গুপ্ত যুগ বলতে আমরা চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে ষষ্ঠ শতকের সমাপ্তি পর্যন্ত ধরে নেই। গুপ্ত যুগে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল সেদিকে নজর রেখে অনেক ঐতিহাসিক গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করেছেন গুপ্ত যুগের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ ছিল সুস্থিত অর্থনীতি। কৃষি অর্থনীতি  গুপ্ত অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অগ্রহার ব্যবস্থা। অগ্রহার হল ধর্মস্থান বা পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভূমিদান প্রথা। এই ভূমিদান গুপ্তদের আগে থেকে চালু ছিল। কিন্তু আলোচ্য পর্বে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।  দান করার ক্ষেত্রে গুপ্তদের তুলনায় বাকাটকরা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। অগ্রহার ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলনের ফলে জমিতে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার ঘটেছিল এবং গোষ্ঠী মালিকানা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছিল। একইসাথে এই ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি লাভবান হয়েছিল। একটি ধর্মীয় ভূস্বামী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। রামশরণ শর্মা ও ...

ধর্মপাল ও দেবপালের রাজনৈতিক অবদান | Political Contributions of Dharmapala and Devapala

ধর্মপাল ও দেবপালের রাজনৈতিক অবদান ভারতের ইতিহাসে আদি মধ্যযুগ এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আঞ্চলিক রাজশক্তির বিকাশ। আলোচ্য পর্বে যে বৃহৎ আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পূর্ব ভারতের পালরাজ্য। পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন গোপাল (৭৫০-৭৫)। খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, মাৎস্যন্যায় পর্বের অরাজকতা দূর করার জন্য বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ গোপালকে রাজা মনোনীত করেছিলেন। এইভাবে মাৎস্যন্যায় এর অবসান ঘটেছিল এবং বাংলায় পাল শাসনের সূচনা হয়েছিল। বাংলাকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপনের যে স্বপ্ন শশাঙ্ক দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হয়েছিল পাল রাজাদের শাসন কালে। পালবংশের দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক ধর্মপাল ও দেবপাল।  ধর্মপালের অবদান গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৭৫-৮১০) ছিলেন পাল বংশের প্রথম শক্তিশালী শাসক। ধর্মপালের রাজত্বকালের  রাজনৈতিক গুরুত্ব এটাই যে, তিনি কনৌজ কেন্দ্রিক ত্রিপাক্ষিক সংঘর্ষ-এ যোগদান করেন এবং বাংলাকে কেন্দ্র করে উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। ত্রিপাক্ষিক সংঘর্ষের তিনটি পক্ষ-- পূর্ব ভারতের পাল, পশ্চিম ভারত...