সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ঔরঙ্গজেবের ধর্ম নীতি | Religious Policy of Aurangajeeb

 ঔরঙ্গজেবের ধর্ম নীতি মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ব্যক্তিজীবনে একজন ধার্মিক সুন্নি মুসলমান ছিলেন। দিনে পাঁচবার নামাজ থেকে শুরু করে রমজান পালন এবং অন্যান্য যাবতীয় ইসলামিক রীতি রেওয়াজ মেনে চলতেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় জীবনে শাসক হিসাবে তিনি কতটা ধর্মীয় গোঁড়ামি দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন তা বিতর্কের বিষয়। বিতর্কের এক দিকে রয়েছেন পণ্ডিত শ্রী রাম শর্মা, যিনি তাঁর "The Religious Policy of the Mughal Emperors" গ্রন্থে ঔরঙ্গজেবকে একজন হিন্দু বিরোধী গোঁড়া মুসলমান শাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে অধ্যাপক আতাহার আলী এবং অন্যান্য আধুনিক ঐতিহাসিকগণ অধ্যাপক শ্রীরাম শর্মার বক্তব্যের খন্ডন করেছেন।  ঔরঙ্গজেবের ধর্মনীতি সংক্রান্ত বিতর্কের মুলত তিনটি দিকঃ রাজপুত ও হিন্দুদের দমন; মন্দির ধ্বংস এবং জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন। ইউরোপীয় পর্যটকদের বিবরণীর উপর নির্ভর করে অধ্যাপক শ্রীরাম শর্মা, ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে একাধিক হিন্দু বিদ্বেষমুলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন ঔরঙ্গজেব শিখদের বিরুদ্ধে ঢালাও গণহত্যার হুকুম দিয়েছিলেন। এই তথ্যের উৎস হিসাবে মাসীর-ই- আলমঙ্গীরি-র (পৃ- ১৪১) উল্লেখ করেছেন। ক

শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব | War of Succession: Aurangajeb, Dara, Murad and Suja

শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব ১৬৫৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫ বছর বয়সে শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁর চার পুত্রের মধ্যে চরম সংঘর্ষ শুরু হয়। মুঘল দরবারে সিংহাসন নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব নতুন নয়। উদাহরণস্বরূপ আকবরের বিরুদ্ধে সেলিমের বিদ্রোহ, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহজাহানের বিদ্রোহ। তবে অন্য সমস্ত দরবারি অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বকে ছাপিয়ে গেছে যে ঘটনা সেটি হল শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব।   শাহজাহানের চার পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন দারাশিকো। দারা শাহজাহানের খুব প্রিয় ছিলেন। পাঞ্জাব, মুলতান ও এলাহাবাদের দায়িত্বে থাকলেও দারা পিতার কাছে থেকেই প্রতিনিধি মারফত শাসন চালাতেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দারা অনভিজ্ঞ ছিল। কিন্তু জ্ঞান এবং শিক্ষাদীক্ষায় তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ। কিন্তু সিংহাসন লাভের অভিলাসও তার ছিল। শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন সুজা। তিনি দীর্ঘদিন বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন। কোনো গোঁড়ামি বা ভন্ডামি তার ছিল না। কিন্তু তার নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তৃতীয় পূত্র ঔরঙ্গজেব। তিনি একাধারে সামরিক ও শাসনতান্ত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন, কূটনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন, বিদ্বান,

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান | Mughal Miniature Paintings in Akbar's Time

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান  ভারতীয় শিল্পকলায় মুঘল শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা তরবারির পাশাপাশি কালি, কলম ও ছবিকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাদের কালজয়ী সৃষ্টিগুলি কেবল স্থাপত্য নির্মাণে সীমাবদ্ধ ছিল না। চিত্রশিল্পেও ভারত মুঘল আমলে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছিল। মুঘল চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল আকবরের রাজত্বকালে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কালে তা বিকাশের শীর্ষে পৌঁছে গেছিলো। আকবরের পূর্বপুরুষ বাবর ও হুমায়ূন চিত্রশিল্পে স্থায়ী ছাপ রেখে যেতে পারেননি। তবে তাঁরা যথেষ্ট সৌন্দর্য পিপাসু ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মুঘলদের সৌন্দর্য পিপাসা আকবরের মধ্যেও বহমান ছিল। হুমায়ুন পারস্য থেকে মীর সৈয়দ আলী ও আবদুস সামাদকে কাবুলে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিলেন। আকবর এই আবদুস সামাদের নেতৃত্বে একটি কলাভবন নির্মান করেছিলেন। তাঁর সময়ে আঁকা ছবিগুলির বিষবস্তু যেমন ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতিকৃতি, তেমনি বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের প্রতিকৃতি আঁকার চলনও ছিল। তাঁর দরবারে চিত্রকরদের মধ্যে বসাওয়ান ছিলেন প্রতিকৃতি অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত। আবুল ফজলের লেখা থেকে জানা যায় পটভূমি চিত্রণ ও মুখাবয়বের রেখাঙ্কন, রঙের বি

শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি | Sahjahan's Foreign Policy in Central Asia

 শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি ট্রান্স অক্সিয়ানা ছিল মুঘলদের পূর্বপুরুষের বাসভূমি। বাবর থাকে শুরু করে জাহাঙ্গীর পর্যন্ত প্রত্যেক মুঘল শাসকই তৈমুরের রাজধানী সমরখন্দ পুনরুদ্ধারের আশা পোষন করতেন। বাবর ও হুমায়ূন চেষ্টা করেও নিস্ফল হয়েছিলেন। শাহজাহান তার পূর্বপুরুষের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সচেষ্ট হন।  শাহা জাহানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বালখ ও বদাকসান দখল করা। কারণ এই দুই প্রদেশ দখল করলে সমরখন্দ দখলের রাস্তা উন্মুক্ত হবে। দ্বিতীয়ত উত্তর পশ্চিম সীমান্তে উজবেগ জাতির আক্রমণকে প্রতিহত করে উত্তর পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। সুতরাং শাহজাহানের মধ্য এশিয়া অভিযানের পশ্চাদে যে কেবল আবেগ কার্যকর ছিল তা নয়, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্যও ছিল। ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে অক্ষু নদীর তীরে বুখারা রাজ্যের রাজা নজর মহম্মদ খান যখন পুত্র আব্দুল আজিজের সঙ্গে এক যুদ্ধে লিপ্ত হলেন সেই সুযোগে শাহজাহান যুবরাজ মুরাদ ও আলী মর্দানের নেতৃত্বে একটি বিরাট বাহিনী প্রেরণ করলেন। মুঘল সেনাবাহিনী খুব সহজে বালখ ও বাদকসান অধিকৃত করে নজর মহম্মদ খান পারস্যে পলায়ন করেন। যদিও এই দুই রাজ্য দীর্ঘকাল মুঘল অধিকারে র

নূরজাহান চক্র | Noorjahan Junta

 নূরজাহান চক্র জগৎ বিখ্যাত প্যারসিক সুন্দরী নূরজাহানের নাম মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে মেহেরুন্নেসা তথা নূরজাহানের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিবাহ হয় এবং তিনি বাদশাহের প্রিয়তমা পত্নীতে পরিণত হন। বিবাহের পর থেকে দরবারী কার্যকলাপে নূরজাহানের প্রভাব ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাঁকে কেন্দ্র করে দরবারে একটি চক্র গড়ে ওঠে যা নূরজাহান চক্র নামে পরিচিত। নূরজাহান চক্র সাম্রাজ্যের পক্ষে কতটা লাভজনক বা ক্ষতিকর হয়েছিল তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান।  উচ্চ পদস্থ মুঘল কর্মচারী মির্জা গিয়াস বেগের কন্যা ছিলেন মেহেরুন্নেসা। ১৭ বছর বয়সে বর্ধমানের জায়গীরদার আলী কুলি বেগ ইস্তাজহি- র সাথে তার বিবাহ হয়। আলি কুলি বেগ কেন্দ্রকে নিয়মিত প্রাপ্য দিচ্ছিলেন না। আলি কুলি বেগ বিদ্রোহী ভাবাপন্ন হয়ে উঠেছিলেন এই সংবাদ পেয়ে জাহাঙ্গীর তার বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণ করেন। উভয় পক্ষের খন্ড যুদ্ধে আলিকুলি বেগের মৃত্য হয়। সম্রাট আলি কুলি বেগের পরিবারের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব রানী মাতা সেলিমা বেগমের হতে তুলে দেন। এই ঘটনার চার বছর পর মিনাবাজারে জাহাঙ্গীর মেহেরুন্নেসাকে দেখে মুগ্ধ হন এ

চীন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪) পটভূমি | Background of Cino-Japan War, 1894

চীন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪) পটভূমি: মেইজি শাসকরা জাপানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। এই প্রয়াসের পশ্চাতে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল জাপানে পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনকে রুদ্ধ করা এবং এই কাজে তারা নিঃসন্দেহে সফল হয়েছিলেন। মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার ২০ বছরের মধ্যেই জাপান অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়। এই সমৃদ্ধির অনিবার্য ফসল ছিল সাম্রাজ্যবাদের উত্থান। অন্যভাবে বলা যায় জাপানে পুঁজিবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের উন্মেষ ঘটেছিল। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাপান সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করেও তা বাতিল করেছিল। কোরিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চীন-জাপান যুদ্ধ (১৮৯৪) সংঘটিত হয়েছিল। কোরিয়া অভিযানের পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার পর জাপান কোরিয়ার সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার মাধ্যমে কোরিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়। দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ইঞ্চয়, পুসান ও ওনসান- কোরিয়ার এই তিনটি বন্দর জাপানের বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত হয়। ফলে চীনের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়, কারণ এতদিন করিয়া ছিল চীনের

মেইজি জাপানের পুঁজি সংগ্রহ | Meiji Reforms: Capital Collection

মেইজি জাপান কিভাবে পুঁজি সংগ্রহ করেছিল ? মেইজী পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর মেইজি নেতৃবৃন্দ জাপানের পুঁজিবাদী অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালান। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান ঝোঁকটি থাকে শিল্পায়নের দিকে। অর্থমন্ত্রী মৎসুকাটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, জাপানে আধুনিক শিল্প গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো পুঁজি সংগ্রহ। রাষ্ট্রের পুঁজি বৃদ্ধি করার কর্মসূচিতে দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল - কর ব্যবস্থার  পরিবর্তন ও ঋণ সৃষ্টি করা।  জাপানের রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমিকর। ভূমিকর প্রদানের ক্ষেত্রে মুদ্রার মাধ্যমে কর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৮৮০ -র দশকে মৎসুকাটার মুদ্রা হ্রাস নীতির ফলে জিনিসপত্রের দাম কমে যায় এবং এর ফলে একদিকে কৃষকরা মুদ্রার মাধ্যমে কর দিতে সমস্যায় পড়ে অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় হেরে যায়। কিন্তু এরই ফলে বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় উপায়টি ছিল ঋণের মাধ্যমে। বৈদেশিক ঋণের ভূমিকা ছিল এক্ষেত্রে গৌণ। মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে জাপান মাত্র দুইবার ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু

মেইজি শিক্ষা ব্যবস্থা | Meiji Reforms: Education

মেইজি শিক্ষা ব্যবস্থা জাপানে পশ্চিমী সভ্যতাভিত্তিক সমাজ গঠন সার্থক করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থারও সংস্কার দরকার-- মেইজি নেতারা তা সহজেই উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তারা পশ্চিমি ধাঁচে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কাজে উদ্যোগী হন। মেইজি শিক্ষা সংস্কারের মূলত তিনটি দিক ছিল। প্রথমত, পশ্চিমী দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা, দ্বিতীয়ত, জাপানি ছাত্রদের পাশ্চাত্য দেশে শিক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো, যাতে সম্রাট ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত এবং দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তোলা যায়। পাশ্চাত্য দেশের শিক্ষার্থী পাঠাবার বিষয়টি অবশ্য শোগুন যুগ থেকেই আরম্ভ হয়েছিল। মেইজি আমলে এই বিষয়টির ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিশিষ্ট মেইজি নেতা যেমন ইটো হিরোবুমি, মারি আরোনারি, ইনোয়ুয়ে প্রমুখ পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্য ইউরোপে পাড়ি দিয়েছিলেন। ঐ একই উদ্দেশ্যে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের জাপানে আমন্ত্রণ করা হয়। ১৮৮৫ খ্রিঃ ইউরোপ থেকে মোট ৩৪ জন খনি বিশেষজ্ঞ আনা হয়েছিল। R.H. Brangton  নামে একজন ইংরেজ বিজ্ঞানীকে নৌ শিল্পের উন্নতির উদ্দেশ্যে জাপানে আনা হয়েছি