মেইজি জাপান কিভাবে পুঁজি সংগ্রহ করেছিল ?
মেইজী পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর মেইজি নেতৃবৃন্দ জাপানের পুঁজিবাদী অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালান। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান ঝোঁকটি থাকে শিল্পায়নের দিকে। অর্থমন্ত্রী মৎসুকাটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, জাপানে আধুনিক শিল্প গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো পুঁজি সংগ্রহ। রাষ্ট্রের পুঁজি বৃদ্ধি করার কর্মসূচিতে দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল -কর ব্যবস্থার পরিবর্তন ও ঋণ সৃষ্টি করা।
জাপানের রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমিকর। ভূমিকর প্রদানের ক্ষেত্রে মুদ্রার মাধ্যমে কর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৮৮০ -র দশকে মৎসুকাটার মুদ্রা হ্রাস নীতির ফলে জিনিসপত্রের দাম কমে যায় এবং এর ফলে একদিকে কৃষকরা মুদ্রার মাধ্যমে কর দিতে সমস্যায় পড়ে অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় হেরে যায়। কিন্তু এরই ফলে বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয় উপায়টি ছিল ঋণের মাধ্যমে। বৈদেশিক ঋণের ভূমিকা ছিল এক্ষেত্রে গৌণ। মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে জাপান মাত্র দুইবার ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু ঋণের অধিকাংশ সংগৃহীত হয়েছিল দেশের মানুষের মধ্যে ঋণপত্র ও তনসুক বিক্রির মাধ্যমে। ১৯২০ খ্রিঃ পর থেকে জাপান বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশী পুঁজির ওপর ঝুঁকেছিল। তবে ততদিনে একটি নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল, যাতে বিদেশী পুঁজিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছিলো।
জন হ্যালিডে জাপানে পুঁজি সংগ্রহের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থার কথা বলেছিলেন। সেটি হল স্বল্প মজুরি দানের মাধ্যমে শ্রমিক শোষণ। শিল্পায়নের গোড়ার দিকে স্বল্প মজুরির প্রতিবাদে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছিল। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র চরম হিংসের আশ্রয় নিয়ে আন্দোলনগুলিকে দমন করেছিল। উপরন্তু আইন করে সেই হিংসাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এভাবে দীর্ঘদিন শ্রমিকদের অল্প মজুরিতে খাটিয়ে শিল্পপতিরা মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছিল।
এগুলো ছাড়াও চীন-জাপান যুদ্ধ এবং বক্সার বিদ্রোহের জন্য চীন থেকে প্রাপ্ত বিশাল ক্ষতিপূরণের অর্থ জাপানের পুঁজিকে পুষ্ট করেছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন