সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভার্সাই সন্ধি | The Treaty of Versailles

ভার্সাই সন্ধি  ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলে ছিল। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮ জুন প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে জার্মানির সঙ্গে বিজয়ী শক্তিবর্গের যে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা ভার্সাই সন্ধি নামে পরিচিত। ভার্সাই চুক্তি ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে বিপুল পরিবর্তন ঘটায়। প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে মূল ভূমিকায় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলসনের চোদ্দ দফা নীতির শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এই আদর্শ গুলির উপরে জোর দিয়ে ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলি নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেগুলি কতটা অনুসৃত হয়েছিল তা আলোচনা করা যেতে পারে।   জার্মানি উইলসনের চোদ্দ দফা ঘোষণার প্রতি আশ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু প্যারিসে শান্তি সম্মেলনে আসলে মিত্রশক্তি বর্গ জার্মানির উপর প্রতিশোধের মনোভাব প্রকাশ করেছিল। পরাজিত শত্রুর প্রতি বিদ্বেষ, ক্ষতিপূরণ আদায়, তার উপনিবেশ গুলির প্রতি লোভ এবং বলশেভিক ভীতি মিত্রশক্তির কার্যকলাপকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিকে দুর্বল করে ইউরোপের শক্তি সাম্য ফিরিয়ে আনা। উইলসনের আ...

মুঘল রাষ্ট্রের প্রকৃতি | The Nature of the Mughal State

 মুঘল রাষ্ট্রের প্রকৃতি  ভারতে মুঘল শাসনের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কের প্রধানতম দিক মুঘল রাষ্ট্র কি ধর্মাশ্রয়ী বা Theoeracy? যদি না হয় তাহলে কি স্বৈরাচারী? আর যদি স্বৈরাচারী হয় তাহলে সেটা কি নিরঙ্কুশ নাকি জনকল্যাণমূলক?  মুঘল রাষ্ট্র কতটা সামরিক ও কতটা অভিজাততান্ত্রিক তা-ও বিতর্কের বিষয়। ঐতিহাসিক শ্রীরাম শর্মা এবং ইশতিয়াক হুসেন কুরেশি মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শ্রীরাম শর্মা তাঁর The Religious Policy of Mughal Emperor গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে মুঘল শাসকরা প্রত্যেকে ছিলেন ধর্ম গোঁড়া একমাত্র আকবর ছাড়া। তিনি সবচেয়ে বেশি আঙ্গুল তুলেছেন অরঙ্গজেবের দিকে। ধর্মীয় বিদ্বেষবসত কারণে আকবর থেকে ঔরঙ্গজেব সকলেই শাসনব্যবস্থায় হিন্দুদের নিয়োগ করতে চাইতেন না। তাই দরবারে হিন্দুর সংখ্যা ছিল কম। হিন্দুদের কাছ থেকে নিপীড়নমূলক জিজিয়া আদায় করতেন এবং মন্দির ধ্বংস সহ হিন্দুদের নানা অকারণ হেনস্তার শিকার হতে হত। কিন্তু আলীগড় ঐতিহাসিক আতাহার আলি উক্ত গ্রন্থের সমালোচনা করে যা প্রকাশিত হয়েছে  ইরফান হাবিব সম্পাদিত মধ্যকালীন ভারত- এর দ...

ইতালির ঐক্য আন্দোলন ও কাভ্যুর | The Italian Unification Movement and Cavour

ইতালির ঐক্য আন্দোলন ও কাভ্যুর  উনিশ শতকের ইতালির ঐক্য আন্দোলন বিশ্ব ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ইতালি ছিল বহুধাবিভক্ত, যাকে মেটারনিক ভৌগোলিক সংজ্ঞামাত্র বলে উল্লেখ করেছেন। নেপোলিয়নের তরবারি জোরে ইটালি একবার এক হয়েছিল, তবে তা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া ছিল না । নেপোলিয়নের সময়েই ইটালিতে নবজাগরণের সূত্রপাত হয়েছিল, যা রিসর্জিমেন্টো  নামে পরিচিত এবং এর অনুপ্রেরণা ছিল ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ। নেপোলিয়নের পতনের পর ভিয়েনা সম্মেলনে মেটারনিক আবার ইটালিকে একাধিক অঞ্চলে বিভক্ত করেছিল। কিন্তু ইতালির জাতীয়তাবাদকে রুখে দেওয়া সম্ভব হয় নি। একাধিক গুপ্ত সমিতি গড়ে উঠেছিল যেগুলির মধ্যে সবথেকে প্রভাবশালী ছিল কার্বোনারি নামক একটি গুপ্ত সমতি। এই পরিস্থিতিতে জোসেফ মাজ্জিনির আবির্ভাব এবং তাঁর জাতীয়তাবাদি কার্যকলাপ ইতালির ঐক্য আন্দোলনের ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করে, যার উপর দাঁড়িয়ে কাভ্যুর ইতালির ঐক্যকে বাস্তবায়িত করতে পেরেছিলেন।  অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে কাভ্যুরের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে প্রবেশের আগেই ইতালির জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কার্বোনারির সন্ত্রাসবাদ, মাজ্জিনির জাতীয়তা...

১৮৫৭ এর পূর্ববর্তী কৃষক ও উপজাতি সংগ্রাম | Peasant and Tribal Movements before 1857

  ১৮৫৭ এর পূর্ববর্তী কৃষক ও উপজাতি সংগ্রাম  ভারতের গ্রামীন সমাজ উপনিবেশিক শাসনের প্রবঞ্চনার জবাব দিয়েছিল উপনিবেশিক শাসনকে অস্বীকার করে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে। মুঘল আমলেও ভারতে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল। যখন মুঘল কর্তাদের সাথে বোঝাপড়াকে ছাপিয়ে রাজস্ব ধার্য বেড়ে চলে, যখন কৃষকদের ন্যূনতম গ্রাসাচ্ছদনে হাত পড়ে এবং যখন আঞ্চলিক মুঘল আমলারা অত্যাচারী হয়ে ওঠে তখন কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। অত্যাচারের এই প্রবণতা আরও ছড়িয়ে পড়ে, যখন উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং একের পর এক রাজস্বব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়। কাজেই উপনিবেশিক শাসনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই কৃষক বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকেই বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল অসন্তুষ্ট স্থানীয় শাসক, মুঘল আধিকারিক কিংবা ভূমিহারা জমিদারদের নেতৃত্বে। এরা স্থানীয় কৃষক সম্প্রদায়ের সমর্থনও পেত, কারণ কৃষকরা চাইত পুরাতন আমলকে ফিরিয়ে আনতে। এধরনের বিদ্রোহগুলির মধ্যে রাজা চৈত সিং ও অযোধ্যার অন্যান্য জমিদারদের বিদ্রোহ (১৭৭৮-৮১), অযোধ্যার সিংহাসনচ্যুত নবাব ভিজিয়ের আলীর বিদ্রোহ (১৭৯৯)। এছাড়া রয়েছে ১...

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ও নেপলিয়নের পতন | The Continental System and the Fall of Napoleon

  মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ও নেপলিয়নের পতন নেপোলিয়নের প্রধান শত্রু ছিল ইংল্যান্ড। ১৮০৫ থেকে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নেপোলিয়ন প্রায় সমস্ত ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে পদানত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ছিল অপরাজেয়। প্রথম দিকে নেপোলিয়ন সরাসরি ইংল্যান্ড আক্রমণ করে জয়লাভের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১৮০৫ সালের ট্রাফালগারের যুদ্ধে ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ বাহিনী ইংল্যান্ডের হাতে শুধু পরাজিতই নয়, বিধ্বস্ত হয়েছিল। এরপর থেকে নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে সরাসরি আক্রমণ করার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষনা করেন যা মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ইংল্যন্ডের অর্থনৈতিক ধ্বংসসাধন এবং ফরাসি অর্থনীতির বিকাশসাধন– এই দ্বিমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা চালু করেন। ইংল্যান্ডের শক্তির প্রধান উৎস ছিল তার ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ও বাণিজ্য সম্পদ। ইউরোপের দেশগুলি ছিল ইংল্যান্ডের শিল্পজাত দ্রব্যের প্রধান ক্রেতা। তাই ইউরোপের বন্দর সমূহে ইংল্যান্ডের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ইংল্যান্ডের বাণিজ্য নষ্ট হবে এবং ওর অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। অন্যদিকে ওইসব আমদা...

ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলী | Functions of the French Constituent Assembly

  ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলী  বিপ্লবের প্রথম ধাক্কায় ফরাসি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, সুবিধাভোগী অভিজাতন্ত্র এবং যাজকতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এই পটভূমিতে সংবিধান সভা ফ্রান্সের জন্য নতুন ধরনের রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের কাজে হাত দিয়েছিল। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে সংবিধানসভা সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে। প্রায় ২৩ মাস ধরে এই প্রক্রিয়া চলে এবং ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে সংবিধান রচনার কাজ শেষ হয়। সংবিধান সভা সংবিধানের মুখবন্ধ হিসাবে Declaration for the Rights of Men and Citizen (মানুষ ও নাগরিকদের অধিকারের) ঘোষণা করেছিল। এটাই ছিল নতুন সংবিধানের ভিত্তি। এই ঘোষণা অনুসারে আইন, কর ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সকলের সমতার নীতি ঘোষিত হয়েছিল। এই ঘোষনার মাধ্যমে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকা্‌ ধর্মচরণের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়েছিল। সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গণসার্বভৌমত্ব এবং আইনের উৎস হিসেবে গণের ইচ্ছাকে মেনে নেওয়া হয়েছিল। অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। তাই ঐতিহাসিক Aulard এই ঘোষনাকে পুরাতনতন্ত্রের মৃ...