চোলদের নৌসাম্রাজ্য | Chola Naval Kingdom
খ্রিস্টীয় দশম শতকে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে চোলরা ছিল বিশেষ শক্তিশালী। চোল রাজাদের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল সামরিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ। চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ এর সূচনা করেন চোল রাজ প্রথম রাজরাজ। পরবর্তীকালে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নেতৃত্বে চোলদের সামুদ্রিক ক্রিয়া-কলাপ আরো বিস্তৃত হয়।
চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ এর উদ্দেশ্য কি ছিল এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। আবার কেউ কেউ মনে করেন সুপরিকল্পিত কোনো কর্মসূচি অনুযায়ী চোলরা সামুদ্রিক কার্যকলাপ চালায় নি। একথা সত্য যে, সামুদ্রিক প্রাধান্য লাভের ফলে চোল রাজ্যের বাণিজ্য বিস্তৃত হয়েছিল। তামিল ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ ভারতে বণিক সংঘ গড়ে তুলেছিল। চীনা তথ্য থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে, চোল রাজ্যের সাথে চীনের বাণিজ্য বিনিময় চলত। কেমব্রিজ ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, চোল রাজ প্রথম রাজরাজ মালয় উপদ্বীপ আক্রমণ করে সেখানকার বাণিজ্য কেন্দ্র গুলি ধ্বংস করেছিলেন। সবসময়েই যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য চোলদের সামুদ্রিক ক্রিয়া-কলাপ সীমাবদ্ধ থাকত, তা বলা চলে না।
চোলদের সামুদ্রিক অভিযান এর সূচনা করেন প্রথম রাজ রাজ(৯৮৫- ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে)। তিনি উন্মুক্ত সমুদ্রে অবস্থিত ইলম রাজ্য জয় করেছিলেন। "তিরুবালাঙ্কুরু তাম্র পট্টে" দাবি করা হয়েছে যে তিনি সিংহল (ইলমমন্ডলম) দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার দখল করা অঞ্চলের নাম দেন 'মুমুন্ডিচোলমন্ডলম'। অতঃপর রাজ রাজ সিংহলের রাজধানী অনুরাধাপুর ধ্বংস করেন এবং নতুন রাজধানী পোলন্নরাবতে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি একটি পাথরের শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন যা আজও বর্তমান। চোল নৌ-বাহিনী সিংহলের ব্যস্ত বন্দর মহাতিটধ দখল করে নতুন নাম দেয় রাজরাজপুর। রাজরাজের শেষ অভিযান ছিল ভারত মহাসাগরের মালদ্বীপ পুঞ্জের বিরুদ্ধে। রোমিলা থাপার এর মতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যে আরবদের কর্তৃত্ব শিথিল করার জন্যই রাজরাজ মালদ্বীপপুঞ্জের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন।
রাজ রাজের পুত্র রাজেন্দ্র চোলের আমলেও সামুদ্রিক অভিযান অব্যাহত ছিল। তিনিও সিংহল অভিযান করে প্রচুর ধন-সম্পদ সংগ্রহ করে এনেছিলেন। তবে সিংহলের উপর চোলদের স্থায়ী কর্তৃত্ব চলেনি। সিংহলের রাজ পঞ্চম মহেন্দ্রের পুত্র কাল্যপ অল্পকালের মধ্যে সিংহলের দক্ষিণভাগ পুনর্দখল করতে পেরেছিলেন। রাজেন্দ্র চোলের নেতৃত্বে চোল সেনা বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম উপকূল ধরে গঙ্গা নদীর মোহনা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল এবং গঙ্গার পবিত্র জল নিয়ে চোল রাজ্যে ফিরে গিয়েছিল। এই কারণে তিনি গঙ্গাইকোন্ডচোলপুরম বা গঙ্গাবিজেতা চোল নামে অভিহিত হতেন। শ্রী বিজয় রাজ্যের বিরুদ্ধেও সফল হন তিনি।
Thanks for reading.
সামুদ্রিক
উত্তরমুছুন