সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য


Please visit our Homepage and subscribe us.

Suggested Topics


|| Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র ||



সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়।



অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ



ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এই জাহাজ লুট করে। মতান্তরে ওই জাহাজে বাণিজ্যরত আরবি বণিকদের পরিবারবর্গ ছিল। যাইহোক এই লুণ্ঠনের সমস্ত দায় ইউসুফ তদানীন্তন সিন্ধু দেশের রাজা দাহিরের উপর চাপিয়ে দেন এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। দাহির ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করলে ইউসুফ সিন্ধু দেশে অভিযান করেন। প্রথম দুটি অভিযান ব্যর্থ হয়। এই দুই অভিযানের সেনাপতি ছিলেন যথাক্রমে ওবায়দুল্লাহ ও বুদাইল। 712 খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় অভিযানে রাওয়ের যুদ্ধে দাহির পরাজিত হন। জানা যায় যে স্থানীয় বৌদ্ধরা এবং কিছু রাজকর্মচারী দাহিরের বিরুদ্ধাচারণ করেছিল এবং বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।


অভিযানের গুরুত্ত্ব



আরবরা দীর্ঘ 300 বছর ধরে সিন্ধুদেশ রাজত্ব করেছিল। কিন্তু এর বাইরের বৃহত্তর ভারত বর্ষ তাদের শাসনের বাইরেই রয়ে গেল। তারা কেন সাম্রাজ্য বিস্তার করল না বা করতে পারল না সে সম্পর্কে অনেকেই মনে করেন যে, প্রতিহাররা সে সময় শক্তিশালী ছিল বলে আরবরা আর চেষ্টা করেননি। তবে এর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যে মতামত, সেটি হল খলিফা তন্ত্রের এই সময়ের পরিবর্তন এসেছিল। আব্বাসীয় খলিফারা ক্ষমতায় এলে তরবারির থেকে কলম কে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিল। তাই সামরিক অভিযান অবহেলিত হয়েছিল। তুলনায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা বৃদ্ধি পেয়েছিল। আরবদের সাম্রাজ্য বিস্তারের ব্যর্থতার জন্য ঐতিহাসিক স্ত্যানলি লেনপুন আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ঘটনাকে ''বন্ধ্যা বিজয় কাহিনী'' বলে উল্লেখ করেছেন। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সিন্ধু দেশে আরবদের অভিযান ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ইসলামের বীজ বপন করেছিল।


রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এই অভিযান যে সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই ঘটনা ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে পেরেছিল। আব্বাসীয় খলিফাগন ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অনুরক্ত হন। ভারতীয় পণ্ডিতদের আমন্ত্রিত করে বাগদাদে খলীফার দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। মানাকা নামে একজন চিকিৎসকের কথা জানা যায়, যিনি হারুন-অল-রশীদকে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে সারিয়ে তুলেছিলেন। ভারতীয় গ্রন্থগুলোকে সংস্কৃত থেকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এমন দুটি গ্রন্থ হল বহ্মসিদ্ধান্ত ও খণ্ডখাদ্যক।আরব বণিকদের মারফত ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। ভারতীয় স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্র শিল্পের দ্বারাও তারা প্রভাবিত হয়। আরবদের সিন্ধু বিজয়ের সূত্র ধরেই আরব মনীষী আলবেরুনি ভারতে আসেন এবং তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ তহকক-ই-হিন্দ আজও ভারতের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।





Thanks for reading





Abdul Mojaffar Mondal
Assistant Professor, Sonarpur Mahavidyalaya

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক