Friends, if you like this post please comment and share it.
মুঘল কারখানা | Mughal Karkhana
মুঘল যুগে আজকের মত বৃহদায়তন শিল্পের অস্তিত্ব ছিল না। তবে গ্রামীণ কুটির শিল্প ছাড়াও সরকারি তত্ত্বাবধানে বা কোন অভিজাতের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে অতি উন্নত মানের উৎপাদন ব্যবস্থা সে যুগে চালু ছিল তাকে সমসাময়িক বিবরণীতে 'কারখানা' নামে অভিহিত করা হয়েছে। 'আইন-ই-আকবরী' ও 'আকবরনামা' গ্রন্থে 'কারখানা'র উল্লেখ রয়েছে।
ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যে এই ধরনের রাষ্ট্রীয় কারখানার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মৌর্যদের শাসনে এবং সুলতানি শাসনে এরকম কারখানা গড়ে তোলা হত। অভিজাত তথা শাসক শ্রেণীর বিলাসবহুল জীবন যাত্রায় অজস্র পণ্যের প্রয়োজন হত। বৃহৎ আয়তন উৎপাদন ব্যবস্থার অভাবে রাষ্ট্রই সর্ববৃহৎ উৎপাদকে পরিণত হয়েছিল।
প্রস্তাবিত টপিকগুলি Suggested Topics
|| মুঘল হারেম || Mughal Harem ||, || ঝরোকা দর্শন || Jharoka ||, || মুঘল জমিদার || Mughal Jamindar ||, || মুঘল কৃষক || Mughal Cultivators ||, ||Bell of Justice|| বিচারের ঘণ্টা||
প্রস্তাবিত টপিকগুলি Suggested Topics
|| মুঘল হারেম || Mughal Harem ||, || ঝরোকা দর্শন || Jharoka ||, || মুঘল জমিদার || Mughal Jamindar ||, || মুঘল কৃষক || Mughal Cultivators ||, ||Bell of Justice|| বিচারের ঘণ্টা||
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে বিদেশিদের বিবরণ এবং ফ্যাক্টরি রেকর্ডস থেকে মুঘল যুগের দুটি ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত কুটির শিল্প ও দ্বিতীয়ত কারখানা উৎপাদন। বার্নিয়ে ও পেলসার্ট এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, এ যুগের মানুষের চাহিদা ছিল যৎসামান্য। তাদের সরল অনাড়ম্বর জীবনে অল্প চাহিদা-ই স্বাভাবিক। সে যুগে শিল্প বলতে বয়ন শিল্প, হাতির দাঁতের শিল্প, কার্পেট শিল্প, মৃৎ শিল্প প্রভৃতি। ব্যবসায়ীরা সরাসরি বা দালাল মারফৎ কুটির শিল্পীদের কাছ থেকে এইসব পণ্য সংগ্রহ করত। পক্ষান্তরে অভিজাত ও শাসক শ্রেণীর লোকেদের বিলাসবহুল জীবন যাত্রার তাগিদে প্রাসাদ সংলগ্ন এলাকায় সম্রাটের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন এলাকার কুশল কারিগর দের সংগ্রহ করে এনে মূল্যবান ও শৌখিন দ্রব্যের কারখানা স্থাপন করতেন।
কারখানার অতি উন্নত মানের দ্রব্য প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতি ছিল সেকেলে এবং অতি সাধারন মানের। প্রস্তুত দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল টুপি, কিংখাবের পোশাক, জুতো, ব্লাউজ, কারুকার্যময় বস্ত্র খন্ড, দোপাট্টা, রত্নখচিত অলংকার, কটিবন্ধ, ঘোড়ার জীন প্রভৃতি। সারাদেশের এমনকি বিদেশ থেকেও কারিগর আনা হতো। মজুরির বিনিময়ে এরা কাজ করত। তবে স্বাধীন কারিগরদের মত এরা ছিল না। সম্রাটের তত্ত্বাবধানে কাঁচামাল আনা হতো। কোন পণ্যের নকশা কেমন হবে তার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাদশাহ নিতেন। কারখানার পণ্য কখনোই বাইরে বিক্রি হত না। দরবারে ও রাজঅন্তঃপুরে এবং রাজকীয় উপহারের জন্যই এগুলি তৈরি হতো।
কেন্দ্রীয় রাজধানী ছাড়াও প্রাদেশিক রাজধানীতেও রাষ্ট্রীয় কারখানা স্থাপিত হত। আকবরের সময় আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি, লাহোর, আমেদাবাদ এবং অন্যত্র বেশ কয়েকটি কারখানা তৈরি হয়েছিল। শাজাহান এবং আওরঙ্গজেবের সময়েও দিল্লি, বুরহানপুর, অওরঙ্গাবাদ ও কাশ্মীরে কারখানা তৈরি হয়েছিল। গোলকুণ্ডার সুলতানের নিজস্ব কারখানা ছিল। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিও কারখানা তৈরি করতেন। কাশিমবাজারে ডাচরা একটি সিল্কের কারখানা তৈরি করেছিল।
কারখানার পরিচালন ব্যবস্থা ছিল আঁটোসাঁটো। দুজন প্রধান পরিচালক, একজন হিসাব রক্ষক, একজন মুসারিফ এবং অন্যান্য কয়েকজন কর্মচারী নিয়োজিত হতেন। প্রত্যেক কারখানায় পরিচালক অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ হতেন। কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করার কাজ করতেন সম্রাট নিজেই। আকবর স্বয়ং উৎপাদন কর্মে অংশ নিতেন। অস্ত্র কারখানায় তাঁর উল্লেখযোগ্য তত্ত্বাবধানে উন্নত মানের বন্দুক তৈরি করা হয়েছিল। জাহাঙ্গীর এর জন্য ওস্তাদ দাউদ নামে জনৈক ব্যক্তি উল্কাপিন্ডের পাথরের সাথে লোহা মিশিয়ে একটি তরবারি, একটি ছুরি ও একটি ছুরিকা তৈরি করে দিয়ে ছিলেন।
১৮ শতকে কারখানা ব্যবস্থা ক্রমশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ১৭শতকের একটি রচনায় ৬৯ টি কারখানার উল্লেখ পাওয়া যায়। আঠারো শতকের রচনায় ৩৬ টি কারখানার উল্লেখ আছে। অযোধ্য, বাংলা এবং হায়দ্রাবাদের নবাব ও নিজাম দের নিজস্ব কারখানা ছিল। সম্ভবত রাজনৈতিক ডামাডোল, অভিজাত শ্রেণীর অবক্ষয় এবং ইউরোপীয় পণ্যের আমদানি বৃদ্ধির ফলে কারখানা গুলি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যায়।
কারখানাগুলিকে কেন্দ্র করে মোগল যুগে শহর গড়ে উঠত। কারখানায় এবং তার চারপাশে প্রচুর লোকের সমাগম হতো। কাঁচামালের জোগান দিতে ব্যবসায়ীরাও সেই সব স্থানে আসতেন। ফলে শহর গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠত।
কারখানার দৌলতে মোগল দরবারের আভিজাত্য ও জৌলুসের খবর এশিয়ার মাটি ছাড়িয়ে ইউরোপ ও বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু কারিগরদের অবস্থা কেমন ছিল সেই সম্পর্কে তথ্য খুবই কম। ইউরোপীয় বিবরনে এদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি এবং অল্প মজুরির কথা বলা হয়েছে। আবুল ফজল এদের স্বাধীনতা হরণের কথা স্বীকার করলেও আর্থিক নিরাপত্তার কথা বলেছেন। ইরফান হাবিব দেখিয়েছেন এদের যা উপার্জন ছিল তা দিয়ে ডাল, রুটি, দুধ ,দই এর ব্যবস্থা করতে পারত। আগ্রার শ্রমিকরা ঘী খেত। অর্থাৎ কারিগরদের উপার্জন যে জীবন ধারণের উপযোগী ছিলনা, তা বলা যায় না।
--------------------------------------------
Thanks for reading.
কারখানার পরিচালন ব্যবস্থা ছিল আঁটোসাঁটো। দুজন প্রধান পরিচালক, একজন হিসাব রক্ষক, একজন মুসারিফ এবং অন্যান্য কয়েকজন কর্মচারী নিয়োজিত হতেন। প্রত্যেক কারখানায় পরিচালক অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ হতেন। কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করার কাজ করতেন সম্রাট নিজেই। আকবর স্বয়ং উৎপাদন কর্মে অংশ নিতেন। অস্ত্র কারখানায় তাঁর উল্লেখযোগ্য তত্ত্বাবধানে উন্নত মানের বন্দুক তৈরি করা হয়েছিল। জাহাঙ্গীর এর জন্য ওস্তাদ দাউদ নামে জনৈক ব্যক্তি উল্কাপিন্ডের পাথরের সাথে লোহা মিশিয়ে একটি তরবারি, একটি ছুরি ও একটি ছুরিকা তৈরি করে দিয়ে ছিলেন।
১৮ শতকে কারখানা ব্যবস্থা ক্রমশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ১৭শতকের একটি রচনায় ৬৯ টি কারখানার উল্লেখ পাওয়া যায়। আঠারো শতকের রচনায় ৩৬ টি কারখানার উল্লেখ আছে। অযোধ্য, বাংলা এবং হায়দ্রাবাদের নবাব ও নিজাম দের নিজস্ব কারখানা ছিল। সম্ভবত রাজনৈতিক ডামাডোল, অভিজাত শ্রেণীর অবক্ষয় এবং ইউরোপীয় পণ্যের আমদানি বৃদ্ধির ফলে কারখানা গুলি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যায়।
কারখানাগুলিকে কেন্দ্র করে মোগল যুগে শহর গড়ে উঠত। কারখানায় এবং তার চারপাশে প্রচুর লোকের সমাগম হতো। কাঁচামালের জোগান দিতে ব্যবসায়ীরাও সেই সব স্থানে আসতেন। ফলে শহর গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠত।
কারখানার দৌলতে মোগল দরবারের আভিজাত্য ও জৌলুসের খবর এশিয়ার মাটি ছাড়িয়ে ইউরোপ ও বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু কারিগরদের অবস্থা কেমন ছিল সেই সম্পর্কে তথ্য খুবই কম। ইউরোপীয় বিবরনে এদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি এবং অল্প মজুরির কথা বলা হয়েছে। আবুল ফজল এদের স্বাধীনতা হরণের কথা স্বীকার করলেও আর্থিক নিরাপত্তার কথা বলেছেন। ইরফান হাবিব দেখিয়েছেন এদের যা উপার্জন ছিল তা দিয়ে ডাল, রুটি, দুধ ,দই এর ব্যবস্থা করতে পারত। আগ্রার শ্রমিকরা ঘী খেত। অর্থাৎ কারিগরদের উপার্জন যে জীবন ধারণের উপযোগী ছিলনা, তা বলা যায় না।
--------------------------------------------
Thanks for reading.
Mrima Debnath,
UG Student, Sonarpur Mahavidyalaya.
তখনকার মানুষজন তথাকথিত মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষরা দিনের বেলায় মাঠে কাজে যেতেন সন্ধ্যেবেলায় ফিরে একটু খিচুরি সঙ্গে অল্প পরিমাণ মাখন সহযোগে আহার করতেন। গম ছিল কিন্তু নুনের থেকে সে সময় তুলনামূলক সস্তা অর্থাৎ নুনের দাম বেশি ছিল। সম্ভবত এখান থেকেই প্রবাদ কথাটি এসেছে 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়'।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনGood writing
উত্তরমুছুনধন্যবাদ স্যার
উত্তরমুছুন