সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আকবরের গুজরাট অভিযান | Akbar Gujrat Conquest

 আকবরের গুজরাট অভিযান 

বৈরাম খাঁর অভিভাবত্বকালেই আকবরের রাজ্য বিস্তারের সূচনা হয়েছিল। বৈরাম খাঁ- র ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে পদচ্যুতির পর আকবরের প্রথম সামরিক অভিযান পরিচালিত হয় মালব রাজ্যের বিরুদ্ধে । মালব ও রাজস্থান অধিকার করার পর আকবর পশ্চিম সমুদ্র উপকূলে তার আধিপত্য সম্প্রসারণে উৎসাহিত হন। তিনি ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট অভিযান করেন।

গুজরাট ছিল শষ্য ও সম্পদে সমৃদ্ধ শালী প্রদেশ। সুলতানী যুগ থেকেই বস্ত্র শিল্পে গুজরাটের সুনাম ছিল। গুজরাটের উপকূল ভাগে কয়েকটি গুরুতবপূর্ণ বন্দর ছিল। তাই গুজরাটের প্রতি মুঘলদের দৃষ্টি অনেক আগে থেকেই ছিল। হুমায়ুনও গুজরাট অভিযান করে ছিলেন। আকবরের গুজরাট অভিযানের পশ্চাতে নিম্ন লিখিত কারণ গুলি উল্লেখ করা যায়ঃ

i) বিদ্রোহী মির্জারা গুজরাটে আশ্রয় নিয়েছিল।

ii) গুজরাট ছিল সমুদ্রপথে বহিঃ দেশের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র।

iii) পর্তুগিজদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখার জন্য গুজরাট অধিকার করার দরকার ছিল।

iv) সর্বোপরি গুজরাটের আর্থিক সমৃদ্ধি ও বাণিজ্যঘাঁটিগুলি আকবরকে গুজরাট দখলে উৎসাহিত করে ছিল।

সুলতান মুজাফফর শাহের শাসনকালে গুজরাটে অভ্যন্তরীণ গোলমাল চলছিল। এমনকি কিছু আমির আকবরকে গুজরাট আক্রমণের জন্য আহবান জানিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতি আকবর গুজরাট আক্রমণ করেন। গুজরাট সহজেই আকবরের হস্তগত হয়। মির্জা গোষ্ঠীর বিদ্রোহীদের পরাজিত করে গুজরাটের শাসন ভার আজম খানের উপর নস্ত করে তিনি ফতেপুর সিক্রিতে ফিরে আসেন। কয়েক মাস পর গুজরাট আবার অশান্ত হয়ে উঠলে আকবর রাজা টোডরমলকে গুজরাটে প্রারণ করে। বিচক্ষণ টোডরমলের হতে গুজরাট শান্ত হয়, গুজরাট মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম সুবায় পরিণত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্যযোগ্য টোডরমল গুজরাটেই প্রথম জমি জরিপ করে রাজস্ব ব্যাবস্থার সুবন্দোবস্ত করেন। এর ফলে গুজরাট থেকে বছরে ৫০ লক্ষ টাকা দরবারে প্রেরণ করা সম্ভব হয়।

আকবরের গুজরাট বিজয় নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ যেমনঃ 

i) সমুদ্র এবং পশ্চিম উপকূলের বন্দর গুলির উপর আধিপত্য প্রতিষ্টিত হওয়ায় মুঘলদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং দরবারে গুজরাট শাসকের গুরুত্ব বেশি বৃদ্ধি পায়।

ii) গুজরাট জয়ের ফলেই মুঘলরা পর্তুগিজদের সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হয়।

iii) পর্তুগিজরা হজ যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রেরণ করেন। পর্তুগিজদের দ্বারা আকবরের ব্যাক্তিগত চরিত্রও প্রভাবিত হয়।

iv) সমুদ্র উন্মুক্ত হওয়ায় মুঘলরা নৌ বাহিনী গঠন করার সুযোগ লাভ করে।

V) গুজরাটেই মুঘলদের অভাবনীয় জাবতি ব্যবস্থার সূচনা হয়।

Vi) গুজরাট হস্তগত হওয়ার দাক্ষিনাত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...