সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আকবরের স্থাপত্য কীর্তি | Mughal Architecture under Akbar

আকবরের স্থাপত্য কীর্তি

মুঘল সম্রাটরা ছিলেন একান্তভাবে শিল্পমনস্ক। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতবর্ষে এক অভূতপূর্ব শিল্প সমন্বয় সাধনের সূচনা হয়েছিল। মুঘল স্থাপত্য শিল্পের গৌরবময় যুগের সূত্রপাত হয়েছিল আকবরের হাত ধরে। আকবরের পূর্বে বাবর ও হুমায়ুন যে শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না এমনটা নয়। তবে তাদের সময় নানান রাজনৈতিক সংকটের জন্য সম্ভবত তারা এ বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি করতে পারেননি। যাইহোক আকবর স্থাপত্য নির্মাণে চরম অনুরাগ দেখিয়েছিলেন। পারস্য ও বাগদাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গজনী হয়ে তুর্কি শাসকরা ভারতের মাটিতে যে ধারা বহন করে এনেছিলেন সেই ধারা আকবরের প্রচেষ্টাতেই প্রথম ভারতীয় জাতীয় ধারায় রূপান্তরিত হয়ে উৎকর্ষ লাভ করে। দেশীয় ও বিদেশী ধারার সংমিশ্রণে যে অভিনব শিল্পরীতির বিকাশ ঘটে তাকে ইন্দো-পারসিক শিল্পরীতি বলে অভিহিত করাই শ্রেয়।

আকবর আগ্রা, লাহোর ও এলাহবাদে তিনটি বিরাট দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। আগ্রা দুর্গের ভিতর প্রায় ৫০০ টি লাল বেলেপাথরের অট্টালিকা নির্মিত হয়েছিল। এই অট্টালিকা গুলির মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। আজও পর্যন্ত যেগুলি ঠিকই আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আকবরীমহল ও জাহাঙ্গীরীমহল। দুটি প্রাসাদের এই গঠনরীতি মোটামুটি এক এবং দুটিতেই ভারতীয় প্রভাব প্রধান হয়ে উঠেছে। এই প্রাসাদগুলির দেয়ালে হাতি, সিংহ, ময়ূর প্রভৃতির ছবিও অঙ্কিত হয়েছে।

আকবরের রাজত্বকালে নির্মিত দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধি ভবন অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি। এর নির্মাণ রীতিতে পারসিক রীতির প্রভাব বেশি। অট্টালিকার চারকোণে চারটি মিনার বা স্তম্ভ এবং একটি বিশিষ্ট ছোট গম্বুজ এই সমাধি ভবনের বৈশিষ্ট্য। 

ফতেপুর সিক্রিতে আকবর নগর পত্তন করে সেখানে বহু সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ভিন্সেন্ট স্মিথ ফতেপুর সিক্রিকে A romance in stone বলে অভিহিত করেছেন। প্রাসাদগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জামি মসজিদ, বুলন্দ দরওয়াজা, বীরবলের প্রাসাদ, অম্বরের রাজকুমারীর আবাসগৃহ, দেওয়ান-ই-খাস, সোনহলা মকাব, পঞ্চমহল প্রভৃতি। এছাড়াও আকবর লাহোর ও আগ্রায় বহু প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। 

আকবরের স্থাপত্য শিল্পে দেশীয় প্রভাবের প্রাধান্য হেতু এই রীতি কেবল দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা অন্যান্য স্থানীয় শিল্পরীতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পেরেছে। যেমন অম্বর রাজপ্রাসাদ, বিকানির রাজপ্রাসাদ ও যোধপুর রাজপ্রাসাদে আকবরের রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এমনকি বৃন্দাবনের হিন্দু মন্দিরগুলিও আকবরের রীতি গ্রহণ করেছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক