সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মার্চ, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মগধের উত্থান | Rise of Magadha

 মগধের উত্থান  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে ভারতবর্ষে বিশেষ করে উত্তর ভারতে ১৬ টি বৃহৎ জনপদের উত্থান ঘটে এগুলিকে মহাজনপদ বলা হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাশী , কোশল, বৎস ও অবন্তী। পূর্ব ভারতে বিহারের  দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মগধ তখনও একটি গৌন জনপদ হিসাবে পরিচিত ছিল। মহাজনপদ গুলি পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল এবং মগধ এই দ্বন্দ্বে অন্যান্যদের পরাজিত করে এক বিরাট সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে মগধের উত্থানের পিছনে ভোগলিক অনুকুল পরিবেশের পাশাপাশি হরযঙ্ক, শৈশুনাগ এবং নন্দ বংশের রাজাদের যোগ্য নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। নদী ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা মগধ ছিল প্রাকৃতিক ভাবে নিরাপদ একটি জায়গা। এর রাজধানী রাজগৃহ ছিল পাঁচটি পাহাড় এবং একটি প্রস্তর প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। গঙ্গা, শোন ও গণ্ডক নদী বিধৌত উর্বর পলিমাটি এই এলাকায় কৃষিজ উদবৃত্ত সৃষ্টি করেছিল। আবার এই নদীগুলির অবস্থান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে তুলেছিল। এই এলাকায় খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ছিল। লোহা ও তামা এখানে প্রচুর পাওয়া যেত। রামশরন শর্মা ও রোমিলা থাপার মনে করেন, খৃঃ পূঃ সপ্তম শতক নাগাদ এই এলাকার লোহার ...

ঔপনিবেশিক ভারতে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন | Women's Suffrage Movement in India

নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন নারী এবং রাজনীতি এই বিষয় দুটি আধুনিক ভারতের নারীবাদী সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফল। নারীর ভোটাধিকারের দাবি হলো তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ যা শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী নারীর ভোট অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কেবল হিন্দু সমাজের নারীর পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রচেষ্টা নয়, এটি ছিল এক সাধারণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা যা ভারতীয় পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক মুক্তিকে দৃঢ় করেছে। বিংশ শতাব্দীর ভারতে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি কেবল ভোটাধিকারের দাবি একমাত্র বিষয় ছিল না, স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশ্লেষণও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। নারী শিক্ষা ও তাঁর সীমিত সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উনবিংশ শতাব্দীর সংস্কারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। হিন্দু সমাজের অন্যতম কু-প্রথা ছিল বাল্যবিবাহ।  এছাড়াও বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ,পর্দাপ্রথা ,বিবাহ বিচ্ছেদ বা পুনবিবাহের অধিকারহীনতা-- এইসব কুপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। এর পরিণতি ছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হরি বিলাস সারদার বিল পাশ হওয়া, যাতে ব...

উপনিবেশিক ভারতে আধুনিক খেলাধুলার পটভূমি

উপনিবেশিক ভারতে আধুনিক খেলাধুলার পটভূমি খেলাধুলো আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও সংস্কৃতিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চায় বা ইতিহাস চিন্তায় খেলাধুলো কোনোদিন গভীর ও গৌরবের স্থান পায়নি। উপনিবেশিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে খেলা বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে। ১৯ ও ২০ শতকে ভারতে খেলার সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, দেশভাগ, শরণার্থী সমস্যা, কূটনীতি, বাণিজ্যিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলি খেলার বিবর্তনের ইতিহাসে প্রতিফলিত আছে। ভারতবর্ষে খেলাধুলার সামাজিক ইতিহাস আশ্রয়ী গবেষনার ঐতিহ্য বেশি দিনের নয়। যেখানে পশ্চিমী বিশ্ব অতীত ও বর্তমানের জনজীবনে খেলার গুরুত্বকে গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রথাগত সমাজবিজ্ঞান চর্চার অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেখানে এদেশে ভারতীয় সমাজে খেলার ভূমিকা নিয়ে গবেষণা এ যাবৎ খুবই সীমিত। আর যেটুকু লেখালিখি হয়েছে বা গবেষণা হয়েছে তা মূলত ক্রিকেট ও ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। ভারতবর্ষে আধুনিক খেলার প্রসারকে ইংরেজ উপনিবেশিক সংস্কৃতি আর বিনোদন চর্চার প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা য...

উপনিবেশিক ভারতের খেলা ও জাতীয়তাবাদ

উপনিবেশিক ভারতের খেলা ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্ক খেলাধুলো আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও সংস্কৃতিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চায় বা ইতিহাস চিন্তায় খেলাধুলো কোনদিনও গভীর ও গৌরবের স্থান পায়নি। উপনিবেশিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতে ও খেলা বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে। ১৯ ও ২০ শতকের ভারতের খেলার সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, দেশভাগ, শরণার্থী সমস্যা, কূটনীতি, বাণিজ্যিকতা বিভিন্ন খেলার বিবর্তনের ইতিহাসে প্রতিফলিত আছে। ভারতবর্ষে খেলাধুলার সামাজিক ইতিহাস আশ্রয়ী গবেষনার ঐতিহ্য বেশি দিনের নয়। যেখানে পশ্চিমী বিশ্বে অতীত ও বর্তমানের জনজীবনে খেলার গুরুত্ব গত ৩ দশকে প্রথাগত সমাজবিজ্ঞান চর্চার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেখানে এদেশে ভারতীয় সমাজে খেলা ভূমিকা নিয়ে গবেষণা এ যাবৎ খুবই সীমিত। আর যেটুকু বা লেখালিখি হয়েছে বা গবেষণা হয়েছে তা মূলত ক্রিকেট ও ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। পরাধীন ভারতে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি বা চরিত্র, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আন্দোলনের সীমারেখায় যে শুধু ...

উপনিবেশিক ভারতে খেলা ও সাম্প্রদায়িকতা

উপনিবেশিক ভারতে খেলা ও সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক খেলাধুলো আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও সংস্কৃতিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চায় বা ইতিহাস চিন্তায় খেলাধুলো কোনোদিন গভীর ও গৌরবের স্থান পায়নি। উপনিবেশিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে তথা দক্ষিণ এশিয়ায় খেলা বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে। ১৯ ও ২০ শতকের ভারতে খেলার সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, দেশভাগ, শরণার্থী সমস্যা, কূটনীতি, বাণিজ্যিকতা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় গুলি খেলার বিবর্তনের ইতিহাসে প্রতিফলিত আছে। উপনিবেশিক ভারতে খেলার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক ফুটবল, ক্রিকেট দুই খেলার সামাজিক ইতিহাসের মধ্যে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। ফুটবলের ক্ষেত্রে দেখি ১৯৩০- ৪০ এর দশকের বাঙালির জাতীয়তাবাদী ক্রীড়াসত্তায় সাম্প্রদায়িকতার মত এক লক্ষণ এক অবাঞ্ছিত বিভাজন সৃষ্টি করে যা তৎকালীন সম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে হিংসা রূপ ধারণ করেছিল। কলকাতার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে কেন্দ্র করে ক্রিড়া ক্ষেত্রে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের সূচনা হয় ১৮৮৭ সালে। তবে মহামেড...

স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতি

 স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতি ঐতিহ্যিক দিক থেকে শিক্ষার অর্থ ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ। হিন্দুদের মধ্যে পুরোহিত শ্রেনীর অন্তর্গত ব্রাহ্মণরা ধর্মশাস্ত্রের সকল শাখা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করত। অপরদিকে দুই বর্ণ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগন ততটা কঠোরভাবে পাট গ্রহণ না করলেও ব্যবহারিক দক্ষতার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতেন। শূদ্র এবং নারী ধর্ম শাস্ত্র পাঠ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। উচ্চ শ্রেণীর পরিবারে কিছু নারী পৌরাণিক সাহিত্য পাঠ করতে শেখেন। মুসলিম নারীরা কোরান শিক্ষা করবেন আশা করা হত, কিন্তু উচ্চ শ্রেণীর মুসলিম পরিবার তাদের কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। ফলে ধর্ম সম্বন্ধে তারা যে শিক্ষা পেত তার গৃহ বা পরিবারে কাছ থেকে  অথবা গৃহ শিক্ষকের কাছ থেকে।  উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা ছিল একেবারেই কম।‌  স্ত্রী শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল খ্রিস্টান মিশনারিরা। তবে তাঁরা   প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিতা ভারতীয় মহিলাদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ব্যাপারে বেশি মনোনিবেশ করে। মিস কুককে চার্চ মিশনারি সোসাইটি সম্ভ্রান্ত বংশের হিন্দু বালিকাদের জন্য ৩০টি বিদ্যা...

পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক অবস্থা | Political Situation in the Later Vedic Period

 পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক অবস্থা  পরবর্তী বৈদিক যুগে স্থায়ী কৃষিজীবী সমাজ ব্যবস্থার পত্তন ঘটলে সামাজিক উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হতে থাকে। এই উদবৃত্ত উৎপাদনের উপর ভর করে পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। শাসকের ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ থেকে জানা যায় দেবাসুরের সংগ্রামে দেবতাদের পরাজয়ের পর দেবতারা রাজার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাঁরা ইন্দ্রকে রাজা নির্বাচিত করলেন। ঐতিহাসিক বেণীপ্রসাদের মতে নেতৃত্ব দেবার উদ্দেশ্য থেকে রাজার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হল। কিন্তু রাজার ক্ষমতা ক্রমশ নিরঙ্কুশ হল। সম্রাট, একরাট প্রভৃতি অধিক ক্ষমতাধর উপাধিগুলি তিনি ধারণ করলেন। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে অশ্বমেধ, রাজপেয়, রাজসূয় প্রভৃতি যজ্ঞদির উল্লেখ রাজকীয় ক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। তিনি ক্ষেত্রের অধিকারী, তাই ক্ষত্রিয়। তিনি বিশ এর মানুষকে ভক্ষণ করেন। তিনি সমগ্র পৃথিবী ও যাবতীয় প্রাণীর প্রভু- একথা সাহিত্যে উল্লেখিত। দেখা যায় বৈদিক যজ্ঞগুলি করে রাজা দেবত্বপ্রাপ্ত হচ্ছেন অর্থাৎ রাজার দৈব অধিকার দাবি করা হচ্ছে। তার নিয়োগ ক্রমশ বংশানুক্রমিক হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিক জট...