সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুপ্ত যুগে মুদ্রা

গুপ্ত যুগে মুদ্রা

বাণিজ্য অর্থনীতির অপরিহার্য অঙ্গ হল মুদ্রা। প্রাচীন ভারতে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। কুষানদের রাজত্বকালে ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির ফলে মুদ্রার ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং গুপ্তযুগে তা অব্যাহত ছিল। 

সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা

বিভিন্ন অঞ্চলে গুপ্ত রাজাদের মুদ্রা ভান্ডার বা হোর্ড পাওয়া গেছে। গুপ্ত রাজাদের স্বর্ণমুদ্রার মান যথেষ্ট উচ্চ ছিল। তবে স্কন্দগুপ্তের আমল থেকে গুপ্ত স্বর্ণমুদ্রা ওজন 124 গ্রেন থেকে 144 গ্রেন করা হয়। কিন্তু মুদ্রায় খাদ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ানো হয়, যার ফলে সাম্রাজ্যের শেষকালের স্বর্ণমুদ্রা গুলির স্বর্ণ মোট ওজনের অর্ধেক হয়ে যায়। গুপ্ত রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত রৌপ্য মুদ্রা চালু করেছিলেন পশ্চিম ভারতের শক-ক্ষত্রপদের আদলে। মূলত গুজরাট উপকূলে এগুলির ব্যবহার ছিল। 

তবে গুপ্ত রাজারা তাম্রমুদ্রা নির্মাণে সেভাবে গুরুত্ব দেন নি। বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ব্যবহৃত হলেও দৈনন্দিন লেনদেনে তাম্র মুদ্রার গুরুত্ব কে অস্বীকার করার উপায় নেই। রামশরণ শর্মা দেখিয়েছেন যে দৈনন্দিন জীবনে মুদ্রার ব্যবহার আলোচ্য পর্বে কমে গিয়েছিল। তিনি আরো দেখিয়েছেন (ফা-হিয়েন এর বিবরণ থেকে) যে নিত্যকার লেনদেন কড়ির মাধ্যমে চলত। গুপ্তদের সমসাময়িক দাক্ষিণাত্যের বাকাটক রাজ্যে এখনো পর্যন্ত কোন মুদ্রার সন্ধান পাওয়া যায়নি অথচ বাকাটক দের প্রতিবেশী বিষ্ণুকুন্ডিন ও শক-ক্ষত্রপরা নিয়মিত মুদ্রা ব্যবহার করতেন। মুদ্রাশূন্যতার এই পরিস্থিতিকে রামশরণ শর্মা বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের ফলাফল হিসেবেই দেখেছেন। কৃষ্ণমোহন শ্রীমলি দেখিয়েছেন, বাকাটক লেখাগুলি থেকে একজন মাত্র ব্যবসায়ী 'চন্দ্র'র নাম পাওয়া যায়, যা বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের চিত্রকেই তুলে ধরে।


মন্তব্যসমূহ

  1. সমুদ্রগুপ্তের বীণাবাদনরত একটি মুদ্রা আছে যেখান থেকে সমুদ্রগুপ্তের সংগীত অনুরাগের কথা জানা যায়|
    গুপ্ত যুগের স্বর্ণ মুদ্রা ছিল দিনার আর রৌপ্য মুদ্রা ছিল রুপার| দিনার ও রুপার এর অনুপাত ছিল 15 :1

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...