সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

বাহমনি রাজ্যের চরম হিতৈষী হিসাবে মাহমুদ গাওয়ানের ভূমিকা আলোচনা কর।

 মাহমুদ গাওয়ান ছিলেন দাক্ষিণাত্যের শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম তীক্ষ্ণবুদ্ধির সম্পন্ন দূরদর্শী রাজনৈতিক। তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন ইরানের এক গ্রামের অধিবাসী। ৪৫ বছর বয়সে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দাক্ষিণাত্যে আসেন এবং সুলতান দ্বিতীয় আলাউদ্দিন এই পরদেশীর গুনে আকৃষ্ট হয়ে তাকে রাজসভায় আমির পদে অভিষিক্ত করেন। সুলতান হুমায়ুন গাওয়ানকে Malik-ut-Tajjar উপাধিতে ভূষিত করেন। খাজা মাহমুদ গাওয়ান বাহমনি রাজ্যের তিনজন সুলতানের অধীনে কাজ করেন এবং তৃতীয় মুহাম্মদ এর রাজত্বকালে তিনি রাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি শাসনকার্যে ও সমর ক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রজাদের প্রীতি ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি ক্ষমতার চরম শিখরে আরোহন করেছিলেন কিন্তু কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।  ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হুমায়ূনের মৃত্যু হলে তার পুত্র নিজাম শাহ মাত্র ৮ বছর বয়সের সিংহাসন আরোহন করেন। এই নিজাম শাহের অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন মাহমুদ গাওয়ান। যখন অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন বাহমনী রাজ্যের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুন। রুশ ভ্রমণকারী নি...

বাংলায় হুসেন শাহী বংশের অবদান আলোচনা কর

 ইলিয়াস শাহী বংশের পতনের পর হাবসি শাসন ছিল বঙ্গদেশের এক অন্ধকারময় যুগ। বঙ্গদেশের জনসাধারণ এই হাবসি শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিজামুদ্দিনের মতে মোজাফফর শাহের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান উজির সৈয়দ হুসেন বাংলাদেশকে এই সংকট থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ হুসেন মোজাফফর কে হত্যা করে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা । আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কুশাসন থেকে বঙ্গদেশ কে মুক্ত করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করেছেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি হাবসি প্রাসাদ রক্ষী সেনাদলের ক্ষমতা সংকুচিত করে এবং তাদের বঙ্গদেশ থেকে বিতাড়িত করে, মুঘল ও আফগানদের উচ্চ পদে নিয়োগ করেন। পুরাতন আমলের কর্মচারীদের বরখাস্ত করে, তিনি সদর দপ্তরে নতুন ও নিজের অনুগত লোকদের নিয়োগ করে। দেশের সর্বত্র অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা কঠোর হাতে দমন করেন। বহু ধন সম্পত্তি উদ্ধার করে। ফিরিস্তার মতে তখন ধনী ব্যক্তিরা উৎসবে সোনার থালা ব্যবহার করতেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এরকম প্রায় ১৩০০ সোনার থালা উদ্ধার করেন। তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় সমগ্র উত্তর ভারতে ব...

মধ্যযুগে অকৃষি উৎপাদন ও নাগরিক অর্থনীতি সম্পর্কে একটি নিবন্ধন লেখ।

  দিল্লির সুলতানি যুগের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ভারতবর্ষে নতুন নতুন নগরের সূচনা। স্বভাবতই শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নগরায়নের সূচনা খুবই ইঙ্গিতবাহী। টুকরো টুকরো খবর ছাড়া অর্থনৈতিক জীবনের বিশদ কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে সে যুগের অকৃষি তথা শিল্প উৎপাদনের একটা মোটামুটি বিবরণ দেওয়া যায়।  ধাতু উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সমকালীন সাহিত্যে Salt Range এর কথা পাওয়া যায় গেলেও প্রধান নুনের উৎস ছিল সম্ভর হ্রদ। লোহার আকর উত্তোলনের ক্ষেত্রে গভীর খনি খোঁড়ার প্রয়োগবিদ্যা সে যুগে জানা ছিল না। গোয়ালিয়রের পাহাড় থেকে দক্ষিণ ভারতের শেষ পর্যন্ত অনেক লোহা খনি ছিল। কচ্ছের লোহা থেকে তলোয়ার তৈরি হতো। রাজস্থান থেকে তামা পাওয়া যেত। তখন সোনা রুপার উৎপাদন কমেছিল। মনে হয় কর্নাটকের সোনার খনি নিঃশেষ হয়ে আসছিল। হিমালয় থেকে আসা কয়েকটি নদীর পাড়ে বালিতে সোনা পাওয়া যেত। মার্কো পোলো দাক্ষিণাত্য হীরার খনির কথা বলেছেন। তিনি তুতিকোরিনে মুক্তা পাওয়ার কথা বলেছেন  সে যুগের প্রধান শিল্প ছিল বস্ত্র শিল্প। ঐতিহাসিক Lean White দেখলেন এ যুগে চরকার সাহায্যে প্রয়োগব...

বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের অবদান আলোচনা কর।

 সুলতানি যুগ ধরে বঙ্গদেশ প্রায় স্বাধীন বা আধা স্বাধীন রাজ্য বলা চলে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বক্তিয়ার খলজির দ্বারা বঙ্গদেশ তুর্কি অধিকারে আসলেও পরবর্তী বছরগুলিতে কখনোই দিল্লির সুলতানি শাসন বাংলার উপর সম্পূর্ণ অধিপত্য বিস্তার করতে পারিনি। সাময়িকভাবে বাংলার শাসকগণ দিল্লির অধীনতা স্বীকার করত, আবার দিল্লির আক্রমণের গরম কেটে গেলেই বিদ্রোহ করতো। সুতরাং আর যাই হোক বাংলাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল সুলতানি যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মোহাম্মদ বিন তুঘলক এর রাজত্বকালের শেষ দিকে অরাজকতা ও বিদ্রোহের সুযোগে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলায় স্বাধীন ইলিয়াস শাহী শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে। এই রাজবংশের আরো দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক হলেন সিকান্দার শাহ ও গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ। যদিও পরবর্তী ইলিয়াসাহি শাসকদের হটিয়ে দিনাজ পুরের রাজা গণেশ ও তার পুত্ররা কিছুকালের জন্য শাসন করেছিল কিন্তু ইলিয়াস শাহ এর বংশধরেরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন।  আলাউদ্দিন আলিশাহ কে সিংহাসন চুত্য করে ইলিয়াস শাহ ক্ষমতায় আসেন তিনি বঙ্গদেশের রাজনৈতিক সংহতি স্থাপন করেন এবং বাংলার বাইরে ও বিজয়াভিযানকে সম্প্রসারিত করেন। তিনি ত্রিহূত...

আলাউদ্দিন খলজি কৃষি সংস্কার সমূহ আলোচনা কর।

  আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থায় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার অর্থনৈতিক সংস্কার সমূহ। আলাউদ্দিনই দিল্লির সার্বভৌম সুলতানদের মধ্যে প্রথম যিনি একই সাথে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ এবং মঙ্গল আক্রমণ এবং ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের মোকাবেলা চালিয়ে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বভাবত এজন্য এক বিশাল সেনাবাহিনী পোষণ করতে হয়েছিল। যাদের ব্যয়বহুদ ব্যয় বাবদ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল বলা হয় এজন্যই আলাউদ্দিন অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজে হাত লাগান। তার প্রধান দুটি পদক্ষেপ ছিল রাজস্ব সংস্কার ও বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। আলাউদ্দিন‌ই হলো প্রথম সুলতান যিনি রাজস্ব সংস্কারের কাজে হাত দেন। তার রাজস্ব সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমকালীন ও পরবর্তীকালের ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। এটা ঠিক তার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে রাজকোষ পূর্ণ করা। এর সাথে একটি রাজনৈতিক স্বার্থও ছিল অভিজাত, জমিদার, খুৎ মুকাদ্দাম দের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দিয়ে আলাউদ্দিন বিদ্রোহের সম্ভাবনা নির্মূল করতে চেয়েছিলেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল হিন্দু তাই হিন্দুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বারনি ব...

ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন আলোচনা কর।

  সুলতানি শাসনে তাদের এলাকার মধ্যে জমিকে শাসন ব্যবস্থার জন্য দুটি ভাগে ভাগ করেছিল একটি খালিশা অর্থাৎ সরাসরি সুলতানের অধীনে এবং সেখান থেকে সুলতানের নিজস্ব আমলারা নির্ধারিত কর সংগ্রহ করে সুলতানের রাজকোষে জমা করে। অন্যটি হলো ইকতা যা কোন এক অভিজাতের অধীনে থাকতো ও যাকে বলা হয় মুকতি। কৃষি উৎবৃত্ত আরোহন ও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে তা জন্য বন্টনের জন্য যে সরকারি যন্ত্রের প্রয়োজন হয় তারই একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হল ইকতা। যা সুলতানি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর কোন ক্ষতি করে না।   ইকতা হল ভূমি রাজস্বের বন্দোবস্ত। দ্বাদশ শতকের একজন রাষ্ট্রনেতা আদর্শ ইকতা ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে- ইকতার মালিক মুকতি, তারই অধীনস্থ কৃষক বা রায়তদের কাছ থেকে নির্ধারিত মাল বা ভূমি রাজস্ব আদায় করবেন। কৃষকের উপর তার কোন অধিকার নেই। কৃষকরা খাজনা দিলে তাদেরও তাদের পরিবার তাদের জমি বা অন্যান্য সম্পত্তির উপর মুকতির আর কোন অধিকার নেই। এরপরও মুকতিরা যদি জোর খাটায় কৃষকরা রাজদরবারে অভিযোগ করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুলতান তার ইক্তা অধিগ্রহণ করতে পারে, তাকে শাস্তি দিতে পারেন অর্থাৎ মুকতি হলেন সুলতান নিয়োজিত আমলা ম...

তুমি কি মনে করো বিজয়নগর এবং বাহমনীর মধ্যে সংঘাতের মূল কারণ ছিল ধর্মীয়?

  সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা এই দুটি প্রক্রিয়া যখন একই সাথে এগোচ্ছে তখন দক্ষিণ ভারতে দুটি পরস্পর বিদ্যমান শক্তি বিজয়নগর ও বাহমনী উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। প্রায় দুই শতধিক বছর জুড়ে এই দুটি সাম্রাজ্যের বিবাদকে অনেক ঐতিহাসিক ধর্মনৈতিক চরিত্র দান করার চেষ্টা করেছেন। কারণ বাহমনী ছিল মুসলিম শাসিত আর বিজয়নগর ছিল হিন্দু শাসিত কিন্তু আধুনিক ইতিহাস চর্চায় সেই দিকটি খারিজ হয়ে গেছে। প্রায় একই সময়ে তুঘলক বংশের পতনের পর দক্ষিণ ভারতে বাহমনী ও বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপিত হয় আলাউদ্দিন বহমান শাহ প্রথমটির প্রতিষ্ঠাতা যার রাজধানী ছিল গুলবর্গা ও পরে বিদর। দ্বিতীয়টির প্রতিষ্ঠাতা ছিল হরিহর ও বুক্কা যাদের রাজধানী ছিল তুঙ্গাভদ্রা তিরস্ত বিজয়নগর। বিজয়নগর বাহামনি সংঘাত নির্বিচ্ছিন্ন ছিল না মাঝে মাঝে শান্তি স্থাপিত হতো। তবে বিরোধের মীমাংসা হতো না।  কিংবদন্তি অনুসারে হরিহর ও বুক্কা কাম্পিলি রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। মোহাম্মদ বিন তুঘলকের কম্পিলি অভিযানে তারা ধৃত হন এবং তাদের ধর্মান্তরিত করে দাক্ষিণাত্যে বিদ্রোহ দমনের ভার দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু পরে নতুন ...

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যু পর তার য্যেষ্ঠ পুত্র জৌনাখান মোহাম্মদ বিন তুঘলক নাম ধারণ করে ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসন আরোহন করেন। পিতার মতো মোহাম্মদ বিন তুঘলকও সৈনিক হিসেবে জীবন আরম্ভ করেছিলেন এবং সৈনিক হিসেবে অল্প বয়সেই যথেষ্ট কির্তৃত্বের পরিচয় দেন। বলা হয় মোহাম্মদ বিন তুঘলক এর সাহায্য ছাড়া গিয়াস উদ্দিনের সিংহাসন দখল এত মসৃণ হতো না মধ্যযুগের নরপতিদের মধ্যে মোহাম্মদ বিন তুঘলক যে সবচেয়ে সুদক্ষ ও মৌলিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন সে কথা ঈসামি, ইবন বতুতা, জিয়াউদ্দিন বারনী মত সমকালীন মৌলবাদী লেখক ও স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের মতে তর্কবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, অংকশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনে তার অসাধারণ জ্ঞান ছিল। পারসিক বিখ্যাত কবিতা সমূহ তার কণ্ঠস্থ ছিল। এমনকি চিকিৎসা বিদ্যাও তার অজানা ছিল না।  মোহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক ধ্যানধারণা বিচার করতে গেলে আমাদের তার ধর্মনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে বিচার করতে হবে। মধ্যযুগের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে মোহাম্মদ বিন তুঘলকের ধর্মনৈতিক ধ্যানধারণা আমাদের পরবর্তীকালে মহান মুঘল সম্রাট আকবরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি ধর...

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি | Welfare Policies of Firoz Shah Tughlaq

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি  ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের সামরিক অভিযানের সময় মোহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যু হলে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য এক চরম দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। নেতৃত্বহীন সেনাবাহিনী চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই সময় অভিজতগণ সমন্বিতভাবে গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের ছোট ভাই রজবের ৪৬ বছর বয়স্ক পুত্র ফিরোজ শাহ তুঘলককে সিংহাসনে বসান। তার দীর্ঘ ৩৭ বছরের রাজত্বকাল দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকাল আকবরের পূর্ব পর্যন্ত দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্থান অধিকার করেছে। প্রধানত জনকল্যাণ ও প্রজাবর্গের উন্নতির জন্য তিনি যা করেছিলেন, দিল্লির কোনো সুলতানই জনসাধারণের এরকম সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিতে সক্ষম হননি। আফিক তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে বলেছেন যে জনসাধারণের ঘরবাড়ি, শস্য, সম্পদ, ঘোড়া, আসবাবপত্র ও প্রত্যেক বাড়ি স্বর্ণ ও রৌপ্যে পরিপূর্ণ ছিল এবং প্রত্যেকে সুখ শান্তিতে বাস করত। সিংহাসন আরোহন করেই তার প্রধান লক্ষ্য হয় জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা। স্বভাবতই তিনি কতকগুলি গুরু...

আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা | Alauddin Khalji’s Price Control System

আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা  আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার সমূহ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ ছিল রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণ গঠন। দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বাজারদর নিয়ন্ত্রণ, যা তাকে এক দুঃসাহসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপকের মর্যাদা দিয়েছে। আলাউদ্দিন খলজি বলবনের অনুসৃত সংহতির নীতি থেকে সরে এসে সম্প্রসারণবাদী নীতি গ্রহণ করেন। একে একে গুজরাট, রণথম্বর, চিতোর, মালব জয় করেন। উত্তর ভারতে এক বিস্তৃত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, কেবল সাম্রাজ্য বিস্তার বা অভ্যন্তরীণ সংহতি স্থাপন নয়, ৭ বার তাঁকে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়েছিল। তাই তাকে বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে হয়েছিল। প্রায় চার লক্ষ ৭৫ হাজারের মতো। এই বিরাট পরিমান সামরিক খরচের বোঝা বইতে দরকার ছিল আরথনৈতিক সংস্কার। আলাউদ্দিনের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিতর্ক আছে, সমসাময়িক ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনী তাঁর দুটি গ্রন্থে দু'রকমের মন্তব্য করেছেন। তারিখ-ই- ফিরোজশাহী গ্রন্থে তিনি বলেছেন মোঙ্গল আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী দক্ষ সেনাদল গঠন করার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্...

আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ: উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারত জয়

আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ প্রায় ভারতব্যাপী ঘটাতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। আলেকজান্ডারের মত বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের কথাও তিনি ভেবেছিলেন। ঐতিহাসিক উলসি হেগ তাঁর শাসনকালকে the real Imperial period of the sultanate বলে অভিহিত করেছেন। মৌর্য শাসকদের পর উপমহাদেশে এই প্রথম হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হল।  গুজরাট বিজয়ের মধ্য দিয়ে আলাউদ্দিন খলজী তার সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করেন। ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন উলুগ খান, নুসরাত খান এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী গুজরাটে প্রেরণ করেন। আমির খসরুর বিবরণ থেকে জানা যায়, গুজরাটের বাঘেলা বংশীয় রাজা দ্বিতীয় কর্ণদেব তাঁর কন্যা দেবলাদেবী সহ পলায়ন করে দেবগিরি রাজা রামচন্দ্র দেবের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন। সম্পদশালী গুজরাট অধিকৃত হয় এবং সেখানে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। নসরত খান ক্যাম্বে থেকে কাফুর (যিনি পরবর্তীকালের বিখ্যাত মালিক কাফুর) নামে এক খোঁজা সহ বহুল পরিমান লুন্ঠিত দ্রব্য দিল্...

মূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কি কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়? | How is tangible cultural heritage being damaged?

মূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কি কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?  সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহ নানা কারণে সংকটাপন্ন হচ্ছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পিছনে প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি সমানভাবে দায়ী। ঐতিহ্যের ভিন্নধর্মী সংকটকে বুঝতে গেলে কিছু ঘটনা এবং কিছু তথ্য সহকারে সংকটের কারণ গুলিকে ব্যাখ্যা করতে হয়।  মূর্ত সংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যেমন স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য গুলি ধারাবাহিকভাবে কালের নিয়মে প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা কোনারকের সূর্য মন্দিরের কথা বলতে পারি। উৎখনন করে যখন মন্দির আবিষ্কৃত হয় তখন দেখা যায় এর গর্ভগৃহের শিখরটির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে জগমোহনের অস্তিত্ব রয়েছে। সমুদ্রের একেবারে কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এর নোনা হাওয়ার স্পর্শে মন্দিরে দেওয়ালের নিরবচ্ছিন্ন ক্ষতি হতে থাকে। যাতে সহজে সমুদ্রের বালি মন্দিরে প্রবেশ করতে না পারে এবং দেওয়ালে নোনা লাগতে না পারে তার জন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কাজু ও ঝাউ গাছ দিয়ে বনসৃজন করা হয়। জগমোহনটিকে রক্ষা করার জন্য ১৯০৩ সালে এর ভি...