ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরব রাজতন্ত্রের দায়িত্ব | Responsibility of the Bourbon Monarchy for the French Revolution

 ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরব রাজতন্ত্রের দায়িত্ব

ফরাসি বিপ্লবের সমকালীন এবং আধুনিক কালের ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিপ্লবের কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে অনেকে এর পিছনে আর্থসামাজিক অনেকে অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করে তবে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক দুর্গতি ও বুরবোঁ রাজবংশের রাজাদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা এই বিপ্লবের জন্য দায়ী ছিল তা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

অষ্টাদশ শতকে প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্সে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির মতো (ইংল্যান্ড, হল্যান্ড ও পোল্যান্ড ছাড়া) কেন্দ্রীভূত নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র বজায় ছিল। বুরবোঁ রাজারা রাজক্ষমতার দৈবসত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ফ্রান্সে এই নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা চতুর্দশ লুই। তিনি ঘোষণা করেছিলেন - I am the state. তিনি অভিজাত সম্প্রদায় ও চার্চের ক্ষমতা খর্ব করে সুদক্ষ আমলাতন্ত্র গঠনের মাধ্যমে ফ্রান্সে এক সমৃদ্ধশালী স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তবে তাঁর শাসনকালে ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় রাজকোষের উপর চাপ পড়ে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক ক্ষেত্রে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে যে বিপুল অর্থ ব্যয় তিনি করেছিলেন তা পূরণ করতে বা অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।

চতুর্দশ লুইয়ের মৃত্যুর পর পঞ্চদশ লুই-এর সময়ে ফ্রান্সের রাজতন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। রাজপ্রতিনিধি ডিউক অব অরলিয়েন্স ফরাসি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশ কতগুলি ব্যবস্থা নেন। ব্যাংক ও বৃহৎ বাণিজ্যিক কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানো হয়। সমস্ত শ্রেণীর মানুষকে কর ব্যবস্থার অধীনে আনার চেষ্টাও চালানো হয়। যদিও তাতে তিনি ব্যর্থ হন। তবে রাজা ভোগবিলাসকে রাজকীয় স্বার্থের উপরে স্থান দেন। অভিজাতদের চক্রান্ত ও দুর্নীতি প্রশাসন যন্ত্রকে পঙ্গু করে তোলে। তার উপর সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের ব্যায়ভার ও পরাজয় রাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক দুর্বলতাকে প্রকট করে তোলে।

ফ্রান্সের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে পরবর্তী রাজা ষোড়শ লুই দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। রাজা ষোড়শ লুই ঘোষণা করেন আমার ইচ্ছাই আইন। তিনি প্রশাসনিক দুর্নীতি দমনে ও অর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় ব্যর্থ হন। ফলে জনমানসে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।

রাজাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতার সাথে সাথে ফরাসি রাজতন্ত্রের প্রশাসনিক জটিলতা ও সংকটের বিষয়টিও পৃথক আলোচনার অবকাশ রাখে। রাজতন্ত্র আইনত সর্বশক্তিমান হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে রাজক্ষমতা নিরঙ্কুশ ছিল না। অভিজাত সম্প্রদায়ের প্রভাব এক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল।

প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী স্বয়ংশাসিত সংগঠন ছিল চার্চ। অর্থ-সম্পদে বলিয়ান চার্চ এর কাজ ছিল জনশিক্ষার দায়িত্ব পালন, দরিদ্র ব্যক্তিদের সাহায্য দান, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ এবং জন্ম মৃত্যুর হিসাব রক্ষা। চার্চের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজা হস্তক্ষেপ করতে পারতেন না। গ্রামীণ বিশপরা নানা  প্রশাসনিক অধিকার ভোগ করত। প্রচুর ভূসম্পত্তির অধিকারী হওয়ার সত্বেও চার্চগুলি স্বেচ্ছাকর ব্যতীত কোনরূপ কর দিত না। ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে পোয়াসির চুক্তি অনুযায়ী ফরাসি রাজতন্ত্র চার্চের উপর প্রত্যক্ষ কর স্থাপনের ক্ষমতা হারিয়েছিল। চার্চকে রাষ্ট্রীয় আইনের অধীনেও আনা যেত না।

ফরাসি রাজতন্ত্রের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করেছিল ফরাসি পার্লামেন্ট পার্লমঁগুলি। ফ্রান্সের শহরগুলিতে ছিল পার্লমঁ। প্যারিসের পার্লমঁ  ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। এগুলি ছিল বংশানুক্রমে বিচার সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান। এর সদস্যরা মনোনীত হতেন এবং তাঁরা অভিজাতদের সমান মর্যাদা পেতেন। চতুর্দশ লুই এর আমল থেকে বহু বুর্জোয়া সরকারকে আর্থিক অনুদান প্রদানের মাধ্যমে পার্লামেন্টের এই পদগুলি কিনে নিয়েছিলেন। এদের কাজ ছিল নিম্ন আদালতগুলির রায়ের পুনর্বিবেচনা করা, রাজার আদেশ নথিবদ্ধ করে জনগণের মধ্যে প্রচার করা, প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন বা সংশোধনের অধিকারও ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য রাজাও তার বিশেষ অধিকার Lit de justice প্রয়োগ করে পার্লামেন্টের আপত্তি অগ্রাহ্য করতে পারতেন। সম্রাট পঞ্চদশ লুইয়ের আমলে এমন দেখা গেছে। কিন্তু বাস্তবে রাজা পার্লামেন্টের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করতে বিশেষ সাহস দেখাতেন না। সেই সুযোগই প্যারিসের পার্লামেন্টে অষ্টাদশ শতাব্দীতে বারংবার রাজা ও মন্ত্রীদের সংস্কারের বিরোধিতা করে গেছে। রাজা ষোড়শ লুই এর আমলে ফ্রান্সে ১৩ টি পার্লমঁ রাজশক্তির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

ফ্রান্সের প্রাদেশিক প্রতিনিধিসভাগুলি রাজক্ষমতাকে সংকুচিত করে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত। চতুর্দশ শতকে বুর্বঁ  রাজারা সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিকে শর্তসাপেক্ষ কোন চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্সের সাথে যুক্ত করেছিলেন। এই এলাকাগুলির আয়তন ছিল ফ্রান্সের এক-তৃতীয়াংশ। এখানে প্রাদেশিক এস্টেট বা তার মনোনীত কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ কার্যকার ছিল। প্রাদেশিক সভাগুলি শাসনের ক্ষমতা ভোগ করত, জনকল্যাণমূলক কাজ, যেমন রাস্তাঘাট নির্মান, পরিবহন পরিষেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার বিশেষ ক্ষমতা ছিল। কর সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা পাওয়ার সুযোগে এরা রাজকীয় কর সম্পর্কে মতামত প্রদান করতে পারত বা নতুন করকে সহজে এড়িয়ে যেতে পারত। প্রাদেশিক সভাগুলি নিজস্ব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সংঘাতে যেতেও দ্বিধা করত।

কেন্দ্রীয় শাসনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন প্রদেশগুলিতে ইনটেনডেন্টরা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। এদের ক্ষমতাযর অপব্যবহার ও দুর্নীতি জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। জনসাধারণ এদের অর্থলোলুপ নেকড়ে বলত। এঁরা প্রাদেশিক সভাগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলত। দেশের সর্বত্র একই আইন, মাপ ও ওজন চালু না থাকায় বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ঐক্য ছিল না। রাজা কোনরকমে এই ইনটেনডেন্ট দের সাহায্যে প্রশাসনকে সক্রিয় রাখতেন।

ফ্রান্সের বিচার ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। ফ্রান্সের উত্তর দিকে ছিল প্রথাগত আইন। দক্ষিণে ছিল কঠোর রোমান আইন। ৩৬০ টি স্থানীয় আইনবিধি ছিল। বিচারকের পদ ছিল বংশানুক্রমিক। ১৩ টি  পার্লমঁ আপিল আদালত হিসেবে কাজ করত। লেত্রে দ্যা ক্যাশে-র মাধ্যমে কোন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় কারাগারে বিনা বিচারে আটক করে রাখা যেত। আবার লেত্রে দ্যা গ্রেস  প্রয়োগ করে রাজা আদালত কর্তৃক শাস্তি মুকুব করতে পারতেন। ব্যয়বহুল বিলম্বিত জটিল বিচারপ্রণালী এবং ম্যাজিস্ট্রেট পদের কেনবেচা ফরাসি বিচার ব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছিল।

বুরব রাজাদের কোন সুনির্দিষ্ট রাজস্ব নীতি ছিল না। বাজেট তৈরি হতো না। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। সম্পদ অনুযায়ী করভার আরোপিত হয়নি। প্রত্যক্ষ করের অধিকাংশই বহন করতো সাধারণ মানুষ। যাজকদের কোন কর দিতে হত না। রাজার কর আদায়ের ক্ষেত্র কেবল সংকুচিতই হয়নি, জরুরি অবস্থায়ও রাজা কর আরোপ করতে পারত না, রাজাকে ঋণ নিতে হতো। কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল উৎপীড়নমুলক। ফার্মিয়ের জেনারেল নামক কর আদায়কারীরা  নিলামের মাধ্যমে রাজার সাথে চুক্তিবদ্ধ হতেন এবং এরা কর আদায়ের জন্য জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করতেন। কর আদায়কারী কন্ট্রাক্টররা সরকারকে করে ফাঁকিও দিত।

ফরাসি আইনসভা ছিল স্টেটস জেনারেল। ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে এর অধিবেশন আর ডাকা হয়নি। সাধারণত কর ধার্য করার জন্যই স্টেটস জেনারেলের আহ্বান করা হত। তবে স্টেটস জেনারেলের অনুমোদন ছাড়াও রাজার ধার্য করার অধিকার ছিল। কিন্তু প্রশাসন রাজার ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছিল। রাজা ষোড়শ লুই প্রবল অর্থ সংকটে পড়ে স্টেটস জেনারেলের আহ্বান করেন। আর এই ঘটনাই ফরাসি বিপ্লবের সূত্রপাত করে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, বুর্জোয়াদের দাবি মেনে নিয়ে মাথাপিছু ভোটাধিকার ও অভিজাতদের ক্ষমতা হ্রাসের দাবি মেনে নিয়ে রাজা ষোড়শ লুই বিপ্লব এড়াতে পারতে। কিন্তু অভিজাত স্বার্থের সাথে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র জড়িত থাকার ফলে রাজা সেই পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন। আবার সংস্কারের মাধ্যমে পুরাতনতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার মতো ক্ষমতাও তাঁর ছিল না। তাই বিপ্লবের মাধ্যমে পুরাতন তন্ত্রের পতন ছিল অনিবার্য।

Responsibility of the Bourbon Monarchy for the French Revolution

There has been considerable disagreement among both contemporary and modern historians regarding the causes of the French Revolution. Some have attributed it primarily to socio-economic factors, while others have emphasised economic crisis. However, an important issue of discussion is the role played by political decay in pre-revolutionary France and the weakness and failure of the Bourbon monarchs, which significantly contributed to the outbreak of the Revolution.

In the eighteenth century, pre-revolutionary France, like most other European countries (except England, Holland, and Poland), was ruled by a centralised and absolute monarchy. The Bourbon kings believed in the divine right of kingship. King Louis XIV was the founder of absolutism in France. He famously declared, “I am the state.” By curbing the power of the nobility and the Church and establishing an efficient bureaucracy, he created a strong and prosperous absolutist regime. However, during his reign, excessive expenditure placed heavy pressure on the royal treasury. Moreover, his involvement in several foreign wars resulted in enormous financial burdens, which he failed to compensate for or resolve through economic reforms.

After the death of Louis XIV, the French monarchy gradually weakened during the reign of Louis XV. The regent, the Duke of Orléans, adopted several measures to revive the French economy. Banks and large commercial companies were expanded, and efforts were made to bring all social classes under the taxation system, though these attempts failed. The king prioritised personal luxury over state interests. Conspiracies and corruption among the nobility paralysed the administrative machinery. Furthermore, the expenses and defeat of the Seven Years’ War exposed the economic and military weakness of the monarchy.

In this crisis-ridden situation, the next king, Louis XVI, failed to demonstrate effective leadership. He proclaimed, “My will is law.” He proved incapable of curbing administrative corruption or addressing socio-economic inequality and the financial crisis. As a result, his public image suffered greatly.

Alongside the personal weaknesses of the kings, the administrative complexities and institutional crises of the French monarchy also deserve separate consideration. Although the monarchy was legally all-powerful, in practice royal authority was not absolute. The influence of the nobility created an undesirable and unstable situation.

The most powerful autonomous institution in pre-revolutionary France was the Church. Economically strong and wealthy, the Church was responsible for public education, poor relief, public health, and the registration of births and deaths. The king had no authority to interfere in the internal affairs of the Church. Rural bishops enjoyed various administrative privileges. Despite owning vast landed property, the Church paid no taxes except for voluntary contributions. According to the Concordat of Poissy (1561), the French monarchy lost the power to impose direct taxes on the Church. The Church could not even be brought under state law.

Another institution that restricted royal authority was the French parlements. These were located in major cities, with the Parlement of Paris being the most powerful. They were hereditary judicial bodies whose members were appointed and enjoyed the same status as the nobility. Since the reign of Louis XIV, many bourgeois had purchased parliamentary offices by providing financial assistance to the state. The parlements reviewed judgments of lower courts, registered royal edicts for public enforcement, and even claimed the right to modify or oppose laws. It is worth noting that the king could override parliamentary opposition through the exercise of his special prerogative, the lit de justice, as had occurred during the reign of Louis XV. In practice, however, kings rarely dared to ignore parliamentary resistance. Taking advantage of this weakness, the parlements—especially that of Paris—repeatedly opposed royal and ministerial reforms throughout the eighteenth century. During the reign of Louis XVI, thirteen parlements emerged as powerful rivals to royal authority.

Provincial representative assemblies also played a significant role in restricting royal power. During the fourteenth century, the Bourbon kings had annexed border regions to France through conditional agreements. These regions constituted nearly one-third of French territory and were governed by provincial estates or their appointed officials. Provincial assemblies exercised administrative authority and held special powers in public welfare activities such as road construction and transport services. They enjoyed tax privileges and could express opinions on royal taxation or evade new taxes altogether. These assemblies did not hesitate to clash with the central government to protect their own economic and political interests.

In provinces directly controlled by the central government, intendants wielded supreme authority. Their abuse of power and corruption provoked popular resentment, and people often referred to them as greedy wolves. They frequently collaborated with provincial assemblies. The absence of uniform laws, weights, and measures across the country prevented national unity. The king managed to keep administration functioning largely through the assistance of these intendants.

The French judicial system was also defective. The king was the supreme judge. Northern France followed customary law, while southern France adhered to strict Roman law. There were about 360 local legal codes. Judicial offices were hereditary, and the thirteen parlements functioned as appellate courts. Through lettres de cachet, citizens could be imprisoned without trial, while lettres de grâce allowed the king to remit punishments imposed by courts. The expensive, delayed, and complex judicial process, along with the sale of magistrate offices, rendered the justice system corrupt.

The Bourbon kings lacked a coherent fiscal policy. Budgets were not prepared, and disorder and mismanagement plagued state finances. Taxes were not levied according to wealth; the bulk of direct taxes was borne by common people, while the clergy paid none. The king’s authority to impose taxes was not only restricted, but even in emergencies, he was forced to rely on loans. The tax collection system itself was oppressive. Tax farmers (fermiers généraux) entered into contracts with the king through auctions and employed contractors for collection. These contractors often evaded taxes themselves while exploiting the populace.

The legislative body of France was the Estates-General, which had not been convened since 1614. It was generally summoned to approve taxation. Although the king retained the right to levy taxes without its consent, administration had slipped beyond his effective control. Faced with a severe financial crisis, Louis XVI summoned the Estates-General, and this act directly triggered the French Revolution. Many historians believe that had Louis XVI accepted bourgeois demands for voting by head and reduced aristocratic privileges, the Revolution might have been avoided. However, the absolutist monarchy was deeply intertwined with aristocratic interests, preventing the king from taking such steps. At the same time, he could not preserve the old regime through reforms. Consequently, the fall of the old order through revolution became inevitable.