সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের আর্থসামাজিক স্তর বিন্যাস ও সমস্যা আলোচনা কর।

 অষ্টাদশ শতকের শেষভাগের ফরাসি বিপ্লব ছিল আধুনিক সভ্যতার বৃহত্তম পথের বাক। এই বিপ্লবে জন্ম নিয়েছিল ইউরোপে জাতীয়তাবাদী এবং সর্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ধারা, জাতিগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতার আদর্শ আর স্বৈরাচারী প্রশাসনকে সংবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি।

অধ্যাপক লেফেভর বলেছেন ফরাসি বিপ্লবের প্রকৃত কারণ ফ্রান্সের এবং পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাসের অনেক গভীরে নিহিত আছে। প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক স্তরবিন্যাস অসাম্য এবং সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জিভূত করেছিল। যার অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল ১৭৮৯ এর বিপ্লব। 


ঐতিহাসিকরা মোটামুটি ভাবে একমত যে পুরাতন তন্ত্রের ফ্রান্সে তিনটি এস্টেট বা গোষ্ঠী ছিল যাজক, সম্ভ্রান্ত এবং সাধারণ মানুষ। 

প্রথম এস্টেট বা যাজকগণ ছিলেন বিশেষ সম্মানিত এবং সুবিধাভোগী শ্রেণী, যাজকগণ ছিলেন চার্চের প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত। তারা প্রশাসনকে কর দিতেন না উপরন্ত জনগণের কাছ থেকে ধর্ম কর আদায় করত এবং রাজাকে দিতেন স্বেচ্ছা অনুদান। এদের জন্য পৃথক বিচার ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থা, দারিদ্রদের সাহায্য ব্যবস্থা তাদের হাতে ছিল। এছাড়াও জন্ম মৃত্যুর হিসাব রক্ষা, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ক্যাথলিক চার্চই ছিল একমাত্র শিক্ষিত ধর্ম প্রতিষ্ঠান, অন্য কোন খ্রিস্টান গোষ্ঠী নয়। চার্চের অধীনে ছিল প্রচুর ভূসম্পত্তি (মোট জমির প্রায় ⅒ অংশ) ছিল । ফলে অনেক বিশব এবং পদস্থ কর্মচারীরা গ্রামীণ অঞ্চলে সামন্ত প্রভুরূপে বসবাস করতেন এবং সামন্ত কর আদায় করতেন। চার্চ রাজার অভিষেককে স্বীকৃতি দিত, তাদের ক্ষমতার একটি দিক। 


যাজকদের নিজেদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য ছিল যেমন উচ্চ যাজক, বিশপ, এ্যবট আর ক্যানশ পদাধীকারীরা ছিলেন সামন্ত শ্রেণীর অংশ। এরা বিলাস‌ বাসনের মধ্যে থাকতেন ধর্মীয় কাজকর্ম নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। আর দরিদ্র গ্রামীণ যাজক এবং চার্চের অধিকাংশ কর্মচারী ছিলেন "সাধারণ গোষ্ঠী" বা তৃতীয় এস্টেট ধর্মী। এরাই ধর্মীয় কার্যকর্ম পরিচালনা করতেন। উচ্চ শ্রেণীর যাজকরা নিম্ন শ্রেণীর যাজকদের অবজ্ঞার চোখে দেখতো। অন্যদিকে উচ্চ যাজকদের বিলাসবহুল জীবন দেখে নিম্ন শ্রেণীর যাজকরা ঈর্ষা কাতর হতেন। নিম্ন যাজক রাই বিদ্রোহী হয়ে তৃতীয় শ্রেণীর সাথে হাত মিলিয়ে স্টেটস জেনারেল জাতীয় সভায় পরিণত করেছিল। 


উচ্চযাজক ও অভিজাতরা ছিল ফ্রান্সের সুবিধাভোগী। এরা ফ্রান্সের জনসংখ্যার মাত্র ২%। সম্ভ্রান্তরা রাজক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বি হতে পারে এই ভেবে বুবরো রাজাগণ সম্ভ্রান্তদের উপর প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব দিতেন না। তবে তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা গুলি পরিপূর্ণভাবেই ভোগ করে চলত। যেমন অনেক কর যা সাধারন মানুষকে দিতে হতো, তা তাদের দিতে হতো না। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ পদগুলি তারা বংশানুক্রমিক ভাবে ভোগ করতো। মোট চাষযোগ্য জমির ষাট শতাংশ তাদের অধীনে ছিল। স্ব, স্ব জমিদারিতে বিচারের অধিকার, গ্রাম অঞ্চলে রক্ষণাবেক্ষণ, বিচার করা এইসব ব্যাপারে তাদের একক কর্তৃত্ব ছিল। এরা অনেক কর থেকে রেহাই পেলেও কৃষকদের উপর কর ধার্য করতেন। কৃষক শ্রমেরও ভাগীদার হতেন।


সম্ভ্রান্তদের মধ্যে দরবারী অভিজাত রা ভার্সাই প্রাসাদ নগরে বাস করত এরা ছিল রাজকীয় অনুগ্রহপুষ্ট এবং যথেষ্ট ধনী। এরা বিলাস বহুলতার মধ্যে দিন কাটাতো। অষ্টাদশ শতকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এদের আয় তেমন বাড়েনি, বিলাসিতা অক্ষুন্ন রাখতে তারা কখনো ঋণের পথে হাঁটতো, বেশি করে কর আদায়ের চেষ্টা করতো।


অন্যদিকে গ্রামীণ অভিজাতরা ক্রমশ শ্রীহীন হয়ে পড়েছিল এবং সম্পন্ন কৃষকদের পর্যায়ে নেমে এসেছিল। সম্ভ্রান্তদের ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোন পেশায় যাওয়া ছিল সম্মানহানি কর। সাধারণে পরিণত হওয়ার নামান্তরে তারা গ্রামীণ অভিজাতরা তাদের স্বার্থ পূরণে সামন্ততন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য বেশি তৎপর দেখাতো। প্রসঙ্গত শহুরে অভিজাতরা এদের অবঞ্জার চোখে দেখতো। এই দুই শ্রেণীর পাশে পাশে ১৮ শতকের একটি নতুন অভিজাত সম্পূর্ণ গোষ্ঠী দেখা দিয়েছিল যারা পোষাকী অভিজাত নামে পরিচিত। এরা বুর্জোয়া শ্রেণী থেকে উঠে এসেছিল। বিগত দুই শতকে বুবরো রাজারা অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্তদের বেশ কিছু উচ্চ পথ বিক্রি করেছিলেন। এই নতুন অভিজাত শ্রেণীর উত্তরোত্তর প্রভাব বৃদ্ধি। জন্ম কৌলীন্য অভিজাতদের ঈর্ষার কারণ হয়। পোষাকী অভিজাতরা সামাজিক মর্যাদা পেতনা বলে তারা ক্ষুদ্ধ ছিল। 


প্রকৃতপক্ষে অভিজাত সম্প্রদায় অষ্টাদশ শতকে অর্থের জন্য যথেষ্ট ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এরা রাজার অনুগ্রহ লাভ, ধনবান বুর্জোয়ার সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন কেউবা শিল্পে পুঁজিবিনিয়োগ করেছেন। গ্রামীণ অভিজাতরা অর্থের বিনিময়ে সাথে যুক্ত হন। নীল রক্তের অভিজাতরা সুবিধা ও অধিকার গুলি রক্ষা করতে তৎপর হয়েছিলেন। কারণ পোষাকী অভিজাত রাজতন্ত্র এবং বুদ্ধি বিভাসিত দর্শন এবং তৃতীয় এস্টেট এদের ক্ষমতা কে খর্ব করতে চাইছিল। 


অভিজাতদের চাপে পড়েই রাজা ষোড়শ লুই এই জন্মগত অভিজাতদের প্রশাসনিক পদগুলিতে বহাল রাখার নীতি গ্রহণ করেন। পোশাকি অভিজাত সৃষ্টি বন্ধ করেন। ফলে দেখা যায় বিপ্লব পূর্ব যুগ অভিজাতদের পুনরুদ্ধারের যুগ। তারা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল। সামন্তগন সব রকম সংস্কারের বিরোধিতা করেছিলেন এবং প্রশাসনের সর্বস্তরে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।


প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে ২½ কোটি মানুষের মধ্যে ২.৪ কোটি তৃতীয় এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত। এই অন্তর্গত ছিল চারটি শ্রেণী বুর্জোয়া, কৃষক, শ্রমিক ও সাফুল্যো।


তৃতীয় এস্টেট বুর্জোয়ারা ছিলেন অগ্রগণ্য। লেফেভর বলেছেন বুর্জোয়া শ্রেণী ছিল ফ্রান্সের সবচেয়ে সংযত এবং শিক্ষিত অংশ। বুর্জোয়া গোষ্ঠী ছিল বিভিন্ন উপজীবিকা আশ্রয় করা একটি মিশ্র চরিত্রের জনসমষ্টি। বুর্জোয়া শ্রেণীর অন্যতম ভাগ ছিল উচ্চ বুর্জোয়া বা বিত্তবান বুর্জোয়া, এরা সংখ্যায় অল্প। এদের মধ্য থেকেই সৃষ্টি হতো পোষাকি অভিজাত শ্রেণী। যতদিন বুবরো রাজতন্ত্র এদের ঋণের সুদ দিতে পেরেছিল ততদিন তারা রাজতন্ত্রকে সমর্থন করেছে, তারপরেই উঠেছে ঝড়। 


মধ্য বুর্জোয়াদের মধ্যে ছিলেন আইনজীবী, চিকিৎসক শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিনেতা ও বুদ্ধিজীবীরা। এছাড়াও মাঝারি দোকানদার, কর্মশালার মালিক স্বাধীন কারিগর এই শ্রেণীর অন্তর্গত। এই শ্রেণীকে বিত্তবান বুর্জোয়ারা অবজ্ঞা চোখে দেখতো। নিম্ন বুর্জোয়া শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল ছোট কারিগর, দোকানদার প্রভৃতি। এদের উচ্চ বুর্জোয়াদের মত সম্পত্তি বা মধ্য বুর্জোয়াদের মত শিক্ষা ও বুদ্ধি ছিল না এরা উচ্চ বুর্জোয়া দের প্রতি বিরক্ত ছিলেন আবার শ্রমজীবীকেও তাচ্ছিল্য করত। 


শিক্ষিত সংস্কৃতিবান বুর্জোয়াদের বিত্তবান বুর্জোয়াদের থেকে পৃথক অবস্থান বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। উচ্চ -বু্র্জোয়ারা শহরের প্রাসাদে বাস করত অন্যদিকে মধ্য বুর্জোয়ারা একতলা, দোতলা বাড়ির তলে বাস করত। যে বাড়ির নিচের তলায় নিম্নস্তরের মানুষগুণ ঘেষাঘেষি ভাবে বাস করত। এই পাতি বুর্জোয়াদের সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগের ফলে জনসাধারণের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারা দাঁড়িয়ে পড়া সম্ভব হয়েছিল। 

প্রথমদিকে বুর্জোয়ারা অভিজাতদের সাথে এক হয়ে রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করলেও পরে তারা শ্রেণীচেতনা সম্পর্কে সজাগ হয়। এবং কৃষকদের বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা রাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রদের বিশেষ অধিকারের বিরোধিতা করে এবং পরিবর্তনশীল সমাজের দাবি করেন। যেখানে জন্মসূত্র ব্যতিরেকে সমস্ত মানুষ অংশ নেবে। 


ফ্রান্সের জনসংখ্যার অধিকাংশ ছিল কৃষক এরা অভিজাত এবং উচ্চ বুর্জোয়াদের কাছে তাচ্ছিল্যের পাত্র ছিল। এদের কাজ ছিল উৎপাদন করা ও কর দেওয়া মাত্র। কৃষি ব্যবস্থায় তখনও সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো ছিল। কৃষকদের ৫% ছিল ভূমি কর। কৃষকদের মধ্যে সম্পন্ন কৃষক অবশ্যই ছিল তবে সব ভুমিবান কৃষকেরা সম্পন্ন ছিলেন না। কারণ অনেকেরই খুব কম জমি ছিল। 


কৃষকদের ৫০ শতাংশ ছিল বর্গাকার কৃষক যারা চার্চ বা সামন্ত প্রভুর জমিতে পরিশ্রমিক হিসেবে উৎপন্ন ফসলের ৫০ শতাংশ পাওয়ার আশায় চাষ করতো। জমিতে বিনিয়োগ করত তবে উৎপাদন ব্যাহত হলে এরা ঋণের জালে আটকে পড়তো। কৃষকদের ২৫ শতাংশ ছিল কৃষি মজুর কোন কারণে চাষের ক্ষতি হলে তারা শহরে গিয়ে জীবনধারণের চেষ্টা করত। 


ফ্রান্সের কৃষি ব্যবস্থা ভালো ছিল না। সবসময় ভাল ফসল হতো না। কৃষি ছিল প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জমিগুলির খন্ডিকরন চলেছিল বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, পঙ্গপালের আক্রমণ প্রভুতি কারনে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। 


কৃষকদের সমস্যার আরও বড় কারণ ছিল অসম কর ব্যবস্থা। অভিজাত ও যাজকরা রাষ্ট্রকে কোন কর দিত না। যাবতীয় করের বোঝা কৃষকদের বহন করতে হতো। ভূমিকর, ধর্ম কর, সামন্ত কর জমিদারের মাছ ধরার অধিকার, জমিদারদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কর, সামন্ত প্রভুর কারখানায় গম পেষাই কর, কৃষকদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। বিপ্লবের প্রাক্কালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুগে সমান্তরা কৃষকদের উপর নতুন করে কর বসাতে থাকে। পতিত পশুচারণ ভূমি, চাষের আওতায় আনলে কৃষকদের মধ্যে বিক্ষোভ বাড়ে। বুবরো রাজারা এ সময় কৃষকের সমস্যাগুলির কোন সমাধান করতে পারিনি। 


অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে শ্রমিক বলতে প্রধানত কুঠির ও হস্তশিল্প নিযুক্ত শ্রমিকদের বোঝাত। তখন ফ্রান্সে যন্ত্র শিল্পের সূচনা হলেও তার গতি ছিল মন্থর। আর যন্ত্রশিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্যবোধ ও সংগঠন তখনও গড়ে ওঠেনি অর্থাৎ প্রকৃত শ্রমিক শ্রেণী গড়ে ওঠেনি। 


শহরে দরিদ্র মানুষদের বলা হয়েছে সাফুল্যো। অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে নগরায়নের প্রয়োজনে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজন হয়েছিল নানা-কর্ম উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষত গ্রাম থেকে বহু লোক শহরে এসে দিনমজুর, ভিস্তী, মুটে, মালি প্রভৃতি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। এরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করত। এদের কোন শিক্ষা ছিল না, কোন সামাজিক মর্যাদা ও ছিল না। 


১৭৭৩ থেকে ১৭৮৯ এর মধ্যে ফ্রান্সে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ৬০ শতাংশ বেড়েছিল কিন্তু এদের মজুরি বেড়েছিল মাত্র বাইশ শতাংশ। অর্থাৎ অবস্থা এত খারাপ ছিল যে এদের দৈনিক মজুরি ৭৫ % একদিনের বাজারে খরচ হয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবে বিক্ষুদ্ধ এই সাফুল্যো শ্রেণী বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এরা খাদ্য দাঙ্গা করে প্রতিবাদ চালাতো। বাস্তিলের পতনে ভার্সাই এর ভূখা মিছিল এদের অগ্রনি ভূমিকা ছিল। এরা মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানের দাবি করেছিল। 


সুতরাং প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে সমাজের সর্বস্তরে বিভাজন এবং নিম্ন শ্রেণীর বিরুদ্ধে উচ্চ শ্রেণীর বিক্ষোভ ক্রমশ ধুমায়িত হচ্ছিল। এবং এই ক্ষোভ ও শ্রেণীচেতনা বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...