সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি ব্যাখ্যা করে, তার মুঘল সাম্রাজ্যের পতন কে কতখানি ত্বরান্বিত করেছিল তা দেখাও।

 ঔরঙ্গজেব তার পূর্বসূরীদের অনুসরণ করেই দাক্ষিণাত্যের উপর কেন্দ্রীয় শক্তির কব্জা কায়েম করতে সচেষ্ট হন। জীবনের শেষ ২৫ টা বছর তিনি এজন্য দাক্ষিণাত্যে কাটান এবং বহু সম্পদ ব্যয় করেন। অবশেষে দাক্ষিণাত্যে মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তা পরবর্তী মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে লাভবান হয়নি। 


ঔরঙ্গজেব শাসনকালের প্রথমার্ধে উত্তর ভারতের রাজনীতি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে দাক্ষিণাত্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সময় পাননি। দাক্ষিণাত্যে প্রধান দুটি রাজ্য বিজাপুর ও গোলকুন্ডা কার্যত স্বাধীন ছিল। তবে এদের ক্রমশ ক্ষীয়মান শক্তি হ্রাসের সুযোগে শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠা জাতির ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাক্ষিণাত্যে নতুন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শাহজাদা আকবর বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এবং শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীর দরবারে আশ্রয় নিলে পরিস্থিতি আরোও জটিল হয়ে ওঠে। এমত অবস্থায় ঔরঙ্গজেব 1681 খ্রিস্টাব্দে রাজপুতদের সাথে শান্তি চুক্তি স্থাপন করে দ্রুত দাক্ষিণাত্যের দিকে যাত্রা করে। ১৬৮১ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সাম্রাজ্যের শক্তি নিয়োগ করেছিলেন দাক্ষিণাত্যে। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন রাজ্য বিজাপুর ও গোলকুন্ডার বিলুপ্তি সাধন এবং নতুন করে উত্থান হওয়া মারাঠা শক্তির বিলোপ। 


দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের উত্থানকে ঔরঙ্গজেব প্রথমে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। সুবাদারদের দ্বারা এই সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে শায়েস্তা খাঁ এবং যশোবন্ত সিংহের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। জয় সিংহও শিবাজী কে বিজাপুরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে প্রথমে বিজাপুর ও গোলকুন্ডা দখল এবং পরে মারাঠাকে পর্যদুস্ত করার পরিকল্পনা নিতে সম্রাটকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তবে সম্রাট তা গ্রহণ করেননি। গ্রহণ করলে হয়তো মারাটা শক্তিকে বিলুপ্ত করা সম্ভব হতো। 


সুবাদারদের ব্যর্থতায় শেষপর্যন্ত ঔরঙ্গজেব স্বয়ং দাক্ষিণাত্যে আসেন এবং আহম্মদ নগর থেকে অভিযান পরিচালনা করতে থাকেন। শিবাজীর মৃত্যু ঘটলে তার পুত্র শম্ভুজের নেতৃত্বে মারাঠারা তখনো বেশ শক্তিশালী। তাই পরপর চারটি অভিযানে ঔরঙ্গজেব কয়েকটি দুর্গ দখল ছাড়া মারাঠাদের কোনো মতেই দুর্বল করতে পারেননি বা শাহজাদা আকবরকেও ধরতে পারেননি। ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুজী ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে সন্ধি করলে বিদ্রোহী শাহাজাদা আকবর সম্ভুজীর আচরণে ব্যথিত হন এবং পারস্য চলে যান। অতঃপর বিজাপুর, গোলকুণ্ডা ও মারাঠাশক্তি একত্রে মুঘলদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করে।। 


ঔরঙ্গজেব বিজাপুর ও গোলকুন্ডা দখলে মনোনিবেশ করেন। রাজ্য দুটি দখলের পিছনে ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব কাজ করেছিল। তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন এ রাজ্য দুটি শিয়াপন্থী ছিল বলে ঔরঙ্গজেব সহ্য করতে পারত না। যদিও মুঘল রাজ দরবারে এমন কি ওরঙ্গজেবের সময়ও শিয়াদের সাথে সম্ভাব বজায় ছিল। কারণ দরবারে উচ্চ পদে শিয়াদের অধিপত্য অটুট ছিল। এমনকি ঔরঙ্গজেবের পুত্রবধূও ছিলেন শিয়া কন্যা। তাই ক্যামব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিকরা এবং যদুনাথ সরকার, শ্রী রাম শর্মা প্রমুখ ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ ওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য আক্রমণের জন্য শিয়া বিরোধিতা কে দায়ী করেছেন-এই মত গ্রহণযোগ্য নয়। 


শাহজাদা আজমের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী বিজাপুর আক্রমণ করে, গোলকুন্ডাও শম্ভুজীর সাহায্যে প্রায় আঠারো মাস তারা যুদ্ধ চালায়। অবশেষে ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুর আত্মসমর্পণ করে। অতঃপর বিজাপুরকে সাহায্যে করার অভিযোগে ঔরঙ্গজেব স্বয়ং গোলকুন্ডা অভিযান চালায় এবং দীর্ঘ আট মাস অবরোধের পর 1887 খ্রিস্টাব্দে একুশে ফেব্রুয়ারি গোলকুন্ডা আত্মসমর্পণ করে। উভয় রাজ্যকে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং রাজ্যের শাসক কে আহমেদনগরে বন্দী করা হয়। 


শম্ভুজীর মধ্যে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব ছিল। তাই ঔরঙ্গজেবের বিজাপুর ও গোলকুন্ডা নিয়ে ব্যস্ততার সুযোগে তিনি শাহজাদা আকবরকে সামনে রেখে মুঘল শক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ না করে বিলাস বাসনে মত্ত থাকেন। ঔরঙ্গজেব শম্ভুজি কে বন্দী করেন তার পুত্র সাহু কেও বন্দী করা হয়। তবে সম্রাট শাহু কেই মারাঠা রাজ্যের জায়গীর দিতে চেয়েছিলেন। অতঃপর শম্ভুজির ভাই রাজারাম মারাঠা সিংহাসনে বসেন। মুঘল বাহিনী রায়গর দুর্গ দখল করলে রাজারাম জিঞ্জিতে পালিয়ে যান। তখন থেকে তার স্ত্রী তারাবাঈ মুঘলদের বিরুদ্ধে মারাঠাদের নেতৃত্ব দেন। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব এর মৃত্যুর সাথে সাথে তার দাক্ষিণাত্য নীতির অবসান ঘটে। 


ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্কের সূচনা করেছে। স্মিথ, এলফিনস্টোন প্রমুখ ইংরেজ ঐতিহাসিক মনে করেন বিজাপুর ও গোলকুন্ডার স্বাধীনতা বিনষ্ট করা ঔরাঙ্গজেবের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচায়ক। কারণ এ দুটি রাজ্য স্বাধীন থাকলে ঔরঙ্গজেব নিশ্চয়ই মারাঠাদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য পেত। এই মতের যথার্থতা নেই। কারণ ইতিপূর্বে এই দুটি রাজ্যই মারাঠাদের সাহায্য করেছে এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে চরম শত্রুতার প্রমাণ রেখেছে। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার মনে করেন এই দুটি সুলতানি রাজ্যের পক্ষে কখনোই জাতীয় জাগরনে উদ্বুদ্ধ মারাঠাদের মত শক্তিশালী রাজ্যকে অগ্রগতি রোধ করার সম্ভব ছিল না। যে এন চৌধুরীও এই মত সমর্থন করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে মুঘলদের সাথে দাক্ষিণাত্যের সুলতানদের বিরোধ সামরিক নয়।এ বিরোধ আকবরের আমল থেকে চলে আসা এক শাশ্বত ও চিরস্থায়ী প্রক্রিয়া। এই অবস্থায় মুঘলদের সাথে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা অসম্ভব ছিল। উপরন্ত মারাঠাদের উত্থান ঘটায় তাদের অগ্রগতি রোধ করার ক্ষমতা এই দুই দুর্বল সুলতানি রাষ্ট্রের ছিল না। সুতরাং ঔরঙ্গজেবের বিজাপুর ও গোলকুন্ডার জয় তার রাজনৈতিক ও অদূরদর্শিতার পরিচয় এবং তার মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী একথা বলা যাবে না। আর এদিক থেকে বিচার করলে ওরঙ্গজেবের গোলকুন্ডা বিজাপুর জয় তার দাক্ষিণাত্য নীতির সফল পদক্ষেপ। 


বিজাপুর, গোলকুন্ডা জয়ও মারাঠাদের দমন করে, ঔরঙ্গজেব ত্রিচিনোপল্লী ও তাঞ্জোর পর্বত পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ায় তিনি সর্বপ্রথম দাক্ষিণাত্যসহ অসমুদ্রহিমাচল সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হন ঠিকই। কিন্তু আপাত সফলতার আড়ালে এর মধ্যে যে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের বীজ লুকিয়ে ছিল তা অনেক ঐতিহাসিক স্বীকার করেছে। দাক্ষিণাত্য সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ায় এত বড় সাম্রাজ্য এক কেন্দ্র থেকে শাসন করা একজনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া দাক্ষিণাত্যে ২৫ বছর অবস্থান করার ফলে উত্তর ভারতে ওরঙ্গজেবের অবর্তমানের সুযোগে আঞ্চলিক জমিদার ও সামন্তরা রাজ ক্ষমতা অগ্রাহ্য করে দেশময় বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করে। দাক্ষিণাত্য অভিযানে প্রচুর অর্থব্যয় এবং মারাঠা ও মুঘল বাহিনীর তাণ্ডবে ব্যাপক শস্যহানি সাম্রাজ্যের আর্থিক অবস্থাকে দুর্বল করে তোলে। 


ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র তার "মুঘল দরবারে দল ও রাজনীতি' গ্রন্থে দেখিয়েছেন দাক্ষিণাত্য নীতিতে কিভাবে জায়গীরদারী সংকট ঘনীভূত হওয়ায় অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়। দাক্ষিণাত্যে বিদ্রোহীদের বশে আনার জন্য প্রচুর পরিমাণে 'মনসব' বিলি করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গীর এর অভাব দেখা দেয়। তাছাড়া মুঘল অভিজাত শ্রেণীতে দক্ষিণীদের অনুপ্রবেশ পূর্বের সমস্যাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে দরবারে অভিজাতদের মধ্যে জায়গীর লাভের জন্য দলাদলি শুরু হয়ে যায়। মনসব অনুযায়ী জায়গীর কম হওয়ায় জমির উদ্ধৃত থেকেও প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হতো না। ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবে কৃষকদের উপর চাপ বৃদ্ধি করলে কৃষকরা জমি ছেড়ে পলায়ন করে এবং অবস্থা আরোও জটিল হয়। ওরঙ্গজেবের শাসনের শেষ দিকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে তীব্র আকার নেয়। ফলে মুঘল সাম্রাজ্য ধ্বংসের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয় তাই ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের "দাক্ষিণাত্য নীতি ঔরঙ্গজেব কে ধ্বংস করেছে" এই মন্তব্য সঠিক বলে মনে করা হয়। 


আতাহার আলী আবার ওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্যের রাজ্য জয় কে বলিষ্ঠ সামরিক শক্তির পরিচয় নয় বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ বিদ্রোহীদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে বশ করা বা স্বপক্ষে আনা সম্ভব হয়েছিল। 


পরিশেষে বলা যায় দাক্ষিণাত্য নীতি হয়ত ওরঙ্গজেব তথা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ভিত হয়ত রচনা করেছিল। কিন্তু তার প্রচেষ্টায় যে অখন্ড ভারতবর্ষের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল তা অস্বীকার করা যায় না। তাই বলা যায় আজকের দৃষ্টিতে না হলেও সেদিন সর্বপ্রথম সর্ববৃহৎ ভারত রাষ্ট্রের এক স্পষ্ট রাষ্ট্রনৈতিক ভৌগোলিক মানচিত্রের উদগতা তিনিই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...