সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খানুয়ার যুদ্ধ

খানুয়ার যুদ্ধ

ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রধান কৃতিত্ব বাবরের। যে তিনটি যুদ্ধ ছাড়া মুঘলদের ভারতে আধিপত্য কায়েম সম্ভব ছিল না সেগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ খানুয়া যুদ্ধ বলে ঐতিহাসিকগন মনে করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী পরাজিত হলেও আফগানরা নিশ্চিহ্ন হয়নি। তাঁর ভ্রাতা মামুদ লোদী আফগানদের সঙ্ঘবদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। পানিপথের যুদ্ধের পর রাজপুত নেতা রানা সঙ্গ দিল্লি দখলের পরিকল্পনা করেন। তিনি ভেবেছিলেন বাবর, তৈমুরের মতো লুণ্ঠন করে ফিরে যাবে। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন বাবর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তখন তিনি আফগানদের সঙ্গে আঁতাত করে বাবরকে ভারত ছেড়ে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করেন। আবার অন্যদিকে বাবরও ভেবেছিলেন যে, রাজপুতদের পরাস্ত করতে না পারলে তার ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। তাই উভয়পক্ষই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। 

১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে ১৭ ই মার্চ উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। আগ্রার অদূরে খানুয়ার প্রান্তরে প্রাথমিক পর্বে নির্ভীক দুঃসাহসী রাজপুতরা মুঘল বাহিনীকে চাপে ফেলে দেয়। কিন্তু বাবর এই প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং তাঁর কেন্দ্রীয় ও সংরক্ষিত বাহিনীর দ্বারা রাজপুতদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বাবর উভয়ের মিলিত বাহিনীকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়।  

খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব নিয়ে ঈশ্বরী প্রসাদ বলেছেন, খানুয়ারের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দিল্লিতে সুলতানি অবক্ষয়ের পর রাজপুতদের নেতৃত্বে যে হিন্দু শাসন পূনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, খানুয়ার যুদ্ধে তা সম্পূর্ণভাবে মুছে যায়। এই যুদ্ধে বাবরের জীবনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অবসান ঘটে। সুতরাং বলা যেতে পারে বাবর ভারতে যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তা পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় ও খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভ করে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাই বলা যায় পানিপথের যুদ্ধের পরিপূরক রূপটি হল খানুয়ার যুদ্ধ।

The Battle of Khanwa

The primary credit for laying the foundation of the Mughal Empire in India goes to Babur. Among the three decisive battles without which Mughal dominance in India would not have been possible, historians consider the Battle of Khanwa the most significant. Although Ibrahim Lodi was defeated in the First Battle of Panipat, the Afghans were not wiped out. His brother Mahmud Lodi tried to regroup the Afghan forces. After Panipat, the Rajput leader Rana Sanga planned to capture Delhi. He believed that Babur, like Timur, would plunder and then leave. But when he realised that Babur was trying to establish an empire, he formed an alliance with the Afghans to drive Babur out of India. On the other hand, Babur understood that unless he defeated the Rajputs, his dream of establishing an empire in India would remain unfulfilled. Thus, both sides began preparations for war.

On 17 March 1527, the two forces clashed. In the early phase of the battle on the plains of Khanwa near Agra, the fearless and daring Rajputs put the Mughal army under considerable pressure. But Babur managed to recover from this initial setback, and with the help of his central and reserve forces, he launched a fierce attack on the Rajputs. Ultimately, Babur succeeded in defeating the combined forces of the Rajputs and Afghans.

Regarding the importance of the Battle of Khanwa, historian Ishwari Prasad has said that it was of great significance in Indian history. After the decline of the Delhi Sultanate, there had emerged a possibility of restoring Hindu rule under the Rajputs, but the Battle of Khanwa completely extinguished that possibility. For Babur, the battle ended a long period of political uncertainty. Therefore, the imperial dream Babur had begun to cherish in India started to take shape with the victory at Panipat but moved toward realisation with his victory at Khanwa. In this sense, the Battle of Khanwa can be considered a complement to the Battle of Panipat.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...