দ্বিমেরুতা
দ্বিমেরুতা শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন আর্নল্ড টয়েনবি। এরিক হবসবম মনে করেন দ্বিমেরুতা হল ঠান্ডা লড়াইয়ের রাজিনৈতিক পরিণতি, যা বিশ্বে দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তিকেন্দ্রের জন্ম দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পরিবর্তে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটি বৃহৎ শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। পুজিবাদের রক্ষক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের পুঁজিবাদী দেশগুলিকে নিয়ে একটি ঐক্যজোট গড়ে তোলে এবং বিশ্বে পুঁজিবাদ সম্প্রসারণ ও রক্ষার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহন করেন। এই উদ্দেশ্যেই একাধিক অর্থনৈতিক সহয়তা প্রকল্প ও সামরিক জোট গঠন করে। অন্যদিকে সমজতন্ত্রী ব্যবস্থার অভিভাবক সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের কমিউনিষ্ট দেশগুলিকে নিয়ে জোট গঠন করে। এইভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে শক্তি ও মতাদর্শের নতুন মেরুকরণ ঘটেছিল। এই নতুন পরিস্থিতি দ্বিমেরুতা নামে পরিচিত।
দ্বিমেরুকৃত ব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে রাধারমণ চক্রবর্তী বলেছেন, এই মূল কাঠামোটি এমন যে দুটি অতিবৃহৎ শক্তিকে ঘিরে অন্যান্য রাষ্ট্র সমষ্টিবদ্ধ হতে থাকে। এইরকম অবস্থায় দুটি প্রধান শক্তি সর্বদা একে অপরের সঙ্গে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত থাকে যে বিদ্যমান নিরাপত্তায় তারা কখনোই সম্পূর্ণ ভরসা করতে পারে না। বিপক্ষ শিবিরের তুলনায় সামরিক সামর্থ্য ও কূটনৈতিক দাপট বাড়িয়ে তুলতে উভয়ই সদা সচেষ্ট থাকতে বাধ্য হয়। একে অন্যের দ্বারা পর্যুদস্ত হওয়ার আশঙ্কায় তারা সর্বদাই সন্ত্রস্ত থাকে। ফলে নিরন্তর রোষারোষি ও পরস্পরকে ক্ষমতার মাপকাঠিতে ছাপিয়ে যাওয়ার এক অদ্ভুত প্রবণতা কায়েম হয়ে বসে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন