ট্রুম্যান নীতি | Truman Doctrine
1947 এর 15 ই মার্চ ট্রুম্যান নীতি ঘোষিত হয়েছিল। এই নীতিতে বলা হয়েছিল বিশ্বের যে কোনো দেশ বা জাতি নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার প্রয়োজনে অথবা বিদেশি চাপ ও প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নিজ নিজ রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি অক্ষুন্ন রাখতে চাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পুরোমাত্রায় সাহায্য ও সহযোগিতা পাবে। এই বহিরাগত চাপ বলতে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ ও তার সঞ্চালক সোভিয়েত রাশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক তৎপরতার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন আর্থিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। গ্রিস ও তুরস্ককে আর্থিক ও সামারিক ভাবে সহযোগিতা করা তার পক্ষে আর সম্ভব ছিল না। ব্রিটেন হাতগুটিয়ে নিলে পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার পূর্ব ইউরোপীয় বলয় গড়ে তোলার পর তুরস্কের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সচেষ্ট হয়। সাথে সাথে মস্কোর মদদপুষ্ট বামপন্থী গেরিলারা গ্রিসের দক্ষিণপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই পরিস্থিতিতে উক্ত দু'টি দেশে সোভিয়েত প্রভাব প্রতিরোধ করার জন্য গ্রিস ও তুরস্ককে আর্থিক সহায়তা প্রদান আমেরিকার পক্ষে অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। 1947 এর 15ই মার্চ মার্কিন কংগ্রেসের কাছে 400 মিলিয়ন ডলারের ব্যয়বরাদ্দের অনুমোদন চান রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান। এই উদ্যোগই ছিল ট্রুম্যান নীতি সূচনা।
ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার পর থেকে এটিই মার্কিন বিদেশনীতির মূল প্রতিপাদ্য হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী মনরো (বিচ্ছিন্নতার) নীতির অবসান ঘটে। হান্স মর্গ্যানথোর ভাষায় এই ট্রুম্যান ডকট্রিন ক্রমে ঠান্ডা লড়াইয়ের মেধাগত পুঁজি হয়ে উঠলো। ট্রুম্যান নীতি কঠোর সমালোচনা করেছেন ওয়াল্টার লিপম্যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে একগুচ্ছ তাবেদার রাষ্ট্রগঠনের উদ্যোগী হয়, যা তার আগ্রাসী ও যুদ্ধবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশও। এমনকি সাম্যবাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকেও সমর্থন করে। তবে সোভিয়েত শক্তি বলয়ের পাল্টা বিকল্প হিসেবে পশ্চিমী পুঁজিবাদী জোট গঠনের ক্ষেত্রে ট্রুম্যান নীতি অবদান তা অনস্বীকার্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন