Please visit our Homepage and Subscribe us.
চোল রাজারা দক্ষিণ ভারতে দশ থেকে তেরো শতক পর্যন্ত শাসন করেছিল। তাদের বিশাল সাম্রাজ্য সাগর পেরিয়ে মালদ্বীপ, সিংহল,জাভা , মালয় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। শুধু সাম্রাজ্য স্থাপনই নয় তারা একটি দক্ষ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। চোল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিচু তলায় আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ একক গ্রাম। পাণ্ড্য ও পল্লবদের লেখতে স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা আছে। কিন্তু চোলদের মত তা এত ব্যাপক ও পরিণত ছিল না।
কেন্দ্রে চোলরা নিরঙ্কুশ আমলাতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। কেন্দ্রের হাতে ছিল প্রতিরক্ষা, আভ্যন্তরিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির মতো বিষয়গুলি। বাকি সব কাজ করত গ্রাম সভাগুলি। উল্লেখযোগ্য বিষয় এটাই যে চোলদের কেন্দ্রীয় শাসন গ্রাম ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার হানি ঘটাত না। কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আঞ্চলিক স্তরে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করত না। কর্মচারীরা কেবল উপদেষ্টার কাজ করত।
স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তি ছিল গ্রাম,কতকগুলি গ্রাম নিয়ে গড়ে কুররম, নাড়ু বা কোট্টম। বড়ো গ্রাম একাই একটি কুররম/কোট্টম। কয়েকটি কুররম নিয়ে গড়ে উঠত বলনাড়ু; বলনাড়ুর উপরে ছিল মন্ডলম বা প্রদেশ।
প্রতিটি গ্রামের প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষেরা সাধারণত গ্রামসভা গঠন করত। গ্রামসভাগুলি পরিচালনার জন্য অনেকগুলি সমিতি তৈরি হত। এই সমিতির সদস্য হতে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির মালিকানা ও কর প্রদানের যোগ্যতা থাকতে হত, তাকে সেই গ্রামের বাসিন্দা হতে হত,বয়স হতে হবে ৩৫-৭০ মধ্যে, জ্ঞানী ও চরিত্রবান হতে হত। যিনি গত ৩ বছরের মধ্যে সদস্য ছিলেন এবং হিসেব দিতে পারেননি, তিনি সমিতির সদস্য হতে পারবেন না। অসৎ, ব্যাভিচারী, চুরির অভিযোগে শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি সমিতির সদস্য হতে পারবেন না। পাড়া বা কোট্টম থেকে ৩০জনকে মনোনীত করা হত। এর থেকে একাধিক বরিয়ম বা কমিটি তৈরি হত। প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখার জন্য ১২জনের সমিতি তৈরি হত। এ ছাড়াও ছিল তোট্টাবরিয়ম বা উদ্যান সমিতি, এরিবরিয়ম বা পুষ্করিণী সমিতি। স্বর্ণ সমিতি প্রভৃতি। ঢোল পিটিয়ে কোনো জলাশয়ের ধারে, মন্ডপে বা মন্দির চত্বরে সমিতির অধিবেশন বসত। আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। কোনো বিশেষ শ্রেণীর স্বার্থ জড়িত থাকলে সেই শ্রেনীর প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনা হত।
সমিতির সদস্যরা জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত। রাজস্ব সংগ্রহ করা, সেচ ব্যবস্থা তদারকি করা, পতিত জমি উদ্ধার করা প্রভৃতি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত। জমি জরিপ ও রাজস্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের এরা সহায়তা করত। রাস্তাঘাট নির্মাণ, পুকুর খনন, মন্দির রক্ষণাবেক্ষেণ , স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত উদ্যোগ নিত এরা।
চোল সাম্রাজ্যে চার রকমের গ্রাম ছিল। সাধারণ গ্রামের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নাম ঊর। অগ্রাহার গ্রামগুলিতে থাকত সভা বা মহাসভা। ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণদের নিয়ে গঠিত মিশ্র গ্রামগুলিতে ঊর বা সভা পাশাপাশি অবস্থান করত। বণিক ও ব্যবসায়ী অধ্যুষিত অংশে থাকত নগরম। নগরম একই সাথে বাণিজ্য সংস্থা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করত।
চোলদের লেখগুলিতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানগুলির কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা নেই। পন্ডিতদের অনুমান যে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিষ্ঠানের ওপর আরেকটি স্তর ছিল। নাড়ুকেন্দ্রিক এই স্তরের নাম হল নাত্তার। ঊর, সভা এবং নগরমের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সভা গড়ে উঠত এবং বিভিন্ন কাজে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও রাজকর্মচারীদের সহযোগিতা করত। চোলদের লেখতে মধ্যস্থ ও করনাত্তার নামে দুই ধরণের গ্রামীণ কর্মচারীর কথা জানা যায়। মধ্যস্থরা গ্রামীণ বিবাদের মীমাংসা করত। করনাত্তার ছিলেন হিসেব পরীক্ষক। এরা সভা বা ঊরের অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও আলোচনায় অংশ নিতেন না।
Thanks for reading.
চোলদের লিপি ছিল তালপাতায় লেখা যার নাম ছিল ওলাই
উত্তরমুছুনবলনাড়ু শব্দের অর্থ কি?
উত্তরমুছুন