সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্মপাল ও দেবপালের রাজনৈতিক অবদান | Political Contributions of Dharmapala and Devapala

ধর্মপাল ও দেবপালের রাজনৈতিক অবদান

ভারতের ইতিহাসে আদি মধ্যযুগ এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আঞ্চলিক রাজশক্তির বিকাশ। আলোচ্য পর্বে যে বৃহৎ আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পূর্ব ভারতের পালরাজ্য। পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন গোপাল (৭৫০-৭৫)। খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, মাৎস্যন্যায় পর্বের অরাজকতা দূর করার জন্য বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ গোপালকে রাজা মনোনীত করেছিলেন। এইভাবে মাৎস্যন্যায় এর অবসান ঘটেছিল এবং বাংলায় পাল শাসনের সূচনা হয়েছিল। বাংলাকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপনের যে স্বপ্ন শশাঙ্ক দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হয়েছিল পাল রাজাদের শাসন কালে। পালবংশের দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক ধর্মপাল ও দেবপাল। 

ধর্মপালের অবদান


গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৭৫-৮১০) ছিলেন পাল বংশের প্রথম শক্তিশালী শাসক। ধর্মপালের রাজত্বকালের  রাজনৈতিক গুরুত্ব এটাই যে, তিনি কনৌজ কেন্দ্রিক ত্রিপাক্ষিক সংঘর্ষ-এ যোগদান করেন এবং বাংলাকে কেন্দ্র করে উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

ত্রিপাক্ষিক সংঘর্ষের তিনটি পক্ষ-- পূর্ব ভারতের পাল, পশ্চিম ভারতের প্রতিহার এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকুট বংশ। ধর্মপালের জীবদ্দশায় এর দুইটি পর্ব। প্রথম পর্বে  কনৌজ দখলের জন্য ধর্মপাল এবং প্রতিহার রাজা বৎস পারস্পরিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং এই যুদ্ধে ধর্মপাল পরাজিত হন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রকূট রাজ ধ্রুব উত্তর ভারত অভিযান করে বৎসকে পরাজিত করেন।  সঞ্জন তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, তিনি ধর্মপালকেও পরাজিত করেন। কিন্তু ধ্রুবকে দাক্ষিণাত্যে ফেরত যেতে হয়। ফলে উত্তর ভারতে ধর্মপাল আবার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান। তিনি কনৌজে বৎস মনোনীত শাসক ইন্দ্রায়ুধকে বিতাড়িত করে নিজ মনোনীত চক্রায়ুধকে সিংহাসনে বসান। মুঙ্গের লেখ থেকে জানা যায় তিনি কেদার  ও গোকর্ণ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। ধর্মপাল কনৌজে এক বিশাল সভার আয়োজন করেছিলেন, যেখানে ভোজ, মৎস, মদ্র, কুরু, যদু, যবন, অবন্তী, গান্ধার, কীর  রাজ্যের শাসকগণ তার বশ্যতা স্বীকার করেছিল। উত্তরভারতে তার এহেন প্রভাব প্রতিপত্তির জন্য গুজরাটি কবি সোডঢল তাকে উত্তরপথস্বামী বলে অভিহিত করেছেন।

ধর্মপাল দীর্ঘদিন এই সাম্রাজ্য রাখতে পারেননি। নবম শতকের প্রথমার্ধে প্রতিহার রাজা দ্বিতীয় নাগভট্ট সিন্ধু অন্ধ্র, বিদর্ভ ও কলিঙ্গের নরপতিদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে কনৌজ আক্রমণ করেন এবং ধর্মপালের অনুগত শাসক চক্রয়ুধকে বিতাড়িত করেন। ধর্মপালও তার হাতে পরাজিত হন। এবারও রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দ উত্তর ভারত অভিযান করে নাগভট্টকে পরাজিত করেন। ধর্মপাল ও চক্রয়ুধ বিনা যুদ্ধে তৃতীয় গোবিন্দের বশ্যতা স্বীকার করেন। তৃতীয় গোবিন্দ দক্ষিণ ভারতে প্রত্যাবর্তন করলে প্রথম পর্বের মতই এবারেও ত্রিপাক্ষিক দ্বন্দ্বে ধর্মপাল লাভবান হন। তবে  এরকম পরাজয় ও বশ্যতা স্বীকারের পর কিভাবে তার পক্ষে আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যাই হোক, একথা অনস্বীকার্য যে, বাংলা যে কেন্দ্রীক সাম্রাজ্যবাদের স্বপ্ন শশাঙ্ক দেখিয়েছিলেন তার সূচনা করেছিলেন ধর্মপাল।

দেবপালের অবদান

দেবপাল (৮১০-৪৭ খ্রি:) ছিলেন ধর্মপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে বসেন এবং তাঁর রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্যের সীমা বহুদূর প্রসারিত হয়। পরমেশ্বর, পরমভট্টারক ও মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি প্রচলিত সম্রাটসুলভ উপাধি তিনি গ্রহণ করতেন।

নারায়ণ পালের বাদাল প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, মন্ত্রী দর্ভপানির কূটনীতির সাহায্যে দেবপাল হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্বত এবং পূর্ব সাগর থেকে পশ্চিম সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডের শাসকদের কর প্রদানে বাধ্য করেছিলেন। আবার মন্ত্রী কেদার মিশ্রের বুদ্ধিবলে হুন, উৎকল, দ্রাবিড়, গুর্জর প্রতিহারদের দর্প ক্ষুন্ন করে সমুদ্র মেখলা রাজ্যটি ভোগ করেছিলেন। তাঁর হস্তিবাহিনী বিন্ধ্যারন্যে গিয়েছিল এবং অশ্বারোহী বাহিনী কম্বোজ। পর্যন্ত গিয়েছিল। মুঙ্গের লেখ থেকে জানা যায়, দেবপাল এক 'দ্রাবিড়নাথ'কে পরাজিত করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন এই দ্রাবিড়নাথ হলেন রাষ্ট্রকূট রাজা অমোঘবর্ষ। কিন্তু রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, দেবপাল রাষ্ট্রকুটদের নয়, পাণ্ড্য রাজা শ্রীমার শ্রীবল্লভকে পরাজিত করেছিলেন।

দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্বে দেবপালের জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল প্রতিহার রাজা রামভদ্রকে তিনি পরাজিত করেছিলেন। অতঃপর প্রথম ভোজের সময় প্রতিহাররা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং পাল- প্রতিহার দ্বন্দ্ব আবার শুরু হয়। গোয়ালিয়র লিপিতে এই দ্বন্দ্বে ভোজের জয় লাভের কথা আছে। তবে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন এই যুদ্ধে প্রথমদিকে ভোজ জয়ী হলেও পরিশেষে দেবপালেরই জয় হয়।

দেবপালের খ্যাতি কেবল স্বদেশে সীমাবদ্ধ ছিলনা, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সুমাত্রার অধিপতি শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা বালপুত্রদেবের অনুরোধে দেবপাল নালন্দায় বিহার নির্মাণের জন্য ৫টি গ্রাম দান করেছিলেন। দেবপালের অনুরোধে জালালাবাদের আফগান বৌদ্ধচার্য বীরদেব নালন্ডার আচার্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার রাজ্যে এসেছিলেন আরব পর্যটক সুলেমান। তিনি পাল রাজ্যকে 'রূহমা' বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর রচনায় পাল রাজাদের বিরাট সৈন্যবাহিনীর কথা আছে।

Political Contributions of Dharmapala and Devapala

One of the key features of early medieval India was the rise of regional powers. Among the major regional powers that emerged during this period was the Pala Empire of eastern India. The Pala dynasty was founded by Gopala (750-775 CE). The Khalimpur Copper Plate reveals that Gopala was elected king by the nobility of Bengal to end the anarchic Matsyanyaya period, thus marking the beginning of Pala rule. The dream of establishing a powerful empire centered around Bengal, which Shashanka had envisioned, was realized under the Palas. The two greatest rulers of the Pala dynasty were Dharmapala and Devapala.

Contributions of Dharmapala

Dharmapala (775-810 CE), the son of Gopala, was the first powerful ruler of the Pala dynasty. The political significance of his reign lies in his participation in the Tripartite Struggle for Kannauj, through which he established a vast empire in northern India with Bengal as its core.

The three factions in the Tripartite Struggle were the Palas of Eastern India, the Pratiharas of Western India, the Rashtrakutas of the Deccan. Dharmapala's involvement in this conflict can be divided into two phases:

First Phase: Dharmapala fought against Pratihara king Vatsaraja for control of Kannauj but was defeated. Meanwhile, Rashtrakuta king Dhruva invaded northern India, defeating Vatsaraja and later Dharmapala (as mentioned in the Sanjan Copper Plate). However, after Dhruva returned to the Deccan, Dharmapala regained dominance. He expelled Indrayudha (Vatsaraja’s nominee) from Kannauj and installed his own vassal, Chakrayudha, on the throne.

Second Phase: In the early 9th century, Pratihara king Nagabhata II formed alliances with rulers of Sindh, Andhra, Vidarbha, and Kalinga, attacked Kannauj, and ousted Chakrayudha. Dharmapala was also defeated. However, Rashtrakuta king Govinda III intervened, defeated Nagabhata, and forced Dharmapala and Chakrayudha to submit. Once Govinda III retreated, Dharmapala reasserted his authority.

Despite these setbacks, Dharmapala organized a grand assembly at Kannauj, where rulers from Bhoja, Matsya, Madra, Kuru, Yadu, Yavana, Avanti, Gandhara, and Kira acknowledged his supremacy. The Gujarati poet Soddhala referred to him as "Uttarapathasvami" (Lord of Northern India).

Though Dharmapala could not maintain his empire for long, he initiated the imperial ambitions that Shashanka had envisioned for Bengal.

Contributions of Devapala

Devapala (810-850 CE), the son and successor of Dharmapala, expanded the Pala Empire to its greatest extent. He assumed imperial titles like Parameshvara, Parambhattaraka, and Maharajadhiraja.

Military Campaigns: The Badal Pillar Inscription of Narayanapala states that Devapala, aided by his minister Darbhapani, forced rulers from the Himalayas to the Vindhyas and from the eastern to the western seas to pay tribute. His minister Kedarmishra helped him subdue the Huns, Utkalas, Dravidas, and Gurjara-Pratiharas. His elephant forces marched through the Vindhyan forests, and his cavalry reached Kamboja (modern Afghanistan). The Munger Copper Plate mentions his victory over a "Dravida-natha" (likely a Pandya king, Sri Mara Sri Vallabha, rather than Rashtrakuta king Amoghavarsha, as per R.C. Majumdar).

Conflict with the Pratiharas: Devapala defeated the weak Pratihara king Rambhadra. Later, under Pratihara king Bhoja I, the conflict resumed. Though the Gwalior Inscription claims Bhoja’s victory, most historians believe Devapala ultimately prevailed.

Foreign Relations: Sailendra king Balaputradeva of Sumatra requested Devapala’s patronage for building a monastery at Nalanda, to which he donated five villages. The Afghan Buddhist scholar Viradeva of Jalalabad was appointed head of Nalanda at Devapala’s request. The Arab traveler Sulaiman visited his empire, describing it as "Ruhma" and praising its massive army.

Conclusion

Dharmapala laid the foundation of Bengal-centric imperialism, while Devapala expanded the Pala Empire to its zenith, establishing its dominance in northern India and maintaining diplomatic ties with Southeast Asia. Their reigns marked the golden age of the Pala dynasty.

 


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...