সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Farman of 1717 | ফারুখশিয়রের ফরমান

Farman of 1717 | ফারুখশিয়রের ফরমান

Farman of 1717



ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৬০০ সালে ৩১শে ডিসেম্বর একটি রাজকীয় সনদের মাধ্যমে। ভারতে ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগিজরা প্রথম এ দেশে এসেছিলেন। ১৬১৩ সাল থেকে ইংরেজ কোম্পানি এদেশের রীতিমতো ব্যবসাপত্র শুরু করে দেয়। মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে কোম্পানি যে ফরমান পায় তাতে তারা ভারতে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন পায়। সুরাটে ছিল তাদের প্রথম কারখানা। ইংরেজদের প্রতিনিধি ও দৃত হিসেবে স্যার টমাস রো রাজ দরবারে অভ্যর্থনা পান। ক্রমে কোম্পানির ব্যবসা বাড়তে থাকে। কলকাতা, বোম্বে ও মাদ্রাজ- এই তিনটি বানিজ্যঘাটিঁর মধ্যে কলকাতা ছিল তাদের প্রধান কর্মকেন্দ্র। পরবর্তীকালে তারা যে ক্রমাগত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছিল তার সূচনা হয়েছিল বাংলা থেকে।

বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল ১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের ফরমান। বাংলা, বিহার, ওড়িশা কে নিয়ে গঠিত বাংলা সুবা ছিল আইনত  দিল্লির বাদশাহের অধীনে। ১৬৯০ সালে ঔরঙ্গজেব এক আদেশনামায় কোম্পানিকে বছরে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে বিনামূল্যে বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছিলেন। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে কোম্পানি সেই সুবিধা থেকে সাময়িকভাবে বঞ্চিত ছিল। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ফারুকশিয়ার কোম্পানিকে যে ফরমান দেয় তাতে কোম্পানি বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার আবার ফিরে পায়। এর সাথে সাথে কলকাতার আশেপাশে ৩৮ টি গ্রাম কেনার অধিকার পায় কোম্পানি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ইতিপূর্বে কোম্পানি ১৬৯৮ সালে সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলিকাতায় জমিদারি পেয়েছিল। সেই সঙ্গে রাজকীয় টাকশাল ব্যবহার করার অধিকারও কোম্পানি এই ফরমানের মধ্য দিয়ে পেয়ে যায়।

ইংরেজদের সঙ্গে বাংলার নবাবদের সম্পর্কের অবনতি এবং সংঘর্ষের পশ্চাতে এই ফরমান ছিল অন্যতম কারণ। ফরমানের অন্তর্ভুক্ত দস্তক বা শুল্কহীন বাণিজ্যের অধিকার ছিল কেবল মাত্র কোম্পানির। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা যে ব্যক্তিগত বাণিজ্য করত তাতেও দস্তকের অপব্যবহার করে নবাবকে শূল্কে ফাঁকি দিত। ফলে নবাবের রাজকোষ যেমন কমে যাচ্ছিল তেমনি দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। বস্তুত এই প্রথাকে কেন্দ্র করে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ হয়েছিল, যার মাধ্যমে বাংলায় ইংরেজরা নিজেদের  রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...