সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Murshid Quli Khan | মুর্শিদকুলি খাঁ

Please visit our Homepage and Follow us.

Murshid Quli Khan | মুর্শিদকুলি খাঁ

অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের রাজনৈতিক সংকটকালে যে সমস্ত ব্যক্তি নানান দুর্যোগ অতিক্রম করে ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। প্রথমে হায়দ্রাবাদ ও ১৭০০খ্রিস্টাব্দে বাংলার দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন, ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার সুবাদার ও তার পরের বছর বিহারের দেওয়ান পদ লাভ করেন। সম্রাট ঔরংজেব তাকে মুর্শিদকুলি খাঁ উপাধি দিয়েছিলেন। ১৭১৩ সালে তিনি বাংলার ডেপুটি সুবাদার ও 1717 সালে তিনি বাংলার সুবাদার পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন তার উপাধি হয়েছিল আলাউদ্দিন জাফর খান বাহাদুর।

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা

মুর্শিদকুলি খানের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার।মুর্শিদকুলি খানের ভূমি রাজস্ব সংস্কার সম্পর্কে আমরা জানতে পারি সালিমউল্লাহ রচিত তারিখ-ই-বঙ্গালাহ ও জেমস গ্রান্টের Analysis of the finances of Bengal থেকে। স্যার যদুনাথ সরকার মুর্শিদকুলি খাঁর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার বিস্তৃত আলোচনা করেছেন, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য মুর্শিদকুলি খাঁ দুটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেনঃ 

 ১) তিনি সমস্ত কর্মচারীর জায়গীর বাজেয়াপ্ত করে তা সরাসরি খালসা জমিতে পরিণত করেছিলেন এবং জায়গীরদার দের অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জমি উড়িষ্যায় বদলি করেছিলেন\

২) জায়গীরদার দের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জমি থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য নিলামের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগ করেছিলেন।

Murshid Quli Khan, মুর্শিদকুলি খাঁ

এই সময়কার জমিদাররা অলস, দায়িত্বহীন হয়ে পড়ার কারণে তাদের কাছ থেকে সঠিক হারে রাজস্ব আদায়ের জন্য, তাদের মাথার উপরে ইজারাদারদের চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এইভাবে মুর্শিদকুলি বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় এক বিরাট পরিবর্তন এনেছিলেন। ১৭২২ সাল নাগাদ মুর্শিদকুলি তার নিজস্ব রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। কিছুটা জমি জরিপের মাধ্যমে ও কিছুটা পুরানো নথি পত্রের মাধ্যমে মুর্শিদকুলি খান অনেকটা নিখুঁতভাবে রাজস্বের পরিমাণ স্থির করেছিলেন। বাংলার ইতিহাসে মুর্শিদকুলি খানের ভূমি রাজস্ব নীতি এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। তার ভূমি রাজস্ব নীতি সরকার, জমিদার ও প্রজা প্রত্যেকের পক্ষেই লাভজনক হয়েছিল। ১৬৫৮ সালে শাহ সুজার আমলে রাজস্বের পরিমাণ যা ছিল মুর্শিদকুলি তার ওপর শতকরা সাড়ে তেরো ভাগ রাজস্ব বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে অনেক সময় অভিযোগ করা হয় মুর্শিদকুলি খান জমিদারদের উপর অত্যাচার করতেন যে কারণে তার সময়ে বহু জমিদারি বিলুপ্ত হয়েছিল। তবে আধুনিককালের ঐতিহাসিকেরা এই সমস্ত অভিযোগ এর অধিকাংশই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

 মুর্শিদকুলি খানের শাসন ব্যবস্থা

মুর্শিদকুলি খানের আমলে বাংলায় একটি দক্ষ প্রাদেশিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর সাথে সাথে বাংলায় মুঘল কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে মুর্শিদকুলি খাঁ সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। বাংলায় এক স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। নিজের কর্তৃত্বকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তিনি রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক দপ্তর ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেছিলেনএবং মুকসুদাবাদের  নাম পরিবর্তন করে নিজের নামে নাম রাখেন মুর্শিদাবাদ। তার সময়ে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে হিন্দুদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার বিশ্বস্ত হিন্দু কর্মচারীদের মধ্যে লহোরি মল, মৃত্যুঞ্জয় এবং রঘুনন্দনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুর্শিদকুলি খানের সময় বাংলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করলেও, এই সময় তার সামরিক দক্ষতা হ্রাস পেয়েছিল। সরকারি কর্মচারীদের অপরিমিত অর্থলোভ ও দুর্নীতি মুর্শিদকুলি খানের শাসনব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছিল। তবে শাসক হিসাবে মুর্শিদকুলি খান যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ ছিলেন এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। রাষ্ট্র শাসনে তার ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ও হিন্দুদের প্রাধান্য অষ্টাদশ শতকের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে।

মুর্শিদকুলি খান ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি


১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফারুখশিয়ার কর্তিক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মাত্র ৩০০০টাকার বিনিময়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার পায়। বাংলার ইতিহাসে এই ঘটনার গুরুত্ব অপরিসীম। এই সুযোগকে কোম্পানি নানাভাবে অপব্যবহার করতে থাকে, এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদকুলি খান জানিয়ে দেন ব্রিটিশ কোম্পানির বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অধিকার কেবল মাত্র সেই সমস্ত জিনিসের উপর প্রযোজ্য হবে যেগুলি সরাসরি ভারত থেকে সমুদ্রপথে রপ্তানি হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসার ক্ষেত্রে এই সুযোগ পাওয়া যাবে না। কলকাতার কাছাকাছি ৩৮ টি গ্রাম কোম্পানি কেনার সিদ্ধান্ত নিলে মুর্শিদকুলি খাঁ তাতে বাধা দিয়েছিলেন। এছাড়াও ইংরেজরা যাতে মুর্শিদাবাদের টাকশাল ব্যবহার করতে না পারে মুর্শিদকুলি খান সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিলেন। মুর্শিদকুলি খানের বিরোধিতায় ইংরেজরা ১৭১৭ সালের ফরমানের সবকটি সুযোগ ভোগ করতে না পারলেও তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর ইংরেজরাও নানাভাবে নবাব কে ফাঁকি দিয়ে দস্তকের অপব্যবহার শুরু করে এবং কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

  1. স্যার প্রশ্নটা কেমন হতে পারে?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. রাজস্ব ব্যবস্থার বিশেষ উল্লেখসহ মুর্শিদকুলির সংস্কার গুলি আলোচনা কর।

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ