সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Iltutmish | ইলতুতমিশ

Please visit our Homepage and Follow us.

Iltutmish | ইলতুতমিশ

1206 খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ ঘরির মৃত্যুর পর তাঁর বিজিত রাজ্য তার 3 বিশ্বস্ত ক্রীতদাস তথা সেনাপতির মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। গজনী এলাকার দায়িত্ব পান তাহাজ উদ্দিন ইলদুজ, মুলতান ও উচ এর অধিকার পান  নাসিরুদ্দিন কুবাচা এবং দিল্লি সাম্রাজ্যের দায়িত্ব পান কুতুবউদ্দিন আইবক। আইবক তার সংক্ষিপ্ত চার বছরের শাসনে দিল্লি সুলতানির সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত করতে পারেননি। কেবল মধ্য এশিয়ার পঙ্কিল রাজনীতি থেকে দিল্লি সাম্রাজ্যকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই পরবর্তী শাসক ইলতুৎমিস কে নানান সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, যেগুলি তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করে দিল্লি সুলতানির দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাই অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিব বলেছেন যে, আইবক দিল্লি সুলতানির  রূপরেখা নির্মাণ করেছিলেন কিন্তু ইলতুৎমিশ ছিলেন দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।

ইলতুতমিশের সমস্যা


Iltutmish, ইলতুতমিশ
Iltutmis
সিংহাসন আরোহন কালে ইলতুৎমিশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আরাম শাহ। তরাইনের একটি যুদ্ধে ইলতুৎমিস তাকে পরাজিত করে লাহোরের আমিরদের সমর্থন নিয়ে দিল্লীর সিংহাসন আরোহন করেন। সিংহাসন আরোহণের পর তার সামনে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় সেগুলি হল--

১) মুলতান ও উচের শাসক নাসিরুদ্দিন কুবাচা পাঞ্জাবের উপর অধিকার দাবি করে।

২) গজনী থেকে বিতাড়িত হয়ে তাজউদ্দীন পাঞ্জাবে চলে আসে এবং দিল্লি সাম্রাজ্যের উপর গজনীর আধিপত্য দাবি করে। তার যুক্তি ছিল দিল্লি প্রকৃতপক্ষে গজনী সাম্রাজ্যেরই অংশ।

3) দুর্ধর্ষ মঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খাঁ মধ্য এশিয়ার শাসক জালাল উদ্দিন কে পিছা করতে করতে ভারত সীমান্তে এসে হাজির হন।

4) বাংলার শাসকগন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

5) গোয়ালিয়ার রনথম্বোর প্রভৃতি স্থানীয় রাজ্যগুলি দিল্লির অধীনতা কে অস্বীকার করে।

6) বিরোধী আমির ওমরাহররা বিদ্রোহ করেন।

সমস্যা সমাধান ও রাজনৈতিক অবদান

অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুচতুরভাবে ইলতুৎমিস উপরিউক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করেছিলেন। তিনি প্রথমে তাজউদ্দীন কে পরাজিত করেন। তারপর নাসিরুদ্দিন কুবাচা কে পরাজিত করে হত্যা করেন এবং পাঞ্জাব দখল করেন।


Iltutmish
ইলতুতমিসের সাম্রাজ্য

দ্বিতীয়তঃ ইলতুতমিস চেঙ্গিস খাঁর তাড়া খাওয়া জালাল উদ্দিনকে তার বারংবার অনুরোধ সত্বেও সাহায্যের হাত বাড়ালেন না। কারণ তাতে কার্যত মোঙ্গল আক্রমণ কে আমন্ত্রণ জানানো হত। এইভাবে তিনি শিশু সুলতানি সাম্রাজ্য কে মঙ্গল আক্রমণের সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করেন।

তৃতীয়তঃ বাংলার অবাধ্য শাসক গিয়াসউদ্দিন ইয়াজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। ইয়াজ বিনা যুদ্ধে ইলতুৎমিশের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। কিন্তু ইলতুৎমিস বঙ্গদেশ যখনই ত্যাগ করেন তখনই আবার ইয়াজ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত ইলতুৎমিস নিজ পুত্র নাসিরুদ্দিনকে ইয়াজের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন এবং ইয়াজ পরাজিত ও নিহত হয়। তবুও বঙ্গদেশ দিল্লির কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ করত। 

চতুর্থত: ইলতুৎমিস আরাম শাহ এর সময়ে হস্তচ্যুত কালিঞ্জর, আজমির, গোয়ালিয়ার, দোয়াব অঞ্চল, বেয়ানাসহ সমগ্র পূর্ব রাজস্থান পুনর্দখল করেন। একইসাথে অবাধ্য আমিরদের পরাজিত করে সাম্রাজ্যে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা স্থাপন করেন।

পঞ্চমত: গজনীর রাজনীতি থেকে দিল্লি সুলতানি কে পৃথক করার জন্য তিনি বাগদাদের খলিফা আল মুস্তানসির কাছ থেকে সুলতানি সনদপত্র আনেন। নিজ নামে শিক্কা চালু করেন ও খুতবা পাঠ করেন। এইভাবে তিনি দিল্লি সুলতানির সার্বভৌমত্ত্বের সূচনা করেন, যা ফিরোজ শাহের সারবভৌম সুলতানের তালিকায়ও উল্লিখিত হয়েছে।



Iltutmish
Tomb of Iltutmis

পরিশেষে, তিনি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ কাঠামো নির্মাণে বিশেষ অবদান রাখেন। সুলতানি প্রাদেশিক শাসন, সৈন্যবাহিনী, মুদ্রা ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন। বাছাই করা 40 জন আমির দের নিয়ে চল্লিশ চক্র গঠন করেন। সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে তিনি অবদান রাখেন। কুতুবউদ্দিন আইবক এর কুতুব মিনারের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন এবং নিজ উদ্যোগে কিছু নির্মাণকার্য করে যান।

সুতরাং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে বৈদেশিক নিরাপত্তা, সুগঠিত শাসনব্যবস্থা, নিরাপদ রাজধানী এবং সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ইলতুতমিস এরই দান। তাই সব দিক থেকে বিচার করলে ইলতুৎমিস কে দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলতেই হয়।


 Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

  1. ভারতের জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত মার্কসীয় ও সাবঅলটার্ন ঐতিহাসিকদের বক্তব্য- এই বিষয়ের আলোচনা করলে খুব উপকৃত হবো। ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  2. শীঘ্রই আলোচনা করার চেষ্টা করব। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
    ভালো থাকবেন।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ