Please visit our Homepage and Subscribe us.
Thanks for reading.
সুলতান মামুদ ও মহম্মদ ঘরির ভারত আক্রমণের চরিত্রগত পার্থক্য
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের পর দীর্ঘ 300 বছর পর্যন্ত ভারতবর্ষে কোন মুসলিম রাজনৈতিক শক্তির আক্রমণ ঘটেনি। ইতিমধ্যে পারস্পরিক অনৈক্য এবং সংঘর্ষ এর ফলে ভারতীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলি কোন ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার মত পরিস্থিতিতে ছিল না। 1000 খ্রিস্টাব্দ থেকে পরপর দুটি তুর্কি আক্রমণ ভারতবর্ষের মাটিতে ঘটে যায়, যা ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পরিণত রূপ পায়। প্রথম আক্রমণটি ছিল গজনীর সুলতান মামুদের আক্রমণ (1000-1030) এবং দ্বিতীয় আক্রমণটি ছিল মোহাম্মদ ঘরীর আক্রমণ (1175-1202)।
বামদিকে মামুদ ডানদিকে ঘরি |
মামুদ এবং ঘরীর আক্রমণের তুলনামূলক আলোচনা করলে উভয়ের অভিযানের মধ্যে কতগুলি চরিত্রগত পার্থক্য ধরা পড়ে। প্রথমত: মামুদের নেতৃত্বে মোট 17 বার (কেমব্রিজ ঐতিহাসিকদের মতে) ভারতবর্ষে আক্রমণ হয় এবং তার আক্রমনের সামনে কোনও ভারতীয় রাজন্যবর্গ রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু মোহাম্মদ ঘুরি দুবার ভারতীয় রাজন্যবর্গের হাতে পরাজিত হয়েছিলেন-- গুজরাটে বাঘেল বংশীয় রাজাদের হাতে এবং 1191 খ্রিস্টাব্দের তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ চৌহান এর হাতে। এই দিক থেকে মনে হয়, মামুদ ঘরির তুলনায় অধিকতর সামরিক সাফল্যের অধিকারী ছিলেন।
দ্বিতীয়তঃ মামুদ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে লুটেরা। তার অভিযান গুলির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সম্পদ লুন্ঠন করে। কোন সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্য তার ছিল না। ভারত আক্রমণের প্রবেশদ্বার হিসেবে তিনি কেবল মুলতান ও পাঞ্জাব দখল করেছিলেন। অন্যদিকে মোহাম্মদ ঘরি সাম্রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়েই ভারতে অভিযানগুলি চালিয়েছিলেন। তাই বারংবার পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েননি এবং পুনর্বার শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে এসেছিলেন। এজন্যই তার অভিযানগুলিতে লুন্ঠন করে প্রস্থান অপেক্ষা স্থিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়।
তৃতীয়তঃ মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্মস্থান লুণ্ঠন ও অপবিত্র করার অভিযোগ মোহাম্মদ ঘুরী অপেক্ষা অনেক বেশি। মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন ও থানেশ্বরের চক্রস্বামীর মন্দির আক্রমণের কথা সকলেরই অবগত। অনেকেই অবশ্য এই ঘটনাকে তার ধর্ম গোঁড়ামির পরিচয় হিসেবে দেখেছিলেন। যদিও আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দেখিয়েছেন তার এই কুকীর্তি গুলি ছিল প্রকৃতপক্ষে লুণ্ঠনমূলক উদ্দেশ্য দ্বারাই পরিচালিত। ইসলাম কখনই অন্যের ধর্মস্থান লুণ্ঠনের নির্দেশ দেয় না। অন্যদিকে মোহাম্মদ ঘরির উপর আজমীর ও বারানসিতে কিছু বিগ্রহ ধ্বংস করা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর আঘাতের তেমন কোন অভিযোগ নেই।
একাধিক পার্থক্য সত্বেও উভয়ের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে মিল লক্ষ্য করা যায়। যেমন উভয়ের কেউই ধর্মগোড়া ছিলেন না বা তাদের আক্রমণগুলি ধর্মনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়নি। তারা কেউই সার্বিক ধর্মান্তকরণ তো নয়ই, পরাজিত রাজাদের ধর্মান্তকরণেরও চেষ্টা করেননি। উভয়ই হিন্দু কর্মচারী নিয়োগে দ্বিধা করতেন না, মুসলমান রাজাদের বিরুদ্ধেও অভিযান করেছিলেন এবং পরাজিত আশ্রিত হিন্দুরাজাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেননি। উভয়েই ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষক। এক্ষেত্রে 'নিরক্ষর লুটেরা মামুদ' ছিলেন অগ্রগণ্য। একাধিক মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, মিউজিয়াম, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রতি তার অনুরাগ ও পৃষ্ঠপোষকতা তাকে পারসিক নবজাগরণের পথিকৃতে পরিণত করেছিল।
Thanks for reading.
Thank you sir
উত্তরমুছুন