সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় বাবরের অবদান

Please comment and share.

ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় বাবরের অবদান


Babur
ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জাহির উদ্দিন মহম্মদ বাবর। পিতৃরাজ্য ফারঘানা থেকে বিতাড়িত হয়ে ভাগ্যের অনুসন্ধানে ছিলেন। আফগানিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে 1504 খ্রিস্টাব্দে বাবর কাবুল অধিকার করেন। কাবুল জয়ের মাধ্যমে বাবরের দীর্ঘদিনের ভবঘুরে জীবনের অবসান ঘটে। বাবর ক্রমশ পূর্বদিকে ভাগ্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় রত হন। 1526 খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী শাসককে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন । মাত্র চার বছরের শাসনকালে তিনি আফগান ও রাজপুতদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে সাম্রাজ্যের যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করতে পারেনি।    

লোদী সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে হয়ে দুর্বল পড়েছিল। ইব্রাহিম লোদীর প্রাদেশিক শাসকগণ , আফগান সর্দার এবং তার আত্মীয়রা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আরম্ভ করেছিল। রানা সঙ্গর নেতৃত্বে ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় রাজপুতরা। এই রানা সঙ্গই  ভারত আক্রমণের জন্য  বাবর কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। 1524 খ্রিস্টাব্দে বাবর পাঞ্জাব দখল করেন। 1526 খ্রিস্টাব্দে বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীর সাম্রাজ্য দখল করেন।


First Battle of Panipath:1526
ইব্রাহিম লোদী পরাজিত হলেও আফগানরা ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। ইব্রাহিম লোদীর নেতৃত্বে আফগানরা সংঘবদ্ধ হয়। এদিকে রানা সঙ্গের ধারণা ছিল, তৈমুরের মতোই তার উত্তরসূরি বাবরও লুণ্ঠন করে প্রত্যাবর্তন করবে। কিন্তু যখন বিপরীত ঘটনা ঘটল তখন রানা সঙ্গ মহামুদ লোদীকে সমর্থন করতে শুরু করলেন। বাবরের সেনাবাহিনী অগ্রার কাছাকাছি বেয়ানা, ঢোলপুর, কলপি, প্রভৃতি স্থানগুলি দখল করতে উদ্যত হলে রানা সঙ্গ বাধা দেন। 1527 সালে খানুয়ার যুদ্ধে বাবর রানাসঙ্গকে বাবর পরাস্ত করেন ।


Babur's Army in the battle of Khanwa
খানুয়ার যুদ্ধের পরে বাবর মধ্যপ্রদেশের চান্দেরির রাজা মেদিনী রাও এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চান্দেরি দখল করেন। অতঃপর তিনি বাংলা ও বিহারের আফগানদের ধ্বংস করতে উদ্যত হন। বাংলার শাসক নসরৎ শাহ  মাহমুদ  লোদীর পক্ষ অবলম্বন করেন। বাবর কূটনীতির দ্বারা নসরৎ শাহ কে  নিজের পক্ষে টেনে নেন। অনেক আফগান দলপতিকেও বাবর  নিজের পক্ষে আনতে সক্ষম হন। তারপর 1529 সালে ঘর্ঘরার যুদ্ধে বাবর আফগান শক্তিকে পরাজিত করতে সক্ষম হন ।       

সমর নায়ক হিসেবে বাবর যতটা সফল হয়েছিলেন, সংগঠক হিসেবে ততটা সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। তিনি রাজপুত ও আফগান শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। পরবর্তী শাসক হুমায়ুন আফগান শক্তির হাতে পরাজিত ও বিতাড়িত হন। শাসনের ক্ষেত্রে নতুন কোন ব্যবস্থা চালু করতে পারেননি বা প্রচলিত ব্যবস্থাকে নিজ কর্তৃত্বে এনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চয়তাও দিতে তিনি পারেননি। মাত্র চার বছরের শাসনকালে অবশ্য এত কিছু করা সম্ভবও ছিল না। তবে তাঁর সাফল্য এখানেই যে, মোঘল  শক্তিকে তিনি মধ্য এশিয়ার সমরখন্দের  প্রতি মোহমুক্ত করে ভারতমুখী করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
--------------------------------
Thanks for reading.

Debgopal Hazra
UG Student, Sonarpur Mahavidyalaya.

মন্তব্যসমূহ

  1. পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর কোন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন?
    তুলঘুমা পদ্ধতি না রুমি পদ্ধতি??

    উত্তরমুছুন
  2. ঘর্ঘরার যুদ্ধের সালটি ভুল টাইপ হয়েছে!
    1529 হবে 1929 বলা হয়েছে

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...