Abdul Mojaffar Mondal
Assistant Professor, Sonarpur Mahavidyalaya
Assistant Professor, Sonarpur Mahavidyalaya
কামসূত্রে বর্ণিত গুপ্তযুগে নাগরকদের জীবনচর্যা
গুপ্ত যুগে সম্ভ্রান্ত নগরবাসীদের বলা হত নাগরক। বাৎসায়ন রচিত কামসুত্রে এই নাগরকদের জীবনচর্যার একটি মনোজ্ঞ বিবরণ আছে। নাগরকরা প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। কৃষিজ উৎপাদনের উদ্বৃত্ত এবং সফল বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে এরা প্রভূত সম্পদ উপার্জন করেছিলেন। সম্পত্তির অপ্রতুলতার ছাপ পড়েছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে। একটি বিশেষ ধরনের জীবনে তারা অভ্যস্ত ছিল, যেখানে প্রতিনিয়ত ভোগ বিলাস এবং সাংস্কৃতিক রুচির সংমিশ্রণ লক্ষণীয়।
নাগরকদের আবাস ছিল বিলাসবহুল। অন্দরমহল পরিবারের নারীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। প্রতিটি কক্ষ এক একটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো। শয়ন কক্ষে থাকতো দুটি সুখপ্রদ শয্যা ও বালিশ, দেয়ালে কুলুঙ্গি ও তাক এবং সেই তাকে বীণাযন্ত্র, অঙ্কন সামগ্রী, পুস্তক ও মাল্য থাকতো। মেঝেতে পিকদানি এবং এক পাশে পাশা ও দাবা খেলার ছক থাকতো। স্তম্ভযুক্ত বারান্দা ছিল এবং দেয়ালে নানা রংয়ের কারুকার্য ছিল। ঘরের মেঝে মূল্যবান পাথর বা টালি দিয়ে নির্মিত হতো। বাইরে সম্মুখে থাকতো ফুল ও ফলের বাগান। সেই বাগানে গ্রীষ্মকালে বিশ্রামের জন্য একটি জলবেষ্টিত সমুদ্রগৃহ থাকত। বাগানে একটি পক্ষীনিলয়ও থাকত।
নাগরক সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃকৃত্য সম্পাদনের পর দেহে চন্দনের সুগন্ধি মেখে দর্পণ সহযোগে পোশাক-পরিচ্ছদ পরে মুখে মসলাযুক্ত পান দিয়ে বিষয়কর্ম শুরু করতেন। মধ্যাহ্নভোজনের আগে স্নান করতেন। স্নানের সময় তাঁরা একদিন অন্তর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মালিশ করাতেন, দুই দিন অন্তর ফেনক বা সাবান মাখতেন, তিনদিন অন্তর দাড়ি কমাতেন। সাধারণত দিনে দুইবার খাদ্য গ্রহণ করতেন। খাদ্য গ্রহণের সাথে একটি বিশেষ পানীয় এবং মিষ্টান্ন ভক্ষণ করতেন। মধ্যাহ্নভোজের পর তারা পাখি কে বুলি পড়ানো বা মোরগ লড়াই দেখার মত কাজে কিছুটা সময় অতিবাহিত করযেন অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গল্পগুজব করতেন। এরপর একটা ছোট দিবানিদ্রা নিতেন।
সন্ধ্যায় নাগরক 'গোষ্ঠী' বা সামাজিক মেলামেশার স্থলে যেতেন, যা আধুনিক ক্লাবের সঙ্গে তুলনীয়। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে নানা ধরনের বাক্য আলাপ অথবা বিভিন্ন কলাবিদ্যায় নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করতেন। সেখানে খানাপিনা হত। কখনো কখনো গণিকার গৃহেই নাগরকদের গোষ্ঠী বসত। গোষ্ঠীতে শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতা রাখা ছিল অতি সম্মানের বিষয়। এছাড়া প্রতি মাসে সরস্বতীর মন্দিরে একটি করে নাগরক সম্মেলন হত এবং সেখানে গায়ক-গায়িকা, নর্তক-নর্তকী ও কলাকুশলীদের বিপুলভাবে পুরস্কৃত করা হতো।
রাত্রে নাগরকরা কন্ঠ ও যন্ত্রসংগীত এবং কখনো কখনো নৃত্য উপভোগ করতেন। অতঃপর সঙ্গিনীরা আসলে তাদের সঙ্গে সম্বর্ধনাসূচক আচরণ এবং মিষ্টিমধুর আলাপচারিতা হতো। কখনো কখনো এদের মধ্যেই কোন একজন নাগরকের শয্যাসঙ্গিনী হতেন। কখনো কখনো কোন একজন গনিকা একজন বিশেষ নাগরকের প্রতি আকৃষ্ট হতেন। এরা এক পরিগ্রহা। মনে রাখতে হবে নাগরকের কিন্তু একটা দাম্পত্য জীবনও ছিল। তার স্ত্রী একজন 'আদর্শ স্ত্রী' হবেন তা-ই আশা করা হত।
গতানুগতিক জীবনের বাইরে তাঁরা কখনও কখনও ভ্রমণে যেতেন বা মদ্যপানের উদ্দেশ্যে একত্রিত হতেন বা পিকনিক জাতীয় কিছু আয়োজন করতেন বা কৃত্রিম সরোবরে জলক্রীড়ার আয়োজন করতেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের সাথে গণিকা বা সঙ্গিনী উপস্থিত থাকত। কখনো কখনো কোন সামাজিক উৎসব উপলক্ষে তারা রাত জেগে পাশা খেলতেন। কতকগুলো জনপ্রিয় উৎসব ছিল বসন্ত উৎসব, হোলি, হিন্দল উৎসব প্রভৃতি। পরিশেষে, মনে রাখতে হবে এই বিশেষ শ্রেণীর অস্তিত্ব গুপ্ত যুগের পরে আর দেখা যায় না।
স্যার গণিকা কারা ছিলো ?
উত্তরমুছুনগোনিকাদের কাজ কী ছিলো?
সমাজের দেহোপজীবিনীদের গনিকা বলা হয়। এদের কাজ হল দেহ ও মন সহযোগে খরিদ্দার দের আনন্দ দেওয়া। অন্য শব্দে যাদের বলা হয় বেশ্যা। গুপ্ত যুগে গনিকাদের বাৎস্যায়ন দুভাগে ভাগ করেছেন। এক, শিক্ষিতা গণিকা বর্গ। এরা চৌষট্টি কলায় পারদর্শিনী এবং এদের খদ্দের মূলত উপরতলার সম্ভ্রান্ত মানুষেরা। দুই, সাধারন দেহোপজীবিনী অর্থাৎ বেশ্যা। বাৎসায়ন গণিকাদের কিছু পেশাগত উপদেশ দিয়েছেন। যেমনঃ অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত না হওয়া, প্রেমে না পড়া এবং রাষ্ট্রীয় আইন কানুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। আলোচ্য পর্বের কয়েকজন প্রথিতযশা গণিকা হলেন বসন্তসেনা, রাগমঞ্জুরী, চন্দরসেনা প্রমূখ।
মুছুনচাণক্য অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে গণিতের বিভিন্ন কাজে নিয়োগের কথা বলেছেন। তিনি এও বলেছেন যে গণিকাদের একজন প্রধানা থাকবেন যিনি গণিকাদের নিয়ন্ত্রণ করবেন অর্থাৎ তিনি গণিকা নিয়ন্ত্রক বা অধ্যক্ষা নিয়োগের কথা বলেছেন ।শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক গ্রন্থে বসন্তসেনা ও চারু দত্তের প্রেম কাহিনী বর্ণিত আছে যেখানে বসন্তসেনা ছিল একজন গণিকা।
উত্তরমুছুনSir, ata charao to apni bole6ilen j aro ki6u nagorok der saporke study material daben.
উত্তরমুছুন