সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রুশ-জাপান যুদ্ধের পটভূমি ও গুরুত্ত্ব

Abdul Mojaffar Mondal
Assistant Professor, Sonarpur Mahavidyalaya

 রুশ-জাপান যুদ্ধের পটভূমি ও গুরুত্ত্ব 


নিশ শতকের শেষ দিকে জাপান দ্রুতগতিতে উন্নতি করতে থাকেমেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই জাপান অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়েছিল বিভিন্ন সংস্কার সাধন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে জাপান উনিশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে যে শক্তি সঞ্চয় করে ছিল তা কেবলমাত্র আত্মরক্ষার্থে নিয়োজিত হয়নিজাপানে পুঁজিবাদের উত্থান এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সাম্রাজ্যবাদের উন্মেষ ঘটেছিলআঠারোশো সত্তরের দশকে দুটি ঘটনা জাপানি সম্প্রসারণ বাদের ইঙ্গিত বহন করে-- 1873 খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা এবং 1879 খ্রিস্টাব্দে রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জদখল যদিও প্রথম পরিকল্পনাটি পরিত্যক্ত হয়েছিলকোরিয়ার উপর জাপানের আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই 1894 খ্রিস্টাব্দে চীন জাপান যুদ্ধ ঘটেছিল এই কোরিয়া কে কেন্দ্র করেই রুশ-জাপান সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল এবং1904-1905 সালে রুশ জাপান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল

    চীন কে পরাস্ত করার পর শিমনোসেকির সন্ধির মাধ্যমে জাপান চীনের যে সমস্ত এলাকা লাভ করেছিল সেগুলি ফ্রান্স, জার্মানি এবং বিশেষত রাশিয়ার হস্তক্ষেপে জাপান তা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলউপরন্তু রাশিয়া 1893 খ্রিস্টাব্দে চীনের সাথে লি-লেবানচুক্তি গোপনে স্বাক্ষর করেছিল ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে চিনে যখন বক্সার বিদ্রোহ দেখা দেয় তখন রাশিয়া নিজস্ব রেলপথ ও সম্পত্তি রক্ষার অজুহাতে মাঞ্চুরিয়া তে সৈন্য ঢুকিয়ে দেয় মাঞ্চুরিয়া তে রাশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া গোপনে চীনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে যদিও আমেরিকা ব্রিটেন এবং জাপানের বিরোধিতার ফলে এই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়দূরপ্রাচ্যে রাশিয়ার এই আগ্রাসী নীতির প্রত্যুত্তরে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জাপান ইংরেজদের সাথে ঈঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে

     কোরিয়া ছিল চীনের করদ রাজ্য হিসেবে পরিচিত শিমনোসেকির সন্ধির মাধ্যমে কোরিয়া একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেকোরিয়াতে জাপানের অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিলউনিশ শতকের শেষ দিকে জাপানে দ্রুত শিল্পায়ন হয়েছিলজাপানি শিল্পপতিরা কোরিয়ার বাজারের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেনতাছাড়া জাপান সেই সময় কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত চালের ওপর নির্ভরশীল ছিল উপরন্তু সেই সময় জাপানের জনসংখ্যা দ্রুত বর্ধিত হচ্ছিল, যার স্থান সংকুলানের জন্য কোরিয়ার প্রতি জাপানের নজর ছিল কোরিয়াতে জাপানি পরামর্শদাতা পাঠানো হয়জাপান কোরিয়ার আধুনিকীকরণের জন্য চাপ দিতে থাকেজাপানি প্ররোচনায় কোরিয়াতে একটি অভ্যুত্থান ঘটে, যাতে সংস্কার বিরোধী রানী মিন নিহত হন ফলে রাশিয়ার কাছে সুযোগ আসে কোরিয়াতে সেনা ঢুকিয়ে দেওয়ার দূতাবাস গুলি কে রক্ষা করার অজুহাতে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাশিয়ার প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এই প্রেক্ষিতে জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে কোরিয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসার জন্য 1896 খ্রিস্টাব্দে ইয়ামাগাতা-লেবানন চুক্তি স্বাক্ষর করে। 1898 খ্রিস্টাব্দে উভয়ের মধ্যে নিশি-রোজেন কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়চুক্তি মতে উভয়ে কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে এবং আরও বলা হয় একটি দেশ অন্য দেশের অনুমতি ছাড়া কোরিয়াতে পরামর্শ পাঠাবে না রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দেয় যে জাপান যদি তার নতুন শিল্পায়নের স্বার্থে কোরিয়া থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নেয় তাতে রাশিয়া বাধা দেবে না

কোরিয়ার পর দু'দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে ওঠে মাঞ্চুরিয়ারাশিয়া কর্তৃক পোর্ট আর্থার অধিকার, মাঞ্চুরিয়ার ভেতর দিয়ে ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ নির্মাণ এবং রাশিয়ার কর্তৃত্বাধীন যৌথ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা রাশিয়াকে প্রলুব্ধ করেছিল অন্যদিকে শিল্পায়নের খাতিরে মাঞ্চুরিয়ার সম্পদ, কয়ল্‌, লোহা প্রভৃতির ওপর জাপানের দৃষ্টি ছিল এদিকে বক্সার বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে রাশিয়া মাঞ্চুরিয়াতে সৈন্য পাঠিয়েছিলো এই ঘটনায় জাপান আমেরিকা এবং ব্রিটেন রাশিয়ার বিরোধিতা করে পূর্ব এশিয়াতে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০২ সালে ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হয় এর পরেই রাশিয়া কথা দেয় যে সে দ্রুত মাঞ্চুরিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নেবে এবং তা অবশ্যই এক বছরের মধ্যে কিন্তু রাশিয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফলে জাপান উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে

এই অবস্থায় জাপান রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব পাঠায় যে উভয় রাষ্ট্র চীন ও কোরিয়ায় মুক্তদ্বার নীতি মেনে চলুক কিন্তু রাশিয়া তাতে কর্ণপাত করেনিদ্বিতীয় বার জাপান প্রস্তাব পাঠায় যে উভয়ই চীন ও কোরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করুক; রাশিয়া কোরিয়াকে জাপানের বিশেষ স্বার্থ জড়িত অঞ্চলের মেনে নিক, জাপানও মাঞ্চুরিয়াকে রাশিয়ার বিশেষ স্বার্থ জড়িত অঞ্চল হিসাবে মেনে নেবেপ্রত্যুত্তরে রাশিয়া বলে যে এই প্রস্তাব তারা গ্রহণ করতে পারে তখন, যখন আগে জাপান ঘোষণা করবে যে মাঞ্চুরিয়া তে তার কোন স্বার্থ নেই ফলে জাপান ইতঃস্তত বোধ করে এবং এই আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়রাশিয়া পূর্ব অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র নড়তে অস্বীকার করে তখন ক্ষুব্ধ জাপান রাশিয়ার সাথে যাবতীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং পোর্ট আর্থার আক্রমণের মধ্য দিয়ে (1904 ফেব্রুয়ারি)মাস রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে

পোর্টসমাউথের সন্ধিচুক্তির (১৯০৫) মাধ্যমে রুশ-জাপান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। সন্ধির শর্তানুসারে; ১) কোরিয়াতে জাপানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়, ২) দঃ মাঞ্চুরিয়াতে রাশিয়ার ইজারাধীন অঞ্চল ও রুশ রেলপথ জাপান পায়, ৩) সাইবেরীয় উপকূলে জাপান মাছ ধরার অনুমতি পায়। তবে তিনটি দাবী রাশিয়া অস্বীকার করে—১) ক্ষতিপূরণ ২) দূরপ্রাচ্যে নৌশক্তি হ্রাস এবং ৩) জাপান কে শাখালিন অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া। শেষপর্যন্ত মার্কিন হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়। জাপান সাখালিনের অর্ধেক লাভ করে এবং ক্ষতিপূরনের দাবী ছেড়ে দেয়। রাশিয়া জাপানের অন্যান্য দাবী মেনে নেয়।

রুশ-জপান যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে প্রাচ্যে রাশিয়ার সম্প্রসারণ ব্যাহত হয়। রাশিয়া বলকান অঞ্চলের দিকে এবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ফলে বলকান সমস্যা জটিল আকার ধারন করে। এদিকে পরপর দুটি বৃহৎ শক্তি চীন ও রাশিয়াকে পরাজিত করে জাপানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বহুল পরিমানে বৃদ্ধি পায়। পশ্চিমী শক্তিগুলি জাপানকে সমীহ করে চলতে শুরু করে। ব্রিটেন ও আমেরিকা রাশিয়ার পরাজয়ে সন্তুষ্ট হয় এবং জাপানকে প্রচ্ছন্নভাবে মদত দিতে থাকে। একদিকে ভরপুর আত্মবিশ্বাস অন্য দিকে বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রচ্ছন্ন মদতে পরবর্তী কয়েকবছরে উগ্র সম্প্রসারনবাদের নজির স্থাপন করে। ১৯১০ খৃঃ কোরিয়া জাপান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়

যুদ্ধে জাপানের অসংখ্য জীবনহানি হয়। যুদ্ধের ব্যয়ভার তার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। উপরন্তু কোন ক্ষতিপূরন পায় নি। ফলে জাপানে সাময়িক সংকট দেখা দেয়। গন অসন্তোষের মত ঘটনার ফলে কাৎসু সরকার কিছুদিনের জন্য ক্ষমতাচ্যুতও হয়। এদিকে রাশিয়াতেও রোমানভ রাজবংশ বিরোধী তীব্র গন অসন্তোষ দেখা দেয়। জারতন্ত্র যদিও সেই বিদ্রোহ দমন করে। তা সত্ত্বেও এই বিদ্রোহ জারতন্ত্রে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে।

            প্রাচ্যদেশের একটি ক্ষুদ্র শক্তির হাতে একটি বৃহৎ পশ্চিমী শক্তি রাশিয়ার পরাজয় পাশ্চাত্য শক্তির অপরাজেয়তার কাল্পনিক গল্পকে ভূলুন্ঠিত করে। জাপানের জয়লাভ এশিয়ার উপনিবেশগুলির মুক্তিসংগ্রামকে আরও আত্মবিশ্বাসী করল। বিশেষ করে চীনের মানুষকে অনুপ্রাণিত করল। ১৯১১ র বিপ্লবের রুপকার সান ইয়াৎ সেন জাপান থেকেই তার জাতীয়তাবাদের পাঠ নিয়েছিলেন । ভারত থেকেও বহু বিপ্লবী জাপানের সাথে যগাযোগ স্থাপনের জন্য জাপান পাড়ি দেয়। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...