সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস | Martin Luther's 95 Theses

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস  জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ ও প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ মার্টিন লুথার ১৫১৭ সালের ৩১ অক্টোবর উইটেনবার্গের ক্যাসেল চার্চের দরজায় ৯৫টি থিসিস নামক প্রতিবাদপত্র পেরেক দিয়ে ঝুলিয়ে দেন। এটি ছিল মূলত Indulgences এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের দুর্নীতি ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি তীব্র প্রতিবাদ।   লুথারের থিসিসগুলোর মূল বক্তব্য ছিল:   1. ক্ষমার প্রকৃত অর্থ: লুথার যুক্তি দেন যে খ্রিস্টানদের প্রকৃত ক্ষমা  আন্তরিক অনুতাপ ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে আসে, চার্চের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করা ক্ষমাপত্রের মাধ্যমে নয়।   2. পোপের কর্তৃত্বের সীমাবদ্ধতা: তিনি বলেন, পাপের ক্ষমা দেওয়ার একমাত্র অধিকারী ঈশ্বর, পোপ নন। পোপের ক্ষমতা কেবলমাত্র ecclesiastical penalties মোচন করতে পারে, ঐশ্বরিক শাস্তি নয়।   3. দরিদ্রদের শোষণ: তিনি চার্চের জন টেটজেল-এর মতো ধর্মপ্রচারকদের সমালোচনা করেন, যারা দরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে "ক্ষমাপত্র" বিক্রি করতেন।   লুথারের এই থিসিস প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন-এর সূচনা কর...

জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিপ্লব | Astronomy and The Scientific Revolution

 জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিপ্লব পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপে গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে প্রকৃতিকে অনুধাবন করার একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছিল। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল Experimentalism যাকে বিজ্ঞান বিপ্লবের উৎস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তবে কোপারনিকাসের সৌরতত্ত্ব দিয়েই বিজ্ঞান বীক্ষার সূচনা হয়েছিল। আর নিউটনের মধ্যদিয়ে তা পূর্ণতা পেয়েছিল।  কোপারনিকাসের মত বিজ্ঞানীদের পূর্বে অবশ্য দ্বীতিয় শতকের টলেমি একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। টলেমি অ্যারিস্টটলের দ্বি-মাত্রিক বিশ্বপ্রকৃতির তত্ত্ব তিনি অস্বীকার করেছিলেন। অ্যারিস্টটলের মতে, একদিকে ছিল ত্রুটিহীন বিশুদ্ধ স্বর্গ এবং অন্যদিকে অশুদ্ধ মর্ত্য। টলেমি বললেন সমগ্র গ্রহ-নক্ষত্রগুলি একটা বৃহৎ বৃত্তের মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে এবং তাদের গতি ও উজ্জ্বল্য নির্ভর করছে এই বৃত্তের মধ্যে তাদের অবস্থানের উপর। যদিও গ্রহ-নক্ষত্রগুলির মধ্যে একটা পারস্পরিক সম্পর্কের কথা তিনি বললেও কোনো সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি।  কোপার্নিকাস আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যার নাম প্রথমেই উচ্চারিত হবে তিনি হলেন একজন পোলিশ যাজক নিকোলাস কোপার্নিকাস (...

ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

 ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য নীতি তুর্কিরা বাগদাদ- পারস্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গজনি হয়ে ভারতের ভূমিতে বহন করে এনেছিল। ওই সময় বাগদাদ পারস্য সংস্কৃতি ছিল উৎকর্ষের চরম শিখরে। এই তুর্কিরাই ভারতের দিল্লির সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করে এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তুর্কিরা যখন ভারতে আসে তখন শাসন শিল্প ও স্থাপত্য সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা নিয়েই আসে। ভারতীয় উচ্চ মানের সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্যের সঙ্গে তুর্কি জাতির শিল্প স্থাপত্যের উচ্চ ধারণার সংমিশ্রণে ভারতে এক নতুন স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটে যাকে আমরা ইন্দো ইসলামিক বা ইন্দো পারসিক অথবা ইন্দো সেরাসেনিক স্থাপত্য রীতি বলি। এছাড়াও মঙ্গলদের আক্রমণে সেলজুক তুর্কি সাম্রাজ্য ভেঙে গেলে বহু তুর্কি ভারতে আশ্রয় নেন। শুধু পন্ডিত ও সংস্কৃতিবান লোক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কারিগররাও ভারতে এসেছিল যার ফলে সেলজুক শিল্প-সংস্কৃতি ভারতের প্রবেশ করে। যার চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা যায় মুঘল যুগের স্থাপত্য রীতিতে। ত্রয়োদশ শতাব্দি থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে এই শিল্প রীতি কে পাঁচটা ভাগে ভাগ করা যায় যুগ ও শৈলী অনুযায়ী।  প্রথমত- 1246 সাল পর্যন্ত দ্...

ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন | The English Reformation Movement

ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন: জিওফ্রে এলটনের রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ তত্ত্বের যথার্থতা বিশ্লেষণ পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের নবজাগরণের অন্যতম ফল ছিল ষোড়শ শতকের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন। জার্মানিতে শুরু হয়ে অল্পকালের মধ্যেই ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সর্বত্রই একই রকম ছিল না, বিশেষত ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কারের তাৎক্ষণিক কারণ ও পরিচালকদের সাথে অবশিষ্ট ইউরোপের আন্দোলনের কিছু প্রভেদ লক্ষণীয়। ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কারের কর্মসূচি রূপায়ণের প্রধান ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি ও তাঁর চ্যান্সেলর টমাস ক্রমওয়েল। অন্যদিকে অবশিষ্ট ইউরোপের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের উদ্যোক্তা ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিশেষত মানবতাবাদী সংস্কারকগণ। ইংল্যান্ডে রাজার নেতৃত্বে ১৬শ শতকে ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি নতুন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মচর্চার সূচনা হয়। এই কারণে ইতিহাসবিদ জিওফ্রে আর. এলটন (Geoffrey R. Elton) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Tudor Revolution in Government” (1953)-এ ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কারকে "একটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ" বলে অভিহ...

প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা | Architecture Sculpture and Painting in Ancient Greece

প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা ধ্রুপদী  গ্রীস স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলার আঙিনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। যেহেতু প্রতিটি পলিশ তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বতন্ত্র বজায় রাখতো তাই শিল্পচর্চার ক্ষেত্রেও এই নিজস্বতা ও স্বতন্ত্রতার প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে।  প্রথমে আমরা স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপারে আলোচনা করতে পারি। প্রথমদিকে স্থপতিরা মূলত বৃহৎ মন্দির ও ছোট ছোট সৌধ নির্মাণ করত। ছোট ছোট সৌদ গুলিকে বলা হত ট্রেজারি । মন্দির ও সৌধ নির্মাণে  গ্রীকরা মিশরীয়দের কাছ থেকে পাথর ও মার্বেলের ব্যবহার শিখেছিল। সাধারণত পলিশ গুলির প্রধান সভা স্থল বা অ্যাগোরার সন্নিকটে এই সৌধ ও প্রাসাদ গুলি নির্মিত হত। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের প্রথমার্ধ থেকে গ্রিসের বিভিন্ন প্রকার স্থাপত্য রীতির মধ্যে একটি ঐক্য সূত্র গড়ে তোলার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এই প্রচেষ্টার অন্যতম উদাহরণ হল এথেন্সের পার্থেনন মন্দির। দেবী অ্যাথেনার উদ্দেশ্যে নির্মিত এই মন্দির ছিল এথেনীয় গণতন্ত্রকে গৌরবান্বিত করার একটি সচেতন প্রয়াস। এর প্রধান স্থপতি ছিলেন ইকটিনস ও ক্যালিক্র্যটিস। প্রায় একই সময়ে নির্মিত হয়েছিল প্রপিলিয়া...