সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের আর্থসামাজিক স্তর বিন্যাস ও সমস্যা আলোচনা কর।

 অষ্টাদশ শতকের শেষভাগের ফরাসি বিপ্লব ছিল আধুনিক সভ্যতার বৃহত্তম পথের বাক। এই বিপ্লবে জন্ম নিয়েছিল ইউরোপে জাতীয়তাবাদী এবং সর্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ধারা, জাতিগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতার আদর্শ আর স্বৈরাচারী প্রশাসনকে সংবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি। অধ্যাপক লেফেভর বলেছেন ফরাসি বিপ্লবের প্রকৃত কারণ ফ্রান্সের এবং পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাসের অনেক গভীরে নিহিত আছে। প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক স্তরবিন্যাস অসাম্য এবং সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জিভূত করেছিল। যার অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল ১৭৮৯ এর বিপ্লব।  ঐতিহাসিকরা মোটামুটি ভাবে একমত যে পুরাতন তন্ত্রের ফ্রান্সে তিনটি এস্টেট বা গোষ্ঠী ছিল যাজক, সম্ভ্রান্ত এবং সাধারণ মানুষ।  প্রথম এস্টেট বা যাজকগণ ছিলেন বিশেষ সম্মানিত এবং সুবিধাভোগী শ্রেণী, যাজকগণ ছিলেন চার্চের প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত। তারা প্রশাসনকে কর দিতেন না উপরন্ত জনগণের কাছ থেকে ধর্ম কর আদায় করত এবং রাজাকে দিতেন স্বেচ্ছা অনুদান। এদের জন্য পৃথক বিচার ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থা, দারিদ্রদের সাহায্য ব্যবস্থা ...

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি ব্যাখ্যা করে, তার মুঘল সাম্রাজ্যের পতন কে কতখানি ত্বরান্বিত করেছিল তা দেখাও।

 ঔরঙ্গজেব তার পূর্বসূরীদের অনুসরণ করেই দাক্ষিণাত্যের উপর কেন্দ্রীয় শক্তির কব্জা কায়েম করতে সচেষ্ট হন। জীবনের শেষ ২৫ টা বছর তিনি এজন্য দাক্ষিণাত্যে কাটান এবং বহু সম্পদ ব্যয় করেন। অবশেষে দাক্ষিণাত্যে মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তা পরবর্তী মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে লাভবান হয়নি।  ঔরঙ্গজেব শাসনকালের প্রথমার্ধে উত্তর ভারতের রাজনীতি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে দাক্ষিণাত্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সময় পাননি। দাক্ষিণাত্যে প্রধান দুটি রাজ্য বিজাপুর ও গোলকুন্ডা কার্যত স্বাধীন ছিল। তবে এদের ক্রমশ ক্ষীয়মান শক্তি হ্রাসের সুযোগে শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠা জাতির ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাক্ষিণাত্যে নতুন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শাহজাদা আকবর বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এবং শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীর দরবারে আশ্রয় নিলে পরিস্থিতি আরোও জটিল হয়ে ওঠে। এমত অবস্থায় ঔরঙ্গজেব 1681 খ্রিস্টাব্দে রাজপুতদের সাথে শান্তি চুক্তি স্থাপন করে দ্রুত দাক্ষিণাত্যের দিকে যাত্রা করে। ১৬৮১ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সাম্রাজ্যের শক্তি নিয়োগ করেছিলেন দাক্ষিণাত্যে। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন রাজ্য বিজাপুর ও গো...

ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুবরো রাজতন্ত্র কতখানি দায়ী??

 ফরাসি বিপ্লবের সমকালীন ও আধুনিক কালের ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিপ্লবের কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে এর পিছনে আর্থসামাজিক, অনেকে অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করে। তবে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক দুর্গতি ও বুবরো রাজবংশের রাজাদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা এই বিপ্লবের জন্য দায়ী ছিল তা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। অষ্টাদশ শতকে প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির মত কেন্দ্রভুত নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ছিল।বুবরো রাজারা দৈব স্বত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা ছিলেন চতুর্দশ লুই। তিনিই ঘোষণা করেছিলেন 'I am the state '। তিনি অভিজাত সম্প্রদায় ও চার্চের ক্ষমতা ক্ষুন্ন করে সুদক্ষ আমলাতন্ত্রের গঠনের মাধ্যমে ফ্রান্সে এক সমৃদ্ধশালি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তবে তার শাসনকালে ব্যভিচার বেড়ে যাওয়ায় রাজকোষের উপর চাপ পড়ে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক ক্ষেত্রে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছিলেন তা পূরণ করতে বা অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনে তিনি ব্যার্থ হন। চতুর্দশ লুই এর মৃত্যুর পর পঞ্চদশ লুই এর সময়ে ফ্রান্সের রাজতন্ত্...

ফরাসি বিপ্লবের পিছনে দার্শনিকদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর।

 অষ্টাদশ শতক ইউরোপ জ্ঞানদীপ্তির যুগ। এই জ্ঞান দীপ্তির সূচনা হয়েছিল ষষ্ঠ শতকে হিউম কান্ট ও প্রমুখ দার্শনিকদের হাতে ধরে। ফ্রান্স ছিল জ্ঞান দীপ্তির অন্যতম একটি কেন্দ্র। ফ্রান্সের জ্ঞান দীপ্তির ধারকদের বলা হয় ফিলজফ। তবে এরা কেবল দর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এদের পরিধি ছিল আরো ব্যাপক সমকালীন ফরাসি সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি বর্তমান ছিল সে সম্পর্কে ফরাসি দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে। তবে এই দার্শনিকদের প্রত্যেক প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি এক ছিল না। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ছিলেন যুক্তিবাদী মানবতাবাদী এবং সংস্কারের সমার্থক।  ফেনেলো থেকে ফ্রান্সের যুক্তিবাদের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সর্বপেক্ষা খ্যাতনামা দার্শনিক ছিলেন মন্তেস্কু। তিনি নিয়ম তান্ত্রিক রাজতান্ত্রে বিশ্বাসী এবং সমসাময়িক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আস্থাহীন। তিনি তার রচিত "পার্শিয়ান লেটার" গ্রন্থে তিনি সমকালীন ফ্রান্সের স্বৈরাচার, দুর্নীতি, অভিজাতন্ত্রের স্বার্থপরতা ও চার্চের গোড়ামী প্রকাশ করে দেয়। "গ্রেডনেস এন্ড ভেকাভেস...

জাবতি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতের মুঘল শাসনে রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। মুঘল যুগে কি উপায়ে, কতটা ভূমি রাজস্ব হ আদায় করা হতো আধুনিক ইতিহাস চর্চার একটা আকর্ষণীয় বিষয়।  বাবর ও হুমায়ুন পুরানো দিনের সুলতানি আমলের রাজস্ব ব্যবস্থাই বহাল রাখেন। জায়গিরদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই ভূমি রাজস্ব আদায় হতো। বিদেশি বিবরণ থেকে জানা যায় সকল জমির মালিক ছিল মুঘল সম্রাট। তাই ভূমি রাজস্ব ছিল ভূমির খাজনা। অন্যদিকে ইরফান হাবিব দেখিয়েছেন ভূমি রাজস্ব ছিল উৎপন্ন ফসলের উপর স্থাপিত কর, তাই উৎপাদন না হলে রাজস্ব দিতে হতো না। উৎপাদন ব্যাহত হলে রাজস্ব মুকুব এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যাই হোক সম্রাট আকবর‌ ই প্রথম নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে টোডরমলের সাহায্য ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন করেন।  আকবরের আমলে যেসব ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সেগুলি জাবতি, নকস, গাল্লাবক্সী প্রভৃতি প্রথা। এগুলির মধ্যে যাবতীয় ব্যবস্থার জন্য মুঘল রাজস্ব ব্যবস্থা ইতিহাসে অনন্য স্থানের অধিকারী হয়ে আছেন।  কতগুলি স্পষ্ট পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আকবর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা স্থির করে ১) বৃহৎ সাম্রাজ্যের সর্বত্র নির্দ...