সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

কণিষ্কের রাজনৈতিক অবদান | Political Contrubution of Kanishka

কণিষ্কের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে কুষান শাসকদের রাজনৈতিক অবদান আলোচনা কর। খ্রিস্টিয় প্রথম শতক নাগাদ উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকার উপর শকদের কর্তৃত্ব ক্রমশ অন্তর্হিত হতে থাকে এবং একটি নতুন শক্তির অভ্যুদ্বয় হয়। এই নতুন রাজশক্তি হল কুষাণ। মধ্য এশিয়া থেকে বেরিয়ে যে সমস্ত যাযাবর গোষ্ঠী পশ্চিম দিকে অভিপ্রয়ান করে আফগানিস্তান এবং উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তদেশে উপস্থিত হল তাদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী ছিল ইউ-চি। সাম্প্রতীক গবেষণায় দেখা গেছে এরা ইন্দো-ইউরোপীয় 'তোখারীয়' ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই ইউ-চি গোষ্ঠীর ৫ টি শাখার মধ্যে একটি শাখা ছিল কুষান, যাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সূচনা হয়েছিল ব্যাকট্রিয়া থেকে এবং ধীরে ধীরে তারা উপমহাদেশের বিরাট ভূখন্ডের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই রাজবংশের শ্রেষ্ঠ শাসক কণিষ্ক, যিনি কেবল রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্যই খ্যাতি অর্জন করেননি, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।  কুষাণদের রাজনৈতিক ইতিবৃত্তের পরিচয় পাওয়া যাবে মুদ্রাগত সাক্ষ্য, বিভিন্ন লেখ এবং চিনা বিবরণ থেকে। প্রথম কুষাণ শাসক ছিলেন মিয়াওস। তাঁর অধিকার ...

ম্যানর ব্যবস্থার স্বরূপ | Manorialism

ম্যানর ব্যবস্থার স্বরূপ  উৎপাদন ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখার জন্য সমাজের নিচুস্তরে প্রভূ ও অধীনস্থ প্রজার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে যে প্রাচীনতর ও দীর্ঘায়ু প্রতিষ্ঠান ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে স্বাভাবিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তা 'ম্যানর' নামে পরিচিত। ম্যানারগুলিকে ফ্রান্সে অবশ্য সেঁইন্যারি (Seigneurie) বলা হত। মার্ক ব্লকের ভাষায়, ম্যানর ছিল প্রধানত এস্টেট, যার সীমানার মধ্যে বাস করতেন লর্ডের প্রজারা। আর লর্ড বা ভূস্বামীর জমিতে প্রজা কর্তৃক উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ভাগীদার হাওয়াই ছিল লর্ডের কর্তৃত্ব প্রয়োগের মূল লক্ষ্য। অধীনস্থ প্রজার উপরে ভূস্বামীর অধিকারের মাত্রা ও ব্যাপকতার বিচারে ম্যানর গুলিকে সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্থানীয় বিভাগ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সাধারণত আকারে বিশাল এবং স্বনির্ভর এই প্রতিষ্ঠান ইউরোপের সর্বত্র একইভাবে বা একই সময়ে গড়ে ওঠেনি। কোথাও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণরূপে ম্যানর নিয়ন্ত্রিত, কোথাও অসংখ্য ছোট ছোট ক্ষেত মালিক বিচ্ছিন্নভাবে কৃষিকাজ সম্পন্ন করতেন। জার্মানি ও ইংল্যান্ডের বহু আগেই ফ্রান্স ও ইতালিতে কয়েকটি এলাকায় ম্যানর ব্যবস্থার বিকা...

সামন্ততন্ত্রের প্রকৃতি | Nature of Feudalism

সামন্ততন্ত্রের প্রকৃতি নবম ও দশম শতকে ইউরোপে কেন্দ্রীয় শাসন ভেঙে পড়লে ভূমিনির্ভর অভিজাত ও সরকারি কর্মচারীরা রাজতন্ত্রের বদলে এক ধরনের বিকল্প রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলে যার নাম সামন্ত প্রথা। ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভাঙনের মধ্য দিয়ে সামন্ত ব্যবস্থার উৎপত্তি হয় এবং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার পূনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার অবসান হয়। মোটামুটি ৮০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই ব্যবস্থা ইউরোপে স্থায়ী ছিল। ইংরাজিতে Feudalism শব্দের বাংলা অনুবাদ হল সামন্ততন্ত্র। 'ফিউড' কথার অর্থ জমি। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে জমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি ব্যবস্থা। সামন্ততন্ত্র মূলত একটি সরকারি ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীয় প্রশাসন থাকে না, ভুস্বামীদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত থাকে। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ধনী অভিজাতরা অধীনস্থদের রক্ষার দায়িত্ব নিত এবং বিনিময়ে অধীনস্থ ব্যাক্তি প্রভুকে সেবা ও সীমাহীন আনুগত্য দিত। প্রভু ও অধীনস্থের এই সম্পর্কই ছিল সামন্ত ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। মার্ক ব্লখ মনে করেন ভ্যাস...

রোম-ভারত বাণিজ্য | Indo-Roman Trade

 রোম-ভারত বাণিজ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনের অভাব মানেই আর্থিক অবনতি যে নয় তার প্রমান উপমহাদেশে খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রিঃ  তৃতীয় শতক পর্যন্ত সময়কাল। মৌর্য সাম্রাজ্যের মত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পতনের পর উপমহাদেশে আর কোনো একক বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গড়ে ওঠে নি। এর ফলে আলোচ্য পর্বে অর্থনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়, কৃষি, কারিগরি উৎপাদন এবং বাণিজ্যে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগের প্রসার ঘটে। সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি ঘটে জলপথে দুরপাল্লার বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে।  ভারত কিভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করল তার প্রেক্ষিত বোঝার জন্য সমসাময়িক পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি অনুধাবন করা দরকার। খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক নাগাদ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হয়। এই বাণিজ্যের একদিকে ছিল পশ্চিমে রোম সাম্রাজ্য ও পূর্বে চিনের হান সাম্রাজ্য। রোম সাম্রাজ্যে রাজা ও অভিজাতদের দরবারে চিনা বিলাস দ্রব্যের ব্যপক চাহিদা ছিল। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চিনের রেশম। এছাড়া ছিল চা আর চিনামাটির পাত্র। এই রেশম দীর্ঘ স্থলপথ পাড়ি দিয়ে মধ্য এশিয়ার টাকলামাকান মরুভূমির মধ...

চিনে মুক্ত দ্বার নীতি | Hay Doctrine

 চিনে মুক্ত দ্বার নীতি  পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি মাঞ্চু রাজতন্ত্র শাসিত চীনে যে সমস্ত শোষণ মূলক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছিল তার  চূড়ান্ত  পরিণতি হল চীনের মুক্তদ্বার নীতি (১৮৯৯) । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন বিদেশ সচিব জন  হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে এই নীতি ঘোষণা করেছিলেন। এই নীতি তাই "হে ডকট্রিন" নামেও পরিচিত। এই নীতির মূল বক্তব্য ছিল:  ১. পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রভাবাধীন অঞ্চলের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় তারা হস্তক্ষেপ করবে না। ২. মুক্ত বন্দর গুলিতে চীনের শুল্ক বিভাগ চুক্তি অনুযায়ী কর আদায় করবে এবং এই বিষয়ে বিদেশীরা হস্তক্ষেপ করবে না। ৩) প্রভাবাধীন অঞ্চলে কোনো বিদেশি শক্তি অন্য দেশের বাণিজ্যিক পণ্যের উপর বৈষম্য মূলক শুল্ক চাপাবে না। ৪) হে একটি দ্বিতীয় সড়কপত্র প্রকাশ করে বলেন যে, পশ্চিমী শক্তিগুলির চীনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করে চলবে। মুক্তদ্বার নীতির পশ্চাতে একটি সুনির্দিষ্ট পটভূমি ছিল। মাঞ্চু রাজতন্ত্র তাইপিং বিদ্রোহ দমনের পর যখন চীনের অভ্যন্তরে নিজেকে শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিল তখন ঔপনিবেশিক শক...

তুং চি পুনস্থাপন | Tung Chi Restoration

 তুং চি পুনস্থাপন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মাঞ্চু রাজতন্ত্রের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পশ্চিমী ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি চীনের অধিকাংশ অঞ্চল গ্রাস করেছিল ফেলেছিল। ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্যরা মাঞ্চু রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ অগ্নিদগ্ধ করেছিল। তার ওপর বিভিন্ন রাজতন্ত্র বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ (যেমন- তাইপিং, মিয়াও, নিয়েন, তুংগান ও মুসলিম বিদ্রোহ) মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এই প্রেক্ষাপটে চীনা সম্রাট তুং চি-এর রাজত্বকালে (১৮৬২-১৮৭৪) বিলুপ্তপ্রায় রাজশক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটা আন্তরিক প্রয়াস চালানো হয়েছিল।  এই প্রয়াস তুং চি পুনঃ প্রতিষ্ঠা নামে পরিচিত। সম্রাট তুং চি'র নামে এই প্রক্রিয়ার নামকরণ হলেও এই ব্যাপারে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না; কারণ তখন তার বয়স ছিল অত্যন্ত কম। রাজ মাতা জু-শি তার অভিভাবক হিসাবে রাজকার্য পরিচালনা করতেন।রাজশক্তির পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল পূর্ববর্তী সম্রাট সিয়াং  ফেং- এর  ছোট ভাই রাজকুমার কুং এবং তার অনুগামী একদল রাজপুরুষের। তুং চি পুনঃ প্রতিষ্ঠার নেত্রীবর্গ অধিকাংশই ছিলেন কনফুসীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী। তারা একটি স্থিতিশীল কৃষিভিত...

লোহা আবিস্কার বিতর্ক | Debate on Iron Invention

লোহা আবিষ্কার বিতর্ক লোহার আবিষ্কার ঠিক কবে, কোথায়, কাদের হাত ধরে হয়েছিল এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পণ্ডিতদের অনুমান ছিল যে, হিটাইটদের রাজ্য আনাতোলিয়া ছিল লৌহপ্রযুক্তির উদ্ভাবন কেন্দ্র। হিটাইটদের সামরিক সাফল্যের পিছনেও এই লৌহপ্রযুক্তির অবদানকে বৃহৎ আকারে দেখা হতো। এও মনে করা হত যে পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে হিতাইট সাম্রাজ্যের অবসানের পর এই প্রযুক্তি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় অবশ্য লৌহপ্রযুক্তির আবিষ্কারের উপর হিটাইটদের কৃতিত্বের এই দাবি বাতিল হয়ে গেছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাবদে এবং দ্বিতীয় সহস্রাবদের প্রথমার্ধে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ৫০০ রকম লৌহ নির্মিত শিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা হিটটাইটদের উত্থানের বহু আগেকার। এর থেকেই অনুমান করা যায় যে  হিটটাইট রা লোহার আবিস্কারক নয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে ওই সময়কার লোহার জিনিসগুলি উল্কাপিণ্ড থেকে নিষ্কাশিত লোহা দিয়ে তৈরি হত। সুতরাং দ্বিতীয় সহস্রাবদের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বিশুদ...

নব্য প্রস্তর যুগীয় বিপ্লব | Neolithic Revolution

 নব্য প্রস্তর যুগীয় বিপ্লব আজ থেকে প্রায় ১০,৫০০ বছর আগে পশ্চিম এশিয়ায় প্রথম নব্য প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া যায়। নিয়মিত কৃষিকাজ এবং পশুপালন তথা খাদ্য উৎপাদক অর্থনীতি দিয়ে আমরা নব্য প্রস্তর যুগকে চিহ্নিত করা যায়। তবে পৃথিবীর সর্বত্র একই সাথে খাদ্য উৎপাদন তথা নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়েছিল এমন নয়। পশ্চিম এশিয়া থেকে শুরু হয়ে কৃষিকাজ ক্রমশ দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে (আজ থেকে ৬০০০-৭০০০ বছর আগে)।  কৃষির আবির্ভাব এবং স্থায়ী বসতি মানব সমাজে যে ব্যপক পরিবর্তন এনেছিল তাকেই গর্ডন চাইল্ড 'বিপ্লব' বলে অভিহিত করেছেন।  নব্য প্রস্তর যুগ তথা খাদ্য উৎপাদনের সবথেকে প্রাচীনতম নজির পাওয়া গেছে প্যালেস্টাইনের জেরিকো'তে (১০,৫০০ বছর পুরানো)। উত্তর ইরাকের জাওয়াই জাওয়াই শেমি শনিদার (১১০০০ বছর পুরানো), যেখানে পশুপালক আধা-স্থায়ি জীবনের প্রমান পাওয়া গেছে। এছাড়া রয়েছে উত্তর ইরাকের জারমো (৭০০০ বছর পুরানো) এবং আনাতোলিয়ার ক্যাটাল হুউইক (৮০০০ বছর পুরানো), যেখানে নিয়মিত কৃষির প্রমান পাওয়া গেছে। এই প্রত্নক্ষেত্রগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে আমরা নব্যপ্রস্তর...

পশ্চিম এশিয়ায় নব্যপ্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতির বিস্তার | Neolithic Culture in West Asia

পশ্চিম এশিয়ায় নব্যপ্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতির বিস্তার  নব্য প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতিকে চিহ্নিত করা যায় মানুষের খাদ্য উৎপাদক হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে। কোথায় প্রথম মানুষ কৃষিকাজ করতে শুরু করেছিল তা নিয়ে ১৯৪০ এর দশক পর্যন্ত পণ্ডিত মহলে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল। অনুমান করা হত যে প্রাচীন নদীমাতৃক সভ্যতা গুলি যেখানে অবস্থিত ছিল (যেমন মিশরীয়, মেসোপটেমিয়া ইত্যাদি) সেখানেই প্রথম চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫০ এর দশকে এই ধারনার আপাদমস্তক বদল ঘটে উইলিয়ার্ড লিবির Radio Carbon Dating আবিষ্কারের ফলে। Radio Carbon Dating প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আজ এটা প্রমানিত যে চাষাবাদ কোনো নদী তীরবর্তী আদ্র এলাকায় সূচনা হয় নি, হয়েছিল পাহাড়ের পাদদেশে বা তৃনভূমি এলাকায়।  পশ্চিম এশিয়ায় চাষাবাদের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১০,৫০০ বছর আগে। যে সমস্ত প্রত্নক্ষেত্রগুলি আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলির অবস্থান মোটামুটি ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মরুসাগর উপকূল বরাবর এলাকা, জর্ডন উপত্যকা, সিরিয়া, ইরাক, জাগ্রোস পর্বতমালা এবং উত্তর-পশ্চিম ইরানে। পশ্চিমে প্রায় তুরস্ক পর্যন্ত এলাকায় চাষাবাদের সূচনা হয়েছিল। তবে সবথকে প্রাচীনতম প্রত্নক্ষেত্রগুলি হল...

আদিম মানুষের বিবর্তনঃ হোমিনিড থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স | Human Evalution: From Hominid to Homo Sapience Sapience

আদিম মানুষের বিবর্তনঃ হোমিনিড থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স  আজ থেকে প্রায় ৩৫০০ মিলিয়ান বছর আগে পৃথিবীতে একপ্রকার জীবের আবির্ভাব হয়েছিল। এরা ছিল দ্বিপদী (Bipedal) এবং এদের মাথার খুলির আয়তন ছিল অন্যান্য জীবের তুলনায় বড়। সময়টা ছিল সোনোজোয়িক যুগ।*  Cenozoic era-র সূচনা প্রায় ৬৬ মিলিয়ান বছর আগে। এই যুগের দ্বিপদ বিশিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রানী প্রাইমেট নামে পরিচিত ছিল। Cenozoic era-র দুটি ভাগ-- টারশিয়ারি ও কোয়ার্টারনারি period. কোয়ার্টারনারি period এর মধ্যে আছে দুটি এপখ- প্লিস্টোসিন এবং হলোসিন। এই প্লিস্টোসিন পর্বেই মানুষের বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চারিত হয়েছিল। প্রায় ৮ লক্ষ বছর ধরে ছলেছিল প্লিস্টোসিন পর্ব। এই পর্ব ছিল বরফের যুগ এবং আনুমানিক ১০০০০ হাজার বছর আগের প্লিস্টোসিন পর্বের সমাপ্তি ঘটেছিল এবং আধুনিক হলোসিন যুগের আবির্ভাব হয়েছিল।  প্রাইমেটদের উন্নত শারিরিক গঠনের জন্য গাছে গাছে বিচরন করতে পারত। প্রাইমেটদের দুটি ভাগ- প্রসিমি ও এন্থ্রোপয়েড। প্রসিমিদের মধ্যে ছিল লেমুর, টারসিয়ের, লোরিস এবং অন্যান্য গাছে চড়া প্রানী। এরা অপেক্ষাকৃত অনুন্নত। এদের থেকে উন্নত ছিল এন্থ্রোপয়েডরা। এ...

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহশালার ভূমিকা | Role Museum in Cultural Heritage Management

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহশালার ভূমিকা সংগ্রহশালা বা মিউজিয়াম ছিল এক সময়ে কেবল মজুদ কক্ষ। তখন বিভিন্ন শিল্পজাত বস্তু সংগ্রহ করে তা মিউজিয়ামে মজুদ করা হত। পরবর্তীকালে সেগুলি সংরক্ষণ করার কথা ভাবা হয় এবং বর্তমানে সেগুলির সর্বজনীন প্রদর্শন মিউজিয়ামের অন্যতম প্রধান দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। সুতরাং প্রথম থেকেই মিউজিয়ামের কাজ ছিল দেশ বা জাতির সাংস্কৃতিক সম্পদ গচ্ছিত রাখা। তখন ঐতিহ্যবাহী সম্পদ বলতে কেবল সাংস্কৃতিক সম্পদকেই বোঝা হত। নদী, সমুদ্র, পাহাড় ইত্যাদিকে তখনো ঐতিহ্য হিসাবে গন্য করা হয় নি। ঐতিহ্য দুই প্রকার: প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলতে প্রাচীন স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, প্রত্নতাত্বিক ধ্বংসাবশেষ, মুদ্রা, লিপি, লোককথা, লোক নৃত্য, ভাষা, লিপি, প্রথা পদ্ধতি ইত্যাদি। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আবার দুই প্রকার মূর্ত ঐতিহ্য এবং বিমূর্ত ঐতিহ্য। মূর্ত ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে বস্তুগত ঐতিহ্য, যেমন- স্থাপত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি। আর বিমূর্ত ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে ভাষা, লিপি ইত্যাদি। এগুলোকে ছুঁয়ে অনুভব করা যায় না। তাই এগুলিকে অস্পর্শক ঐতিহ্যও বলে। মূর্ত ও বিমূর্ত দুই প্রকার সাংস্কৃতিক ...