সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা বা নায়ক ব্যবস্থা অথবা নয়ঙ্কারা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর?

 বিজয়নগর রাজ্যের সামরিক ব্যবস্থা ও ভূমিদান রীতির সাথে বিশেষভাবে জড়িত ছিল নায়ক বা নয়ঙ্কারা প্রথা। ‌ সংস্কৃত সাহিত্য 'নায়ক' অর্থে নেতা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। কিন্তু বিজয়নগরের নায়ক প্রথা কিছুটা স্বতন্ত্র। নায়কদের অধিকার কর্তব্য, নায়ক প্রথার প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অধ্যাপক অনিরুদ্ধ রায়ের মতে বিজয়নগরের নায়করা স্থানীয় নেতৃবর্গের থেকে স্বাধীন। বিজয় নগরের বিভিন্ন শিলালেখতে "অমরয়ঙ্কর" শব্দটি পাওয়া যায়। এখানে 'অমর' শব্দের অর্থ সৈন্যধাক্ষ, "নায়ক" অর্থে নেতা এবং 'কর' বলতে সরকারি কাজকে বোঝানো হয়েছে। এই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নায়ক প্রথার বৈশিষ্ট্য গুলো অনুধাবন করা যায়। অধ্যাপক নীলকন্ঠ শাস্ত্রী বলেন বিজয়নগর একটি 'যোদ্ধা রাজ্য' বা 'war state' এবং এই সাম্রাজ্যের গঠন তার সামরিক প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছে। তার মতে বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল অসংখ্য সামরিক নেতার মিলিত প্রয়াসের ফল। টি. ভি. মহালিঙ্গম বলেছেন বিজয় নগরের অভ্যন্তরীণ সংগঠনের প্রধান ভিত্তি ছিল নয়নঙ্কারা ব্যবস্থা। এই প্রথা অনুযায়ী রাজা নায়কদের ...

বিজ্ঞান বিপ্লব কি বৈপ্লবিক? | Was the Scientific Revolution Truly Revolutionary?

বিজ্ঞান বিপ্লব কি বৈপ্লবিক?  ইতিহাসের এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা মানব সভ্যতার গতিপথকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। ইউরোপে ১৬শ ও ১৭শ শতকে যে পরিবর্তন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ঘটেছিল, ইতিহাসে তা ‘বিজ্ঞান বিপ্লব’ (Scientific Revolution) নামে পরিচিত। বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি, পদ্ধতি ও জ্ঞানের উৎপাদনে এই সময় যেসব মৌলিক পরিবর্তন এসেছিল, তা শুধু ইউরোপ নয়, পরবর্তী সময়ের গোটা পৃথিবীর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।  বিজ্ঞান বিপ্লব মূলত ইউরোপে ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে কোপার্নিকাসের গ্রন্থ De Revolutionibus Orbium Coelestium প্রকাশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং ১৬৮৭ সালে আইজ্যাক নিউটনের Principia Mathematica প্রকাশের মাধ্যমে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্বে উপনীত হয়। এই সময়কালে গ্যালিলিও, কেপলার, হার্ভে, ডেকার্ত, বেকন প্রমুখ বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা প্রকৃতি বোঝার এক সম্পূর্ণ নতুন ধারা তৈরি করেন, যা পুরনো অ্যারিস্টটলীয় তত্ত্ব ও ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। কোপার্নিকাসের পূর্বে বিশ্বাস ছিল পৃথিবী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র, যা নিশ্চল ও স্বর্গীয় জ্যোতির্মন্ডল থেকে আলাদা এক ‘মাটির জগৎ’। গ্রহ-নক্ষত্রদের স্বর্গীয় ইথ...

শিল্প বিপ্লব কেন প্রথম কেন ইংল্যান্ডেই হয়েছিল? | Why Did the Industrial Revolution Begin First in England?

শিল্প বিপ্লব কেন প্রথম কেন ইংল্যান্ডেই হয়েছিল?  ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি ১৮৮০-৮১ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তৃতায় প্রথম 'শিল্প বিপ্লব' কথাটি ব্যবহার করেন। যদিও মার্কস এবং এঙ্গেলস তাদের দাস ক্যাপিটাল- এ শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শিল্প বিপ্লবের উল্লেখ করেছিলেন। যাইহোক আধুনিক অর্থনীতিচর্চা ও ইতিহাস চর্চায় তত্ত্বগত ও প্রয়োগগত দিক থেকে এটা এখন প্রায় প্রবাদের মত চির সত্যে পরিণত হয়েছে যে, যে কোন দেশে অর্থনৈতিক উন্নতির মূলে আছে এই শিল্প বিপ্লব। সংক্ষেপে বললে দাঁড়ায় যে উন্নত দেশ মানে যে দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটে গেছে, অনুন্নত দেশ মানেই যে দেশে এখনো শিল্প বিপ্লব হয়নি এবং উন্নয়নশীল দেশ মানে যে দেশে শিল্প বিপ্লবের প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে তবে এখনো পরিপূর্ণতা পায়নি। একথা মনে করা ঠিক হবে না যে প্রতিটি দেশে বা প্রতিটি ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি একই পথ ধরে এগিয়ে যাবে। তবে এ কথাও সত্য যে, একটি দেশের অর্থনৈতিক সংস্থা গুলিতে বৈশিষ্ট্যগত এবং পদ্ধতিগত একাধিক পরিবর্তন একত্রিত ভাবে শিল্প বিপ্লবের জন্ম দেয়। এইসব পরিবর্তন গুলি হল--  ১. আধুনিক বি...

সপ্তদশ শতকের ইউরোপীয় অর্থনীতি: সংকট ও পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণ | The European Economy in the Seventeenth Century: At the Crossroads of Crisis and Change

সপ্তদশ শতকের ইউরোপীয় অর্থনীতি: সংকট ও পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণ সপ্তদশ শতক ইউরোপের ইতিহাসে এক চরম টালমাটাল সময়। ষোড়শ শতকে ইউরোপে প্রাথমিকভাবে সমৃদ্ধি এসেছিল; কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দী জুড়ে ইউরোপ সম্মুখীন হয়েছিল অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সামাজিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, কৃষি ও বাণিজ্য কাঠামোর ভাঙন—সব মিলিয়ে এই সময়কালকে অনেক ইতিহাসবিদ “সাধারণ সংকটের যুগ” (General Crisis) বলে চিহ্নিত করেছেন। এই সংকট শুধু সাময়িক অবক্ষয়ই বয়ে আনেনি, বরং তা ইউরোপীয় সমাজ ও অর্থনীতিকে নতুন পথে চালিত করেছিল।  মূল্যবিপ্লব ও ক্ষণস্থায়ী সমৃদ্ধির অবসান  ষোড়শ শতকে আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ রৌপ্য আমদানির ফলে ইউরোপে সৃষ্ট হয়েছিল মুদ্রাস্ফীতি—যা ইতিহাসে “Price Revolution” নামে পরিচিত। যদিও কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছিল, এর সুফল কৃষকরা পাননি। সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয় জমিদার ও শাসকশ্রেণির হাতে। উৎপাদনশীলতা না বাড়লেও জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, ফলে ষোড়শ শতকের শেষ নাগাদ এই ভিত্তিহীন সমৃদ্ধি ধসে পড়ে এবং ইউরোপ প্রবেশ করে অনিশ্চয়তার এক নতুন অধ্যায়ে। জলবায়ু ও কৃষি সংকট সপ্তদশ শতক ছিল “লিটল আইস এজ”-এর চূড়ান্ত পর্ব। অনিয়মিত আব...