সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস | Martin Luther's 95 Theses

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস 

জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ ও প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ মার্টিন লুথার ১৫১৭ সালের ৩১ অক্টোবর উইটেনবার্গের ক্যাসেল চার্চের দরজায় ৯৫টি থিসিস নামক প্রতিবাদপত্র পেরেক দিয়ে ঝুলিয়ে দেন। এটি ছিল মূলত Indulgences এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের দুর্নীতি ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি তীব্র প্রতিবাদ।  

লুথারের থিসিসগুলোর মূল বক্তব্য ছিল:  

1. ক্ষমার প্রকৃত অর্থ: লুথার যুক্তি দেন যে খ্রিস্টানদের প্রকৃত ক্ষমা  আন্তরিক অনুতাপ ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে আসে, চার্চের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করা ক্ষমাপত্রের মাধ্যমে নয়।  

2. পোপের কর্তৃত্বের সীমাবদ্ধতা: তিনি বলেন, পাপের ক্ষমা দেওয়ার একমাত্র অধিকারী ঈশ্বর, পোপ নন। পোপের ক্ষমতা কেবলমাত্র ecclesiastical penalties মোচন করতে পারে, ঐশ্বরিক শাস্তি নয়।  

3. দরিদ্রদের শোষণ: তিনি চার্চের জন টেটজেল-এর মতো ধর্মপ্রচারকদের সমালোচনা করেন, যারা দরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে "ক্ষমাপত্র" বিক্রি করতেন।  

লুথারের এই থিসিস প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন-এর সূচনা করে, যা শেষ পর্যন্ত পশ্চিমা খ্রিস্টান বিশ্বকে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট—এই দুই শাখায় বিভক্ত করে দেয়। মুদ্রণযন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় লুথারের ধারণা সমগ্র ইউরোপে বিপ্লব সৃষ্টি করে। চার্চের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি ব্যক্তিগত বিবেক ও ধর্মগ্রন্থের (বাইবেলের) প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন।  

৯৫ থিসিস কেবল ধর্মীয় পরিবর্তনই আনে নি, এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকেও নাড়া দেয়। এটি আধুনিক ধর্মীয় স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ভিত্তি রচনা করে। এই থিসিসের মাধ্যমেই লুথার "সোলা স্ক্রিপ্টুরা" (কেবল ধর্মগ্রন্থ), "সোলা ফিদে" (কেবল বিশ্বাস) এবং "সোলা গ্রাটিয়া" (কেবল ঈশ্বরের অনুগ্রহ)—এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে নতুন ধর্মীয় চিন্তার সূত্রপাত করেন।  

 Martin Luther's 95 Theses  

On October 31, 1517, Martin Luther, a German theologian and the initiator of the Protestant Reformation, nailed his "95 Theses" - a protest document - to the door of the Castle Church in Wittenberg. This act primarily served as a strong protest against indulgences and the corruption and abuses within the Roman Catholic Church.  

The key arguments in Luther's theses were:  

1. The True Nature of Forgiveness: Luther contended that real forgiveness for Christians comes through sincere repentance and faith in God, not through buying "letters of indulgence" from the Church with money.  

2. Limits of Papal Authority: He asserted that God alone, not the Pope, has the power to forgive sins. The Pope could only remove church-imposed penalties, not divine punishment.  

3. Exploitation of the Poor: Luther strongly criticized Church preachers like Johann Tetzel who pressured poor people into buying indulgences.  

Luther's theses ignited the Protestant Reformation, which eventually split Western Christianity into two branches - Catholic and Protestant. The rapid spread of Luther's ideas through the printing press caused revolutionary changes across Europe. By challenging the Church's authority, he established the importance of personal conscience and the supreme authority of Scripture (the Bible).  

The 95 Theses didn't just bring religious transformation - it also significantly impacted social and political structures. It laid the groundwork for modern concepts of religious freedom, nationalism, and individualism. Through these theses, Luther introduced three fundamental principles of Protestant theology: Sola Scriptura (Scripture alone), Sola Fide (Faith alone), and Sola Gratia (Grace alone).  

Thus, the 95 Theses represented a crucial turning point in the transition from medieval religious dogma to the modern era.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...