সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা | Alauddin Khalji’s Price Control System

আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা 

আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার সমূহ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ ছিল রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণ গঠন। দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বাজারদর নিয়ন্ত্রণ, যা তাকে এক দুঃসাহসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপকের মর্যাদা দিয়েছে। আলাউদ্দিন খলজি বলবনের অনুসৃত সংহতির নীতি থেকে সরে এসে সম্প্রসারণবাদী নীতি গ্রহণ করেন। একে একে গুজরাট, রণথম্বর, চিতোর, মালব জয় করেন। উত্তর ভারতে এক বিস্তৃত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, কেবল সাম্রাজ্য বিস্তার বা অভ্যন্তরীণ সংহতি স্থাপন নয়, ৭ বার তাঁকে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়েছিল। তাই তাকে বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে হয়েছিল। প্রায় চার লক্ষ ৭৫ হাজারের মতো। এই বিরাট পরিমান সামরিক খরচের বোঝা বইতে দরকার ছিল আরথনৈতিক সংস্কার।

আলাউদ্দিনের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিতর্ক আছে, সমসাময়িক ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনী তাঁর দুটি গ্রন্থে দু'রকমের মন্তব্য করেছেন। তারিখ-ই- ফিরোজশাহী গ্রন্থে তিনি বলেছেন মোঙ্গল আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী দক্ষ সেনাদল গঠন করার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছিলেন। আবার ফতোয়া- ই- জাহান্দারি গ্রন্থে প্রজাকল্যাণকর উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল না হলে সেনাবাহিনীতে যেমন শান্তি থাকে না, তেমন জনগণ সুখ ও শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে না। সমসাময়িক লেখক হামিদ কালান্দার আলাউদ্দিনের প্রজাকল্যাণকর চিন্তার কথাই বলেছেন। আমির খসরু খাজাইন-উল- ফুতুহ গ্রন্থে বলেছেন শুধু সামরিক প্রয়োজনে নয়, জনগণের মঙ্গল সাধনের কথা ভেবে সুলতান বিবিধ ব্যবস্থা প্রচলন করেন। তাছাড়া বরনির প্রথম বক্তব্যের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে আলাউদ্দিনের সময় সৈনিকদের বাৎসরিক বেতন ছিল ২৩৪ তঙ্কা, এবং মাসিক বেতন ছিল ২০ তঙ্কা, এই বেতন আকবরের সময়ও ছিল, আকবরের সময় দ্রব্যমূল্য ছিল আলাউদ্দিনের সময়ের দ্বিগুণ, তাহলে আলাউদ্দিনের সময় সৈনিকদের কম বেতন দিয়ে তাদের স্বচ্ছল ভরণপোষণের জন্য দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা হয়েছে - এ কথায় সংশয় রয়েছে। 

বারনি উল্লেখ করেছেন আলাউদ্দিন বাজার নিয়ন্ত্রণ চালু করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিলেন‌। তবে তিনি জানিয়েছেন আলাউদ্দিন প্রত্যেক পণ্যের মূল্য নির্ধারণের আগে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করে কারিগর ও বণিকদের লগ্নিকৃত পুঁজির লভ্যাংশের ব্যবস্থা করে মূল্যমান নির্ধারণ করতেন। এক্ষেত্রে মুনাফা খোর লোভী পুঁজিপতি বণিকদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করেন। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম মেনে সমস্ত বন্দোবস্ত করেন। তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। গুপ্তচর নিয়োগ করেন, কোনো বাজার আইন ভগ্ন হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

আলাউদ্দিন দিল্লিতে চারটি বাজার স্থাপন করেন। প্রথমটি হল মান্ডি বা শস্য বাজার। সুলতান সমস্ত শস্যের উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করে বাজারদর নির্দিষ্ট করে দেন এবং তা আর কখনো বাড়তে দেননি। শস্যের দাম ছিল এরূপঃ গম ৭.৫ জিতল, বার্লি ও জব ৪ জিতল, ধান ৩ জিতল, ডাল ৫ জিতল। শস্য বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য উলুগ খানকে শাহনা বা বাজার নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত করে। শাহনার অধীনে ছিল বারিদ বা গুপ্তচররা। বিভিন্ন মহল্লায় শস্যের ভান্ডার স্থাপন করা হয়। শস্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি পৃথক বণিকগোষ্ঠী গঠন করা হয়, যারা পরিবার নিয়ে দিল্লিতে থাকত। দুর্ভিক্ষের সময় আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সুলতান রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেন।

দ্বিতীয় বাজার ছিল সরাই আদল বা বিশেষ অনুদান প্রাপ্য শিল্প পণ্যের বাজার। দিল্লির বদাউন তোরণের কাছে এটি অবস্থিত ছিল। বিদেশ থেকে এখানে পণ্য আসত। এখানে বিক্রি হত ঔষধপত্র, বস্ত্র, চিনি, ঘি, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য দ্রব্য। বিক্রয়যোগ্য সমস্ত পণ্যের দাম জিয়াউদ্দিন বরনি উল্লেখ করেছে। এই বাজারে যারা পণ্য বিক্রয় করতে আসত তাদের নাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেওয়ান-ই-রিয়াসাৎ-এ নথিভূক্ত করতে হত, এরা হলো নিয়ন্ত্রিত বণিক। এরা প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য সেরাই আদল‌-এ আনত এবং সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করত। সুলতান অনেক সময় এদের অর্থ সাহায্য দিতেন। এই বাজার থেকে সস্তায় পণ্য কিনে যাতে কেউ মুনাফা করতে না পারে সেজন্য সুলতান পারমিট অফিসার নিয়োগ করেন। 

তৃতীয় বাজারটি ছিল ঘোড়া, ক্রীতদাস ও গবাদি পশুর বাজার। এক্ষেত্রেও বণিক ও দালালদের নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারির ব্যবস্থা চালু করেন। গুণগত মান অনুযায়ী পণ্যের দাম স্থির হয়েছিল। যেমন প্রথম শ্রেণীর ঘোড়ার দাম ১০০-১২০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণীর ঘোড়ার দাম ৮০-৯০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণীর ঘোড়ার দাম ৬০-৭০ টাকা। এবং সামরিক কাজে অকেজো টাট্টু ঘোড়ার দাম ২০-৩০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। 

দেওয়ান ই রিয়াসাৎ অধীনে চতুর্থ সাধারণ বাজার গঠন করা হয়। সমগ্র রাজধানী জুড়ে এই বাজার ছিল‌ এবং এখানে মানুষের প্রয়োজনীয় সব রকমের ভোগ্যপণ্য পাওয়া যেত নির্দিষ্ট মূল্যে। ইয়াকুব নাজিরকে বাণিজ্য মন্ত্রী নিযুক্ত করে তাকে এই বাজার পরিচালনার ভার দেওয়া হয়। প্রত্যেক বাজারে একজন করে পরিদর্শক থাকতেন, যার কাজ ছিল নির্ধারিত মূল্য, ওজন ও মাপ সম্পর্কে খোঁজ রাখা এবং ভেজাল বন্ধ করা। 

আলাউদ্দিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হল এই ব্যবস্থা কি কেবল দিল্লিতে সীমাবদ্ধ ছিল, নাকি অন্যত্রও বিস্তৃত হয়েছিল। মোরল্যান্ড বলেছেন এই ব্যবস্থা কেবল রাজধানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ফতোয়া- ই- জাহান্দারী থেকে জানা যায় এই ব্যবস্থা দিল্লির বাইরের প্রদেশ গুলিতেও সম্প্রসারিত হয়েছিল। সমসাময়িক ঐতিহাসিক ফেরিস্তাও একইরকম মন্তব্য করেছেন। কেমব্রিজ ইতিহাসে বরনির বক্তব্যকে সমর্থন করা হয়েছে। যদি সেনাবাহিনীর মধ্যে কম দামে পণ্য সরবরাহ করাই এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে যেহেতু সেনাবাহিনী ও তার পরিবার সারাদেশে ছড়িয়েছিল সেহেতু এ কথা মানতে হবে সারা দেশেই বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল বলা যায়। সুলতানের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা যে যে অঞ্চলে ছিল সেখানে বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। 

অধ্যাপক পি সরণ ও কে এস লাল বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে এই ব্যবস্থা আলাউদ্দিন কৃষক, কারিগর ও বণিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। বণিকদের মুনাফার পরিমাণ এত কমে যায় যে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের উপর ৫০% হারে রাজস্ব আদায় করা হত। তাঁর মতে এই ব্যবস্থায় দিল্লিবাসী ও সৈনিকরা লাভবান হয় কিন্তু সারা দেশের ক্ষতি হয়। অর্থনীতির মূল সূত্র লঙ্ঘিত হওয়ায় সুলতানের মৃত্যুর সাথে সাথে এই ব্যবস্থার পতন ঘটে।

এইসব বিরোধী সমালোচনাও সত্বেও বলা যায় এই নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা শুধু সৈনিকরা নয়, সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, সকলেরই সুবিধা হয়। জনগণ অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা পায়।

Alauddin Khalji’s Price Control System

One of the key features of Alauddin Khalji’s administration was his series of economic reforms. His first major economic initiative was a complete restructuring of the revenue system. The second, and most significant, was the implementation of a market price control system, which earned him recognition as a daring economic administrator. Departing from Balban’s policy of consolidation, Alauddin pursued an expansionist agenda, conquering Gujarat, Ranthambore, Chittor, and Malwa, and establishing a vast empire in northern India. Besides imperial expansion and internal consolidation, he had to repel Mongol invasions seven times, which required the maintenance of a massive army of nearly 475,000 soldiers. This enormous military expenditure necessitated financial reform.

There is some debate about the objective behind Alauddin’s price control measures. Contemporary historian Ziauddin Barani offers two different perspectives in his works. In Tarikh-i-Firuz Shahi, he states that the market regulation was introduced to maintain a powerful and efficient army against the Mongols. However, in Fatwa-i-Jahandari, Barani suggests the reforms were aimed at public welfare. According to him, without stable prices, soldiers could not live in peace, nor could common people lead happy and secure lives. Another contemporary writer, Hamid Qalandar, emphasized Alauddin’s concern for the well-being of his subjects. Amir Khusrau, in Khazain-ul-Futuh, also maintained that the Sultan implemented various measures not just for military needs, but also for the welfare of the people.

Barani further noted that Alauddin used force to implement price control. However, he also mentioned that the Sultan would determine the production cost of every commodity before fixing its market price, ensuring that artisans and traders received a reasonable return on investment. He also implemented strict controls over profiteering merchants and exploitative capitalists. His measures were aligned with basic economic principles. To enforce these regulations effectively, Alauddin took strict steps: he appointed spies and imposed harsh punishments for violations of market laws.

Alauddin established four major markets in Delhi:
1. The Grain Market (Mandi): The Sultan calculated production costs and fixed the prices of all grains, never allowing them to rise. Prices were as follows: wheat – 7.5 jitals, barley and gram – 4 jitals, rice – 3 jitals, pulses – 5 jitals. Ulugh Khan was appointed *Shahna-i-Mandi* (market controller), with spies (barids) under him. Grain warehouses were established in various localities, and a distinct merchant group was formed to handle the grain trade, living with their families in Delhi. During times of famine, a rationing system was introduced.

2. Sarai Adl (Market for Controlled Goods and Foreign Imports): This market, located near the Badaun Gate, sold essential items such as medicines, cloth, sugar, ghee, oil, and other necessities. Only registered merchants, listed in the Ministry of Commerce (*Diwan-i-Riyasat*), could sell here. They were required to bring a fixed quantity of goods annually and sell at government-fixed prices. The Sultan sometimes provided financial support to these traders. To prevent profiteering, permit officers were appointed.

3. Market for Horses, Slaves, and Cattle: Merchants and brokers here were also under strict surveillance. Prices were set based on quality—first-class horses sold for 100–120 tankas, second-class for 80–90, third-class for 60–70, and inferior warhorses (tattoos) for 20–30 tankas.

4. The General Market: Spread throughout the capital, this market offered all consumer goods at fixed prices. Yakub Nazir was appointed as the commerce minister to oversee it. Each market had an inspector to monitor pricing, weights and measures, and prevent adulteration.

A frequently raised question is whether this market regulation system was limited to Delhi or extended beyond. Historian Moreland believed it was confined to the capital. However, Fatwa-i-Jahandari suggests that it expanded to other provinces. Contemporary historian Firishta supports this claim, and the Cambridge History accepts Barani’s assertion. If the system was meant to supply cheap goods to soldiers and their families, and since they were stationed across the empire, it follows that the market control policy likely extended throughout the Sultanate. Wherever the Sultan’s land revenue system was implemented, market controls were also introduced.

Professors P. Saran and K.S. Lal have strongly criticized the market regulation system. They argued that it harmed farmers, artisans, and traders. Traders lost profits and motivation, and in the Doab region, peasants were taxed at a 50% rate. They believed that although people in Delhi and the army benefited, the rest of the country suffered. Since the system violated basic economic principles, it collapsed soon after Alauddin’s death.

Despite such criticisms, it can be said that Alauddin’s market control system benefited not just soldiers but also the general population, including farmers and laborers. It brought economic stability and a sense of security to the people.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...