সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোম-ভারত বাণিজ্য | Indo-Roman Trade

 রোম-ভারত বাণিজ্য

রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনের অভাব মানেই আর্থিক অবনতি যে নয় তার প্রমান উপমহাদেশে খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রিঃ  তৃতীয় শতক পর্যন্ত সময়কাল। মৌর্য সাম্রাজ্যের মত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পতনের পর উপমহাদেশে আর কোনো একক বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গড়ে ওঠে নি। এর ফলে আলোচ্য পর্বে অর্থনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়, কৃষি, কারিগরি উৎপাদন এবং বাণিজ্যে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগের প্রসার ঘটে। সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি ঘটে জলপথে দুরপাল্লার বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে। 

ভারত কিভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করল তার প্রেক্ষিত বোঝার জন্য সমসাময়িক পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি অনুধাবন করা দরকার। খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক নাগাদ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হয়। এই বাণিজ্যের একদিকে ছিল পশ্চিমে রোম সাম্রাজ্য ও পূর্বে চিনের হান সাম্রাজ্য। রোম সাম্রাজ্যে রাজা ও অভিজাতদের দরবারে চিনা বিলাস দ্রব্যের ব্যপক চাহিদা ছিল। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চিনের রেশম। এছাড়া ছিল চা আর চিনামাটির পাত্র। এই রেশম দীর্ঘ স্থলপথ পাড়ি দিয়ে মধ্য এশিয়ার টাকলামাকান মরুভূমির মধ্য দিয়ে, বহু দুর্গম পথ অতিক্রম করে পামির মালভূমি ও ইরান হয়ে পশ্চিম এশিয়া পৌঁছাত; সেখান থেকে রোমে ও সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শাসক ও বিত্তবান গোষ্ঠীর হাতে তা পৌঁছাত।  রেশমের গুরুত্ব হেতু এই বাণিজ্য পথ রেশম পথ নামে পরিচিত এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া ছিল অত্যন্ত কষ্টকর, বিপদসংকুল ও সমস্যা জর্জরিত। দ্বিতীয়ত, এই পথের একটি অংশ ইরানের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। ইরানের পরাক্রান্ত আরসাকীয় শাসকগন এই বাণিজ্যপথ ব্যবহারের জন্য বণিকদের কাছ থেকে চাড়া হারে শুল্ক আদায় করতেন। ফলে অংশত ঝুঁকি অংশত অতিরিক্ত শুল্কের জন্য রেশম ও রেশম জাত পণ্যের দাম বেড়ে যেত। ফলে রেশম ব্যাবসা সংকুচিত হয় এবং বণিকদের লাভ কমে যেতে থাকে। 

এই পরিস্থিতিতে বিশাল কুষান সাম্রাজ্যের উদ্ভব ও প্রতিষ্ঠা একটি অন্তর্বর্তী এলাকাকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এল। ব্যাকট্রিয়ার উপর কুষানদের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, আমুদরিয়ার উত্তরের ভুখন্ডে অধিকার বিস্তার, মধ্য এশিয়ার কিছু অংশের উপর আধিপত্য, উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা কুষান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া-- এই রাজনৈতিক পরিবর্তন রেশম পথেরে একটি শাখাকে ভারতের সাথে সংযুক্ত করল। যে পথটি কাশ্মীরের উত্তরাংশকে বর্তমান চিনের অন্তর্ভুক্ত মধ্য এশীয় ভুভাগের সঙ্গে যুক্ত করল, সেই পথটি প্রাচীন চিনা তথ্যসূত্রে জিবিন পথ বলে বর্ণিত। এই পথ অত্যন্ত বিপদসংকুল হলেও এর দৈর্ঘ্য ছিল খুবই কম। এই কারনেই সম্ভবত বণিকরা এই পথ বেছে নিয়েছিল। 

খ্রি; পূঃ প্রথম শতকের শেষ ভাগে আরও একটি ঘটনা রেশম বাণিজ্যকে সহজতর করল। দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব  মৌসুমী বায়ু সম্পর্কে জ্ঞান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেল। রোম সাম্রাজ্যের অধিকার মিশর পর্যন্ত প্রসারিত হলে লোহিত সাগরীয় বন্দর থেকে মৌসুমি বায়ুর গতিকে ব্যবহার করে সহজেই ভারতের উপকূলে পৌঁছানো যেত। লায়নেল ক্যাসান দেখিয়েছেন লোহিত সাগরীয় বন্দর বেরেনিস ও মিওস হরমোস থেকে আগস্ট মাসের শেষ দিকে পাড়ি দিলে দঃ পঃ মৌসুমি বায়ুর সাহায্যে আরব সাগর পেরিয়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছাতে তিন সপ্তাহ লাগত। সুতরাং চিনের রেশম ও রেশমজাত দ্রব্য ব্যাকট্রিয়া ও কাবুল হয়ে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছাত সিন্ধু বদ্বীপ এলাকায় অথবা তক্ষশিলা থেকে মথুরা ও উজ্জয়িনী হয়ে তা আসত গুজরাট উপকূলে। সেখান থেকে সমুদ্রপথে তা পৌঁছাত লোহিত সাগরীয় এলাকায় এবং শেষ পর্যন্ত রোমে। 

রোম-ভারত বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করত ভারতে পশ্চিম উপকুলের একাধিক বন্দর। পেরিপ্লাস ও টলেমির রচনা থেকে এই বন্দর গুলির বিবরন পাওয়া যায়। সিন্ধুর ব-দ্বীপ এলাকায় বারবারিকম, সৌরাষ্ট্র এবং  নর্মদার মোহনায় ভৃগুকচ্ছ বন্দর এ প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পেরিপ্লাসের বর্ণনানুসারে ভৃগুকচ্ছ বন্দরের নাব্যতা কম ছিল বলে জাহাজ নিয়ে আসার সমস্যা ছিল। তাই স্থানীয় শাসক শক ক্ষত্রপ নহপান বিদেশী জাহাজের যাতায়াত সহজ করার জন্য স্থানী মাঝি মল্লার নিয়োগ করতেন। ভৃগুকচ্ছের দক্ষিনে কোঙ্কন উপকূলের উত্তরাংশে তিনটি বন্দরের নাম পাওয়া যায়। এগুলি হল সোপারা, কল্যান ও চৌল। পেরিপ্লাসের বর্ণনানুসারে এই তিনটি বন্দর সাতবাহন রাজ্যের আয়ত্ত্বাধীন ছিল কিন্তু শক-সাতবাহন দ্বন্দ্বের ফলে কল্যান বন্দরের বাণিজ্যিক ক্রিয়াকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দক্ষিণ কোঙ্কনের কয়েকটি বন্দরের উল্লেখ রয়েছে, যেমন-বানকোট, দাভোল প্রভৃতি। তবে এগুলি তুলনামুলক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মালাবার উপকূলের একাধিক সমৃদ্ধ বন্দরের কথা জানা যায়। এগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বন্দরটি হল মুজিরিস। মুজিরিস ছিল সরাসরি ভৃগুকচ্ছের প্রতিদ্বন্দ্বী। সঙ্গম সাহিত্যে এই বন্দর মুচিরিপত্তনম নামে পরিচিত। সঙ্গম সাহিত্যের বর্ণনানুশারে এই বন্দর গোলমরিচ রপ্তানির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিল।

রোম-ভারত বাণিজ্যে পূর্ব উপকূলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে। করমন্ডল উপকূলের বেশ কয়েকটি বন্দরের কথা টলেমীর রচনায় পাওয়া যায়। করমন্ডলের দক্ষিণ দিকে তিনটি সমৃদ্ধ বন্দর ছিল কামারা, পেডুকা (আরিকামেডু) ও সোপাটমা। পেডুকার কাছাকাছি আরও একটি উল্লেখযোগ্য বন্দর ছিল কাবেরীপত্তনম। করমন্ডলের উত্তরাংশে মসুলিপত্তন, ঘন্টকশাল ও আলোসুগনে বন্দরের কথাও উল্লিখিত হয়েছে। গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের তাম্রলিপ্ত বন্দরের কথাও টলেমি উল্লেখ করেছেন; কিন্তু এই বন্দর রোম-ভারত বাণিজ্যে সরাসরি অংশগ্রহণ করত না। টলেমীর রচনায় 'এম্পোরিয়ন' (রোমান বণিকদের পাকাপাকি নিবেশ) বলে অভিহিত বন্দরগুলিই এই বাণিজ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এগুলির অবস্থান বিচার করলে বলা যায় মালাবার ও করমন্ডল উপকূল ছিল রোম-ভারত বাণিজ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।

প্লিনির রচনা, পেরিপ্লাস ও টলেমীর রচনা থেকে রোম-ভারত বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানির একটা ধারণা করা যায়। খাদ্য শস্যের মধ্যে চাল, মশলার মধ্যে গোলমরিচ ও দারুচিনি, শিল্পসামগ্রীর মধ্যে মসলিন এবং চন্দন, সেগুন ও মেহগিনি কাঠের রোমের বাজারে ব্যপক চাহিদা ছিল। এগুলি ছিল রোমান অভিজাতদের বিলাসিতার উপকরণ। এছাড়া পুঃরপ্তানি পন্যের মধ্যে প্রধান ছিল চিনের রেশম ও রেশমজাত দ্রব্য। এছাড়াও বহু মুল্যবান পাথর যেমন করনেলিয়ান পাথর রপ্তানি হত। এদিকে আমদানি পন্যের মধ্যে ছিল পারস্যের খেজুর, বিদেশি সুরা (ইতালীয়, লাওডিসীয়, আরবীয়), ব্যাবিলন ও আলেকজান্দ্রিয়ার সূচীশিল্পশোভিত কাপড়, কাচের পাত্র, কয়েক প্রকার ধাতু যেমন- তামা, সীসা ও টিন প্রভৃতি। 

রোম সাম্রাজ্যের সাথে বাণিজ্যে ভারত আমদানির তুলনায় রপ্তানি বেশি করত। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারত যে লাভবান ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম শতকের শেষ দিকে প্লিনি খেদের সাথে মন্তব্য করেছিলেন, ধনী রোমানদের বিলাসদ্রব্যের আকাঙ্খা মেটাতেই রোমের রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এই মন্তবে অতিশয়োক্তি আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বক্তব্যের নৈতিক সারবত্তা ছিল। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যায় যে ভারত থেকে অতি উচ্চমানের ও দুর্মূল্য সামগ্রী রোমে পৌঁছাত। 

Indo-Roman Trade

Political instability and a lack of administrative control did not necessarily lead to economic decline, as evidenced by the period between the 2nd century BCE and the 3rd century CE in the Indian subcontinent. After the fall of the powerful Maurya Empire, no single large imperial power emerged in the region. Consequently, during this period, state control over the economy loosened, allowing private initiatives to flourish in agriculture, artisanal production, and trade. The greatest progress was seen in long-distance maritime trade activities.


To understand how India established itself in international trade, it is essential to consider the contemporary situations in Western and Central Asia. By the 2nd century BCE, trade between Asia and Europe had commenced. This trade linked the Roman Empire in the west and the Han Empire in China in the east. There was significant demand in Roman imperial courts and among the elite for luxury goods from China, with silk being the most coveted item. Other desired goods included tea and porcelain. 


This silk traversed a long overland route through the Taklamakan Desert of Central Asia, passing the rugged terrains of the Pamir Plateau and Iran, and eventually reaching Western Asia. From there, it was distributed across the Roman Empire. The importance of silk gave this trade route its name: the "Silk Road." However, traversing this route was arduous, perilous, and challenging. Additionally, a segment of the route passed through Iran, where the powerful Arsacid rulers imposed hefty tolls on merchants, further raising the cost of silk and silk-based goods, which reduced profits for traders.


In this context, the rise and establishment of the vast Kushan Empire brought a previously marginal region into prominence. The Kushans' absolute control over Bactria, expansion into territories north of the Amu Darya, dominance in parts of Central Asia, and control over vast areas of northern India connected a branch of the Silk Road to India. A route linking northern Kashmir to present-day Chinese-controlled Central Asia, known as the "Jibin route" in ancient Chinese sources, came into use. Despite its dangers, this route was shorter, making it attractive to merchants.


Another development that facilitated the silk trade was the growing knowledge of the southwest and northeast monsoon winds in the late 1st century BCE. When the Roman Empire extended its control to Egypt, merchants could use monsoon winds to travel easily from Red Sea ports to the Indian coast. Lionel Casson showed that ships departing from Red Sea ports like Berenike or Myos Hormos in late August could, with the help of southwest monsoon winds, cross the Arabian Sea to India's western coast within three weeks. Thus, Chinese silk and silk products reached India's northwest frontier through Bactria and Kabul and moved to the Sindh delta or from Taxila through Mathura and Ujjain to the Gujarat coast. From there, they traveled by sea to Red Sea ports and eventually reached Rome.


India's western coastline played a significant role in Rome-India trade, with several prominent ports. Texts like the Periplus of the Erythraean Sea and Ptolemy's writings provide detailed descriptions of these ports. Notable among them were Barbaricum in the Sindh delta, Bharukaccha (Broach) at the mouth of the Narmada River, and various ports on the Konkan coast like Sopara, Kalyan, and Chaul. Bharukaccha, though less navigable, was significant. Local rulers like the Saka Kshatrapa Nahapana employed local sailors to facilitate foreign ships' movement. Further south, ports like Muziris on the Malabar coast competed with Bharukaccha. Muziris, known as Muchiripattanam in Sangam literature, was famous for its pepper exports.


The eastern coast also contributed to this trade. Ptolemy mentions several ports along the Coromandel coast, such as Kamar, Pudukka (Arikamedu), and Sopatma. Other notable ports included Kaveripattanam near Pudukka and northern Coromandel ports like Masulipatnam, Ghantasala, and Alosygne. Tamralipta in the Ganges delta, though significant, was not directly involved in the Rome-India trade. The ports labeled as 'Emporion' (permanent Roman merchant settlements) in Ptolemy's writings, mainly on the Malabar and Coromandel coasts, were central to this trade.


Based on accounts from Pliny, the Periplus, and Ptolemy, Indian exports included rice, spices like pepper and cinnamon, textiles like muslin, and valuable timber such as sandalwood, teak, and mahogany, all of which were in high demand among Roman elites. Additionally, silk and silk products from China were re-exported from India, along with precious stones like carnelian. Imported goods included Persian dates, foreign wines (Italian, Laodicean, and Arabian), finely crafted textiles from Babylon and Alexandria, glassware, and metals like copper, lead, and tin.


India exported more than it imported from Rome, making it a net beneficiary of this trade. By the late 1st century CE, Pliny lamented that the Roman treasury was being drained to satisfy the luxury demands of wealthy Romans for Indian goods. While this comment may be exaggerated, it underscores India's significant role in supplying high-quality and expensive goods to Rome.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...