সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সামন্ততন্ত্রের প্রকৃতি

সামন্ততন্ত্রের প্রকৃতি নবম ও দশম শতকে ইউরোপে কেন্দ্রীয় শাসন ভেঙে পড়লে ভূমিনির্ভর অভিজাত ও সরকারি কর্মচারীরা রাজতন্ত্রের বদলে এক ধরনের বিকল্প রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলে যার নাম সামন্ত প্রথা। এই ব্যবস্থা ইউরোপে প্রায় ৫০০ বছরের স্থায়ী ছিল। সামন্ত প্রথা হলো এমনই এক বদ্ধ উৎপাদন ব্যবস্থা যার প্রধান ভিত্তি হল কৃষিজ উৎপাদন। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর গথ, ভ্যান্ডল, ফ্র্যাঙ্ক প্রভৃতি বর্বর জাতিগুলি পশ্চিম ইউরোপের অঞ্চলগুলি অধিকার করে বসে এবং রাজার মতো তারা জমির অধিকার দাবি করে। এরা এদের জাত ভাইদেরও জমি বন্টন করে। এই জমি বন্টন প্রথম দিকে ব্যক্তিগত হলেও পরে বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে। এইভাবে যারা জমি লাভ করল তারা রাজাকে বা তাদের প্রধানকে সামরিক শক্তি এবং কর দিতে বাধ্য থাকত। এই জমি খণ্ডগুলিকে ফিউড, এবং ফিউডের অধিকারীকে ফিউডাল বা সামন্ত বলা হত। তাই এই উৎপাদন ব্যবস্থা ফিউডালিজম বা সামন্ত প্রথা নামে পরিচিত। সুতরাং সামন্তপ্রথায় তিনটি সামাজিক শ্রেণী লক্ষ্য করা যায়: পিরামিডের শীর্ষে রাজা, দ্বিতীয় স্তরে বহু সংখ্যক সামন্ত প্রভু এবং তৃতীয় স্তরে কৃষক, সার্ফ, ব্যারন আর ন...

রোম-ভারত বাণিজ্য | Indo-Roman Trade

 রোম-ভারত বাণিজ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনের অভাব মানেই আর্থিক অবনতি যে নয় তার প্রমান উপমহাদেশে খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রিঃ  তৃতীয় শতক পর্যন্ত সময়কাল। মৌর্য সাম্রাজ্যের মত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পতনের পর উপমহাদেশে আর কোনো একক বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গড়ে ওঠে নি। এর ফলে আলোচ্য পর্বে অর্থনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়, কৃষি, কারিগরি উৎপাদন এবং বাণিজ্যে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগের প্রসার ঘটে। সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি ঘটে জলপথে দুরপাল্লার বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে।  ভারত কিভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করল তার প্রেক্ষিত বোঝার জন্য সমসাময়িক পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি অনুধাবন করা দরকার। খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক নাগাদ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হয়। এই বাণিজ্যের একদিকে ছিল পশ্চিমে রোম সাম্রাজ্য ও পূর্বে চিনের হান সাম্রাজ্য। রোম সাম্রাজ্যে রাজা ও অভিজাতদের দরবারে চিনা বিলাস দ্রব্যের ব্যপক চাহিদা ছিল। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চিনের রেশম। এছাড়া ছিল চা আর চিনামাটির পাত্র। এই রেশম দীর্ঘ স্থলপথ পাড়ি দিয়ে মধ্য এশিয়ার টাকলামাকান মরুভূমির মধ...

চিনে মুক্ত দ্বার নীতি | Hay Doctrine

 চিনে মুক্ত দ্বার নীতি  পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি মাঞ্চু রাজতন্ত্র শাসিত চীনে যে সমস্ত শোষণ মূলক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছিল তার  চূড়ান্ত  পরিণতি হল চীনের মুক্তদ্বার নীতি (১৮৯৯) । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন বিদেশ সচিব জন  হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে এই নীতি ঘোষণা করেছিলেন। এই নীতি তাই "হে ডকট্রিন" নামেও পরিচিত। এই নীতির মূল বক্তব্য ছিল:  ১. পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রভাবাধীন অঞ্চলের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় তারা হস্তক্ষেপ করবে না। ২. মুক্ত বন্দর গুলিতে চীনের শুল্ক বিভাগ চুক্তি অনুযায়ী কর আদায় করবে এবং এই বিষয়ে বিদেশীরা হস্তক্ষেপ করবে না। ৩) প্রভাবাধীন অঞ্চলে কোনো বিদেশি শক্তি অন্য দেশের বাণিজ্যিক পণ্যের উপর বৈষম্য মূলক শুল্ক চাপাবে না। ৪) হে একটি দ্বিতীয় সড়কপত্র প্রকাশ করে বলেন যে, পশ্চিমী শক্তিগুলির চীনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করে চলবে। মুক্তদ্বার নীতির পশ্চাতে একটি সুনির্দিষ্ট পটভূমি ছিল। মাঞ্চু রাজতন্ত্র তাইপিং বিদ্রোহ দমনের পর যখন চীনের অভ্যন্তরে নিজেকে শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিল তখন ঔপনিবেশিক শক...

তুং চি পুনস্থাপন | Tung Chi Restoration

 তুং চি পুনস্থাপন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মাঞ্চু রাজতন্ত্রের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পশ্চিমী ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি চীনের অধিকাংশ অঞ্চল গ্রাস করেছিল ফেলেছিল। ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্যরা মাঞ্চু রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ অগ্নিদগ্ধ করেছিল। তার ওপর বিভিন্ন রাজতন্ত্র বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ (যেমন- তাইপিং, মিয়াও, নিয়েন, তুংগান ও মুসলিম বিদ্রোহ) মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এই প্রেক্ষাপটে চীনা সম্রাট তুং চি-এর রাজত্বকালে (১৮৬২-১৮৭৪) বিলুপ্তপ্রায় রাজশক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটা আন্তরিক প্রয়াস চালানো হয়েছিল।  এই প্রয়াস তুং চি পুনঃ প্রতিষ্ঠা নামে পরিচিত। সম্রাট তুং চি'র নামে এই প্রক্রিয়ার নামকরণ হলেও এই ব্যাপারে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না; কারণ তখন তার বয়স ছিল অত্যন্ত কম। রাজ মাতা জু-শি তার অভিভাবক হিসাবে রাজকার্য পরিচালনা করতেন।রাজশক্তির পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল পূর্ববর্তী সম্রাট সিয়াং  ফেং- এর  ছোট ভাই রাজকুমার কুং এবং তার অনুগামী একদল রাজপুরুষের। তুং চি পুনঃ প্রতিষ্ঠার নেত্রীবর্গ অধিকাংশই ছিলেন কনফুসীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী। তারা একটি স্থিতিশীল কৃষিভিত...