সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নব্য প্রস্তর যুগীয় বিপ্লব | Neolithic Revolution

 নব্য প্রস্তর যুগীয় বিপ্লব

আজ থেকে প্রায় ১০,৫০০ বছর আগে পশ্চিম এশিয়ায় প্রথম নব্য প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া যায়। নিয়মিত কৃষিকাজ এবং পশুপালন তথা খাদ্য উৎপাদক অর্থনীতি দিয়ে আমরা নব্য প্রস্তর যুগকে চিহ্নিত করা যায়। তবে পৃথিবীর সর্বত্র একই সাথে খাদ্য উৎপাদন তথা নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়েছিল এমন নয়। পশ্চিম এশিয়া থেকে শুরু হয়ে কৃষিকাজ ক্রমশ দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে (আজ থেকে ৬০০০-৭০০০ বছর আগে)।  কৃষির আবির্ভাব এবং স্থায়ী বসতি মানব সমাজে যে ব্যপক পরিবর্তন এনেছিল তাকেই গর্ডন চাইল্ড 'বিপ্লব' বলে অভিহিত করেছেন। 

নব্য প্রস্তর যুগ তথা খাদ্য উৎপাদনের সবথেকে প্রাচীনতম নজির পাওয়া গেছে প্যালেস্টাইনের জেরিকো'তে (১০,৫০০ বছর পুরানো)। উত্তর ইরাকের জাওয়াই জাওয়াই শেমি শনিদার (১১০০০ বছর পুরানো), যেখানে পশুপালক আধা-স্থায়ি জীবনের প্রমান পাওয়া গেছে। এছাড়া রয়েছে উত্তর ইরাকের জারমো (৭০০০ বছর পুরানো) এবং আনাতোলিয়ার ক্যাটাল হুউইক (৮০০০ বছর পুরানো), যেখানে নিয়মিত কৃষির প্রমান পাওয়া গেছে। এই প্রত্নক্ষেত্রগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে আমরা নব্যপ্রস্তর যুগের কৃষি নির্ভর খাদ্য উৎপাদক জীবনের একটা চিত্র তুলে ধরতে পারি।

 নব্য প্রস্তর যুগের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট হল কৃষিকাজ। প্রত্নক্ষেত্র গুলি থেকে গম ও যব চাষের প্রমান পাওয়া গেছে। কৃষিকাজের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয়ুধ নির্মাণেও পরিবর্তন এসেছিল। বিভিন্ন কৃষি আয়ুধ , বিশেষ করে কাস্তের ব্যবহারের নজির ব্যপক হারে পাওয়া গেছে। তারা শস্য পেসাই করার জন্য হামন দিস্তা জাতীয় আয়ুধ ব্যবহার করত। ফসল ফলানো এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। উতপন্ন ফসলের সংরক্ষনও দরকার। তাই তার বাড়ি বানাত। প্রথম দিকে গোলাকৃতি বাড়ি বানাতো। জেরিকোতে এই ধরনের গোলাকৃতি বাড়ির অবশেষ পাওয়া গেছে। পরবর্তীকালে তারা আয়তাকার বাড়ি বানাতে শুরু করে। আনাতোলিয়ার ক্যাটাল হুউইক-এ রোদে পোড়া ইটের বাড়ি তৈরির নজির পাওয়া গেছে। প্রতিটি বাড়িতে একটি করে গোলাকৃতি পিট এর অবশেষ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত ফসল সংরক্ষনের জন্য ব্যবহৃত হত।

নব্য প্রস্তযুগীয় সমাজের অন্যতম অঙ্গ ছিল পশুপালন। পশুকে পোষ মানানোর প্রক্রিয়া প্রাচীন প্রস্তর যুগেই শুরু হয়েছিল। প্রথম পালিত পশু ছিল কুকুর। সেই সময় শিকারের সুবিধার জন্য পশুপালন করা হয়েছিল। তবে নব্য প্রস্তর যুগের পশুপালনের একটি অন্য মাত্রা ছিল। পশুর বন্য ভাব দূর করে তার উৎপাদিকা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়াই ছিল এই পর্বের পশুপালনের লক্ষ। এই পর্বে পশুপালনে পশু ও মানুষের মধ্যে আবেগের উপস্থিতি ছিল। পশ্চিম এশিয়ার প্রত্নক্ষেত্র গুলিতে ভেড়া ও ছাগল পালনের প্রমান পাওয়া গেছে। 

কৃষি ও পশুপালনের সূচনা হলেও শিকার নব্য প্রস্তর যুগীয় অর্থনীতিতে একেবারে ব্রাত্য ছিল না। কৃষি ও পশুপালন শিকারের ভালো বিকল্প হলেও তারা তাদের পুরানো রীতি তখনও বজায় রেখেছিল। মোট কথা একটা মিশ্র অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল। এই মিশ্র অর্থনীতিতে মেয়েরা পশুপালন ও কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখত। 

অর্থনৈতিক পরিবর্তনের হাত ধরে সমাজে ব্যপক পরিবর্তন আসে। নব্য প্রস্তর যুগীয় সমাজ অনেক বেশি জটিওলতর আকার ধারন করে। শিকারি যাযাবর জীবনে মানুষ ছিল দলবদ্ধ। দলগুলি অবশ্য বিচ্ছিন্ন ছিল না। শিকারের সুবিধা কিংবা বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মের (Rituals) স্বার্থে এদের পারস্পরিক যোগাযোগ ছিল। যেহেতু যাযাবর জীবনে কোনো বিশেষ এলাকার উপর বিশেষ গুরুত্ব থাকে না তাই দলগত লড়াই বাধলে তা সহজেই সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু খাদ্য উতপাদক জিবনে স্থায়ী বসতির জন্য এই দলগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক জটিল হয়ে উঠল। এই সমস্যা থেকেই সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শাসন এবং সামাজিক যোগাযগের ভিত্তি তৈরি হল।

পশ্চিম এশিয়ার একাধিক প্রত্নক্ষেত্রগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে বলা যায় সেখানে সামাজিক বিনিময় চলত। সামুদ্রিক ঝিনুক এবং অবসিডিয়ান পাথর (অয়ুধ নির্মাণের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত) দেওয়া নেওয়া চলত। জেরিকো-তে যে প্রতিরক্ষা প্রাচীর পাওয়া গেছে তা অনেক মানুষের ঐক্যবদ্ধ শ্রম ছাড়া সম্ভব নয়। সামাজিক শাসন ছাড়া এধরনের উদ্যোগ সম্ভব নয়। জেরিকো-তে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ওরা পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিকেও চাষের আওতায় এনেছিল। ক্যাথলিন ক্যানিয়ন মনে করেন, খাল কাটা এবং জলবন্টন করার কোনো সামাজিক প্রক্রিয়া ছিল বলেই এই উদ্যোগ সম্ভবপর হয়েছিল। 

উৎপাদনের উপকরণ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর যেহেতু যৌথ কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছিল তাই সমাজে রক্ত সম্পর্কের উপর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেল। 'ব্যান্ড' এর পরিবর্তে সামাজিক একক হিসাবে গুরুত্ব পেল 'ক্ল্যান'। তাই বিবাহ ও সম্পর্কের উপর গুরুত্ব আরপিত হল। বিভিন্ন 'ক্ল্যান' গুলি অন্তর্বিবাহ নিসিদ্ধ করল এবং বহির্বিবাহ বাধ্যতামুলক করল। এর ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিনিময় সম্পর্ক মজবুত হতে থাকল। 'ক্ল্যান' গুলির পরিচয় নির্ধারিত হত মায়ের নামে। তাই কৃষি উৎপাদনে মায়েরা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করত।

মাতৃতান্ত্রিক গোষ্ঠী এবং কৃষি নির্ভরতা সমাজে মাতৃদেবীর আরাধনার সূচনা করল। প্রত্নক্ষেত্রগুলি থেকে বহু নারী মূর্তি আবিস্কৃত হয়েছে। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির কামনায় এই ধরনের আরাধনার আয়োজন হত। কেবল মাতৃ মূর্তি নয়, জেরিকোতে মানব কঙ্কাল পূজা করার প্রমান পাওয়া গেছে। এগুলি সম্ভবত পূর্ব পুরুষের পুজা করার জন্য আয়োজিত হত। ক্যাটাল হুউইক-এ ষাঁড় পুজার প্রমান পাওয়া গেছে। ষাঁড়কেও সম্ভবত উর্বরতার প্রতীক হিসাবে ধরা হত। 

উপরি উক্ত পরিবর্তনের দিকে নজর রেখে গর্ডন চাইল্ড 'নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব' কথাটি প্রয়োগ করেছিলেন। অনেকেই তাঁর মন্তব্যের বিরধিতা করেছেন। যেহেতু নব্য প্রস্তর যুগীয় পরিবর্তন গুলি কোনো আকস্মিক পরিবর্তন নয়, এটি ধীর পরিবর্তন প্রক্রিয়া তাই তাঁদের এই ধারণা হয়েছিল। কিন্তু গর্ডন চাইল্ড বিপ্লব বলতে কোনো হঠাৎ পরিবর্তনের কথা বলেননি। তাঁর মতে কৃষিকাজের আবির্ভাব সমাজে কেবল কতকগুলি পরিমানগত পরিবর্তন এনেছিল তা নয়, সমাজে তা ব্যপক গুনগত পরিবর্তন এনেছিল, সমাজে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল যা জটিল সমাজ গড়ে তুলেছিল। কৃষির আবির্ভাব উৎপাদনের উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করেছিল, যা পরবর্তীকালে সভ্যতার সূচনা করেছিল। আর এদিক থেকে বিচার করে গর্ডন চাইল্ড-এর সাথে সহমত হওয়াই যায় যে নব্যপ্রস্তর যুগ বিপ্লব ঘটিয়েছিল। 

 Neolithic Revolution

Around 10,500 years ago, the first evidence of Neolithic culture was found in Western Asia. The Neolithic era is identified by the shift to a food-producing economy, marked by regular agriculture and animal husbandry. However, the transition to food production, or the start of the Neolithic era, did not occur simultaneously across the world. Agriculture began in Western Asia and gradually spread to various parts of Southern Europe and North Africa about 6,000 to 7,000 years ago. The emergence of agriculture and permanent settlements brought significant changes to human society, which Gordon Childe referred to as a "revolution."

The earliest evidence of the Neolithic era and food production has been found in Jericho, Palestine (dating back 10,500 years). Evidence of semi-permanent pastoral life has been found in Jawi Chemi Shanidar, in Northern Iraq (11,000 years old). Additionally, there is evidence of regular agriculture in Jarmo, Northern Iraq (7,000 years old), and Çatalhöyük in Anatolia (8,000 years old). Based on the data and evidence from these archaeological sites, we can understand a picture of the agricultural and food-producing life of the Neolithic era.

The most significant characteristic of the Neolithic era is agriculture. Archaeological sites have revealed evidence of wheat and barley cultivation. The development of agriculture also brought changes in tool-making. Numerous agricultural tools, especially sickles, have been found in large numbers. They used grinding tools to process grains. Agriculture was a lengthy process, and storing the harvested crops was necessary. Therefore, they built houses. Initially, they built round houses, remnants of which have been found in Jericho. Later, they began constructing rectangular houses. Evidence of sun-dried brick houses has been found in Çatalhöyük, Anatolia. Each house contained a circular pit, which was likely used for storing crops.

Animal husbandry was another integral part of Neolithic society. The domestication of animals began in the Paleolithic era. The first domesticated animal was the dog, which was tamed to assist in hunting. However, animal husbandry in the Neolithic era took on a new dimension. The goal was to harness the productive potential of animals by taming their wild nature for economic benefits. There was an emotional connection between humans and animals during this period. Evidence of sheep and goat herding has been found in Western Asian archaeological sites.

Even though agriculture and animal husbandry had begun, hunting was not entirely abandoned in the Neolithic economy. Although agriculture and animal husbandry provided good alternatives to hunting, the old practices continued. In essence, a mixed economy developed, where women played a crucial role in animal husbandry and agriculture.

Economic changes brought about significant social transformations. Neolithic society became more complex. In the hunter-gatherer lifestyle, people lived in groups. These groups were not isolated, as they maintained contact with each other for hunting or ritual purposes. In nomadic life conflicts between groups were easily resolved because there was no claim for land. However, in a food-producing society with permanent settlements, the relationships between these groups became more complex. From these complexities, social institutions, governance, and social communication emerged.

Based on evidence from multiple Western Asian archaeological sites, it can be said that there was social exchange during this period. Seashells and obsidian (a stone highly suitable for tool-making) were traded. The defensive wall found in Jericho could not have been constructed without the collective labor of many people. Such initiatives were impossible without social governance. Due to population growth in Jericho, they brought neighboring areas under cultivation. Kathleen Kenyon believes that the construction of canals and water distribution was made possible only by social governance.

Since collective authority was established over the means of production and the production process, the importance of kinship increased in society. Instead of "bands," the "clan" became the primary social unit. Therefore, marriage and relationships became more significant. Various clans prohibited endogamy and made exogamy compulsory. As a result, exchange relationships between different groups strengthened. Clan identity was determined by the mother's lineage, and mothers played a decisive role in agricultural production.

The matrilineal structure and agricultural dependence led to the worship of mother goddesses in society. Numerous female figurines have been discovered in archaeological sites. These rituals were organized to increase the fertility of the land. In addition to mother figurines, evidence of human skull worship has been found in Jericho, which likely served as a form of ancestor worship. Evidence of bull worship has been found in Çatalhöyük, where the bull was probably regarded as a symbol of male fertility.

Considering the changes mentioned above, Gordon Childe used the term "Neolithic Revolution." Many have opposed his view, arguing that the changes in the Neolithic era were not sudden but rather a slow process. However, Gordon Childe did not imply a sudden change when he referred to a revolution. According to him, the advent of agriculture brought not only quantitative changes but also significant qualitative changes in society, creating conditions for the emergence of complex societies. The surplus production resulting from agriculture eventually led to the rise of civilization. From this perspective, it is fair to agree with Gordon Childe that the Neolithic era indeed brought about a revolution.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ