সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Heritage Walk

হেরিটেজ ওয়াক

পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করে কোনো স্থানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য কে অনুধাবন করার নাম হেরিটেজ ওয়াক। নগর বা জনপদ গুলিতে এমনকি গ্রামেও সড়ক পথের ধারে ছড়িয়ে থাকে সেই জনপদের ইতিহাস, তার মূর্ত ও বিমূর্ত ঐতিহ্য এবং জীবন্ত পরম্পরা (living traditions)। এগুলি সাধারণ ট্যুরিস্ট-এই চোখে ধরা পড়ে না। এগুলির সঠিক অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন পদব্রজ, যেমনটা প্রাচীনকালে পর্যটকগণ করতেন। আর এজন্যই অনুষ্ঠিত হয় হেরিটেজ ওয়াক।

হেরিটেজ ওয়াকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, পৌরাণিক ঐতিহ্য এবং শহরের জীবন্ত পরম্পরা (living traditions)। তবে এক্ষেত্রে গাইড বা প্রদর্শকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হেরিটেজ ওয়াকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঐতিহ্য গুলি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সেগুলি সংরক্ষণ করার সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। সংশ্লিষ্ট ঐতিহ্য গুলির তাৎপর্য ও গুরুত্ব সমাজের কাছে প্রকাশিত হয়। 

ভারতের  একাধিক ঐতিহ্যবাহী নগরে হেরিটেজ ওয়াক অনুষ্ঠিত হয়। এগুলির অনেকগুলিই বাণিজ্যিক ভাবে আয়োজিত। তবে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলি নিজে থেকে বা কোনো বেসরকারি সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে আয়োজন করে। ২০১৫ সালে ২৭শে সেপ্টেম্বর World Tourism Day উপলক্ষে পুরানো দিল্লিতে Delhi Metro Rail Cooperation এবং Delhi Walks নামক একটি পর্যটন সংস্থা যৌথভাবে একটি হেরিটেজ ওয়াকের আয়োজন করেছিল। HUDA মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটা শুরু হয় এবং চাঁদনী চক মেট্রো স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়। ভ্রমনকারীরা পুরাতন দিল্লির মুঘল স্থাপত্য ও প্যাটেল চকের মেট্রো রেল সংগ্রহশালা দর্শন করেন। দিল্লির পাহাড়গঞ্জে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী ছাপাখানায় বাংলা, হিন্দি, হিব্রু ইত্যাদি হরফ নির্মাণের ও মুদ্রণের ঐতিহ্য হেরিটেজ ওয়াকের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন জনৈক পূজা সাক্সেনা। শুধু দিল্লি নয়, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, মুম্বাই, কোয়েম্বাটুর, বিশাখাপত্তনম-- এই সহরগুলিতেও হেরিটেজ ওয়াক আয়োজিত হয়।

 আমাদের কলকাতা শহরে বেশ অনুকগুলি সংস্থা হেরিটেজ ওয়াক আয়োজন করে।  West Bengal Heritage Commission কলকাতা এবং অন্যান্য শহরে হেরিটেজ ওয়াকের আয়োজন করে। Fort William হেরিটেজ ওয়াকের আয়োজন করে পুরো ফোর্ট উইলিয়ামের ইতিহাস ভ্রমণকারীদের সামনে তুলে ধরে। এছাড়া বেশ কিছু উদ্যোগ আসে ব্যক্তিগতভাবে বা বেসরকারিভাবে। এগুলির মধ্যে সোহম চক্রবর্তী পরিচালিত Magic Hour, Alleyway food, Calcutta Contrast ইত্যাদি হেরিটেজ ওয়াক বেশ জনপ্রিয়। Magic Hour নামক হেরিটেজ ওয়াকে ভোরবেলার নগরের সব রকমের পরিবহণের রূপ তুলে ধরা হয় এবং ভোরের আলো ফোটার সময় পুরাতন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রাস্তা ধরে হাঁটা হয়। এছাড়া Travel Go নামে একটি সংস্থা মাঝরাতে হেরিটেজ ওয়াকের মাধ্যমে কলকাতার তথাকথিত হোয়াইট টাউন এলাকার ঐতিহ্য তুলে ধরেন।

সাধারণ মানুষের সাথে ঐতিহ্যের পরিচয় ঘটানোর ক্ষেত্রে হেরিটেজ ওয়াকের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ঐতিহ্যকে উপলব্ধি করার জন্য দরকার দর্শকের ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রদর্শকের বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও তাঁর নাটকীয় কথোপকথন, যেগুলির অভাবে অনেক সময় হেরিটেজ ওয়াক সার্থক হয়ে উঠতে পারে না।

Heritage Walk

A heritage walk is a way to appreciate the history and heritage of a place by visiting it on foot. The history, tangible and intangible heritage, and living traditions of a region often exist along the road of cities, towns, and even villages. These elements typically go unnoticed by ordinary tourists. A proper understanding of this history and heritage requires a walking tour, much like the way ancient travelers used to explore. This is why heritage walks are organized.

Heritage walks focus primarily on traditional architecture, mythological heritage, and the living traditions of a city. The role of a guide or presenter is crucial in these walks. Along with gaining an understanding of the relevant heritage, heritage walks also raise awareness about the importance of preserving these heritages. They reveal the significance and value of these heritages to society.

Many heritage walks are organized in India's historic cities. While some are commercially arranged, others are organized by government agencies independently or in collaboration with private organizations. For example, on the occasion of World Tourism Day, September 27, 2015, the Delhi Metro Rail Corporation and a tourism company named Delhi Walks jointly organized a heritage walk in Old Delhi. The walk started at HUDA Metro Station and ended at Chandni Chowk Metro Station, where participants visited Mughal architecture and the Metro Rail Museum at Patel Chowk. In Paharganj, Delhi, Puja Saxena showcased the heritage of old and traditional printing presses through a heritage walk, highlighting the tradition of typesetting and printing in Bengali, Hindi, Hebrew, etc. Heritage walks are also held in cities like Hyderabad, Chennai, Mumbai, Coimbatore, and Visakhapatnam.

In our city of Kolkata, several organizations arrange heritage walks. The West Bengal Heritage Commission organizes heritage walks in Kolkata and other cities. The Fort William Heritage Walk highlights the entire history of Fort William to the visitors. Besides these, there are personal or private initiatives like Magic Hour, Alleyway Food, and Calcutta Contrast, organized by Soham Chakraborty, which are quite popular. The Magic Hour heritage walk showcases the various modes of early morning transportation and involves walking through the historic streets of old Kolkata at dawn. Another organization, Travel Go, conducts midnight heritage walks to explore the heritage of Kolkata’s so-called White Town area.

The importance of heritage walks in acquainting the general public with heritage is immense. However, to truly appreciate heritage, the audience needs a historical perspective, and the presenter must possess in-depth knowledge and a dramatic way of storytelling. Without these elements, a heritage walk may not be fully successful.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ