সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লোহা আবিস্কার বিতর্ক | Debate on Iron Invention

লোহা আবিষ্কার বিতর্ক

লোহার আবিষ্কার ঠিক কবে, কোথায়, কাদের হাত ধরে হয়েছিল এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পণ্ডিতদের অনুমান ছিল যে, হিটাইটদের রাজ্য আনাতোলিয়া ছিল লৌহপ্রযুক্তির উদ্ভাবন কেন্দ্র। হিটাইটদের সামরিক সাফল্যের পিছনেও এই লৌহপ্রযুক্তির অবদানকে বৃহৎ আকারে দেখা হতো। এও মনে করা হত যে পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে হিতাইট সাম্রাজ্যের অবসানের পর এই প্রযুক্তি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সাম্প্রতিক গবেষণায় অবশ্য লৌহপ্রযুক্তির আবিষ্কারের উপর হিটাইটদের কৃতিত্বের এই দাবি বাতিল হয়ে গেছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাবদে এবং দ্বিতীয় সহস্রাবদের প্রথমার্ধে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ৫০০ রকম লৌহ নির্মিত শিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা হিটটাইটদের উত্থানের বহু আগেকার। এর থেকেই অনুমান করা যায় যে  হিটটাইট রা লোহার আবিস্কারক নয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে ওই সময়কার লোহার জিনিসগুলি উল্কাপিণ্ড থেকে নিষ্কাশিত লোহা দিয়ে তৈরি হত। সুতরাং দ্বিতীয় সহস্রাবদের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বিশুদ্ধ লোহা তৈরীর প্রযুক্তিগত জ্ঞান সীমিত ছিল। লোহার ব্যবহারও তখন সীমিত, কারণ তার জোগান ছিল সীমিত। Jean Pierre Mohen দেখিয়েছেন হিটটাইট সমাজেও লোহার ব্যবহার সীমিত ছিল। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, উৎসব বা রাজকীয় উপহার প্রদানেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। 

Pierre Villard দেখিয়েছেন পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মানুষের লৌহপ্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান ছিল প্রাথমিক স্তরে তবে এরপর থেকে মানুষ ক্রমশ লোহার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে শেখে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ব্রঞ্জের পাশাপাশি সীমিত পরিমাণে লৌহ যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ শুরু হয়। অনেকে লৌহ প্রযুক্তির বিকাশে ব্রোঞ্জ কারিগরদের উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা বলেছেন। তবে এই মতামত সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ ব্রোঞ্জ প্রযুক্তির তুলনায় লৌহপ্রযুক্তি অনেকটাই জটিল ও কষ্টসাধ্য। খনি থেকে লোহা তুলে তাকে নিষ্কাশিত করে খাঁটি বিশুদ্ধ লোহায় পরিণত করার জন্য অত্যধিক ব্যয় এবং আগুন ও তাপের ব্যবহারিক জ্ঞান প্রয়োজন ছিল, যার সেই সময়ে ব্রোঞ্জ কারিগরদের না থাকাটাই স্বাভাবিক।

Debate on Iron Invention

There is an ongoing debate among historians about when, where, and through whom the discovery of iron took place. For a long time, scholars speculated that Anatolia, the land of the Hittites, was the center of iron technology invention. The military success of the Hittites was also largely attributed to this iron technology. It was also believed that after the fall of the Hittite Empire, in the context of various groups rising in Western Asia and the Eastern Mediterranean, this technology spread to different parts of the world.

However, recent research has rejected the claim that the Hittites were responsible for the invention of iron technology. Evidence of 500 types of iron-made artifacts has been found in various parts of Western Asia from the third millennium BC and the first half of the second millennium BC, long before the rise of the Hittites. This suggests that the Hittites were not the discoverers of iron. Scientific examinations have revealed that the iron objects from that time were made from iron extracted from meteorites. Therefore, the technological knowledge to produce pure iron was limited until the first half of the second millennium. The use of iron was also limited because its supply was scarce. Jean Pierre Mohen has shown that even in Hittite society, the use of iron was restricted to religious ceremonies, festivals, or royal gifts.

Pierre Villard has demonstrated that until the mid-15th century, human knowledge of iron technology was at a basic level. However, after this period, people gradually began to realize the importance of iron and started producing iron tools and weapons in limited quantities alongside bronze for practical use. Some have mentioned the significant contribution of bronze artisans to the development of iron technology. However, this opinion is not beyond doubt, as iron technology was far more complex and labor-intensive compared to bronze technology. The process of extracting iron from mines and refining it into pure iron required extensive resources and practical knowledge of fire and heat, which bronze artisans likely did not possess at that time.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ