সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলাঃ বাংলার একটি ঐতিহ্য | Poush Mela of Shantiniketan: A Cultural Heritage of Bengal

শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলাঃ বাংলার একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন। সামাজিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে যখন কোনো স্থানে মিলনোৎসব আয়োজিত হয় তখন তাকে মেলা বলে। মেলায় বহু মানুষের সমাগম হয় এবং পারস্পরিক ভাববিনিময় হয়। মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী। কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ কবিগুরু যথার্থই বলেছেন। উপলক্ষ যাই হোক না কেন, বাঙালির সকল উৎসবের মধ্যে একটা সার্বজনীন রূপ আছে। এতে ধর্ম, সম্প্রদায়, জাত-পাত বা ধনী-গরিবের সামাজিক বিভক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বরং সকল শ্রেণির মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়। আর এ কারণেই কালের বিবর্তনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতার ধরন পাল্টালেও আবহমান বাংলার সামাজিক উৎসব, পার্বণ বা গণমানুষের মেলবন্ধনের ঐতিহ্য-কৃষ্টিগুলো আজও হারিয়ে যায়নি। মেলা মানেই মহামিলন। মানুষের উচ্ছ্বাস-উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মেলার মধ্য দিয়ে। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে মেলা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দেয়। গ্রাম-বাংলার মেলা তাই হাজার বছরের ঐতিহ্যের এক মহা সম্মিলন।

কবে, কোথায়, কখন প্রথম মেলার প্রচলন হয়েছিল তা জানা না গেলেও এটি যে আবহমান বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ধারণা করা হয়, গ্রামীণ হাট থেকেই আসে মেলার ধারণা। অতীতে রাজা-জমিদারেরা মেলার আয়োজন বা পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ধর্মীয় কোনো উপলক্ষে মেলা বসত। তাই বাংলার বারো মাসের তেরো পার্বণের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মেলা। বৈশাখ থেকে চৈত্র প্রতি মাসেই মেলা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এক সময় পীর-ফকির বা সাধু-সন্ন্যাসীদের আস্তানাগুলোও মেলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ধর্মীয় চেতনার বাইরে অন্যান্য সামাজিক বা লৌকিক আচারগুলোও যুক্ত হতে থাকে মেলার সঙ্গে।

বাংলা তথা ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা হল শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা। বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে মেলার গুরুত্ব যে কতখানি তার পরিচয় পাওয়া যাবে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত এই মেলায়। প্রতি বছর বাংলা ক্যালেন্ডারের ৭ থেকে ৯ ই পৌষ শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে ৩ দিন ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই মেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বহু পর্যটকের আগমন হয়। 

মেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যঃ 

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর ২০ জন সহব্রতী ১২৫০ খ্রীঃ ৭ই পৌষ (ইংরাজি ক্যালেন্ডারে ২১ শে ডিসেম্বর, ১৮৪৩) বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার সময় রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের কাছ থেকে ব্রহ্মের নামে অঙ্গীকার করে দীক্ষা গ্রহণ করেন। কার্যত এখান থেকেই ব্রহ্ম ধর্মের ( তখন বেদান্ত প্রতিপাদিত ধর্ম নামে পরিচিত) সূচনা। দীক্ষা গ্রহনের দু'বছর পর ১৮৪৫ সালের ২০ ডিসেম্বর শনিবার গেরিটির বাগানবাড়িতে তিনি পৌষ মেলার আয়োজন করেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, 

" তখন ব্রহ্মের সহিত ব্রহ্মের আশ্চর্য হৃদয়ের মিল ছিল। সহোদর ভাইয়ে ভাইয়েও এমন মিল দেখা যায় না। যখন ব্রহ্মদের মধ্যে পরস্পর এমন সৌহার্দ্য দেখিলাম তখন আমার মনে বড়ই আহ্লাদ হইল। আমি মনে করিলাম যে নগরের বাহিরে প্রশস্ত ক্ষেত্রে ইঁহারের প্রতি পৌষ মাসে একটা মেলা হইলে ভালো হয়। সেখানে পরস্পরের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ-সদ্ভাববৃদ্ধি ও ধম্ম বিষয়ে আলোচনা হইয়া সকলের উন্নতি হইতে থাকিবে। আমি এই উদ্দেশ্যে ১৭৬৭ শকের ৭ই পৌষ পলতার পরপারে আমার গিরিটির বাগানে সকলকে নিমন্ত্রণ করি-- ইহাতে ব্রহ্মদের একটি মহৎসব হইয়াছিল।" 

মহর্ষি প্রবর্তিত এই 'মহোৎসব' ধারাবাহিক হয়েছিল কি না তা বলা মুশকিল। ১৮৫৪ সালে জানুয়ারি মাসে ব্রহ্মদের মিলন উৎসব আয়জিত হয়েছিল তাঁর প্রমান পাওয়া যায়। তবে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের শান্তিনিকেতন আশ্রমের জন্য ট্রাস্ট ডিডে শান্তিনিকেতনে একটি মেলা বসাবার ইচ্ছা তিনি ব্যাক্ত করেছিলেন। তাতে লেখা হয়,

" নিরাকার এক ব্রহ্মের উপাসনা ব্যতীত কোনো সম্প্রদায় বিশেষের অভীষ্ট দেবতা বা পশু, পক্ষী, মনুষ্যের বা মূর্তির বা চিত্রের বা কোন চিহ্নের পূজা বা হোম যজ্ঞাদি এই শান্তিনিকেতনে হইবে না।-- ধম্মভাব উদ্দীপনের জন্য ট্রাস্টিগন বর্ষে বর্ষে একটি মেলা বসাইবার চেষ্টা ও উদ্যোগ করিবেন। এই মেলাতে সকল ধম্ম-বিচার ও ধম্মালাপ করিতে পারিবেন। এই মেলার উৎসবে কোনো প্রকার পৌত্তলিক আরাধনা হইবে না ও কুৎসিত আমোদ-উল্লাস হইতে পারিবে না, মদ্য মাংস ব্যতীত এই মেলায় সর্বপ্রকার দ্রব্যাদির খরিদ বিক্রয় হইতে পারিবে। যদি কালে এই মেলার দ্বারা কোনোরূপ আয় হয় তবে ট্রাস্টিগণ ওই আয়ের টাকা মেলার কিংবা আশ্রমের উন্নতির জন্য ব্যয় করিবেন।" 

মহর্ষির ইচ্ছার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টি ১৮৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করে আসছে। ১৯৪৩-৪৬ এই সময়ে মহামারী, যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে এবং ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত কোভিড মহামারির জন্য এই মেলা আয়োজিত হয় নি। মহর্ষি নিজে কখনো এই মেলায় আসেন নি। ১৮৬৩ সালে ভূবনডাঙার শূন্যপ্রান্তরে তিনি শান্তিনিকেন গৃহ নির্মাণ করেন এবং ১২৯৭ বঙ্গাব্দের (১৮৯০ খ্রিঃ) গৃহের নিকটেই ব্রহ্মমন্দির স্থাপন করেন। ১২৯৮ বঙ্গাব্দের (১৮৯১ খ্রিঃ) ৭ই পৌষ এই মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। পোষ উৎসব তখনও পৌষ মেলায় পরিণত হয় নি। এর তিন বছর পর ১৩০১ বঙ্গাব্দ (১৮৯৪ খ্রিঃ) শান্তিনিকেতন কর্তৃপক্ষ প্রথম পৌষ মেলার আয়োজন করেন। 

কবিগুরু রবি ঠাকুরের কাছে ৭ই পৌষ এবং পৌষ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। গভীর শ্রদ্ধার সাথে তিনি ৭ই পৌষ দিনটিকে পালন করতেন। ১৮৯১ খ্রিঃ ব্রহ্ম মন্দির উব্দোধনের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন।  ১৮৯৪ সালে শান্তিনিকেতনের প্রথম মেলার বছরও কবি এখানে উপস্থিত থেকে দরিদ্রদের জন্য ভোগ উৎসর্গ করেছিলেন সেই সময়ে মেলা বস্তু মন্দির এর উত্তর দিকের মাঠে যাতে এখনো পুরনো মেলার মাঠ বলা হয়। ১৯০১ সালে কবি এখানে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন ব্রহ্মবিদ্যালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে। ১৯০৪ সাল ছিল স্বদেশী সময়। সেই সময় কবি "স্বদেশী সমাজের সংবিধান" ঘোষণা করেছিলেন যেখানে অঙ্গীকার করা হয়েছিল যে, স্বদেশী দোকান থেকে আমাদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ক্রয় করব। এই অঙ্গীকারের প্রভাব নিঃসন্দেহে পৌষ মেলার উপর পড়েছিল। তাছাড়া ১৯১০ সালে তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ন নির্দেশ দেন। আশ্রমের মন্দিরে তিনি বুদ্ধ, খ্রিষ্ট, মোহাম্মদ ও চৈতন্যদেব প্রমুখ মহামানবের স্মরণোৎসব পালনের নির্দেশ দেন। এভাবে কবিগুরু শান্তিনিকেতনের আশ্রম ও পৌষ মেলাকে সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণীয় করে তোলেন।

মেলার স্থান ও স্বরূপঃ 

প্রথমদিকে ব্রহ্ম মন্দিরের (যা কাচ মন্দির নামে পরিচিত) উত্তর দিকের মাঠে পৌষ মেলার আয়োজন করা হত। সেই মাঠকে এখনো পুরানো মেলার মাঠ বলা হয়। পরে মেলার আয়তন যখন বৃদ্ধি পায় তখন পূর্বাপল্লীর মাঠে মেলা স্থানান্তর করা হয় (১৯৬১ খ্রি:)। বর্তমানে এই মেলার আয়তন এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে পূর্বাপল্লীর মাঠেই মূল মেলার আয়োজন হলেও কার্যত পুরো শান্তিনিকেতন জুড়ে মেলা চলে এবং সমগ্র পৌষ মাস জুড়েই উৎসব উৎসব ভাব বজায় থাকে।

মেলা আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন ট্রাস্টি বোর্ড এবং বীরভূম জেলা প্রশাসনের। এখানে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টি বোর্ড সমগ্র উৎসবে উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে থাকে। আয়োজনের মূল দায়িত্ব পালন করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতা করে থাকে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা। তবে ২০২৩ সালে শান্তিনিকেতন কর্তৃপক্ষ চিরাচরিত পৌষ মেলা আয়োজনে বিরত থাকে তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

পৌষ উৎসব শুরু হয় ৭ই পৌষ। ভোরবেলায় সানাই বাঁধনের আয়োজন করা হয়। বৈতালিক দল গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা করে। এরপর ছাতিম তলায় উপাসনার আয়োজন করা হয়। তারপর উপস্থিত সবাই গান গাইতে গাইতে উত্তরায়ণে উপস্থিত হন। 

মেলায় প্রায় ২০০০ এর মত স্টল দেওয়া হয়। মহর্ষির নির্দেশমতো এই মেলায় কোন কুৎসিত আমদ উল্লাস এবং মদ বা মাংসজাত কোন দ্রব্য বিক্রি করার প্রথা নেই। প্রথমদিকে এই মেলার চরিত্র ছিল সম্পূর্ণরূপে গ্রামীণ। লোকশিল্পজাত বিভিন্ন দ্রব্য, অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, বিভিন্ন খাবারের স্টল এবং বিভিন্ন প্রকার রাইড এই মেলার অংশ। টুপি, বেতের ছড়ি, মনোহারী কারুশিল্প, জুয়েলারি, কাঠের বাসন, মিষ্টি, তেলেভাজা ও জিলিপির দোকানের সঙ্গে দুমকা থেকে আসা মাটির হাড়ি-কলসি, ফুলের টব, বাঁসের ডালা, ধামাকুলো আর শিলনোড়ার দোকানিরা এখানে সমবেত হন। কাঠের ও কাচের সৌখিন জিনিসপত্রের দোকান বসে, সাবেকি নাগরদোলার সঙ্গে বৈদ্যুতিক নাগরদোলা ইত্যাদি। মেলার খুব পরিচিত দোকান হল 'কালোর দোকান', যার নাম শান্তিনিকেতন ছাড়িয়ে দেশের মানুষজনের কাছে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে।

এই মেলার প্রধান অঙ্গ হল বিভিন্ন প্রকার প্রদর্শনী। নানান প্রদর্শনীর মধ্যে সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে বিশ্বভারতীর মন্ডপ। ডোকরা, পট, শোলা, টেরাকোটা বাঁশ ও বেত শিল্পীরা মেলা প্রাঙ্গণেই তাদের শিল্প সৃষ্টি মেলাযাত্রীদের কাছে মেলে ধরেন। 

বিনোদন পৌষমালার একটি বিশিষ্ট দিক। বাংলার লোকসংস্কৃতির বহমান ধারাকে বাঁচিয়ে রাখার এক বলিষ্ঠ প্রয়াস এখানে দেখা যায়। দেশের বাউল ও গ্রামীণ শিল্পীরা তাদের জীবন সাধনার মধ্য দিয়ে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এই মেলায় তুলে ধরেন। বাউল, মনসামঙ্গল, কবিগান, ফকিরদের গান, সত্য পীরের পাঁচালী, লোকনৃত্য, গম্ভীরা এইসব অনুষ্ঠান পৌষ মেলার বিনোদন মন্ডপে গ্রাম আর শহরের মানুষ একসঙ্গে পাশাপাশি বসে প্রত্যক্ষ করেন। সানাই বাদক তিন দিন ধরেই সুরের মায়াজাল বনের তিন রাত্রি ধরে যাত্রা বিনয় চলে আটই পৌষ রাত্রে আতশবাজির নানা রঙের আলোয় শান্তিনিকেতনের আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে।

সাঁওতালদের অনুষ্ঠান এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ। মাথায় ময়ূরের পালক গুজে সাঁওতালদের প্রাণোচ্ছল সহযাত্রীদের সঙ্গে বাঁশির সুরে আর ড্রিম ড্রিম শব্দে মাদল বাজিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে দেখা যায়।

মেলা উপলক্ষে তিন দিনে প্রায় এক লক্ষ পর্যটকের সমাবেশ হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী শান্তিনিকেতনে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০০ পর্যটক আসেন। কিন্তু পৌষ উৎসব উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের দৈনিক ৪০ হাজার বা তারও বেশি পর্যটক আসেন। 

পৌষ মেলা ও শান্তিনিকেতনের পর্যটন:

শান্তিনিকেতন এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। ব্রহ্ম মন্দির, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রহ্মবিদ্যালয়, রবীন্দ্র মিউজিয়াম, ছাতিম তলা, সোনাঝুরির হাট, কোপাই নদী ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই শান্তিনিকেতন পর্যটকদের একটি পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলা নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ইউরোপ থেকেও প্রচুর পর্যটক শান্তিনিকেতন ভ্রমণে আসেন। পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় হলো অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, যাকে পর্যটনের ভাষায় 'পিক সিজন' বলা হয়। আর এই পিক সিজনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেখানে পর্যটক আগমনের গড় সংখ্যা ৩৫০০ সেখানে পৌষ মেলার সময় এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রত্যেকদিন ৪০ হাজারে। সুতরাং এই সময়ে শান্তিনিকেতনের পর্যটন প্রায় ১০ গুন বৃদ্ধি পায়।

শান্তিনিকেতনে সুষ্ঠু পর্যটনের যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে হোটেল হোমস্টে এবং লজ রয়েছে যেখানে পর্যটকরা ভালো থাকার জায়গা এবং ভালো খাবার পেয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ এবং যুব কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে এখানে বহু সরকারি আবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে পর্যটকরা অল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা পেতে পারে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কিছু লজিং রয়েছে সেখানেও পর্যটকরা থাকতে পারে। পর্যটনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধা। বোলপুর স্টেশন থেকে বহু গাড়ি পাওয়া যায়, যেগুলির সঙ্গে চুক্তি করে পুরো শান্তিনিকেতন ভ্রমণের বন্দোবস্ত করা যায়।

উপসংহার

পৌষ মেলা বাংলা তথা ভারতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারুক বলা যেতে পারে। বর্তমান প্রজন্ম কে অবশ্যই এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে অপরিবর্তিত অবস্থায় তুলে দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত। দুর্ভাগ্যবশত গতবছর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী মেলা আয়োজনে অনীহা প্রকাশ করেছিল, যা একেবারেই অনভিপ্রেত। আরেকটি বিষয় না বললেই নয় যে পৌষ মেলা তার গ্রামীণ চরিত্র ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে। পৌষ মেলায় শহুরে বুর্জোয়া সংস্কৃতির ছোঁয়া লেগেছে। কিছু ব্যবসায়ী পৌষ মেলাকে তাদের বাণিজ্যিক প্রচারের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর পাঁচটা শহরের মেলার মতন পূর্বপল্লীর বিশাল মেলা প্রাঙ্গণের চত্বরে নামিদামি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির শোরুম, নানান হোর্ডিং ইত্যাদি  কেমন যেন পৌষমালাকে ক্রমশ নাগরিক মেলায় পরিণত করছে, যা শান্তিনিকেতনের রুচি ও শৈল্পিক বোধের পরিপন্থী।

তবে যাই হোক পৌষ মেলার গ্রামীণ চরিত্র এখনো বিদ্যমান এবং এর জন্যই এখানে সাংস্কৃতিক পর্যটন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পর্যটনের উপর নির্ভর করে স্থানীয় লোকজনের রোজগার বাড়ছে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজস্ব বাবদ আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু একই সাথে বৃহৎ পুঁজির মালিকগন অর্থের জোরে শান্তিনিকেতন পর্যটনের উপর নিজেদের  দখলদারি চালাচ্ছে এবং এর ফলে স্থানীয় গ্রামীন মানুষের অধিকার হানির সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। 

Poush Mela of Shantiniketan: A Cultural Heritage of Bengal

The literal meaning of "mela" is "gathering." When a social, religious, commercial, or any other occasion is organized in a place as a festival, it is called a mela. A mela sees a large gathering of people and facilitates mutual exchanges. Connecting rural communities' culture and traditions with melas brings vibrancy to rural life. Rabindranath Tagore said, "Every day, man is small, insignificant, and lonely. But on the day of the festival, man becomes great; on that day, he becomes big contacting him with other people, feels the strength of all humanity, and becomes noble." The poet's words are truly apt. Regardless of the occasion, all Bengali festivals have a universal form. Social divisions of religion, community, caste, or rich and poor do not stand in the way but rather create a bridge among all classes. This is why, despite changes in form over time, the traditions and cultures of Bengal's social festivals, events, and people's gatherings have remained. A fair signifies a grand union. The exuberance and joy of people are expressed through fairs. Rising above religion, caste, and community, a fair fosters bonds of harmony among people. Thus, the village fair or melas of Bengal represent a grand amalgamation of a thousand years of tradition.

Although it is not known when, where, or how the first fair was held, there is no doubt that it is an ancient tradition of eternal Bengal. It is believed that the concept of a mela originated from rural markets. In the past, kings and landlords used to organize or sponsor melas. Melas were held on religious occasions. Therefore, melas are intertwined with the thirteen festivals of Bengal's twelve months. From Baisakh to Chaitra, melas can be seen held every month. At one time, the abodes of pirs, fakirs, or saintly monks became the centers of melas. Beyond religious sentiments, other social or folk customs also became associated with melas.

One of the heritage melas of Bengal and India is the Poush Mela of Shantiniketan. The significance of melas in the cultural life of Bengal is evident in this fair, imbued with the memories of the poet Tagore. Every year, from the 7th to the 9th of Poush in the Bengali calendar, this fair is held for three days on the grounds of Purbapalli in Shantiniketan, attracting many tourists to the event.

History and Traditions

Maharshi Debendranath Tagore and his 20 fellow companions took initiation in the name of Brahma from Ramchandra Vidyavagish on the 7th of Poush, 1250 (December 21, 1843, according to the Gregorian calendar) at 3 PM on a Thursday. This event practically marked the beginning of Brahmoism (then known as Vedanta Pratipadita Dharmma). Two years after the initiation, on December 20, 1845, a Saturday, he organized the Poush Festival at Gerity's garden house. In his autobiography, he wrote:

"At that time, there was a wonderful union with Brahma. Such unity is not seen even among real brothers. When I saw such camaraderie among the Brahmos, I was delighted. I thought it would be good to hold a fair in a spacious field outside the city every Poush month. There, meeting each other, fostering goodwill, and discussing religious matters would lead to everyone's improvement. With this intention, on the 7th of Poush in 1767 Shana, I invited everyone to my Gerity garden across the Paltar River—this turned into a grand festival for the Brahmos."

Whether this 'grand festival' initiated by the Maharshi continued annually is unclear. Evidence suggests that a gathering of Brahmos was held in January 1854. However, in the trust deed for the Shantiniketan Ashram in 1888, Maharshi expressed his desire to hold a fair at Shantiniketan. It states:

"There shall be no worship, yajna, or offerings to any specific deity or symbol, animal, bird, human, idol, or picture at Shantiniketan except the worship of the formless Brahma. The trustees will endeavor to organize an annual mela to foster religious sentiments. All religions can discuss and exchange views at this mela. There will be no idolatrous worship or indecent revelry; everything sold at the mela should be free of alcohol and meat. If any income is generated from the mela, it shall be used for the mela's or ashram's development."

In honor of Maharshi's wishes, the Shantiniketan Trustees have been organizing this fair annually since 1894. It was not held during the famine, war, and communal riots from 1943 to 1946, and during the COVID pandemic from 2020 to 2022. Maharshi himself never attended this mela. In 1863, he built the Shantiniketan house on the barren land of Bhubandanga and established the Brahma Mandir next to the house in 1297 Bangabda (1890 AD). The formal inauguration of this temple was held on the 7th of Poush in 1298 Bangabda (1891 AD). At that time, the Poush festival had not yet evolved into the Poush Mela. Three years later, in 1301 Bangabda (1894 AD), the Shantiniketan authorities organized the first Poush Mela.

For Rabindranath Tagore, the 7th of Poush and the Poush Mela held immense significance. He observed the day with deep reverence. He was present at the inauguration of the Brahma Mandir in 1891 and dedicated offerings to the poor during the first mela at Shantiniketan in 1894. The mela was then held on the northern field of the temple, still known as the Purano Melar Math (old mela ground). In 1901, Rabindranath completed his nephew Balendranath's unfinished work by establishing the Brahmacharya school. The year 1904 was the time of the Swadeshi movement, during which Rabindranath declared the "Swadeshi Samaj's constitution, pledging to buy necessary items from Swadeshi shops. This pledge undoubtedly influenced the Poush Mela. Additionally, in 1910, he issued another significant directive: to commemorate Buddha, Christ, Muhammad, Chaitanya, and other great Men at the ashram's temple. Rabindranath made the Shantiniketan Ashram and Poush Mela acceptable to all religious communities through these measures.

Location and Nature

Initially, the Poush Mela was held in the northern field of the Brahma Mandir (known as the Glass Temple), which is still referred to as the old mela ground. As the size of the mela grew, it was moved to the field of Purvapalli in 1961. Currently, the mela's expanse is so large that while the main mela is organized in Purvapalli's field, the entire Shantiniketan area is involved, and a festive atmosphere prevails throughout the month of Poush.

The organization of the mela involves significant roles played by the Visva-Bharati authorities, Shantiniketan Trust Board, and the Birbhum District Administration. The Shantiniketan Trust Board acts as an advisor for the entire festival. The main responsibility for organizing lies with the Visva-Bharati authorities, while administrative and security assistance is provided by the district administration. However, in 2023, the Shantiniketan authorities refrained from organizing the traditional Poush Mela, and thus, it was organized by the district administration.

The Poush festival begins on the 7th of Poush. The festivities start early in the morning with the playing of shehnai music. The Vaitalik group sings as they tour the ashram. Then, a prayer session is organized under the Chhatim tree. Following this, everyone proceeds to Uttarayan while singing.

Around 2,000 stalls are set up at the mela. As per Maharshi's instructions, there is no tradition of indecent revelry or selling alcohol or meat products at this mela. Initially, the mela had a purely rural character. Various local crafts, daily necessities, food stalls, and various types of rides are part of the fair. Sellers from Dumka bring clay pots, flower tubs, bamboo baskets, dhama, kulo, and sil-noda. Shops sell wooden and glass items, traditional and electric rides, and a well-known shop called 'Kalo's Shop', which has become legendary beyond Shantiniketan.

An important part of the fair is the various exhibitions. The most notable among them is the Visva-Bharati pavilion. Dokra, pat, shola, terracotta, bamboo, and cane artisans display their creations to the visitors right at the mela ground.

Entertainment is a distinctive feature of the Poush Mela. It showcases a robust effort to preserve the flowing stream of Bengal's folk culture. Bauls and rural artists from across the country present various aspects of folk culture through their dedicated practices. Baul, Manasamangal, Kabigan, Fokir's songs, Satyapir's Panchali, folk dances, and Gambhira are performed at the mela, bringing together villagers and city dwellers. The shehnai plays for three days, and jatra (folk theatre) performances continue through the night of the 8th Poush. Fireworks light up the sky on the night of the 8th Poush.

The Santals' performance is a special attraction of the mela. Wearing peacock feathers on their heads and playing the madal, they dance their way into the mela ground accompanied by the melodious tunes of the flute.

The mela attracts nearly 100,000 tourists over three days. According to government records, Shantiniketan sees an average of 3,500 tourists daily. However, during the Poush festival, the number of visitors can exceed 40,000 daily.

Poush Mela and Shantiniketan Tourism

Shantiniketan is inherently a heritage site in West Bengal. The Brahma Mandir, Visva-Bharati University, Brahmacharya school, Rabindra Museum, Chhatim Tala, Sonajhuri Haat, and Kopai River have long made Shantiniketan a favored destination for tourists. People visit from not just Bengal but across India and even from Europe. The best time to visit West Bengal is from October to February, known as the 'peak season' for tourism. The Poush Mela takes place during this peak season. Statistics show that while the average number of tourists is 3,500, during the Poush Mela, it increases to 40,000 daily. Thus, tourism in Shantiniketan increases tenfold during this period.

Shantiniketan has adequate arrangements for accommodating tourists, including numerous hotels, homestays, and lodges that provide good accommodation and food. The West Bengal government's tourism and youth welfare departments have established several government guesthouses offering affordable accommodation. The Visva-Bharati authorities also have their own lodgings for tourists. Another crucial aspect of tourism is transportation. Numerous vehicles are available from Bolpur station, which can be hired for a tour of Shantiniketan.

Conclusion

Poush Mela can be regarded as the bearer of the traditional culture of Bengal and India. The current generation must take responsibility to protect this culture and pass it on to future generations in its unchanged form. Unfortunately, last year, the Visva-Bharati authorities expressed reluctance to organize the traditional mela, which is highly regrettable. Another point that cannot be overlooked is that Poush Mela is gradually losing its rural character. Urban bourgeois culture has touched the mela. Some businesses have chosen Poush Mela as a platform for their commercial promotions. Like any other city's mela, the vast fairgrounds of Purvapalli are becoming filled with showrooms of well-known multinational companies and various billboards, slowly turning Poush Mela into a city fair, which goes against the aesthetic sense and artistic spirit of Shantiniketan.

Nevertheless, the rural character of Poush Mela still exists, and this is why cultural tourism is continuously increasing here. This tourism boosts the local economy and increases revenue for the West Bengal government. However, at the same time, large capital owners are exerting their dominance over Shantiniketan tourism with their financial power, posing a threat to the rights of the local rural people.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...