প্রাচীন গ্রিসে দাসপ্রথা
সমাজ বিকাশের ধারা প্রসঙ্গে কাল মার্কস এর বক্তব্য ছিল এই যে আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার অবসান ঘটে কৃষি ব্যবস্থার সূচনা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাবের ফলে এবং এর ফলেই দাস ব্যবস্থার সূচনা হয়। ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতাগুলিতে আমরা দাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব লক্ষ্য করি। ধ্রুপদী গ্রিসের সমাজ ও অর্থনীতির অন্যতম অঙ্গ ছিল দাস ব্যবস্থা। মার্কসীয় সমাজতাত্ত্বিকগণ গ্রিক সভ্যতাকে দাস শ্রমের উপর নির্ভরশীল সভ্যতা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন কিন্তু এই মতের বিপক্ষে বহু ঐতিহাসিক প্রশ্ন তুলেছেন। কেমব্রিজ ঐতিহাসিক এন্ড্রু জোন্স মন্তব্য করেছেন যে যেহেতু এথেন্স এবং অন্যান্য গ্রীক পলিসে দাসদের সংখ্যা ও নাগরিকদের সংখ্যার সঠিক অনুপাত পাওয়া যায় না তাই গ্রিক সমাজকে দাস সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। যাইহোক, ধ্রুপদী গ্রীসে দাস ব্যবস্থার উপস্থিতি ছিল এই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। জন ফাইন সাহিত্যিক উপাদান থেকে দাসদের সংখ্যার একটি আনুমানিক হিসাব করে বলেছেন যে, ধ্রুপদী মোটামুটি এক লক্ষ দাসের অবস্থান ছিল।
কোন প্রেক্ষাপটে কেন প্রাচীন গ্রিসে দাস ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। ঐতিহাসিক চিনলে তার Ancient Slavery and Modern Ideologi গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে এথেন্সের আর্কন সোলনের সংস্কার এথেন্সের দাস ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছিল তিনি মনে করেন ৫৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চলনের ঋণদাস প্রথার উচ্ছেদ সাধন এবং অভিয়াতদের দ্বারা অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা জমি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ সমাজে শ্রমের ঘাটতি তৈরি করে এবং এই ঘাটতি মেটানোর জন্য অভিযাত্রা বাইরে থেকে ক্রীতদাস নিয়ে আসে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্ষেত্রে তাদের নিয়োগ করে। পরবর্তীকালে অবশ্য হ্যারিস ফিনলের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন তার মতে ঋণদাসত্যের উচ্ছেদের ফলে দাসপ্রথার উদ্ভব হয়নি। সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য তীব্র হিংসার মধ্যেই দাস প্রথার উত্থানের প্রকৃত কারণ নিহিত ছিল।
প্রাচীন গ্রিসে দুই প্রকার দাস ছিল। একটি ছিল ব্যক্তিগত এবং আরেক প্রকার ছিল গোষ্ঠীগত। তবে গ্রিসে ব্যক্তিগত দাসের অস্তিত্ব ছিল উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তিগত দাস বলতে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে তারা প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং সমাজতাত্ত্বিকভাবে তারা ছিল বহিরাগত।
প্রাচীন গ্রিসে দাস সংগ্রহের প্রধানতম উৎস ছিল যুদ্ধ। এথেন্সে যুদ্ধবন্দীদেরকে দাসে পরিণত করা হত। এই দাসদের যোগান হত প্রধানত স্কাইথিয়া এবং এশিয়া মাইনর থেকে। অনেক সময় জলদস্যুরা মানুষকে বন্দী করে ধনী নাগরিকদের কাছে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। দাসের চাহিদা যত বৃদ্ধি পেতে থাকে দাস কেনাবেচার বাজার গড়ে ওঠে, পেশাদার দাস ব্যবসায়ীর উদ্ভব হয় এবং এই ব্যবসা খুবই লাভজনক হয়ে দাঁড়ায়।
গ্রিসের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছিল ক্রীতদাস। অর্থনীতির প্রতিটা ক্ষেত্রে ক্রীতদাসদের নিয়োগ করা হত। জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ছিল কৃষক। কৃষিকাজে দাসদের নিয়োগ করা হত। বৃহৎ খামারগুলির মালিকরা তাদের খামারে ক্রীতদাসদেরকে দিয়ে কাজ করাতেন। যারা মধ্যবিত্ত জমির মালিক ছিলেন তাদের জমিতেও দাসরা কাজ করত। তবে একেবারেই যারা গরিব চাষী ছিল তাদের জমিতে ক্রীতদাস নিয়োগ হতো কিনা তা বলা মুশকিল। কৃষিকাজ ছাড়াও উৎপাদনের অন্যান্য ক্ষেত্রে দাসদের নিয়োগ হত। শহরের কারখানা গুলিতে তারা বাসনপত্র, আসবাবপত্র, তরবারি ইত্যাদি তৈরি সঙ্গে যুক্ত থাকত। বৃহৎ অট্টালিকা তৈরীর সময় নাগরিকরা ক্রীতদাসদের নিয়োগ করত। লরিয়ামের রুপোর খনিতে দাসশ্রমের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। অ্যারিস্টোফেনিসের রচনায় আমরা এর বিবরণ পাই। তবে যে সমস্ত দাস বাণিজ্য ও ব্যাংকিং এর সাথে যুক্ত থাকত তুলনায় তারা অন্যদের থেকে কিছুটা সুবিধা ও স্বাধীনতা ভোগ করত।
দাসদের সামাজিক অধিকার ছিল না। আইনি কোন বিষয়ে তারা কোন অধিকার দাবি করতে পারত না। তবে প্রভু নিজের স্বার্থে দাসদের সাক্ষী হিসেবে খাড়া করতে পারতেন। কোনো কোনো তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। সামরিক বাহিনীতে তাদের ভূমিকা ছিল নগণ্য। তবে সংকটময় পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র দাসদের পদাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করত। প্রভু দাসের উপরে অত্যাচার করবে এটাই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া হত। প্রায়ই তাদের চাবুক মারা, বন্ধ অন্ধকার কুঠুরিতে আটকে রাখা বা জ্বলন্ত লোহার সিক দিয়ে গায়ে উল্কিয়ে দেওয়া-- এই ধরনের নানা শারীরিক অত্যাচার করা হতো। প্রভু চাইলে কোনো দাসকে বিক্রি করতে পারতো বা তাকে ভাড়া খাটাতেও পারতো। তবে মাঝেমধ্যে দাসের কাজে খুশি হয়ে প্রভু তাকে মুক্তি দিত। এগুলি ছিল ব্যতিক্রমী ঘটনা। কোনো দাস মুক্তি পেলে এথেন্সে বিদেশি বা মেটিকের মর্যাদা পেত। দাসদের জীবন যেহেতু দুঃসাহ ছিল তাই তারা সর্বদা পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করতো। রচনা থেকে জানা যায়, স্পার্টা কর্তৃক ডিসিলিয়া বিজয়ের সময় প্রায় ২০ হাজার এথেনীয় দাস পালিয়ে গিয়েছিল।
দাস ব্যবস্থার সমালোচনা করা সমকালীন গ্রিসে ছিল একটি খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। এমনকি অ্যারিস্টটলের মত দার্শনিকও দাসপ্রথাকে প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তিনি দাস প্রথার উচ্ছসিত প্রশংসা করে বলেছেন যে এই ব্যবস্থার দ্বারা সকলেই উপকৃত হয়েছে। আসলে প্রাচীন গ্রিসে দাসপ্রথার উচ্ছেদ সম্ভব ছিল না, কারণ অর্থনীতির সর্বক্ষেত্র ছিল দাস শ্রমের উপরে নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা তাদের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা ছিল মুশকিল। তাই ঐতিহাসিক স্টে ক্রোয়া তার Class Struggle in the Ancient Greek World গ্রন্থে গ্রিক অর্থনীতিকে দাস নির্ভর অর্থনীতি বলে অভিহিত করেছেন।
Slavery in Classical Greece
Regarding the evolution of
society, Karl Marx stated that the end of primitive socialism occurred with
the advent of agriculture and the emergence of private property, leading to the
beginning of the slave system. We observe the existence of the slave system in
Bronze Age civilizations. Slavery was a significant part of the society and
economy of classical Greece. Marxist sociologists have described Greek
civilization as dependent on slave labor, but many historians have questioned
this view. Cambridge historian Andrew Jones remarked that, due to the lack of information about the accurate ratios between the number of slaves and citizens
in Athens and other Greek city-states, it is not reasonable to identify Greek
society as a slave society. Nonetheless, there is no doubt about the presence
of the slave system in classical Greece. John Fine, from literary sources, has
estimated that classical Greece had approximately 100,000 slaves.
There is debate among historians
about the context and reasons for the emergence of the slave system in ancient
Greece. Historian Finley, in his book "Ancient Slavery and Modern
Ideology," mentioned that Solon's reforms in Athens created the slave
system. He believed that Solon's abolition of debt slavery and redistribution
of land illegally acquired by the nobles to common people in 594 BC created a
labor shortage, which was met by bringing in slaves from outside and employing
them in the production process. However, later, Harris opposed Finley's view,
arguing that the abolition of debt slavery did not lead to the emergence of
slavery. He stated that the real cause of the rise of slavery lay in the
intense violence for wealth plundering.
In ancient Greece, there were two
types of slaves: private and communal. However, private slaves were significant
in Greece. Legally, private slaves were the personal property of their masters,
and sociologically, they were outsiders.
The main source of slaves in
ancient Greece was war. War captives in Athens were turned into slaves,
primarily sourced from Scythia and Asia Minor. Sometimes pirates captured
people and sold them as slaves to wealthy citizens. As the demand for slaves
increased, slave markets were established, professional slave traders emerged,
and the business became very profitable.
About one-third of Greece's
population were slaves, employed in every sector of the economy. A large part
of the population were farmers, and slaves were employed in agriculture. Large
farm owners had slaves working on their farms. Middle-class landowners also had
slaves working on their land, though it is uncertain whether the very poor
farmers employed slaves. Besides agriculture, slaves were employed in other
production sectors. In city factories, they were involved in making utensils,
furniture, swords, etc. Citizens hired slaves to construct large buildings.
Slave labor was extensively used in the silver mines of Laurium, as described
by Aristophanes. However, slaves involved in trade and banking enjoyed
relatively more privileges and freedom compared to others.
Slaves had no social rights and
could not claim any legal rights. However, masters could use slaves as
witnesses for their own benefit. Slaves were prohibited from participating in
certain religious ceremonies. They had a minimal role in the military, but in
times of crisis, the state forced them to join the infantry. It was considered
normal for masters to mistreat slaves, often whipping them, locking them in
dark rooms, or physically branding them with hot iron. Masters could sell or
rent out their slaves. Occasionally, masters freed slaves as a reward for their
work, though these were exceptional cases. A freed slave in Athens gained the
status of a foreigner or Metic. Since slave life was harsh, they always
attempted to escape. During Sparta's victory at Decelea, about twenty thousand
Athenian slaves fled.
Criticism of the slave system in
contemporary Greece was very rare. Even philosophers like Aristotle described
slavery as a natural phenomenon and praised it, stating that everyone benefited
from it. In fact, the abolition of slavery in ancient Greece was impossible
because the economy in all sectors was dependent on slave labor. Overcoming
this dependency was difficult for them. Thus, historian Ste. Croix, in his book
"Class Struggle in the Ancient Greek World," referred to the Greek
economy as a slave-dependent economy.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন