সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রাচীন এথেন্সের দর্শন চর্চা

প্রাচীন এথেন্সের দর্শন চর্চা

               প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাদান ছিল দর্শন। ধ্রুপদী গ্রিসের দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে পাশ্চাত্য দর্শনের বিকাশ ঘটেছিল। সেই যুগের তিনজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক হলেন সক্রেটিস, প্লেটো ও অ্যারিস্টটল। 

                প্রাচীন গ্রিক দর্শনে সোফিষ্ট মতবাদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। সোফিষ্ট কথাটির দ্বারা দক্ষ ও জ্ঞানী মানুষকে বোঝায়। সোফিস্টদের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলে। ইতিহাস, ভূগোল, নৃতত্ত্ব, গণিত, আয়োনীয় বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় তারা শিক্ষা দিতেন। এরা ধনী পরিবারের তরুণ প্রজন্মকে সফল করে গড়ে তোলার চেষ্টা করতেন। এদিক থেকে তাদের প্রয়াস সার্বিক ছিল না। সোফিষ্ট দর্শন ও শিক্ষার মূল ভিত্তি ছিল Nomos Physis বৈপরীত্য। Nomos হলো রাষ্ট্রীয় আইন, যা মানুষেরই তৈরি এবং যা আপেক্ষিক ও পরিবর্তনশীল। Physis হল চিরন্তন বা স্বাশত। সোফিষ্ট দার্শনিকগণ এই দুইয়ের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিলেন। তারা বোঝাতে চেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় আইন কৃত্রিমভাবে আরোপিত, তাই সেখানে বিরোধিতা করা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এইভাবে সোফিষ্ট দর্শন রাজদ্রোহের ইন্ধন যোগানোর পথ প্রশস্থ করেছিল। সফিষ্ট দার্শনিকদের দুটি ভাগ ছিল- নবীন ও প্রবীণ। প্রবীণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রেটাগরাস, জর্জিয়াস, হিপ্পিয়াস, অ্যান্টিগণ প্রমুখ। নবীনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অ্যালকিড়ামাস, লাইকোফ্রণ, পোলাস, ক্রিটিয়াস প্রমুখ। এদের মূল বক্তব্যই ছিল নিরঙ্কুশ আপেক্ষিকতাবাদ। সক্রেটিস সফিষ্ট দর্শনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

               সক্রেটিস নিজে কিছু লেখেননি, তাই তার শিক্ষা ও মতাদর্শ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য ঐতিহাসিকরা তিনটি সূত্রের ওপর নির্ভর করেছেন, সেগুলি হলো অ্যারিষ্টফোনিসের 'The Clouds', জেনোফোনের 'Memorabilia', প্লেটোর 'Dialoglee'। যেহেতু অন্যের লেখার ওপর নির্ভর করতে হয় তাই সক্রেটিসের প্রকৃত দর্শন কি ছিল তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। যাই হোক, দর্শন শাস্ত্রে তাঁর দুটি অবদান অনস্বীকার্য: (১) দর্শন অনুসন্ধানের পদ্ধতি হিসাবে  দ্বান্দ্বিক বিচারের প্রয়োগ এবং (২) নীতি সূত্রের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক  বিশ্লেষণ ব্যাবহার। তাঁর বিশ্লেষণ ছিল ব্যাঙ্গোক্তিতে পরিপূর্ণ। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন এবং নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। প্রশ্নের উত্তর দাতাদের ভ্রান্তি ধরিয়ে দিতেন। তিনি এথেনিয় গণতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন এবং অভিজাততন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন। ঐতিহ্যের বিরোধিতার দায়ে হেলিয়ার বিচারে সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং তিনি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ অস্বীকার করে হেমলক বিষ পান করে মৃত্যু বরণ করেন।

               ধ্রুপদী গ্রিসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ছিলেন প্লেটো, তার গুরু ছিলেন সক্রেটিস। প্লেটোর লেখাগুলি কথোপকথন বা Diaglog হিসাবে লেখা। তাঁর প্রথম পর্বের লেখাগুলির মধ্যে উল্লেযোগ্য ছিল অ্যাপোলজি অব সক্রেটিস, প্রোটাগোরাস, ক্রিটো এবং বিখ্যাত রিপাবলিকের এর প্রথম গ্রন্থ। দ্বিতীয় পর্বের লেখাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মেনো, জর্জিয়াস প্রভৃতি। তৃতীয় পর্বের লেখাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সিম্পোসিয়াম এবং রিপাবলিকের দ্বিতীয় থেকে দশম গ্রন্থ। প্লেটো ছিলেন ভাববাদে বিশ্বাসী এবং তিনি এই দর্শনকে অনেক উচ্চস্তরে নিয়ে গেছেন। জীবনের শেষ পর্বে তিনি আইন নিয়ে লিখেছেন। প্রাথমিক দিকে তিনি সক্রেটিসের মতই গণতান্ত্রিক শাসনের বিশ্বাসী ছিলেন না এবং অলিগার্কিক  শাসনের সমর্থন করেছিলেন। তবে তিনি জীবনের অন্তিম লগ্নে 'দার্শনিক রাজা' কথাটি উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন দেশ ঘুরে ৪৮৭ খ্রি: এথেন্সে ফিরে এসে একটি একাডেমি গড়ে তোলেন। এই একাডেমি অনেক কৃতি পণ্ডিতের জন্ম দিয়েছিলেন। এরমধ্যে অ্যারিস্টটল অন্যতম। প্লেটোর Ripablic এবং Laws এর উপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্থাপিত হয়েছে।

                 প্রাচীন গ্রিসের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হলেন অ্যারিস্টটল। জ্ঞান ও শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ, প্লেটোর একাডেমিতে তিনি ১৮ বছর অতিবাহিত করেছিলেন। প্লেটোর একাডেমির প্রাক্তনীদের নিয়ে তিনি একটি একটি বসতি গড়ে তুলেছিলেন। আনাতোলিয়ার এক জ্ঞানদীপ্ত শাসক হারমিয়াস এই দার্শনিক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। অ্যারিস্টটল ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপের পুত্র আলেকজান্ডারের গৃহ শিক্ষক ছিলেন। অ্যারিস্টটল অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং এগুলি কালানুক্রম করা খুবই কঠিন। তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের সঙ্গে মানুষের ওতপ্রোত যোগাযোগকে তুলে ধরেছিলেন।  তার সৃজনশীল লেখা গুলি মূলত আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হল:  (১) তর্ক শাস্ত্র বা Logic (২) প্রাকৃতিক দর্শন বা Philosophy of Nature (৩) মনোবিদ্যা বা Phicology (৪) জীববিদ্যা (৫) অধিবিদ্যা (৬) নীতিবিদ্যা (৭) রাজনীতি ও অর্থনীতি (৮) অলংকার শাস্ত্র ও কাব্য। রাজনীতির উপর লেখা গ্রন্থ গুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো 'Politics'। এই গ্রন্থে তিনি আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন, তিনিও আলিগার্কিকে বাস্তবধর্মী প্রকৃত রাষ্ট্রব্যবস্থা বলে মনে করেছিলেন। তিনি প্রথম দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করেছিলেন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য নির্ণয় করেছিলেন। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পরে এথেন্সের সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কতকগুলি অভিযোগ আনেন। সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ডের কথা মাথায় রেখে তিনি স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান এবং এর এক বছর পর (৩২২ খ্রি: পূ:) ৬২ বছর বয়সে মারা যান।

Ancient Athenian Philosophy

Ancient Greek culture's most outstanding element was philosophy, which laid the foundation for Western philosophy's subsequent development. The three greatest philosophers of that era were Socrates, Plato, and Aristotle.

Sophist Philosophy

Sophist philosophy had a significant influence on ancient Greek thought. The term "Sophist" referred to skilled and knowledgeable individuals whose aim was to educate people in various fields such as history, geography, anthropology, mathematics, Ionian science, and linguistics. They primarily focused on grooming the young generation from wealthy families for success. However, their approach was not holistic. The core of Sophist philosophy and education was the dichotomy between Nomos (law) and Physis (nature). Nomos referred to state laws, created by humans and thus relative and changeable. Physis refers to the eternal or the absolute. Sophist philosophers drew a clear line between the two, suggesting that state laws, being artificially imposed, could be opposed, but the laws of nature could not be denied. This approach of the Sophists opened the path for subversive thoughts against the state. Sophist philosophers were divided into two groups: the older Sophists, including Protagoras, Gorgias, Hippias, and Antiphon, and the younger Sophists, including Alcidamas, Lycophron, Polus, and Critias. Their central tenet was absolute relativism, which Socrates fiercely criticized.

Socrates

Socrates himself did not write anything, so historians have relied on three sources to understand his teachings and philosophy: Aristophanes' "The Clouds," Xenophon's "Memorabilia," and Plato's "Dialogues." Due to this reliance on others' writings, there is some uncertainty about Socrates' exact philosophy. Nonetheless, two of his contributions to philosophy are undeniable: (1) the application of dialectical reasoning in philosophical inquiry and (2) the use of dialectical analysis in explaining moral principles. His analysis was filled with irony. He wandered around, acknowledging his ignorance, and asked questions to expose the flaws in others' responses. Socrates opposed Athenian democracy and supported the aristocracy. Accused of corrupting the youth and impiety, he was sentenced to death by the Heliaea, refusing the chance to escape, and accepted his fate by drinking hemlock.

Plato

Plato, one of the greatest classical Greek philosophers, was a disciple of Socrates. His writings were in the form of dialogues. Significant works from his early period include "Apology of Socrates," "Protagoras," "Crito," and the first book of "Republic." Important works from his middle period include "Meno" and "Gorgias," and from his late period include "Symposium" and the remaining books of "Republic." Plato was an idealist and took this philosophy to great heights. In his later years, he wrote about laws. Initially, like Socrates, he did not believe in democratic governance and supported oligarchic rule. However, he later introduced the concept of the "philosopher-king." After traveling to various countries, he returned to Athens in 387 BCE and established an academy, which produced many notable scholars, including Aristotle. Plato's "Republic" and "Laws" laid the foundation for modern political science.

Aristotle

Aristotle, considered the greatest philosopher of ancient Greece, excelled in various branches of knowledge and education. He spent 18 years at Plato's Academy and later established a settlement with the academy's alumni. Hermias, an enlightened ruler of Anatolia, patronized this philosophical group. Aristotle was the tutor of Alexander, son of King Philip of Macedon. He authored numerous works, making it challenging to chronologically categorize them. His writings underscored the intrinsic connection between the universe and humanity. His creative works are primarily divided into eight categories: (1) logic, (2) philosophy of nature, (3) psychology, (4) biology, (5) metaphysics, (6) ethics, (7) politics and economics, and (8) rhetoric and poetics. Among his political writings, "Politics" is the most noteworthy, where he expressed his views on the ideal state, considering oligarchy as the realistic form of governance. He distinguished between philosophy and science and further differentiated between various scientific branches. After Alexander's death, the Athenian government brought charges against Aristotle, prompting him to go into voluntary exile to avoid the fate of Socrates. He died a year later in 322 BCE at the age of 62.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ