সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ষোড়শ মহাজনপদ | Sixteen Mahajanapadas

ষোড়শ মহাজনপদ 

খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতক নাগাদ উত্তর ভারতে ১৬ টি মহাজনপদের আবির্ভাব ঘটে। বৈদিক সাহিত্যে 'জন' শব্দের উল্লেখ রয়েছে। 'জন' বলতে বোঝায় একটি কৌম বোঝাত। 'জন' শব্দ থেকে এসেছে 'জনপদ'। 'জনপদ' কথার অর্থ জন যেখানে পা রেখেছে। অর্থাৎ 'জন'ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে যে আকার ধারন করেছে তাকে বলা হয় 'জনপদ'। জনপদ কেবল ভৌগলিক সংজ্ঞা নয়, তা অবশ্যই জনবসতি অধ্যুষ্যিত হতে হবে। জনপদ রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। অর্থাৎ জনপদ বলতে কোনো রাজশক্তির শাসনাধীন জনবসতিসম্পন্ন এলাকা বোঝাবে। জনপদের আকার যখন আরও বড় হয়েছে তখন তাকে বলা হয়েছে 'মহাজনপদ'। সমকালীন ভারতে এরকম ১৬ টি মহাজনপদের অস্থিত্বের কথা জানা যায়। বৌদ্ধ গ্রন্থ  অঙ্গুত্তরনিকায়  অনুসারে এই ষোলটি জনপদ নিম্নরূপ।

  1.  কাশীঃ বর্তমান উত্তর প্রদেশের বারানসী ও সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী বারানসী।
  2. কোশলঃ উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ, গোন্ডা, ফৈজাবাদ, বেহারাইচ এলাকায় নিয়ে অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী।
  3. অঙ্গঃ বিহারের পূর্ব দিকে বর্তমানে ভাগলপুরের কাছে অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল চম্পা। 
  4. মগধঃ দক্ষিণ বিহারে এর অবস্থান। এর রাজধানী রাজগৃহ-গিরিব্রজ।
  5. বৃজিঃ বিহারের উত্তর দিক এবং নেপালের তরাই অঞ্চল জুড়ে এর অবস্থান ছিল। এটি একটি গণরাজ্য। এর রাজধানী বৈশালী। 
  6. মল্লঃ এর রাজধানী পাওয়ারপুরী। মগধের উত্তরে এবং কাশী ও কোশলের মাঝে এর অবস্থান ছিল। বৃজির মত এটিও একটি গণরাজ্য ছিল।
  7. চেদিঃ বর্তমান মধ্যপ্রদেশের জবলপুর ও সন্নিহিত এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। এর রাজধানী সুক্তিমতী। 
  8. বৎসঃ এলাহাবাদ ও সংলগ্ন এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এর রাজধানী কৌশাম্বী। 
  9. মৎসঃ রাজস্থানের পূর্বাংশে অবস্থিত। এর রাজধানী বৈরাট।
  10. শূরসেনঃ মথুরা ও সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী মথুরা। 
  11. কুরুঃ বর্তমান দিল্লি ও সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত। রাজধানী হস্তিনাপুর। 
  12. পাঞ্চালঃ বর্তমান রোহিলখন্ড এলাকায় অবস্থিত। এর রাজধানী ছিল কাম্পিল্য।
  13. অশ্মকঃ মহারাষ্ট্রের গোদাবরি উপত্যকার অবস্থিত। এর রাজধানী ছিল  গোবর্ধন, বর্তমানে নান্দের। এটিই একমাত্র দক্ষিণ ভারতীয় মহাজনপদ। 
  14. অবন্তীঃ বর্তমান মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থিত ছিল। এর দুটি রাজধানী ছিল-- উজ্জয়িনী ও মাহিষ্মতী। 
  15. গান্ধারঃ সিন্ধু নদের পূর্ব ও পশ্চিম তীরস্ত এলাকায় বর্তমানে পাকিস্তানের পেশোয়ার ও রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী তক্ষশিলা।
  16. কম্বোজঃ বর্তমান পাকিস্তানের হাজারা জেলায় এর অবস্থান ছিল।
মহাজনপদগুলির অবস্থান দেখলে বোঝা যায় অশ্মক ছাড়া প্রায় সব কটি মহাজনপদ উত্তর ভারতে অবস্থিত। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ভুখন্ডে আশ্রিত রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভবের প্রক্রিয়া দক্ষিণ ভারতে সেভাবে চোখে পড়েনা। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকা থেকে নর্মদার দক্ষিনস্ত এলাকা পর্যন্ত এবং পশ্চিমে উজ্জয়িনী থেকে পূর্বে ভাগলপুর পর্যন্ত মহাজনপদের উত্থান ঘটেছিল। গুজরাট, বাংলা, কিংবা উড়িষ্যা বা উত্তর পূর্বাঞ্চলে মহাজনপদের উপস্থিতি ছিল না। 

মহাজনপদগুলি অন্যান্য জনপদকে গ্রাস করে মহাজনপদের স্তরে উন্নিত হয়েছিল। সামরিক শক্তির পরীক্ষা ছিল মহাজনপদ গড়ে ওঠার অন্যতম রাজনৈতিক শর্ত। এই দিক থেকে সবথেকে শক্তিশালী ছিল কোশল, বৎস, অবন্তি ও মগধ।

মহাজনপদ গুলির অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা মোটামুটি একই রকম ছিল। বৃজি ও মল্ল ছাড়া সবই ছিল রাজতান্ত্রিক। বৃজি ও মল্ল প্রচীন তথ্য সূত্রে গনরাজ্য হিসাবে পরিচিত। এই ব্যবস্থা আধুনিক গনতন্ত্র সদৃশ নয় তবে রাজতন্ত্র থেকে পৃথক ছিল। 
 

The Sixteen Mahajanapadas

Around the 6th and 5th centuries BCE, 16 big political powers known as Mahajanapadas emerged in northern India. The term 'Jan' mentioned in Vedic literature refers to a community. Derived from 'Jan', the word 'Janapada' signifies where the people settled, meaning the expanded community forms a 'Janapada'. A Janapada is not just a geographical term but must encompass a settled population. It is a fundamental unit of a state, implying an area populated under a governing authority. When a Janapada expanded further, it was called a 'Mahajanapada'. There are mentions of such 16 Mahajanapadas in contemporary India. According to the Buddhist text Anguttaranikaya, these sixteen Mahajanapadas are as follows

Kashi: Located in the present area of Varanasi and its vicinity in Uttar Pradesh. Its capital was Varanasi.

Kosala: Situated in the areas of Lucknow, Gonda, Faizabad, and Bahraich in Uttar Pradesh. Its capital was Shravasti.

Anga: Located near present-day Bhagalpur in the eastern part of Bihar. Its capital was Champa.

Magadha: Located in southern Bihar. Its capital was Rajgriha-Girivraja.

Vriji: Positioned in the north of Bihar and across the Tarai region of Nepal. It was a Ganasangha. Its capital was Vaishali.

Malla: Its capital was PawaPuri. Located between Kashi and Kosala, it was also a Ganasangha like Vriji.

Chedi: Comprised of the area around present-day Jabalpur and nearby areas in Madhya Pradesh. Its capital was Suktimati.

Vatsa: Located around Allahabad and its adjacent areas. Its capital was Kaushambi.

Matsya: Situated in the eastern part of Rajasthan. Its capital was Vairat.

Shurasena: Located in Mathura and its nearby areas. Its capital was Mathura.

Kuru: Located in the present area of Delhi and its vicinity. The capital was Hastinapur.

Panchala: Located in the present Rohilkhand area. Its capital was Kampilya.

Ashmaka: Located in the Godavari valley of Maharashtra. Its capital was Govardhan, now known as Nanded. It was the only south Indian Mahajanapada.

Avanti: Located in the western part of present-day Madhya Pradesh. It had two capitals-- Ujjaini and Mahishmati.

Gandhara: Situated on both the east and west banks of the Indus River, presently in the Peshawar and Rawalpindi regions of Pakistan. Its capital was Taxila.

Kamboja: Located in the present Hazara district of Pakistan.

The presence of these Mahajanapadas, except Ashmaka, was primarily in northern India. This indicates the emergence of political power based on specific territories was not as apparent in South India. The Mahajanapadas spanned from the north-western frontier to the south of the Narmada river, and from Ujjain in the west to Bhagalpur in the east. There were no Mahajanapadas in Gujarat, Bengal, Odisha, or the northeastern region.

The Mahajanapadas merged by subsuming other Janapadas, where military strength was a key political criterion. The most powerful among these were Kosala, Vatsa, Avanti, and Magadha.

The internal administrative systems of these Mahajanapadas were relatively similar. Except for Vrijji and Malla, which are known from ancient sources as Ganasanghas (republic), all were monarchies. These republics were different from modern democracies but distinct from monarchies.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক