সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপমহাদেশে নব্যপ্রস্তর যুগ | Neolithic Period in the Indian Subcontinent

উপমহাদেশে নব্যপ্রস্তর যুগ

শুধু  ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস এই নয়, সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে নব্য প্রস্তর যুগ এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। উপমহাদেশে নব্য প্রস্তর যুগের সবচেয়ে ভালো নিদর্শন পাওয়া যাবে মেহেরগড়ে। মানব সভ্যতার এই স্তরে হাতিয়ার তৈরীর কৌশল উন্নততর হওয়ার পাশাপাশি সমাজে একাধিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল, যার দিকে নজর রেখে জি. চাইল্ড নব্য প্রস্তর যুগকে বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন।

 এই পর্বে মধ্য প্রস্তর যুগের ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধের ব্যবহার অব্যহত ছিল, তবে তার বৈচিত্র্য ক্রমশ বৃদ্ধি পেল।

নব প্রস্তর যুগের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো কৃষির উন্মেষ। এশিয়ার জেরিকোতে ৮ হাজার কিংবা ৭ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম কৃষির প্রকাশ দেখা গিয়েছিল। উপমহাদেশেও এর রেশ দেখা গেল।  কৃষির অবিস্কারের ফলে মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে হয়ে গেল খাদ্য উৎপাদক। এই ঘটনা মানুষের জীবনযাত্রায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনল। চাষের জন্য বীজ বোনা থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিনের ব্যাপার। তাই মানুষ এবার ক্রমশ স্থায়ী বসতি গড়ে তুলল। কৃষি উৎপাদন সঞ্চয় করে রাখা যায়। শিকার নির্ভর ও পশুপালন নির্ভর জীবনে সামাজিক ধন-সম্বল সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যায় না। কৃষির উন্মেষের ফলে মানুষ সেই নিশ্চয়তা পেল।

কৃষি প্রধান সমাজ অনেক বেশি জটিল। আগের খাদ্য সংগ্রাহক জীবনে ধন-সাম্বল মোটামুটিভাবে সমানভাবে বন্টিত হত। কিন্তু নতুন সমাজে অতিরিক্ত খাদ্যের সংস্থান সম্ভাব হল। উদ্বৃত্ত সময় সৃষ্টি হওয়ার ফলে বিভিন্ন পেশাদারী শ্রেণীর উদ্ভব সম্ভব হল এবং এরই হাত ধরে নগরায়ন ও জটিল রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব হল। সামাজিক ভেদাভেদ বাড়ল; কারণ জমির সমভাবে বন্টন সম্ভব হলো না। আর এই অসম সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য গড়ে উঠলো রাষ্ট্রব্যবস্থা। সুতরাং নব্য প্রস্তর যুগে কেবল হাতিয়ার নির্মাণে উন্নতি করেছিল তা নয়, খাদ্য উৎপাদক স্থায়ী জটিল সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছিল। একেই গর্ড ন চাইল্ড নব্য প্রস্তর যুগীয় বিপ্লব বলেছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক