সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সংগ্রহশালায় বস্তুর লেবেলে করার পদ্ধতি। Labelling of objects in Museum

 সংগ্রহশালায় বস্তুর লেবেলে করার পদ্ধতি

সংগ্রহশালায় বস্তুসমূহ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বস্তুর লেবেলিং করা আবশ্যিক। লেবেল ছাড়া দর্শকের পক্ষে বস্তুটির পরিচয় জানা অসম্ভব। লেবেলের তথ্য কখনো কম হয় কখনওবা তথ্য বেশি হয়।

লেবেলের প্রকারভেদ

লেবেল মোটামুটি তিন ধরনের হয়-- ১. প্রারম্ভিক লেবেল (Introductory Label), ২. বিভাগীয় লেবেল (Section Label) এবং ৩. বস্তু লেবেল (Object Label)।

১. প্রারম্ভিক লেবেল (Introductory Label)

সংগ্রহশালার প্রদর্শন কক্ষ বা গ্যালারির দরজার সন্নিকটে এই লেবেল থাকে। এই লেবেলে প্রদর্শন কক্ষের শিরোনাম, প্রদর্শন কক্ষে প্রদর্শিত বস্তুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং প্রদর্শনের উদ্দেশ্য লেখা থাকে। অর্থাৎ কক্ষটি ভ্রমণের পর দর্শকরা কি কি শিখতে পারবে তার সংক্ষিপ্ত আকারে এই লেবেলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ১০-১৫ টি শব্দে শিরোনাম, ৬০-১০০ টি শব্দে কক্ষের বিবরণ এবং ৪-৬ টি ছবি থাকে এই লেবেলে।

২. বিভাগীয় লেবেল (Section Label)

একটি প্রদর্শন কক্ষের মধ্যে আবার অনেকগুলি বিভাগ থাকে। প্রতিটি বিভাগে কি কি বস্তু রয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া থাকে এই বিভাগীয় লেবেলে। যেমন, কোনো মিউজিয়ামের ভূতত্ত্ব গ্যালারিতে আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, রূপান্তরিত শিলা ইত্যাদি বিভিন্ন বিভাগ থাকতে পারে। সেই বিভাগ গুলোর শুরুতে বিভাগীয় লেবেল লাগানো হয়। ১০-১৫ টি শব্দে শিরোনাম, ৬০-১০০ টি শব্দে কক্ষের বিবরণ এবং ২ টি ছবি থাকে এই লেবেলে।

৩. বস্তু লেবেল (Object Label)

বস্তু লেভেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি গ্যালারি এবং প্রতিটি সেকশনে যে একাধিক বস্তু থাকে সেগুলির শিরোনাম এবং ৩০-৪০ টি শব্দের মধ্যে বস্তুর লেবেলে থাকে।

লেবেল প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি 

সংগ্রহশালার লেবেল প্রস্তুত করা রীতিমতো গবেষণা এবং পরিকল্পনার কাজ। লেবেল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়।

১. দর্শকঃ মিউজিয়ামের দর্শক বিভিন্নরকম হতে পারে। সাধারন দর্শক ছাড়াও শিশু, যুব, বয়স্ক ব্যক্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য শারিরীক প্রতিবন্ধী মিউজিয়ামে আসেন। তাই লেবেল তৈরির সময় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়, বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির লেবেল বানাতে হয়। 

২. লেবেলের ভাষাঃ মিউজিয়ামে যেকোনো ভাষাভাষী দর্শক আসতে পারেন। তাই লেবেলের ভাষা অবশ্য দ্বিভাষিক (ইংরেজি ও আঞ্চলিক) অথবা ত্রিভাষিক (ইংরেজি, হিন্দি ও আঞ্চলিক) হতে হয়।

৩. লেবেলের আকারঃ লেবেল প্রস্তুত করার সময় লেবেলের অক্ষর ও অক্ষরের আকার বা সাইজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন এমন ভাবে লেবেল প্রস্তুত করতে হবে যাতে সাধারন দৃষ্টি শক্তি দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমান দুর থেকে পড়া যায়। 

৪. লেবেলের রংঃ লেবেলের রঙ এবং তার ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙ সবসময় বিপরীত হবে। ব্যাকগ্রাউন্ড রঙ হালকা হলে অক্ষরের রঙ গাড় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙ গাড় হলে অক্ষরের রঙ হালকা হবে। 

৫. লেবেলের প্রতিস্থাপন (উচ্চতায়)ঃ লেবেলগুলি চোখের উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার কথা। কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না; কারন সাধারন দর্শক, শিশু এবং ব্রেইলের উচ্চতা আলাদা হয়। তাই কোন ধরনের দর্শককের কথা চিন্তা করে মিউজিয়াম তৈরি হচ্ছে তার উপর বিষয়টি নির্ভর করে।

৬. লেবেল তৈরীর পদার্থঃ বাজেটের উপর নির্ভর করে লেবেল তৈরির পদার্থ কি হবে-- কাগজের বোর্ড, ফাইবার সিট না ধাতব পদার্থ। তবে ইদানীং ই-লেবেলের প্রচলন বেড়েছে। 

অতি কষ্টে লেবেল প্রস্তুত হলেও দর্শকের লেবেলের দিকে গুরুত্ব খুবই কম। বিশেষ করে যদি বড় লেখা হয় তাহলে অনেকেই পড়তে চাননা। এই সমস্যা দূরীকরণ দরকার।

Method of Labeling Objects in the Museum

Labeling objects in the museum is essential for displaying items in the Museum. Without labels, it is impossible for the viewer to know the identity of the objects of the Museum. The information on the label sometimes may be short and sometimes more detailed.

Types of Labels:

  1. Introductory Label: This label is located near the entrance of the gallery. It includes the title of the exhibition hall, a brief description of the displayed items, and the purpose of the exhibition. The aim is to inform the viewer about what they can learn after visiting the gallery. This label consists of a title in 10-15 words, a description of the hall in 60-100 words, and 4-6 images.


  2. Section Label: Within an exhibition hall, there are often multiple sections. The section label provides a brief description of the items present in each section. For example, a museum's Geological gallery may have different sections for Agni Shila, Palalik Shila, Transformed Shila, etc. Section labels are placed at the beginning of each section and include a title in 10-15 words, a section description in 60-100 words, and 2 images.


  3. Object Label: Object labels are the most important. Each gallery and each section may have multiple objects. Their titles and a description of the object in 30-40 words are included in this label.


  4. Label Preparation Method:

  5. Preparing museum labels involves research and planning. Several important aspects need to be considered when creating labels:

    1. Audience: Museum visitors can be diverse, including general visitors, children, youth, visually impaired individuals, and other physically challenged individuals. Labels must be created keeping these diverse audiences in mind, especially by including Braille labels for visually impaired individuals.


    2. Language of the Label: Museum visitors are from various language backgrounds. Therefore, labels must be bilingual (English and regional) or trilingual (English, Hindi, and regional).


    3. Label Size: The size of the label, including the size of the letters and the font, is crucial. Labels should be prepared in a way that allows easy reading from a specified distance using normal visual power.

      1. Color of the Label: The color of the label and the background should always be contrasting. If the background color is light, the text color should be dark, and vice versa.


      2. Placement of Labels (Height): The placement of labels should be appropriate for different types of visitors to see. Considering the height differences of general visitors, children, and Braille readers, the height of labels should be well-thought-out.


      3. Material for Label Creation: The choice of material for labels depends on the budget—whether it's paperboard, fiber sheet, or metal. However, the trend of e-labels has been growing.

    4. While label preparation is so challenging, it is crucial to prioritize the viewer's attention to the label. Especially, if the text is long, many may not want to read it. This problem needs to be addressed.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক