সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সংগ্রহশালার বস্তু সংগ্রহের পদ্ধতি | Object Collection in Museum

 সংগ্রহশালার বস্তু সংগ্রহের পদ্ধতি

কোন একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার প্রথম ধাপ হল বস্তু সংগ্রহ। বস্তু ছাড়া কোন সংগ্রহশালার অস্তিত্ব থাকে না। সংগ্রহশালা বিভিন্ন উপায়ে বস্তু সংগ্রহ হয়। তবে প্রধানত ন'টি উপায় এখানে আলোচনা করা হলো।

১. দানের মাধ্যমে: দানের বস্তুর উপর নির্ভর করে প্রাথমিক ভাবে বেশিরভাগ বৃহৎ মিউজিয়ামগুলি গড়ে উঠেছিল। দান ব্যক্তিগত হতে পারে আবার প্রাতিষ্ঠানিক হতে পারে। এরকম ব্যক্তিগত দানের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা একটি মিউজিয়াম হল ব্রিটিশ মিউজিয়াম, যা গড়ে উঠেছিল স্যার হেনরি সোলানের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বস্তুগুলি দানের ফলে। আবার রোমের ভাটিক্যান মিউজিয়াম গড়ে উঠেছিল রোমান ক্যাথলিক চার্চের সংগৃহীত বস্তুগুলি নিয়ে।  দানের বস্তু গ্রহণ করে তা মিউজিয়ামে রাখার আগে অবশ্যই তা আসল কি না যাচাই করে নিতে হয় এবং বস্তুটির যাবতীয় তথ্য যা দাতার কাছে আছে তা জেনে নিতে হয়। 

২. ক্রয়ের মাধ্যমেঃ প্রতিটি মিউজিয়ামে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি Museum Purchase Committee গঠন করা হয়। এই কমিটি বিভিন্ন দুস্প্রাপ্য বস্তু চিহ্নিত করে মিউজিয়ামের তহবিলের অর্থ দিয়ে ক্রয় করার ব্যবস্থা করে।  

৩. ফিল্ড কালেকশনঃ  দানের পরেই বস্তু সংগ্রহের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল Field Collection। প্রত্নবস্তুগুলি মুলত ভূমির উপর থেকে সংগ্রহ করা হয় বা খনন কারযের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে সংগৃহীত করা হয়। নৃতাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক, উদ্ভিজ ও প্রানীজ বস্তু গুলি কোনো স্থানে সমীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয় প্রাথমিক ভাবে গবেষনার জন্য। কিন্তু পরে সেগুলি সংগ্রহশালায় স্থান পায়।

৪. বিনিময়ের মাধ্যমেঃ বিনিময় দুটি মিউজিয়ামের মধ্যে হয়। বিনিময় পদ্ধতি প্রয়োগ হয় তখন যখন একই ধরনের বস্তু উভয় সংগ্রহশালায় দুটি করে থাকে। এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত বস্তু আদান-প্রদান করে উভয় মিউজিয়াম সমৃদ্ধ হয়। 

৫. ঋণের মাধ্যমেঃ কোনো সংগ্রহশালা সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি ভাবে অন্য সংগ্রহশালা থেকে কোনো বস্তু ধার নিয়ে রাখতে পারে। সাধারনত কোনো কোনো বিশেষ প্রদর্শনীর জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হয়।

৬. উত্তরাধিকার সূত্রেঃ অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহশালা খোলেন। কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত বস্তুগুলি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় রাখার ব্যবস্থা করেন। কাশ্মীরের মুন্সি আজিজ নামে সিল্ক রুটের ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সংগৃহীত বস্তুগুলি নিয়ে তাঁর পরিবার মিউজিয়াম গড়ে তুলেছিলেন।

৭. বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমেঃ Antiquities and Art Treasure Act এর মাধ্যমে ভারত সরকার যেকোনো জায়গা থেকে প্রাপ্ত শিল্প বস্তু বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং সেই বস্তু গুলি মিউজিয়ামে সংরক্ষন করতে পারে।

৮. প্রত্যাবাসনঃ যুদ্ধের সময় লুটপাট, সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ এবং ঐপনিবেশিক শোষনের মত কারণে ভারতের মত বহু উপনিবেশ থেকে দুর্মূল্য বস্তুসামগ্রী ঔপনিবেশিক দেশগুলিতে চলে গেছে। অধুনিক বিশ্বে আন্তর্জাতিক সৌভাতৃত্ববোধের তাগিদে তারা অনেকেই সেই সব বস্তুগুলি ফিরিয়ে দিচ্ছে। এগুলি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত হয়। 

৯. কৃত্রিম উদ্ভাবনঃ  মুল বস্তু একটি হলে তা একটি মিউজিয়ামে রাখা হয় এবং অন্যান্য মিউজিয়ামে তার প্রতিরুপ (Replica) বানিয়ে রাখা হয়। তবে এক্ষেত্রে নিখুত ভাবে বানানো দরকার এবং দর্শককে অবশ্যই তা জানানো দরকার। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...